আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৩- জিহাদের বিধানাবলী ও নবীজীর যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং: ৪৪৫৬
আন্তর্জাতিক নং: ১৭৭৩-১
২৬. বাদশাহ হিরাকল (হিরাক্লিয়াস) এর নিকট ইসলামের দাওয়াত প্রদান করে নবী (ﷺ) এর পত্র
৪৪৫৬। ইসহাক ইবনে ইবরাহীম হানযালী, ইবনে আবু উমর, মুহাম্মাদ ইবনে রাফি ও আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবু সুফিয়ান (রাযিঃ) মুখোমুখি (সরাসরি) এ হাদীস অবহিত করেছেন। যখন আমার মধ্যে এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মধ্যে (হুদায়বিয়ার) সন্ধির সময়কাল কার্যকর ছিল (ষষ্ঠ হিজরীতে) তখন আমি (সফরে) বের হলাম। যখন আমি শাম দেশে উপস্থিত হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রেরিত একটি পত্র হিরাকল (হিরাক্লিয়াস) বাদশাহর নিকট পৌঁছল। দিহইয়া আল-কালবী (রাযিঃ) (দূত) এই পত্র নিয়ে গিয়েছিলন। তিনি সেই পত্র ‘বুসরার’ প্রধান শাসনকর্তাকে প্রদান করেন। এরপর বুসরার প্রধান, হিরাকল বাদশাহর নিকট পত্রটি হস্তান্তর করেন। তখন হিরাকল বাদশাহ বললেন, এখানে ঐ লোকটির (মুহাম্মাদ (ﷺ) এর) সম্প্রদায়ের কোন লোক আছে কি, যিনি নিজেকে নবী বলে দাবী করেছেন? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন কুরাইশদের এক দল লোকের সঙ্গে আমাকেও ডাকা হল।

এরপর আমরা হিরাকল বাদশাহর নিকটে প্রবেশ করলাম। আমাদেরকে তার সম্মুখেই বসান হল। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, যিনি নবী দাবী করছেন আত্মীয়তার দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে অধিক নিকটবর্তী? তখন আবু সুফিয়ান বললেন, আমি। তখন তাঁরা আমাকে বাদশাহর সামনেই বসালেন এবং আমার সঙ্গীদেরকে আমার পিছনে বসালেন। এরপর তিনি তার দোভাষীকে ডাকলেন এবং তাকে বললেন, “আমি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে বলে দাও যে, আমি তাকে (আবু সুফিয়ানকে) ঐ লোকটি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করব, যিনি নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন। যদি তিনি (আবু সুফিয়ান) আমার নিকট মিথ্যা কথা বলেন, তবে আপনারা তাকে মিথ্যাবাদী বলে ঘোষণা দেবেন। তখন আবু সুফিয়ান বলেন, আল্লাহর শপথ! যদি আমার এই ভয় না হত যে, মিথ্যা বললে তা আমার নামে উদ্ধৃত হতে থাকবে তবে নিশ্চয়ই (তাঁর সম্পর্কে) মিথ্যা কথা বলতাম।

অতঃপর বাদশাহ তার দোভাষীকে বললেন, তুমি তাকে (আবু সুফিয়ানকে) জিজ্ঞাসা কর, আপনাদের মাঝে ঐ লোকটির বংশ পরিচয় কেমন? আমি বললাম, তিনি আমাদের মাঝে সম্ভ্রান্ত বংশীয়। এরপর তিনি বললেন, তাঁর পিতৃ পুরুষদের মধ্যে কি কেউ কখনও বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি কখনও তাঁকে এ কথা বলার পূর্বে, যা তিনি বলেছেন, মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন? আমি বললাম না। তিনি আবার বললেন, সমাজের কোন শ্রেণীর লোক তাঁর অনুসরণ করে? সম্ভ্রান্ত প্রভাবশালীরা, না দুর্বলেরা? আমি বললাম, (সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা নয়); বরং দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা।

