আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৮- পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জা সংক্রান্ত অধ্যায়

হাদীস নং: ৫২৩০
আন্তর্জাতিক নং: ২০৬৮-৪
- পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জা সংক্রান্ত অধ্যায়
২. নারী ও পুরুষের জন্য সোনা-রূপার পাত্র, আর পুরুষের জন্য সোনার আংটি ও রেশমজাত কাপড় ব্যবহার করা হারাম এবং স্ত্রীলোকের জন্য এগুলো ব্যবহার করা মুবাহ। সোনা-রূপা ও রেশমের অনধিক চার আঙ্গুল পরিমাণ নকলী (পাড় ও আচল) অনুরূপ কিছু পুরুষের জন্য মুবাহ
৫২৩০। আবু তাহির ও হারামালা ইবনে ইয়াহয়া (রাহঃ) ......... সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেছেন, উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) (একদা) বাজারে মোটা রেশমের তৈরী একটি হুল্লা বিক্রি হতে দেখে সেটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট নিয়ে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এটি খরিদ করুন। তাহলে ঈদের দিন ও প্রতিনিধি দলের আগমনকালে এটি দ্বারা আপনি সুসজ্জিত হতে পারবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ এটি (রেশমী বিধায়) কেবল সে ব্যক্তিরই পোশাক, যার (পরকালে) কোন হিসসা নেই।

ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, এরপর উমর (রাযিঃ) আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী কিছুকাল অতিবাহিত করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর কাছে একটি খাঁটি রেশমের জুব্বা পাঠালেন। উমর (রাযিঃ) সেটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে নিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিই তো বলেছেন, এটি সে ব্যক্তিরই পোশাক (পরকালে) যার কোন অংশ নাই, আবার আপনি এটি আমার কাছে পাঠালেন? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেনঃ (আমি পাঠিয়েছি) তুমি এটি বিক্রি করে নিজের প্রয়োজন মিটাবে।
كتاب اللباس والزينة
باب تَحْرِيمِ اسْتِعْمَالِ إِنَاءِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ عَلَى الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَخَاتَمِ الذَّهَبِ وَالْحَرِيرِ عَلَى الرَّجُلِ وَإِبَاحَتِهِ لِلنِّسَاءِ وَإِبَاحَةِ الْعَلَمِ وَنَحْوِهِ لِلرَّجُلِ مَا لَمْ يَزِدْ عَلَى أَرْبَعِ أَصَابِعَ
وَحَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، - وَاللَّفْظُ لِحَرْمَلَةَ - قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ، وَهْبٍ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، حَدَّثَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ وَجَدَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ حُلَّةً مِنْ إِسْتَبْرَقٍ تُبَاعُ بِالسُّوقِ فَأَخَذَهَا فَأَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْتَعْ هَذِهِ فَتَجَمَّلْ بِهَا لِلْعِيدِ وَلِلْوَفْدِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ " . قَالَ فَلَبِثَ عُمَرُ مَا شَاءَ اللَّهُ . ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِجُبَّةِ دِيبَاجٍ فَأَقْبَلَ بِهَا عُمَرُ حَتَّى أَتَى بِهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ " إِنَّمَا هَذِهِ لِبَاسُ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ " . أَوْ " إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ " . ثُمَّ أَرْسَلْتَ إِلَىَّ بِهَذِهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " تَبِيعُهَا وَتُصِيبُ بِهَا حَاجَتَكَ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)