আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৩৫- শিকার ও জবাইয়ের বিধান এবং হালাল পশুর বর্ণনা
হাদীস নং: ৪৮৪৮
আন্তর্জাতিক নং: ১৯৩৫-৬
৪. সাগরের মৃত প্রাণী (মাছ) হালাল
৪৮৪৮। আবু কুরায়ব (রাহঃ) ......... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি বাহিনীকে সমুদ্রে উপকূলের দিকে পাঠালেন, আমিও তাতে ছিলাম। হাদীসের বাকি অংশ আমর ইবনে দিনার ও আবু যুবাইর (রাহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে ওয়াহব ইবনে কায়সান (রাহঃ) এর হাদীসে আছে যে, ’সেনাবাহিনী আঠারো রাত দিন পর্যন্ত তা থেকে খেয়েছিল।’
باب إِبَاحَةِ مَيْتَاتِ الْبَحْرِ
وَحَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ، - يَعْنِي ابْنَ كَثِيرٍ - قَالَ سَمِعْتُ وَهْبَ بْنَ كَيْسَانَ، يَقُولُ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سَرِيَّةً أَنَا فِيهِمْ إِلَى سِيفِ الْبَحْرِ . وَسَاقُوا جَمِيعًا بَقِيَّةَ الْحَدِيثِ كَنَحْوِ حَدِيثِ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ وَأَبِي الزُّبَيْرِ غَيْرَ أَنَّ فِي حَدِيثِ وَهْبِ بْنِ كَيْسَانَ فَأَكَلَ مِنْهَا الْجَيْشُ ثَمَانِيَ عَشْرَةَ لَيْلَةً .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে বর্ণিত ঘটনাটি হিজরী ৮ম সনের। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাযি.-এর নেতৃত্বে ৩০০ মুহাজির ও আনসারের একটি দল বনূ জুহায়নার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। তারা 'সীফুল বাহর' বা উপকূল এলাকায় বাস করত। জায়গাটি মদীনা হতে পাঁচ মঞ্জিল দূরে ছিল। হযরত উমর ফারূক রাযি.-ও এ দলে ছিলেন। রসদ ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে সাহাবায়ে কেরামকে এ সময়ে গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে হয়েছিল।
হযরত জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাযি.-এর এক বর্ণনায় জানা যায়, সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ বাহিনীকে সেখানে কমবেশি একমাস অবস্থান করতে হয়। রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় পরপর তিনদিন খাওয়ার জন্য তিনটি করে উট জবাই করা হয়েছিল। অতঃপর আবূ উবায়দা রাযি. উট জবাই করতে নিষেধ করে দিলেন।
উটগুলো জবাই করেছিলেন হযরত কায়স ইবন সা'দ ইবন উবাদা রাযি.। তিনি হযরত সা'দ ইবন উবাদা রাযি.-এর পুত্র। পিতার মত তিনিও একজন দানবীর ছিলেন।
হযরত জাবির রাযি. বলেন, তারপর হযরত আবু উবায়দা রাযি. হুকুম দিলেন, যার কাছে সামান্য যে খাবারই আছে তা একত্র করা হোক। তা একত্র করার পরও সামান্য কিছু রসদই জমা হল। তিনি তা থেকে প্রত্যেককে রোজ একমুঠো করে খেজুর দিতে থাকলেন। এক পর্যায়ে প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দেওয়া শুরু করলেন। সকলে তাই চুষে চুষে খেত ও পানি পান করত। সেইসঙ্গে ক্ষুধা নিবারণের জন্য তাদেরকে গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে হচ্ছিল।
এভাবেই দিন কাটছিল। সহসা একদিন দেখা গেল অতিকায় একটি মাছ সাগরের তীরে আটকা পড়ে আছে। এর পরের বৃত্তান্ত আলোচ্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীছটিতে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তার বিবরণ সুস্পষ্ট। তাই এর ব্যাখ্যার বিশেষ প্রয়োজন পড়ে না। শুধু কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে। এতে জানানো হয়েছে যে, একপর্যায়ে হযরত আবু উবায়দা রাযি. প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিতেন, আর তারা সেটি শিশুদের মত কিছুক্ষন চুষতেন, তারপর পানি পান করতেন। হযরত জাবির রাযি. বলেন-