তিনি বললেন, তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, না কমছে? আমি বললাম, (কমছে না), বরং (দিনদিন) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপর তিনি বললেন, যে সব লোক তাঁর ধর্মে প্রবেশ করছে তারা কি পরবর্তীতে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হচ্ছে? আমি বললাম, না। এরপর তিনি বললেন, আপনারা কি কখনও তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনাদের এবং তাঁর মাঝে সংঘটিত যুদ্ধের ফলাফল কিরূপ? আমি বললাম, আমাদের এবং তাঁর মাঝে যুদ্ধের অবস্থা পালাবদল হচ্ছে। কখনও তিনি বিজয়ী হন এবং কখনও বা আমরা বিজয়ী হই। সম্রাট হিরাকল বললেন, তিনি কি (কখনও সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে) বিশ্বাস ভঙ্গ করেন? আমি বললাম না। কিন্তু আমরা বর্তমানে তাঁর সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা (পর্যন্ত সন্ধি চুক্তিতে আব্দ্ধ আছি)। আমরা জানি না যে, পরিশেষে তিনি তাতে কী করবেন। আবু সুফিয়ান বললেন, আল্লাহর শপথ! (প্রশ্ন উত্তরে) আমার পক্ষ হতে এ কথাটি ছাড়া অন্য কোন দ্বিধামূলক কথা সংযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এরপর সম্রাট হিরাকল বললেন, (আপনাদের দেশে) তাঁর (নবুওয়াত দাবীর) পূর্বে কি কোন ব্যক্তি কখনও এরূপ দাবী করেছে? আমি বললাম, না। এরপর সম্রাট হিরাকল তার দোভাষীকে বললেন, আমি তাকে (আবু সুফিয়ানকে) বলে দাও যে, আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর (মুহাম্মাদ (ﷺ) এর) বংশ পরিচয় সম্পর্কে। আপনি তখন বলেছিলেন যে, তিনি সম্ভ্রান্ত বংশীয়। এমনিভাবে রাসূলগণ তাদের সম্প্রদায়ের উত্তম বংশে প্রেরিত হয়ে থাকেন। এরপরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর পিতৃ পুরুষগণের মধ্যে কি কেউ বাদশাহ ছিলন? আপনি প্রতি উত্তরে বলেছিলেন, না। আমি মনে মনে বললাম যে, যদি তাঁর পিতৃপুরুষগণের মধ্যে হতে কেউ বাদশাহ থাকতেন, তবে আমি মনে করতাম যে, হয়তবা তিনি তাঁর পিতৃপুরুষের রাজত্ব পুনরুদ্ধার করতে চান। তারপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর অনুসারী কি দুর্বল শ্রেণীর লোক, না সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর লোক? আপনি বলেছিলেন, দুর্বল শ্রেণীর লোক (আমি বলছি,) তারাই রাসূলগণের অনুসারী হয়ে থাকে।

এরপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, যে তিনি (নবুওয়াতের) যে কথা বলছেন এর পূর্বে কি আপনারা তাঁকে কখনও মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন? আপনি বলেছিলেন যে, না। এতে আমি বুঝতে পারলাম, যে ব্যক্তি (জাগতিক ব্যপারে) মানুষের সাথে মিথ্যা বলেন না, তিনি কি কারণে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করতে যাবেন? এরপর আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, কোন ব্যক্তি কি তাঁর ধর্ম গ্রহণ করার পর তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর ধর্ম পরিত্যাগ করেছে? আপনি বলেছিলেন, না। ঈমানের প্রকৃত অবস্থা এটাই। যখন অন্তরের অন্তস্থলে একবার তা সংমিশ্রিত হয় (তখন সেখানেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করে)। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর অনুগামীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, না কমছে? আপনি বলেছিলেন, তারা সংখায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাই হল ঈমানের প্রকৃত অবস্থা। তা বৃদ্ধি পেতে পেতে অবশেষে পূর্ণতা লাভ করে।

এরপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা কি তাঁর সঙ্গে কোন যুদ্ধ করেছেন? আপনি বলেছিলেন, হ্যাঁ, আপনারা তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন। তবে আপনাদের মাঝে ও তাঁর মাঝে যুদ্ধের অবস্থা হল পালাবদলের মত। কখনও তিনি বিজয়ী হন, আবার কখনও আপনারা বিজয়ী হন। এভাবে রাসূলগণকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। পরিণামে তাঁরাই বিজয়ী হয়ে থাকেন। এরপর আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি কি কখনও (কোন সন্ধির) চুক্তি ভঙ্গ করেন? আপনি বলেছিলেন, তিনি কোন চুক্তিভঙ্গ করেন না, এভাবে রাসূলগণ কখনও কোন চুক্তি ভঙ্গ করেন না। আর আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাঁর এই কথা (নবুওয়াতের কথা) বলার পূর্বে কি কোন ব্যক্তি অনুরূপ কথা বলেছেন? আপনি বলেছিলেন যে, না। আমি তা এ কারণে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ,যদি তাঁর পূর্বে কেউ এরূপ দাবী করে থাকতো , তবে আমি মনে করতাম যে, সে ব্যক্তি তাঁর পূর্বে যে কথা বলা হয়েছিল তার অনুকরণ করেছে।

