আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৩৮- পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জা সংক্রান্ত অধ্যায়
হাদীস নং: ৫২২৯
আন্তর্জাতিক নং: ২০৬৮-৩
২. নারী ও পুরুষের জন্য সোনা-রূপার পাত্র, আর পুরুষের জন্য সোনার আংটি ও রেশমজাত কাপড় ব্যবহার করা হারাম এবং স্ত্রীলোকের জন্য এগুলো ব্যবহার করা মুবাহ। সোনা-রূপা ও রেশমের অনধিক চার আঙ্গুল পরিমাণ নকলী (পাড় ও আচল) অনুরূপ কিছু পুরুষের জন্য মুবাহ
৫২২৯। শায়বান ইবনে ফাররুখ (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) উমর (রাযিঃ) উতারিদ তামীমীকে বাজারে লাল রং এর হুল্লা বিক্রি করতে দেখলেন। লোকটির রাজা-বাদশাহদের দরবারে যাতায়াত ছিল এবং তাদের কাছ থেকে কিছু (উপহার উপঢৌকন পেত)। উমর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি উতারিদকে বাজারে সিয়ারা হুল্লা বিক্রি করতে দেখলাম। আপনি যদি এটি খরিদ করে আরবের প্রতিনিধি দল আগমনের সময় পরিধান করতেন! আমার মনে হয় তিনি আরো বলেছেন, এবং জুমআর দিনেও পরিধান করতেন, (তাহলে কতো না ভাল হতো!) তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেনঃ রেশমী কাপড় সে লোকই দুনিয়ায় পরিধান করবে, পরকালে যার কোন হিসসা নেই।
পরবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে কিছু সিয়ারা হুল্লা আসলে তিনি তার একটি উমর (রাযিঃ) এর কাছে ও একটি উসামা ইবনে যায়দ (রাযিঃ) এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আলী ইবনে আবু তালিব (রাযিঃ) কেও তিনি একটি হুল্লা- দিলেন এবং বললেন, এটি ফেড়ে ওড়না বানিয়ে তোমার মহিলাদের মাঝে বণ্টন করে দাও। ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, এরপর উমর (রাযিঃ) তার হুল্লাটি নিয়ে আসলেন এবং বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটি আপনি আমার নিকট পাঠিয়ে দিলেন অথচ গতকাল উতারিদ এর হুল্লা সম্পর্কে আপনি যা বলার তা বলেছিলেন? তিনি বললেন, পরিধান করার জন্য সেটি আমি তোমার কাছে পাঠাইনি, বরং আমি এটি তোমার কাছে পাঠিয়েছি যাতে তুমি এটি বিক্রি করে উপকৃত হতে পার।
এদিকে উসামা (রাযিঃ) তাঁর হুল্লাটি পরিধান করে বিকেল বেলা বের হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর প্রতি এমনভাবে তাকালেন, যে, তিনি বুঝতে পারলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার এ কাজকে অপছন্দ করেছেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া বাসূলাল্লাহ! আপনি এভাবে আমার প্রতি তাকাচ্ছেন কেন? আপনিই তো এটি আমার নিকট পাঠিয়েছেন! তিনি বললেন আমি তোমার কাছে এজন্য পাঠাই নি যে, তুমি এটি পরিধান করবে বরং এজন্য এটি পাঠিয়েছি যে, তুমি এটি ফেড়ে ওড়না বানিয়ে তোমার মহিলাদেরকে দিবে।
পরবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে কিছু সিয়ারা হুল্লা আসলে তিনি তার একটি উমর (রাযিঃ) এর কাছে ও একটি উসামা ইবনে যায়দ (রাযিঃ) এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আলী ইবনে আবু তালিব (রাযিঃ) কেও তিনি একটি হুল্লা- দিলেন এবং বললেন, এটি ফেড়ে ওড়না বানিয়ে তোমার মহিলাদের মাঝে বণ্টন করে দাও। ইবনে উমর (রাযিঃ) বলেন, এরপর উমর (রাযিঃ) তার হুল্লাটি নিয়ে আসলেন এবং বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটি আপনি আমার নিকট পাঠিয়ে দিলেন অথচ গতকাল উতারিদ এর হুল্লা সম্পর্কে আপনি যা বলার তা বলেছিলেন? তিনি বললেন, পরিধান করার জন্য সেটি আমি তোমার কাছে পাঠাইনি, বরং আমি এটি তোমার কাছে পাঠিয়েছি যাতে তুমি এটি বিক্রি করে উপকৃত হতে পার।