فتكفينا يومنا إلي الليل (তাতেই রাত পর্যন্ত সে দিনটি আমাদের চলে যেত)। এর দুই অর্থ হতে পারে। এক তো এই যে, আমরা সেই একটি খেজুর খেয়েই সে দিনটি কোনওমতে চালিয়ে দিতাম। এর দ্বারা সাহাবায়ে কেরামের ধৈর্য-স্থৈর্যের পরিচয় পাওয়া যায়। আরও জানা যায় শত কষ্টেও তারা কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম পালনে অবিচল থাকতেন এবং আমীরের আনুগত্যেও তারা কী পরিমাণ আন্তরিক ছিলেন। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ আমীরের উপর কত রকম আপত্তি তুলে থাকে। কিন্তু তারা বিনাবাক্যে প্রায় একমাস এত কষ্টের ভেতর দিয়েও আমীরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন।
এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে- একটি খেজুরেই আমাদের এক দিন চলে যেত। ক্ষুধার বিশেষ কষ্টও অনুভূত হতো না। সে হিসেবে এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু'জিযা। এ মুজাহিদ বাহিনীটি তাঁর হুকুম পালনে রত ছিলেন। তাই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাদের উপর বিশেষ মেহেরবানি হয়েছিল। পূর্ণ খাবার খেয়ে যেমন দিন কাটে, তেমনি একটি খেজুর খেয়েই তাদের দিন কাটছিল। এটা বরকত। সাধারণ জ্ঞানে উপলব্ধি করার মত নয়। আল্লাহ তা'আলার পক্ষে সবই সম্ভব। তিনি চাইলে ভরপেট খাওয়ার পরও কাউকে অভুক্তের মত দুর্বল করে রাখতে পারেন, আবার চাইলে কাউকে সামান্য খাবার এমনকি বিনা খাবারেও পরিতৃপ্ত ও শক্ত-সমর্থ রাখতে পারেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
إنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتينُ.
"আল্লাহ নিজেই তো রিযিকদাতা এবং তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।"
হাদীছটির এ বর্ণনায় গাছের পাতা খাওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে- "وكنا نضرب بعصيّنا الخبط ، ثم نبلّه بالماء فنأكله" (আর আমরা লাঠি দ্বারা পিটিয়ে গাছের পাতা পাড়তাম। তারপর তা পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে নিতাম)। এর দ্বারা বোঝা যায় পাতাগুলো শুকনো ছিল। কিন্তু অন্য বর্ণনায় আছে, তা ছিল সবুজ কাঁচা পাতা। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পাড়ার দ্বারাও দৃশ্যত কাঁচা পাতাই বোঝা যায়। এ অবস্থায় পানি দিয়ে ভেজানোর উদ্দেশ্য ছিল হয়তো পাতার কষ কমানো এবং পানিতে দলে নরম করা, যাতে সহজে গেলা সম্ভব হয়।
অনুমান করা যায়, কতটা ক্ষুধার কষ্ট হলে মানুষ গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে বাধ্য? সাহাবায়ে কেরাম তা খেয়েও আল্লাহর পথে জিহাদ করেছেন এবং অম্লান বদনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম মান্য করেছেন। এরই নাম আনুগত্য। তাদের এ চরম ত্যাগ ও আনুগত্যের ফলেই আমরা দীন পেয়েছি। আল্লাহ তা'আলা সমগ্র উম্মতের পক্ষ থেকে তাদেরকে আপন শান অনুযায়ী পুরস্কার দান করুন।
ক্ষুধার কষ্টে এতটা ধৈর্যধারণের পর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সাহায্য নেমে আসে। তাদের কল্পনার বাইরে খাবার চলে আসে। তা ছিল বিশালাকার এক মাছ । সাগরের উপবাহিকায় তারা সেটি দেখতে পেয়েছিলেন। হযরত জাবির রাযি. সেটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-