রাবী বলেন এরপর হিরাকল জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি আপনাদের কি করতে আদেশ করেন? আমি (আবু সুফিয়ান) বললাম, তিনি আমাদেরকে নামায আদায় করতে, যাকাত দিতে, আত্মীয় সম্বন্ধ অটুট রাখতে (নিকট আত্মীয় ও হকদার ব্যক্তিদের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে) এবং চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করতে (অবৈধ ও অসৌজন্যমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে) আদেশ করে থাকেন।

তিনি (বাদশাহ হিরাকল) বললেন, আপনি তাঁর সম্পর্কে যা বললেন তাঁর অবস্থা যদি ঠিক তাই হয় তবে তিনি অবশ্যই নবী। আমি জানতাম যে, একজন নবীর আবির্ভাব ঘটবে। কিন্তু আমি ধারণা করিনি যে, তিনি আপনাদের থেকে হবেন। যদি আমি জানতাম যে, আমি তাঁর নিকট নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারবো তবে নিশ্চয়ই আমি তাঁর মুবারক পদদ্বয় ধুইয়ে দিতাম। (জেনে রেখো) নিশ্চয়ই তাঁর রাজত্ব আমার দু’পায়ের নীচ পর্যন্ত পৌঁছাবে। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর চিঠিটি তলব করলেন এবং তা পাঠ (করার আদেশ) করলেন। এতে ছিলঃ

“দয়াবান দয়ালু আল্লাহর নামে! এটা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পক্ষ থেকে রোমের প্রধান ব্যক্তি হিরাকল এর প্রতি। সালাম সেই ব্যক্তির উপর, যিনি (হিদায়াতের) সঠিক পথ অনুসরণ করেন। অতঃপর নিশ্চয়ই আমি আপনাকে ইসলামের আহবান জানাচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, নিরাপদ থাকবেন। আপনি মুসলমান হউন, আল্লাহ আপনাকে আপনার প্রতিদান দ্বিগুণ করে দান করবেন। আর যদি আপনি (ইসলাম থেকে) বিমুখ থাকেন, তবে নিশ্চয়ই প্রজাদের পাপ আপনার উপর আরোপিত হবে।

“হে আহলে কিতাব! তোমরা এসো সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যে আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করব না, কোন কিছুকেই তাঁর শরীক করব না, যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় (অবাধ্য হয়) তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক আমরা মুসলিম”

