আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৩৮- পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জা সংক্রান্ত অধ্যায়
হাদীস নং: ৫২৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ২০৬৯-১
২. নারী ও পুরুষের জন্য সোনা-রূপার পাত্র, আর পুরুষের জন্য সোনার আংটি ও রেশমজাত কাপড় ব্যবহার করা হারাম এবং স্ত্রীলোকের জন্য এগুলো ব্যবহার করা মুবাহ। সোনা-রূপা ও রেশমের অনধিক চার আঙ্গুল পরিমাণ নকলী (পাড় ও আচল) অনুরূপ কিছু পুরুষের জন্য মুবাহ
৫২৩৫। ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... আসমা বিনতে আবু বকর (রাযিঃ) এর আযাদকৃত গোলাম আব্দুল্লাহ (রাহঃ),তিনি আতা (রাহঃ) এর সন্তানদের মামা হতেন-- থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আসমা (রাযিঃ) আমাকে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) এর নিকট এই বলে পাঠালেন যে, আমি জানতে পেরেছি তুমি নাকি তিনটি জিনিসকে হারাম মনে কর। কাপড়ে (রেশমের) নকশা বা নকশী পাড়, গাঢ় লাল রং এর মীছারা (এক জাতীয় রেশমজাত লাল বর্ণের গদীর আচ্ছাদন) ও রজবের পুরো মাস রোযা পালন করা।
তখন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) আমাকে বললেন, আপনি যে রজব মাসের রোযা হারামের কথা বললেন এটা সে ব্যক্তির পক্ষে কিভাবে সম্ভব যিনি সদাসর্বদা রোযা পালন করেন? আর আপনি যে কাপড়ে (রেশমের) পাড় বা নকশার কথা বললেন, এ সম্বন্ধে আমি উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমি নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, রেশমী কাপড় কেবল সে লোকই পরবে (পরকালে) যার কোন হিসসা নেই। তাই আমার আশঙ্কা হল নকশাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর গাঢ় লাল রং-এর মীছারা (পর্দার আচ্ছাদন) তা এই তো আব্দুল্লাহরই মীছারা। দেখলাম, আসলেই সেটি গাঢ় লাল রং-এর (সুতি বা পশমী কাপড়)।
এরপর আমি আসমা (রাযিঃ) এর কাছে ফিরে গেলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে খবর দিলাম। তখন তিনি বললেন, এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জুব্বা। এই বলে তিনি একটি তায়লামান কিসরাওয়ানী (পারস্য সম্রাট কিসরার দিকে সন্বন্ধযুক্ত) সবুজ রং এর একটি জুব্বা বের করলেন যার পকেটটি ছিল রেশমের তৈরী এবং এর দুই পাশের ফাঁড়া ছিল খাটি রেশমের টুকরা দ্বারা আবৃত। তিনি বললেন, এটি আয়িশার মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর আমি এটি নিয়েছি। নবী (ﷺ) এটি পরিধান করতেন। তাই আমরা রোগীদের শেফা হাসিলের জন্য এটি ধৌত করি এবং সে পানি তাদের কে পান করিয়ে থাকি।
তখন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) আমাকে বললেন, আপনি যে রজব মাসের রোযা হারামের কথা বললেন এটা সে ব্যক্তির পক্ষে কিভাবে সম্ভব যিনি সদাসর্বদা রোযা পালন করেন? আর আপনি যে কাপড়ে (রেশমের) পাড় বা নকশার কথা বললেন, এ সম্বন্ধে আমি উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমি নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, রেশমী কাপড় কেবল সে লোকই পরবে (পরকালে) যার কোন হিসসা নেই। তাই আমার আশঙ্কা হল নকশাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর গাঢ় লাল রং-এর মীছারা (পর্দার আচ্ছাদন) তা এই তো আব্দুল্লাহরই মীছারা। দেখলাম, আসলেই সেটি গাঢ় লাল রং-এর (সুতি বা পশমী কাপড়)।
এরপর আমি আসমা (রাযিঃ) এর কাছে ফিরে গেলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে খবর দিলাম। তখন তিনি বললেন, এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জুব্বা। এই বলে তিনি একটি তায়লামান কিসরাওয়ানী (পারস্য সম্রাট কিসরার দিকে সন্বন্ধযুক্ত) সবুজ রং এর একটি জুব্বা বের করলেন যার পকেটটি ছিল রেশমের তৈরী এবং এর দুই পাশের ফাঁড়া ছিল খাটি রেশমের টুকরা দ্বারা আবৃত। তিনি বললেন, এটি আয়িশার মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর আমি এটি নিয়েছি। নবী (ﷺ) এটি পরিধান করতেন। তাই আমরা রোগীদের শেফা হাসিলের জন্য এটি ধৌত করি এবং সে পানি তাদের কে পান করিয়ে থাকি।
باب تَحْرِيمِ اسْتِعْمَالِ إِنَاءِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ عَلَى الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَخَاتَمِ الذَّهَبِ وَالْحَرِيرِ عَلَى الرَّجُلِ وَإِبَاحَتِهِ لِلنِّسَاءِ وَإِبَاحَةِ الْعَلَمِ وَنَحْوِهِ لِلرَّجُلِ مَا لَمْ يَزِدْ عَلَى أَرْبَعِ أَصَابِعَ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا خَالِدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، مَوْلَى أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ وَكَانَ خَالَ وَلَدِ عَطَاءٍ قَالَ أَرْسَلَتْنِي أَسْمَاءُ إِلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ فَقَالَتْ بَلَغَنِي أَنَّكَ تُحَرِّمُ أَشْيَاءَ ثَلاَثَةً الْعَلَمَ فِي الثَّوْبِ وَمِيثَرَةَ الأُرْجُوَانِ وَصَوْمَ رَجَبٍ كُلِّهِ . فَقَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ أَمَّا مَا ذَكَرْتَ مِنْ رَجَبٍ فَكَيْفَ بِمَنْ يَصُومُ الأَبَدَ وَأَمَّا مَا ذَكَرْتَ مِنَ الْعَلَمِ فِي الثَّوْبِ فَإِنِّي سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّمَا يَلْبَسُ الْحَرِيرَ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ " . فَخِفْتُ أَنْ يَكُونَ الْعَلَمُ مِنْهُ وَأَمَّا مِيثَرَةُ الأُرْجُوَانِ فَهَذِهِ مِيثَرَةُ عَبْدِ اللَّهِ فَإِذَا هِيَ أُرْجُوَانٌ . فَرَجَعْتُ إِلَى أَسْمَاءَ فَخَبَّرْتُهَا فَقَالَتْ هَذِهِ جُبَّةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَأَخْرَجَتْ إِلَىَّ جُبَّةَ طَيَالَسَةٍ كِسْرَوَانِيَّةً لَهَا لِبْنَةُ دِيبَاجٍ وَفَرْجَيْهَا مَكْفُوفَيْنِ بِالدِّيبَاجِ فَقَالَتْ هَذِهِ كَانَتْ عِنْدَ عَائِشَةَ حَتَّى قُبِضَتْ فَلَمَّا قُبِضَتْ قَبَضْتُهَا وَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَلْبَسُهَا فَنَحْنُ نَغْسِلُهَا لِلْمَرْضَى يُسْتَشْفَى بِهَا .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)
কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।
হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)
কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।
হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