(বিশাল স্তুপের মত। আমরা সেটির কাছে আসলাম। দেখি কি সেটি আম্বর নামক সামুদ্রিক জীব)। অর্থাৎ এক প্রকার তিমি মাছ। ইবনে সিনা রহ: বলেন, এ মাছ অন্যান্য মাছ খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে, তার উদরে আম্বর নামক সুগন্ধি তৈরি হয়ে থাকে। ইমাম আযহারী রহ. বলেন, আম্বর মাছ থাকে মহাসাগরে। তা দৈর্ঘ্যে ৫০ হাত পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সেই মাছটি খাওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছিল। হযরত আবু উবায়দা রাযি. প্রথমে নিষেধ করেছিলেন। হযরত জাবির রাযি.বলেন-
فقال أبو عبيدة: ميتة (আবূ উবায়দা বললেন, এটি মরা)। মরা জন্তু খাওয়া হারাম। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضطر غَيْرَ بَاغٍ و لا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيم
“তিনি তো তোমাদের জন্য কেবল মৃত জন্তু, রক্ত ও শূকরের গোশত হারাম করেছেন এবং সেই জন্তুও, যার প্রতি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়। হাঁ, কোনও ব্যক্তি যদি চরম অনন্যোপায় অবস্থায় থাকে (ফলে এসব বস্ত্র হতে কিছু খেয়ে নেয়) আর তার উদ্দেশ্য মজা ভোগ করা না হয় এবং সে (প্রয়োজনের) সীমা অতিক্রমও না করে, তবে তার কোনও গুনাহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"
পরে তিনি খাওয়ার অনুমতি দেন। খাওয়া যে বৈধ হবে তার পক্ষে তিনি এই বলে প্রমাণ পেশ করেন যে- (আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরিত এবং আমরা আল্লাহর রাস্তায় আছি। আর তোমরা তো অপারগ হয়ে পড়েছ)। উপরিউক্ত আয়াতেও বলা হয়েছে- فَمَنِ اضطر غَيْرَ بَاغٍ و لا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ (কোনও ব্যক্তি যদি চরম অনন্যোপায় অবস্থায় থাকে...)। সম্ভবত হযরত আবু উবায়দা রাযি. প্রমাণটি এ আয়াত থেকেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আয়াতের হুকুমটি স্থলের প্রাণী সম্পর্কে, পানির প্রাণী সম্পর্কে নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أحِلَّتْ لَنا مَيْتَانِ الْحُوتُ وَالْجَرَادُ
আমাদের জন্য দুটি মৃত জীব হালাল করা হয়েছে- মাছ ও ফড়িং ।
অপর এক হাদীছে ইরশাদ-
هو الطهور ماؤه الحل ميتته
“সাগরের পানি পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম এবং তার মৃত প্রাণী হালাল।
সম্ভবত এসব হাদীছ আরও পরের। তাই হযরত আবু উবায়দা রাযি. আয়াতের ভিত্তিতেই চিন্তা করেছেন। বস্তুত মাছটি তাদের জন্য এমনিই হালাল ছিল। এমনিই যে হালাল ছিল, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল দ্বারাও বোঝা যায়। তিনি তো নিরুপায় ছিলেন না। তা সত্ত্বেও সাহাবীগণ ওই মাছের অবশিষ্ট অংশ মদীনায় নিয়ে আসলে তিনি তা খেয়েছিলেন।
মাছটি কত বড় ছিল তা বোঝানোর জন্য হযরত জাবির রাযি. সেটির বিভিন্ন অবস্থা বর্ণনা করার পর বলেন- (তিনি সেটির পাঁজরের একটি হাড় নিয়ে দাঁড় করান। তারপর আমাদের সঙ্গে সবচে' বড় একটি উটের উপর হাওদা স্থাপন করেন। তারপর সে হাড়ের নিচ থেকে সেটি পার হয়ে গেল)। এক বর্ণনায় আছে, "তবুও তার মাথা সে হাড় স্পর্শ করল না।" কে ছিলেন সেই দীর্ঘাঙ্গী ব্যক্তি? অনুমান করা যায় তিনি ছিলেন হযরত কায়স ইবন সা'দ রাযি.। উপরে বলা হয়েছে, তিনি পর পর তিনদিন তিনটি করে উট সকলকে জবাই করে খাইয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি এ যুদ্ধে ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দীর্ঘদেহী ছিলেন। হযরত মু'আবিয়া রাযি.-এর যমানায় তিনি তাঁর লম্বা শরীর দিয়ে উম্মতের মান বাঁচিয়েছিলেন।