এরপর তিনি পত্র পাঠ শেষ করলে তাঁর নিকটে শোরগোল এবং হৈ চৈ হতে লাগল। এদিকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হল। আমরা বেরিয়ে এলাম। আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা যখন বেরিয়ে এলাম তখন আমি আমার সঙ্গীদের বললাম, আবু কাবাশার পুত্রের ব্যপারটি অত্যন্ত সুদৃঢ় হয়েছে। বনী আসফার (লাল চামড়াদের) বাদশাহও তাঁকে ভয় করছে। অবশেষে এক সময় আল্লাহ তাআলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দিলেন।
باب كِتَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَى هِرَقْلَ يَدْعُوهُ إِلَى الإِسْلاَمِ
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، وَعَبْدُ بْنُ، حُمَيْدٍ - وَاللَّفْظُ لاِبْنِ رَافِعٍ - قَالَ ابْنُ رَافِعٍ وَابْنُ أَبِي عُمَرَ حَدَّثَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ أَبَا سُفْيَانَ، أَخْبَرَهُ مِنْ، فِيهِ إِلَى فِيهِ قَالَ انْطَلَقْتُ فِي الْمُدَّةِ الَّتِي كَانَتْ بَيْنِي وَبَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَبَيْنَا أَنَا بِالشَّأْمِ إِذْ جِيءَ بِكِتَابٍ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى هِرَقْلَ يَعْنِي عَظِيمَ الرُّومِ - قَالَ - وَكَانَ دِحْيَةُ الْكَلْبِيُّ جَاءَ بِهِ فَدَفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى فَدَفَعَهُ عَظِيمُ بُصْرَى إِلَى هِرَقْلَ فَقَالَ هِرَقْلُ هَلْ هَا هُنَا أَحَدٌ مِنْ قَوْمِ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ قَالُوا نَعَمْ - قَالَ - فَدُعِيتُ فِي نَفَرٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَدَخَلْنَا عَلَى هِرَقْلَ فَأَجْلَسَنَا بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا مِنْ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ فَقَالَ أَبُو سُفْيَانَ فَقُلْتُ أَنَا . فَأَجْلَسُونِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَجْلَسُوا أَصْحَابِي خَلْفِي ثُمَّ دَعَا بِتَرْجُمَانِهِ فَقَالَ لَهُ قُلْ لَهُمْ إِنِّي سَائِلٌ هَذَا عَنِ الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ فَإِنْ كَذَبَنِي فَكَذِّبُوهُ . قَالَ فَقَالَ أَبُو سُفْيَانَ وَايْمُ اللَّهِ لَوْلاَ مَخَافَةَ أَنْ يُؤْثَرَ عَلَىَّ الْكَذِبُ لَكَذَبْتُ . ثُمَّ قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ سَلْهُ كَيْفَ حَسَبُهُ فِيكُمْ قَالَ قُلْتُ هُوَ فِينَا ذُو حَسَبٍ قَالَ فَهَلْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مَلِكٌ قُلْتُ لاَ . قَالَ فَهَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ قُلْتُ لاَ . قَالَ وَمَنْ يَتَّبِعُهُ أَشْرَافُ النَّاسِ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ قَالَ قُلْتُ بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ . قَالَ أَيَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ قَالَ قُلْتُ لاَ بَلْ يَزِيدُونَ . قَالَ هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنْ دِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ سَخْطَةً لَهُ قَالَ قُلْتُ لاَ . قَالَ فَهَلْ قَاتَلْتُمُوهُ قُلْتُ نَعَمْ . قَالَ فَكَيْفَ كَانَ قِتَالُكُمْ إِيَّاهُ قَالَ قُلْتُ تَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُ سِجَالاً يُصِيبُ مِنَّا وَنُصِيبُ مِنْهُ . قَالَ فَهَلْ يَغْدِرُ قُلْتُ لاَ . وَنَحْنُ مِنْهُ فِي مُدَّةٍ لاَ نَدْرِي مَا هُوَ صَانِعٌ فِيهَا . قَالَ فَوَاللَّهِ مَا أَمْكَنَنِي مِنْ كَلِمَةٍ أُدْخِلُ فِيهَا شَيْئًا غَيْرَ هَذِهِ . قَالَ فَهَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ قَالَ قُلْتُ لاَ . قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ قُلْ لَهُ إِنِّي سَأَلْتُكَ عَنْ حَسَبِهِ فَزَعَمْتَ أَنَّهُ فِيكُمْ ذُو حَسَبٍ وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِي أَحْسَابِ قَوْمِهَا . وَسَأَلْتُكَ هَلْ كَانَ فِي آبَائِهِ مَلِكٌ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ . فَقُلْتُ لَوْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مَلِكٌ قُلْتُ رَجُلٌ يَطْلُبُ مُلْكَ آبَائِهِ . وَسَأَلْتُكَ عَنْ أَتْبَاعِهِ أَضُعَفَاؤُهُمْ أَمْ أَشْرَافُهُمْ فَقُلْتَ بَلْ ضُعَفَاؤُهُمْ وَهُمْ أَتْبَاعُ الرُّسُلِ . وَسَأَلْتُكَ هَلْ كُنْتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ . فَقَدْ عَرَفْتُ أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ لِيَدَعَ الْكَذِبَ عَلَى النَّاسِ ثُمَّ يَذْهَبَ فَيَكْذِبَ عَلَى اللَّهِ . وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ عَنْ دِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَهُ سَخْطَةً لَهُ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ . وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ إِذَا خَالَطَ بَشَاشَةَ الْقُلُوبِ . وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَزِيدُونَ أَوْ يَنْقُصُونَ فَزَعَمْتَ أَنَّهُمْ يَزِيدُونَ وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ حَتَّى يَتِمَّ . وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَاتَلْتُمُوهُ فَزَعَمْتَ أَنَّكُمْ قَدْ قَاتَلْتُمُوهُ فَتَكُونُ الْحَرْبُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ سِجَالاً يَنَالُ مِنْكُمْ وَتَنَالُونَ مِنْهُ . وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْتَلَى ثُمَّ تَكُونُ لَهُمُ الْعَاقِبَةُ وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَغْدِرُ فَزَعَمْتَ أَنَّهُ لاَ يَغْدِرُ . وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ لاَ تَغْدِرُ . وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ فَزَعَمْتَ أَنْ لاَ . فَقُلْتُ لَوْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ أَحَدٌ قَبْلَهُ قُلْتُ رَجُلٌ ائْتَمَّ بِقَوْلٍ قِيلَ قَبْلَهُ . قَالَ ثُمَّ قَالَ بِمَ يَأْمُرُ كُمْ قُلْتُ يَأْمُرُنَا بِالصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ وَالصِّلَةِ وَالْعَفَافِ قَالَ إِنْ يَكُنْ مَا تَقُولُ فِيهِ حَقًّا فَإِنَّهُ نَبِيٌّ وَقَدْ كُنْتُ أَعْلَمُ أَنَّهُ خَارِجٌ وَلَمْ أَكُنْ أَظُنُّهُ مِنْكُمْ وَلَوْ أَنِّي أَعْلَمُ أَنِّي أَخْلُصُ إِلَيْهِ لأَحْبَبْتُ لِقَاءَهُ وَلَوْ كُنْتُ عِنْدَهُ لَغَسَلْتُ عَنْ قَدَمَيْهِ وَلَيَبْلُغَنَّ مُلْكُهُ مَا تَحْتَ قَدَمَىَّ . قَالَ ثُمَّ دَعَا بِكِتَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَرَأَهُ فَإِذَا فِيهِ " بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ سَلاَمٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أَدْعُوكَ بِدِعَايَةِ الإِسْلاَمِ أَسْلِمْ تَسْلَمْ وَأَسْلِمْ يُؤْتِكَ اللَّهُ أَجْرَكَ مَرَّتَيْنِ وَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَإِنَّ عَلَيْكَ إِثْمَ الأَرِيسِيِّينَ وَ ( يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَنْ لاَ نَعْبُدَ إِلاَّ اللَّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ) فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ الْكِتَابِ ارْتَفَعَتِ الأَصْوَاتُ عِنْدَهُ وَكَثُرَ اللَّغْطُ وَأَمَرَ بِنَا فَأُخْرِجْنَا . قَالَ فَقُلْتُ لأَصْحَابِي حِينَ خَرَجْنَا لَقَدْ أَمِرَ أَمْرُ ابْنِ أَبِي كَبْشَةَ إِنَّهُ لَيَخَافُهُ مَلِكُ بَنِي الأَصْفَرِ - قَالَ - فَمَا زِلْتُ مُوقِنًا بِأَمْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ سَيَظْهَرُ حَتَّى أَدْخَلَ اللَّهُ عَلَىَّ الإِسْلاَمَ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যা উপস্থাপনের পূর্বে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ প্রয়োজন মনে করছি, যেগুলোর মাধ্যমে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস বাদশার পরিচয় পাওয়া যাবে এবং তিনি, আবূ সুফিয়ান ও দিহইয়া কালবী রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর বাইতুল মুকাদ্দাসে একত্রিত হওয়ার রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। তা ছাড়া অত্র হাদীসে যে ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হবে, যাতে করে হাদীসের বিষয়বস্তু বুঝা সহজ হবে।

