আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৩- জিহাদের বিধানাবলী ও নবীজীর যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং: ৪৫০৮
আন্তর্জাতিক নং: ১৭৯৮-১
৪০. মুনাফিকদের অত্যাচারে আল্লাহর নিকট নবী (ﷺ) এর দুআ ও ধৈর্যধারণ
৪৫০৮। ইসহাক ইবনে ইবরাহীম হানযালী মুহাম্মাদ ইবনে রাফি’ ও আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ......... উসামা ইবনে যায়দ (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) একটি গাধায় আরোহণ করলেন যার উপর জীন (বসার গদি) ছিল এবং তার নীচে একটি ফাদাকী মখমল বিছানো ছিল। তিনি তার পাশ্চাতে উসামা (রাযিঃ) কে বসালেন। বনী হারিস ইবনে খাযরাজ গোত্রের এলাকায় তিনি সাঈদ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) কে (তার অসুস্থ অবস্থায়) দেখতে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। তিনি এমন একটি সমাবেশ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, মুশরিক পৌত্তলিক ও ইয়াহুদীরা একত্রে বসা ছিল। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও ছিল এবং মজলিসে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাযিঃ) ও ছিলেন। যখন মজলিসটি সওয়ারীর ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার নাক চাঁদর দিয়ে ঢেকে নিল।

এরপর বলল, আপনারা আমাদের উপর ধুলি উড়াবেন না। তখন নবী (ﷺ) তাদের সালাম দিলেন। তারপর তিনি সেখানে থামলেন এবং নামলেন। আর তাদের আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলেন। এবং তাদের সম্মুখে কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বলে উঠলো, ওহে লোক! আপনি যা বলছেন তা যদি সত্যই হয় তবে এর চাইতে উত্তম আর কিছুই নয় যে, আপনি আমাদের মজলিসে এসে আমাদের কষ্ট দিবেন না। আপনি আপনার বাসস্থানে ফিরে যান। সেখানে আমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি যায়, তার কাছে আপনি এসব উপদেশ বিতরন করবেন।

তখন আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাযিঃ) বলে উঠলেন, (ইয়া রাসুলাল্লাহ) আমাদের মজলিসে (যতখুশী ইচ্ছা) আগমন করবেন। কেননা, আমরা তা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক, ইয়াহুদীরা পরস্পরে বাদানুবাদ ও গালাগালিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এমন কি রীতিমত একটা দাঙ্গা বাঁধার উপক্রম হয়।

নবী (ﷺ) তাদের নিবৃত করতে লাগলেন। তারপর তাঁর বাহনে সওয়ার হয়ে সা’দ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) এর বাড়ীতে গিয়ে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, সা’দ! তুমি কি শোননি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কী বলেছে? সে এরুপ এরূপ উক্তি করেছে। সা’দ (রাযিঃ) বললেন, একে ক্ষমা করে দেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! এবং মার্জনা করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ যে মর্যাদা দিয়েছেন, তা তো দিয়েছেনই।