ঘটনার বিবরণের প্রকাশ, রোম সম্রাট তাদের সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ ব্যক্তিকে দামেশকে পাঠিয়েছিলেন। মুসলিমগণ তার সমান কোনও লম্বা ব্যক্তিকে দেখাতে পারে কি না তার চ্যালেঞ্জ। হযরত মু'আবিয়া রাযি. হযরত কায়স ইবন সা'দ রাযি.-কে ডেকে পাঠালেন। হযরত কায়স ইবন সা'দ রাযি.-এর পরিধানে লম্বা জামা তো ছিলই। তিনি পায়জামাটি খুলে ওই লোককে পরতে দিলেন। দেখা গেল পায়জামার নিচের দিক মাটিতে লেগে আছে আর উপরের দিক ওই লোকটির নাকে লেগে গেছে। পায়জামা খুলে ফেলায় কেউ কেউ নিন্দা করলে উত্তরে তিনি বলেছিলেন-
"আমি চেয়েছি লোকে জানুক এটা
কায়সের পায়জামা, প্রতিনিধি দল সাক্ষী থাকুক।
লোকে যেন বলতে না পারে কায়সের অনুপস্থিতিতে
এটা প্রাচীন 'আদ ও ছামূদ জাতির পায়জামা।
তিনশ সদস্যের সে বাহিনী দীর্ঘ একমাস ওই মাছ খাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা নিয়ে মদীনায় ফিরে আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন- তা রিযিক, যা আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য (সাগর থেকে) বের করেছেন। তোমাদের সঙ্গে কি তার কিছু গোশত আছে? থাকলে আমাদের খাওয়াও। তিনি এ কথা বলেছিলেন হয়তো মৃত সে মাছটি হালাল হওয়ার ব্যাপারে তাদেরকে আশ্বস্ত করার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই তিনি তা খেতে আগ্রহ প্রকাশ করায় তাদের অন্তরে হালাল হওয়া সম্পর্কে কোনও সন্দেহ থাকলেও তা দূর হয়ে যাবে।
এমনও হতে পারে যে, অস্বাভাবিকভাবে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে এ রিযিক দেওয়ায় এর মধ্যে আলাদা একটা বরকত থাকবে। বিশেষত এটা যখন তাদের ধৈর্যের একটা ফলও বটে। সেই বরকত লাভের উদ্দেশ্যেই তিনি তা খেয়ে থাকবেন।
এটা তাদের ধৈর্যের ফল তো ছিলই। 'সবরে যে মেওয়া ফলে'- তা কুরআন-হাদীছেরও কথা। সবর তাকওয়া ও আল্লাহভীতির অপরিহার্য অঙ্গ। আর তাকওয়া অবলম্বনকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَ مَن يَتَّقِ اللهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزقهُ مِنْ حَيْثُ لا يَحْتَسِبُ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনও পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে। যে-কেউ আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্লাহই তার (কর্ম সম্পাদনের) জন্য যথেষ্ট।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দাওয়াত ও জিহাদের জন্য জামাত পাঠানোর সময় কেন্দ্র থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী পথখরচা দিয়ে দেওয়া চাই।
খ. দাওয়াত ও জিহাদের কাজে প্রেরিত জামাতের অভাব-অনটনে ধৈর্যহারা হতে নেই। সবরের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে রত থাকলে আল্লাহ তা'আলা সাহায্য করে থাকেন।
গ. জামাতের আমীরের কর্তব্য- খানাপিনার ক্ষেত্রেও সঙ্গীদের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা।
ঘ. সংকটে স্বাচ্ছন্দ্যে সর্বাবস্থায় আমীরের হুকুম মেনে চলা কর্তব্য।
ঙ. মু'জিযা ও কারামাত সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
চ. তিমি মাছ খাওয়া জায়েয এবং মরা মাছ খাওয়াও জায়েয, যদি তা বাহ্যিক কোনও কারণ ছাড়া মরে পানির উপর ভেসে না ওঠে।
ছ. অনন্যোপায় অবস্থায় ক্ষুধা নিবারণ হয় পরিমাণ নিষিদ্ধ খাবার খাওয়ার অনুমতি আছে।
জ. তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে আল্লাহ তা'আলা বিপদ থেকে মুক্তির উপায় করে দেন এবং অকল্পনীয়ভাবে রিযিক দান করেন।
