আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৭- পানাহার ও পানীয় দ্রব্যাদীর বিবরণ

হাদীস নং: ৫১৯০
আন্তর্জাতিক নং: ২০৫৫-২
৩১. মেহমানের সমাদর করা ও তাকে প্রাধন্য দেওয়ার ফযীলত
৫১৯০। ইসহাক ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... সুলাইমান ইবনে মুগীরা (রাহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে।
باب إِكْرَامِ الضَّيْفِ وَفَضْلِ إِيثَارِهِ
وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، بِهَذَا الإِسْنَادِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি দ্বারা জানা যায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম কী কঠিন অভাব-অনটনের ভেতর দিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। অনাহারে থাকতে হযরত মিকদাদ রাযি. ও তাঁর দুই সঙ্গীর শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ অবস্থায় তারা এই আশায় অন্যান্য সাহাবীদের সামনে উপস্থিত হতেন যে, তাদেরকে দেখলে তারা তাদের অনাহারক্লিষ্ট অবস্থা বুঝতে পারবেন, ফলে তাঁদের ক্ষুধা মেটানোর কোনও ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তাদেরও তো অবস্থা ছিল একইরকম। নিজেরাও অনাহারে দিন কাটাচ্ছিলেন। তাদের ক্ষুধা মেটাবেন কী দিয়ে? তাই তাদের কেউই এ তিন ক্ষুধার্তকে গ্রহণ করতে পারছিলেন না।

শেষে তারা যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে হাজির হলেন এবং তিনি তাদের ক্ষুধাকাতর অবস্থা বুঝতে পারলেন, তখন তাদেরকে নিজ গৃহে নিয়ে গেলেন। তারপর যা-কিছু হল তা তো উল্লিখিত বর্ণনার মধ্যেই আছে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আখলাক-চরিত্রে সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত। ছিলেন অতিথি পরায়ণ, বিনয়ী, ত্যাগী, সহমর্মী, মহানুভব, আরও কত কী! অন্যের ঘুমের যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তাই সালাম দিতেন সংযত আওয়াজে। ঘুম মানুষের সুস্থ থাকার জন্য, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। ঘুমের ব্যাঘাত হলে কষ্ট হয়, স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। তাই কারও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো উচিত নয়। সকলের বড়, কুলমাখলূকের বাদশা ও মাথার মুকুট হয়েও সাধারণ জনদের স্বাস্থ্য, আরাম ও বিশ্রামের দিকে এমন সতর্ক দৃষ্টি রাখা সকলের কাজ নয়। এ মহানুভবতা তাঁরই বিশেষত্ব।

নিজে ক্ষুধার্ত। রোজ পাত্রে রাখা সামান্য একটু দুধ দ্বারা ক্ষুধা মেটান। আজও সেই দুধ দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করবেন। কিন্তু পাত্রে কিছুই পেলেন না। এ নিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না। এরকম পরিস্থিতিতে লোকে কত কিই না করে। কিন্তু নিজ খাবার না পাওয়াটা মহানুভবতার বাদশার কাছে এমন কিছু বিষয় নয়, যা নিয়ে অভিযোগ তোলা যায়। তিনি সবসময়ই শোকরগুযার। এখন ক্ষুধার্ত বটে, কিন্তু এর আগে কত পানাহার করা হয়েছে। কতজন তাকে আপন সাধ্যমতো পানাহার করিয়েছে। সেই কৃতজ্ঞতায় তিনি আল্লাহর কাছে দু'আ করছেন। সর্বাবস্থায় আল্লাহ-অভিমুখিতাই তাঁর স্বভাব। তিনি দু’আ করেছেন– হে আল্লাহ! যে আমাকে খাবার খাইয়েছে তুমি তাকে খাওয়াও, আর যে আমাকে পান করিয়েছে তুমি তাকে পান করাও। দু'আ কারওটাই বৃথা যায় না। তাঁর দু'আ তো বৃথা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ দু'আর বরকত নগদই পাওয়া গেল অবেলায় ছাগলের ওলান দুধে ভরে গেল। হযরত মিকদাদ রাযি. ছাগল জবাই করতে গিয়ে দেখেন ছাগলের ওলান দুধে ভরা। এটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু'জিযা। তিনি মন্তব্য করেন, এটা আল্লাহর রহমত ছাড়া কিছু নয়। তাঁর রহমতেই অবেলায় অসময়ে এভাবে দুধ পাওয়া গেল। এ দুধ রহমতের। এ দুধ বরকতের। তাই তিনি অপর দুই সঙ্গীকে খাওয়ানো হল না বলে আফসোস করছেন।

হাদীছটিতে সালামের আদব শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, রাতের বেলা বা অন্যদের বিশ্রামের সময় সালাম দিতে হবে সংযত আওয়াজে, যাতে তা কেবল জাগ্রত ব্যক্তিই শুনতে পায়, যারা ঘুমিয়ে আছে তাদের যেন ঘুম না ভাঙ্গে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইইি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা ঘরে আসলে এভাবেই সালাম দিতেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নিজ আচরণে অন্যের বিশ্রাম ও ঘুমের যাতে ব্যাঘাত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

খ. ঘুম ও বিশ্রামের সময় সংযত আওয়াজে সালাম দেওয়া চাই, যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুম ভেঙ্গে না যায়।

গ. নিজের কাছে যা আছে তা দ্বারা ক্ষুধার্ত ব্যক্তির ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করা চাই।

ঘ. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু'জিযা সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখতে হবে।

ঙ. হাদীছটি দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের কঠিন অভাব-অনটন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
rabi
বর্ণনাকারী:
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫১৯০ | মুসলিম বাংলা