এই জনপদের লোকজন স্থির করেছিল যে, তাকে রাজ মুকুট ও (সর্দারের) পাগড়ী পরাবে। (অর্থাৎ তাকে তাদের নেতা বানাবে) কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে সত্য দান করেছেন, তা দিয়ে যখন আল্লাহ তাআলা তার আকাঙ্ক্ষা ঠুকরে দিলেন, তাতে সে বিদ্বিষ্ট হয়ে পড়ে। তাই সে এরূপ আচরণ করেছে যা আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন। এতে নবী (ﷺ) তাকে মার্জনা করে দিলেন।
باب فِي دُعَاءِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى اللَّهِ وَصَبْرِهِ عَلَى أَذَى الْمُنَافِقِينَ
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، - وَاللَّفْظُ لاِبْنِ رَافِعٍ - قَالَ ابْنُ رَافِعٍ حَدَّثَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، أَنَّ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَكِبَ حِمَارًا عَلَيْهِ إِكَافٌ تَحْتَهُ قَطِيفَةٌ فَدَكِيَّةٌ وَأَرْدَفَ وَرَاءَهُ أُسَامَةَ وَهُوَ يَعُودُ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ فِي بَنِي الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ وَذَاكَ قَبْلَ وَقْعَةِ بَدْرٍ حَتَّى مَرَّ بِمَجْلِسٍ فِيهِ أَخْلاَطٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُشْرِكِينَ عَبَدَةِ الأَوْثَانِ وَالْيَهُودِ فِيهِمْ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَىٍّ وَفِي الْمَجْلِسِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَوَاحَةَ فَلَمَّا غَشِيَتِ الْمَجْلِسَ عَجَاجَةُ الدَّابَّةِ خَمَّرَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَىٍّ أَنْفَهُ بِرِدَائِهِ ثُمَّ قَالَ لاَ تُغَبِّرُوا عَلَيْنَا . فَسَلَّمَ عَلَيْهِمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ وَقَفَ فَنَزَلَ فَدَعَاهُمْ إِلَى اللَّهِ وَقَرَأَ عَلَيْهِمُ الْقُرْآنَ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَىٍّ أَيُّهَا الْمَرْءُ لاَ أَحْسَنَ مِنْ هَذَا إِنْ كَانَ مَا تَقُولُ حَقًّا فَلاَ تُؤْذِنَا فِي مَجَالِسِنَا وَارْجِعْ إِلَى رَحْلِكَ فَمَنْ جَاءَكَ مِنَّا فَاقْصُصْ عَلَيْهِ . فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَوَاحَةَ اغْشَنَا فِي مَجَالِسِنَا فَإِنَّا نُحِبُّ ذَلِكَ . قَالَ فَاسْتَبَّ الْمُسْلِمُونَ وَالْمُشْرِكُونَ وَالْيَهُودُ حَتَّى هَمُّوا أَنْ يَتَوَاثَبُوا فَلَمْ يَزَلِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُخَفِّضُهُمْ ثُمَّ رَكِبَ دَابَّتَهُ حَتَّى دَخَلَ عَلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ فَقَالَ " أَىْ سَعْدُ أَلَمْ تَسْمَعْ إِلَى مَا قَالَ أَبُو حُبَابٍ - يُرِيدُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَىٍّ - قَالَ كَذَا وَكَذَا " . قَالَ اعْفُ عَنْهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَاصْفَحْ فَوَاللَّهِ لَقَدْ أَعْطَاكَ اللَّهُ الَّذِي أَعْطَاكَ وَلَقَدِ اصْطَلَحَ أَهْلُ هَذِهِ الْبُحَيْرَةِ أَنْ يُتَوِّجُوهُ فَيُعَصِّبُوهُ بِالْعِصَابَةِ فَلَمَّا رَدَّ اللَّهُ ذَلِكَ بِالْحَقِّ الَّذِي أَعْطَاكَهُ شَرِقَ بِذَلِكَ فَذَلِكَ فَعَلَ بِهِ مَا رَأَيْتَ . فَعَفَا عَنْهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

যদি এমন কোনও স্থানে যাওয়া হয়, যেখানে মুসলিম-অমুসলিম বিভিন্ন শ্রেণির লোক আছে, তবে সালাম দেওয়া হবে কি না? আলোচ্য হাদীছটিতে তার উত্তর পাওয়া যায়। একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরকম একটি মজলিসের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে মজলিসে মুসলিম, ইহুদি ও অগ্নিপূজারী তিনও শ্রেণির লোক ছিল।

কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তিনি যাচ্ছিলেন হযরত সা'দ ইবন উবাদা রাযি.-কে দেখতে। তিনি অসুস্থ ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসটির নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত লোকদের সালাম দিলেন। বলাবাহুল্য তাঁর সে সালামের লক্ষ্যবস্তু ছিল মুসলিমগণ। কেননা অমুসলিমদের সালাম দেওয়া যায় না। হাদীসে আছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা ইহুদি ও নাসারাকে আগে সালাম দিয়ো না। (সহীহ মুসলিম : : ২১৬৭; জামে তিরমিযী : ২৭০০; মুসনাদে আহমাদ: ৮৫৪০; মুসনাদুল ববযার: ৯০৫২; তহাবী, শারহু মা'আনিল আছার: ৭২৬০; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৫১২)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যেখানে মুসলিম-অমুসলিম সবরকম লোক থাকে, সেরকম জায়গায় গেলে সালাম দেওয়া চাই। তাতে লক্ষ্যবস্তু থাকবে মুসলিমগণ।

খ. প্রয়োজনে অমুসলিমদের সঙ্গে এক মজলিসে উপস্থিত থাকা যেতে পারে। তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে নিজের উপর তাদের কোনও প্রভাব না পড়ে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)