ঝ. আল্লাহর পথ থেকে জামাত ফিরে আসার পর তাদের প্রতি আমীরুল মুমিনীন বা তার প্রতিনিধির উৎসাহব্যঞ্জক আচরণ করা কর্তব্য।
হযরত জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাযি.-এর এক বর্ণনায় জানা যায়, সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ বাহিনীকে সেখানে কমবেশি একমাস অবস্থান করতে হয়। রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় পরপর তিনদিন খাওয়ার জন্য তিনটি করে উট জবাই করা হয়েছিল। অতঃপর আবূ উবায়দা রাযি. উট জবাই করতে নিষেধ করে দিলেন।
উটগুলো জবাই করেছিলেন হযরত কায়স ইবন সা'দ ইবন উবাদা রাযি.। তিনি হযরত সা'দ ইবন উবাদা রাযি.-এর পুত্র। পিতার মত তিনিও একজন দানবীর ছিলেন।
হযরত জাবির রাযি. বলেন, তারপর হযরত আবু উবায়দা রাযি. হুকুম দিলেন, যার কাছে সামান্য যে খাবারই আছে তা একত্র করা হোক। তা একত্র করার পরও সামান্য কিছু রসদই জমা হল। তিনি তা থেকে প্রত্যেককে রোজ একমুঠো করে খেজুর দিতে থাকলেন। এক পর্যায়ে প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দেওয়া শুরু করলেন। সকলে তাই চুষে চুষে খেত ও পানি পান করত। সেইসঙ্গে ক্ষুধা নিবারণের জন্য তাদেরকে গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে হচ্ছিল।
এভাবেই দিন কাটছিল। সহসা একদিন দেখা গেল অতিকায় একটি মাছ সাগরের তীরে আটকা পড়ে আছে। এর পরের বৃত্তান্ত আলোচ্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীছটিতে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তার বিবরণ সুস্পষ্ট। তাই এর ব্যাখ্যার বিশেষ প্রয়োজন পড়ে না। শুধু কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে। এতে জানানো হয়েছে যে, একপর্যায়ে হযরত আবু উবায়দা রাযি. প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিতেন, আর তারা সেটি শিশুদের মত কিছুক্ষন চুষতেন, তারপর পানি পান করতেন। হযরত জাবির রাযি. বলেন-
فتكفينا يومنا إلي الليل (তাতেই রাত পর্যন্ত সে দিনটি আমাদের চলে যেত)। এর দুই অর্থ হতে পারে। এক তো এই যে, আমরা সেই একটি খেজুর খেয়েই সে দিনটি কোনওমতে চালিয়ে দিতাম। এর দ্বারা সাহাবায়ে কেরামের ধৈর্য-স্থৈর্যের পরিচয় পাওয়া যায়। আরও জানা যায় শত কষ্টেও তারা কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম পালনে অবিচল থাকতেন এবং আমীরের আনুগত্যেও তারা কী পরিমাণ আন্তরিক ছিলেন। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ আমীরের উপর কত রকম আপত্তি তুলে থাকে। কিন্তু তারা বিনাবাক্যে প্রায় একমাস এত কষ্টের ভেতর দিয়েও আমীরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন।
এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে- একটি খেজুরেই আমাদের এক দিন চলে যেত। ক্ষুধার বিশেষ কষ্টও অনুভূত হতো না। সে হিসেবে এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মু'জিযা। এ মুজাহিদ বাহিনীটি তাঁর হুকুম পালনে রত ছিলেন। তাই আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাদের উপর বিশেষ মেহেরবানি হয়েছিল। পূর্ণ খাবার খেয়ে যেমন দিন কাটে, তেমনি একটি খেজুর খেয়েই তাদের দিন কাটছিল। এটা বরকত। সাধারণ জ্ঞানে উপলব্ধি করার মত নয়। আল্লাহ তা'আলার পক্ষে সবই সম্ভব। তিনি চাইলে ভরপেট খাওয়ার পরও কাউকে অভুক্তের মত দুর্বল করে রাখতে পারেন, আবার চাইলে কাউকে সামান্য খাবার এমনকি বিনা খাবারেও পরিতৃপ্ত ও শক্ত-সমর্থ রাখতে পারেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
إنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتينُ.
