আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৯- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৪৪৪
আন্তর্জাতিক নং: ২১৫৩-৪
৮. অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৫৪৪৪। নসর ইবনে আলী আল-জাহযামী (রাহঃ) ......... আবু সাঈদ (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু মুসা (রাযিঃ) উমর (রাযিঃ) এর দরজায় এসে অনুমতি চাইলেন। উমর (রাযিঃ) (আওয়াজ শুনে মনে মনে) বলেন, একবার হল। তারপর দ্বিতীয়বার অনুমতি চাইলেন। উমর (রাযিঃ) বললেন, দু’বার হল। তারপর তৃতীয়বার অনুমতি চাইলেন। উমর (রাযিঃ) বললেন, তিনবার হল। তারপর তিনি ফিরে গেলেন। পরে [উমর (রাযিঃ)] তাঁর পিছনে লোক পাঠিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনলেন এবং বললেন, এটি যদি এমন বিষয় হয় যা তুমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে স্মরণ রেখেছে, তাহলে তা (প্রমাণসহ) পেশ কর। অন্যথায় তোমাকে আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিব।

আবু সাঈদ (রাযিঃ) বলেন, তখন তিনি আমাদের কাছে এসে বললেন, তোমরা জান না যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ অনুমতি গ্রহণ তিনবার। রাবী (আবু সাঈদ) বলেন, লোকেরা তখন (এ কথা শুনে) হাসাহাসি করতে লাগল। রাবী বলেন, আমি বললাম, তোমাদের কাছে আমাদের একজন মুসলমান ভাই এসেছেন, যাকে সন্ত্রস্ত করা হয়েছে, আর তোমরা হাসছ? (আমি তাকে বললাম) চলুন! এ শাস্তিতে আমি আপনার শরীক রয়েছি। তখন তিনি (আমাকে সঙ্গে নিয়ে) তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, এই যে! আবু সাঈদ ...... (আমার সাক্ষী)।
باب الاِسْتِئْذَانِ
حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا بِشْرٌ، - يَعْنِي ابْنَ مُفَضَّلٍ - حَدَّثَنَا سَعِيدُ، بْنُ يَزِيدَ عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ أَبَا مُوسَى، أَتَى بَابَ عُمَرَ فَاسْتَأْذَنَ فَقَالَ عُمَرُ وَاحِدَةٌ . ثُمَّ اسْتَأْذَنَ الثَّانِيَةَ فَقَالَ عُمَرُ ثِنْتَانِ . ثُمَّ اسْتَأْذَنَ الثَّالِثَةَ فَقَالَ عُمَرُ ثَلاَثٌ . ثُمَّ انْصَرَفَ فَأَتْبَعَهُ فَرَدَّهُ فَقَالَ إِنْ كَانَ هَذَا شَيْئًا حَفِظْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَهَا وَإِلاَّ فَلأَجْعَلَنَّكَ عِظَةً . قَالَ أَبُو سَعِيدٍ فَأَتَانَا فَقَالَ أَلَمْ تَعْلَمُوا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الاِسْتِئْذَانُ ثَلاَثٌ " . قَالَ فَجَعَلُوا يَضْحَكُونَ - قَالَ - فَقُلْتُ أَتَاكُمْ أَخُوكُمُ الْمُسْلِمُ قَدْ أُفْزِعَ تَضْحَكُونَ انْطَلِقْ فَأَنَا شَرِيكُكَ فِي هَذِهِ الْعُقُوبَةِ . فَأَتَاهُ فَقَالَ هَذَا أَبُو سَعِيدٍ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫৪৪৪ | মুসলিম বাংলা