আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৭- পানাহার ও পানীয় দ্রব্যাদীর বিবরণ

হাদীস নং: ৫১৬২
আন্তর্জাতিক নং: ২০৪৫-৩
২৪. একত্রে বসে আহারকারীদের জন্য এক লুকমায় দু’টি করে খেজুর ইত্যাদি খাওয়া নিষেধ, তবে যদি সাথীরা অনুমতি দেয় (তবে জায়েয)
৫১৬২। যুহাইর ইবনে হারব ও মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না (রাহঃ) ......... জাবালা ইবনে সুহায়ম (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সঙ্গীদের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তির এক সঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।
باب نَهْيِ الآكِلِ مَعَ جَمَاعَةٍ عَنْ قِرَانِ تَمْرَتَيْنِ وَنَحْوِهِمَا فِي لُقْمَةٍ إِلاَّ بِإِذْنِ أَصْحَابِهِ
حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ جَبَلَةَ بْنِ سُحَيْمٍ، قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَقْرِنَ الرَّجُلُ بَيْنَ التَّمْرَتَيْنِ حَتَّى يَسْتَأْذِنَ أَصْحَابَهُ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

জাবালা ইবন সুহায়ম রহ. একজন বিশ্বস্ত তাবি‘ঈ। তিনি হিজরী ১২৫ সনে ইন্তিকাল করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবায়র রাযি. যখন মক্কা মুকাররামাকে কেন্দ্র বানিয়ে খেলাফত পরিচালনা করছিলেন, সেই আমলে এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। চারদিকে প্রচণ্ড অভাব। অভাব ছিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারেও। ফলে জনগণের ভাতা নগদ অর্থে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাদের মধ্যে নগদ অর্থের বদলে খেজুর বিতরণ করা হত। জাবালা ইবন সুহায়ম রহ. ‘আমাদেরকে খেজুর দেওয়া হত’ বলে এ কথাই বুঝিয়েছেন। সেই খেজুর যখন তারা কয়েকজন একত্রে বসে খেতেন, তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর যদি সে পথ দিয়ে যাওয়া হতো আর তাদেরকে খাওয়া অবস্থায় দেখতেন, তখন একত্রে দু’টো করে খেজুর খেতে নিষেধ করতেন আর এ বিষয়ে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছ শুনিয়ে দিতেন যে, তিনি একত্রে দু’টো করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। তারপর হযরত ইবন উমর রাযি. বলতেন, সঙ্গীর অনুমতি সাপেক্ষে একত্রে দু’টো করে খাওয়া যেতে পারে। তাঁর এ কথা কোনও কোনও হাদীছ দ্বারাও সমর্থিত হয়।

খেজুর বা এরকম জিনিস কয়েকজনে মিলে যখন খাওয়া হয়, তখন ভদ্রতার দাবি হল কেউ অন্যের চেয়ে বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবে না। সকলে যদি একটা করে খায় আর তাদের মধ্যে একজন খায় দু'টো করে, তবে অন্যদের তুলনায় তার খাওয়াটা বেশি হবে। এটা সুস্পষ্ট অভদ্রতা ও স্বার্থপরতা। এটা লোভেরও পরিচায়ক। তাই হাদীছে এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এটা সম্পূর্ণ হারাম নয়। মাকরূহ। কেননা সকলের প্রয়োজন সমান হয় না। কারও বেশি খাওয়ার প্রয়োজন হয়। কারও অল্পতেই ক্ষুধা মিটে যায়। যার বেশি খাওয়ার প্রয়োজন তাকে অন্যদের মতো অল্প খেতে বাধ্য করা হলে স্বাভাবিকভাবেই তার কষ্ট হবে। এ কারণেই এটাকে সম্পূর্ণ হারাম করা হয়নি। তবে হাঁ, অন্যের তুলনায় নিজের বেশি খাওয়াটা দৃষ্টিকটু। তাই এরূপ না করা উচিত। একটু কষ্ট হলেও অন্যদের সঙ্গে সমতা রক্ষা করেই খাওয়া ভালো। বিশেষত ইসলাম যে নিজের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার শিক্ষাদান করেছে, তারও দাবি নিজ প্রয়োজন ও চাহিদাকে যথাসম্ভব সংযত রাখা। অবশ্য সঙ্গীদের অনুমতি থাকলে একত্রে দু'টো করে খাওয়া যেতে পারে। তখন তা মাকরূহও হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, খেজুর বা খাদ্যের পরিমাণ যদি কম হয় এবং একজন বেশি খেলে অন্যদের কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্যদের অনুমতি ছাড়া কারও জন্য বেশি খাওয়া কিছুতেই জায়েয হবে না। এরূপ অবস্থায় একত্রে দু’টো করে খাওয়া সম্পূর্ণই নিষেধ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. একত্রে আহারকালে লক্ষ রাখতে হবে যাতে অন্যের তুলনায় নিজের খাওয়া বেশি না হয়।

খ. নিজের প্রয়োজন যদি বেশি থাকে আর খাদ্যও পর্যাপ্ত থাকে, সে ক্ষেত্রে অন্যের তুলনায় বেশি খাওয়া দূষণীয় নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
rabi
বর্ণনাকারী:
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৫১৬২ | মুসলিম বাংলা