"আল্লাহ নিজেই তো রিযিকদাতা এবং তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।"
হাদীছটির এ বর্ণনায় গাছের পাতা খাওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে- "وكنا نضرب بعصيّنا الخبط ، ثم نبلّه بالماء فنأكله" (আর আমরা লাঠি দ্বারা পিটিয়ে গাছের পাতা পাড়তাম। তারপর তা পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে নিতাম)। এর দ্বারা বোঝা যায় পাতাগুলো শুকনো ছিল। কিন্তু অন্য বর্ণনায় আছে, তা ছিল সবুজ কাঁচা পাতা। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পাড়ার দ্বারাও দৃশ্যত কাঁচা পাতাই বোঝা যায়। এ অবস্থায় পানি দিয়ে ভেজানোর উদ্দেশ্য ছিল হয়তো পাতার কষ কমানো এবং পানিতে দলে নরম করা, যাতে সহজে গেলা সম্ভব হয়।
অনুমান করা যায়, কতটা ক্ষুধার কষ্ট হলে মানুষ গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে বাধ্য? সাহাবায়ে কেরাম তা খেয়েও আল্লাহর পথে জিহাদ করেছেন এবং অম্লান বদনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম মান্য করেছেন। এরই নাম আনুগত্য। তাদের এ চরম ত্যাগ ও আনুগত্যের ফলেই আমরা দীন পেয়েছি। আল্লাহ তা'আলা সমগ্র উম্মতের পক্ষ থেকে তাদেরকে আপন শান অনুযায়ী পুরস্কার দান করুন।
ক্ষুধার কষ্টে এতটা ধৈর্যধারণের পর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সাহায্য নেমে আসে। তাদের কল্পনার বাইরে খাবার চলে আসে। তা ছিল বিশালাকার এক মাছ । সাগরের উপবাহিকায় তারা সেটি দেখতে পেয়েছিলেন। হযরত জাবির রাযি. সেটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন-
(বিশাল স্তুপের মত। আমরা সেটির কাছে আসলাম। দেখি কি সেটি আম্বর নামক সামুদ্রিক জীব)। অর্থাৎ এক প্রকার তিমি মাছ। ইবনে সিনা রহ: বলেন, এ মাছ অন্যান্য মাছ খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে, তার উদরে আম্বর নামক সুগন্ধি তৈরি হয়ে থাকে। ইমাম আযহারী রহ. বলেন, আম্বর মাছ থাকে মহাসাগরে। তা দৈর্ঘ্যে ৫০ হাত পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সেই মাছটি খাওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছিল। হযরত আবু উবায়দা রাযি. প্রথমে নিষেধ করেছিলেন। হযরত জাবির রাযি.বলেন-
فقال أبو عبيدة: ميتة (আবূ উবায়দা বললেন, এটি মরা)। মরা জন্তু খাওয়া হারাম। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضطر غَيْرَ بَاغٍ و لا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيم
“তিনি তো তোমাদের জন্য কেবল মৃত জন্তু, রক্ত ও শূকরের গোশত হারাম করেছেন এবং সেই জন্তুও, যার প্রতি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়। হাঁ, কোনও ব্যক্তি যদি চরম অনন্যোপায় অবস্থায় থাকে (ফলে এসব বস্ত্র হতে কিছু খেয়ে নেয়) আর তার উদ্দেশ্য মজা ভোগ করা না হয় এবং সে (প্রয়োজনের) সীমা অতিক্রমও না করে, তবে তার কোনও গুনাহ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"