এদিকে উসামা (রাযিঃ) তাঁর হুল্লাটি পরিধান করে বিকেল বেলা বের হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর প্রতি এমনভাবে তাকালেন, যে, তিনি বুঝতে পারলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার এ কাজকে অপছন্দ করেছেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া বাসূলাল্লাহ! আপনি এভাবে আমার প্রতি তাকাচ্ছেন কেন? আপনিই তো এটি আমার নিকট পাঠিয়েছেন! তিনি বললেন আমি তোমার কাছে এজন্য পাঠাই নি যে, তুমি এটি পরিধান করবে বরং এজন্য এটি পাঠিয়েছি যে, তুমি এটি ফেড়ে ওড়না বানিয়ে তোমার মহিলাদেরকে দিবে।
باب تَحْرِيمِ اسْتِعْمَالِ إِنَاءِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ عَلَى الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَخَاتَمِ الذَّهَبِ وَالْحَرِيرِ عَلَى الرَّجُلِ وَإِبَاحَتِهِ لِلنِّسَاءِ وَإِبَاحَةِ الْعَلَمِ وَنَحْوِهِ لِلرَّجُلِ مَا لَمْ يَزِدْ عَلَى أَرْبَعِ أَصَابِعَ
وَحَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ، حَدَّثَنَا نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ رَأَى عُمَرُ عُطَارِدًا التَّمِيمِيَّ يُقِيمُ بِالسُّوقِ حُلَّةً سِيَرَاءَ - وَكَانَ رَجُلاً يَغْشَى الْمُلُوكَ وَيُصِيبُ مِنْهُمْ - فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي رَأَيْتُ عُطَارِدًا يُقِيمُ فِي السُّوقِ حُلَّةً سِيَرَاءَ فَلَوِ اشْتَرَيْتَهَا فَلَبِسْتَهَا لِوُفُودِ الْعَرَبِ إِذَا قَدِمُوا عَلَيْكَ - وَأَظُنُّهُ قَالَ وَلَبِسْتَهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ - فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّمَا يَلْبَسُ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ فِي الآخِرَةِ " . فَلَمَّا كَانَ بَعْدَ ذَلِكَ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِحُلَلٍ سِيَرَاءَ فَبَعَثَ إِلَى عُمَرَ بِحُلَّةٍ وَبَعَثَ إِلَى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ بِحُلَّةٍ وَأَعْطَى عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ حُلَّةً وَقَالَ " شَقِّقْهَا خُمُرًا بَيْنَ نِسَائِكَ " . قَالَ فَجَاءَ عُمَرُ بِحُلَّتِهِ يَحْمِلُهَا فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ بَعَثْتَ إِلَىَّ بِهَذِهِ وَقَدْ قُلْتَ بِالأَمْسِ فِي حُلَّةِ عُطَارِدٍ مَا قُلْتَ فَقَالَ " إِنِّي لَمْ أَبْعَثْ بِهَا إِلَيْكَ لِتَلْبَسَهَا وَلَكِنِّي بَعَثْتُ بِهَا إِلَيْكَ لِتُصِيبَ بِهَا " . وَأَمَّا أُسَامَةُ فَرَاحَ فِي حُلَّتِهِ فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَظَرًا عَرَفَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أَنْكَرَ مَا صَنَعَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا تَنْظُرُ إِلَىَّ فَأَنْتَ بَعَثْتَ إِلَىَّ بِهَا فَقَالَ " إِنِّي لَمْ أَبْعَثْ إِلَيْكَ لِتَلْبَسَهَا وَلَكِنِّي بَعَثْتُ بِهَا إِلَيْكَ لِتُشَقِّقَهَا خُمُرًا بَيْنَ نِسَائِكَ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)
কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।
হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)
কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।
হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
