আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৯- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৪৪৬
আন্তর্জাতিক নং: ২১৫৩-৬
৮. অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৫৪৪৬। মুহাম্মাদ ইবনে হাতিম (রাহঃ) ......... উবাইদ ইবনে উমায়র (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। (খলীফা) উমর (রাযিঃ) এর কাছে আবু মুসা (রাযিঃ) তিনবার অনুমতি চাইলেন। তখন (জবাব না পেয়ে) তিনি যেন তাঁকে ব্যস্ততায় নিমগ্ন মনে করে ফিরে গেলেন। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, আমরা কি আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স (আবু মুসা) এর আওয়ায শুনিনি? তাকে অনুমতি দাও! তখন তাকে উমরের কাছে ডাকা হল। তখন তিনি তাঁকে বললেন, এরূপ করতে তোমাকে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছে? তিনি বললেন, আমাদের এরূপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেন, অবশ্যই তুমি এ বিষয়ে প্রমাণ পেশ করবে, অন্যথায় আমি অবশ্যই এমন করব (শাস্তি দিব)। তিনি বেরিয়ে গিয়ে আনসারীদের এক মজলিসে পৌঁছেলেন। তাঁরা বললেন, আমাদের মাঝের সবচে’ কম বয়সের ব্যক্তি এ বিষয়ে তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। তখন আবু সাঈদ (রাযিঃ) উঠলেন এবং বললেন, আমাদের এরূপই নির্দেশ দেয়া হয়। তখন উমর (রাযিঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এ বিষয়টি আমার কাছে গুপ্ত (অজ্ঞাত) রয়েছে। (কারণ) বাজারের ব্যবসায় আমাকে এ বিষয় থেকে গাফিল রেখেছে।
باب الاِسْتِئْذَانِ
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقَطَّانُ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، حَدَّثَنَا عَطَاءٌ، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ، أَنَّ أَبَا مُوسَى، اسْتَأْذَنَ عَلَى عُمَرَ ثَلاَثًا فَكَأَنَّهُ وَجَدَهُ مَشْغُولاً فَرَجَعَ فَقَالَ عُمَرُ أَلَمْ تَسْمَعْ صَوْتَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ ائْذَنُوا لَهُ . فَدُعِيَ لَهُ فَقَالَ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ قَالَ إِنَّا كُنَّا نُؤْمَرُ بِهَذَا . قَالَ لَتُقِيمَنَّ عَلَى هَذَا بَيِّنَةً أَوْ لأَفْعَلَنَّ . فَخَرَجَ فَانْطَلَقَ إِلَى مَجْلِسٍ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالُوا لاَ يَشْهَدُ لَكَ عَلَى هَذَا إِلاَّ أَصْغَرُنَا . فَقَامَ أَبُو سَعِيدٍ فَقَالَ كُنَّا نُؤْمَرُ بِهَذَا . فَقَالَ عُمَرُ خَفِيَ عَلَىَّ هَذَا مِنْ أَمْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَلْهَانِي عَنْهُ الصَّفْقُ بِالأَسْوَاقِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫৪৪৬ | মুসলিম বাংলা