পরে তিনি খাওয়ার অনুমতি দেন। খাওয়া যে বৈধ হবে তার পক্ষে তিনি এই বলে প্রমাণ পেশ করেন যে- (আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেরিত এবং আমরা আল্লাহর রাস্তায় আছি। আর তোমরা তো অপারগ হয়ে পড়েছ)। উপরিউক্ত আয়াতেও বলা হয়েছে- فَمَنِ اضطر غَيْرَ بَاغٍ و لا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ (কোনও ব্যক্তি যদি চরম অনন্যোপায় অবস্থায় থাকে...)। সম্ভবত হযরত আবু উবায়দা রাযি. প্রমাণটি এ আয়াত থেকেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আয়াতের হুকুমটি স্থলের প্রাণী সম্পর্কে, পানির প্রাণী সম্পর্কে নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أحِلَّتْ لَنا مَيْتَانِ الْحُوتُ وَالْجَرَادُ
আমাদের জন্য দুটি মৃত জীব হালাল করা হয়েছে- মাছ ও ফড়িং ।
অপর এক হাদীছে ইরশাদ-
هو الطهور ماؤه الحل ميتته
“সাগরের পানি পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম এবং তার মৃত প্রাণী হালাল।
সম্ভবত এসব হাদীছ আরও পরের। তাই হযরত আবু উবায়দা রাযি. আয়াতের ভিত্তিতেই চিন্তা করেছেন। বস্তুত মাছটি তাদের জন্য এমনিই হালাল ছিল। এমনিই যে হালাল ছিল, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল দ্বারাও বোঝা যায়। তিনি তো নিরুপায় ছিলেন না। তা সত্ত্বেও সাহাবীগণ ওই মাছের অবশিষ্ট অংশ মদীনায় নিয়ে আসলে তিনি তা খেয়েছিলেন।
মাছটি কত বড় ছিল তা বোঝানোর জন্য হযরত জাবির রাযি. সেটির বিভিন্ন অবস্থা বর্ণনা করার পর বলেন- (তিনি সেটির পাঁজরের একটি হাড় নিয়ে দাঁড় করান। তারপর আমাদের সঙ্গে সবচে' বড় একটি উটের উপর হাওদা স্থাপন করেন। তারপর সে হাড়ের নিচ থেকে সেটি পার হয়ে গেল)। এক বর্ণনায় আছে, "তবুও তার মাথা সে হাড় স্পর্শ করল না।" কে ছিলেন সেই দীর্ঘাঙ্গী ব্যক্তি? অনুমান করা যায় তিনি ছিলেন হযরত কায়স ইবন সা'দ রাযি.। উপরে বলা হয়েছে, তিনি পর পর তিনদিন তিনটি করে উট সকলকে জবাই করে খাইয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি এ যুদ্ধে ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দীর্ঘদেহী ছিলেন। হযরত মু'আবিয়া রাযি.-এর যমানায় তিনি তাঁর লম্বা শরীর দিয়ে উম্মতের মান বাঁচিয়েছিলেন।
ঘটনার বিবরণের প্রকাশ, রোম সম্রাট তাদের সর্বাপেক্ষা দীর্ঘ ব্যক্তিকে দামেশকে পাঠিয়েছিলেন। মুসলিমগণ তার সমান কোনও লম্বা ব্যক্তিকে দেখাতে পারে কি না তার চ্যালেঞ্জ। হযরত মু'আবিয়া রাযি. হযরত কায়স ইবন সা'দ রাযি.-কে ডেকে পাঠালেন। হযরত কায়স ইবন সা'দ রাযি.-এর পরিধানে লম্বা জামা তো ছিলই। তিনি পায়জামাটি খুলে ওই লোককে পরতে দিলেন। দেখা গেল পায়জামার নিচের দিক মাটিতে লেগে আছে আর উপরের দিক ওই লোকটির নাকে লেগে গেছে। পায়জামা খুলে ফেলায় কেউ কেউ নিন্দা করলে উত্তরে তিনি বলেছিলেন-
"আমি চেয়েছি লোকে জানুক এটা
কায়সের পায়জামা, প্রতিনিধি দল সাক্ষী থাকুক।
লোকে যেন বলতে না পারে কায়সের অনুপস্থিতিতে
এটা প্রাচীন 'আদ ও ছামূদ জাতির পায়জামা।
তিনশ সদস্যের সে বাহিনী দীর্ঘ একমাস ওই মাছ খাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা নিয়ে মদীনায় ফিরে আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন- তা রিযিক, যা আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য (সাগর থেকে) বের করেছেন। তোমাদের সঙ্গে কি তার কিছু গোশত আছে? থাকলে আমাদের খাওয়াও। তিনি এ কথা বলেছিলেন হয়তো মৃত সে মাছটি হালাল হওয়ার ব্যাপারে তাদেরকে আশ্বস্ত করার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই তিনি তা খেতে আগ্রহ প্রকাশ করায় তাদের অন্তরে হালাল হওয়া সম্পর্কে কোনও সন্দেহ থাকলেও তা দূর হয়ে যাবে।
এমনও হতে পারে যে, অস্বাভাবিকভাবে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে এ রিযিক দেওয়ায় এর মধ্যে আলাদা একটা বরকত থাকবে। বিশেষত এটা যখন তাদের ধৈর্যের একটা ফলও বটে। সেই বরকত লাভের উদ্দেশ্যেই তিনি তা খেয়ে থাকবেন।
এটা তাদের ধৈর্যের ফল তো ছিলই। 'সবরে যে মেওয়া ফলে'- তা কুরআন-হাদীছেরও কথা। সবর তাকওয়া ও আল্লাহভীতির অপরিহার্য অঙ্গ। আর তাকওয়া অবলম্বনকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَ مَن يَتَّقِ اللهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا وَيَرْزقهُ مِنْ حَيْثُ لا يَحْتَسِبُ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“যে-কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোনও পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিযিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে। যে-কেউ আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্লাহই তার (কর্ম সম্পাদনের) জন্য যথেষ্ট।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দাওয়াত ও জিহাদের জন্য জামাত পাঠানোর সময় কেন্দ্র থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী পথখরচা দিয়ে দেওয়া চাই।
খ. দাওয়াত ও জিহাদের কাজে প্রেরিত জামাতের অভাব-অনটনে ধৈর্যহারা হতে নেই। সবরের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে রত থাকলে আল্লাহ তা'আলা সাহায্য করে থাকেন।
গ. জামাতের আমীরের কর্তব্য- খানাপিনার ক্ষেত্রেও সঙ্গীদের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা।
ঘ. সংকটে স্বাচ্ছন্দ্যে সর্বাবস্থায় আমীরের হুকুম মেনে চলা কর্তব্য।
ঙ. মু'জিযা ও কারামাত সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।
চ. তিমি মাছ খাওয়া জায়েয এবং মরা মাছ খাওয়াও জায়েয, যদি তা বাহ্যিক কোনও কারণ ছাড়া মরে পানির উপর ভেসে না ওঠে।
ছ. অনন্যোপায় অবস্থায় ক্ষুধা নিবারণ হয় পরিমাণ নিষিদ্ধ খাবার খাওয়ার অনুমতি আছে।
জ. তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে আল্লাহ তা'আলা বিপদ থেকে মুক্তির উপায় করে দেন এবং অকল্পনীয়ভাবে রিযিক দান করেন।
ঝ. আল্লাহর পথ থেকে জামাত ফিরে আসার পর তাদের প্রতি আমীরুল মুমিনীন বা তার প্রতিনিধির উৎসাহব্যঞ্জক আচরণ করা কর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