১. যে সময় নবীকুল শিরোমণি সরোয়ারে কায়েনাত খাতামুল আম্বিয়া রাসূলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নশ্বর পৃথিবীতে আগমন করেন, (৮ বা ৯ রবীউল আওয়াল ৫৭০ বা ৫৭১ খ্রিস্টাব্দ রোজ সোমবার) সে সময় সারা দুনিয়ায় দুটি বড় রাষ্ট্রশক্তি ছিল। তার একটি হল রোম রোম সম্রাটকে বলা হত 'কাইসার'। তার নাম ছিল হিরাক্লিয়াস। আরেকটি ছিল পারস্য, যেটির বর্তমান নাম ইরান। পারস্য সম্রাটকে বলা হত 'কিসৱা'। রোমবাসী ছিল আহলে কিতাব বা খ্রিস্টান। আর পারস্যবাসীরা ছিল অগ্নিপূজক। দীর্ঘদিন থেকে এদুটি সাম্রাজ্যের মাঝে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই ছিল।

মক্কাবাসীর নিকট রোম ও পারস্যের যুদ্ধের সংবাদ পৌঁছত। সে সময় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়ত প্রাপ্ত হন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওয়ত দাবী ও ইসলামী আন্দোলন মক্কাবাসীর মনে রোম ও পারস্যের যুদ্ধের খবর নেয়ার এক বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করে।

২. মক্কার মুশরিকরা পারস্যের অগ্নিপূজকদেরকে ধর্মের দিক দিয়ে নিজেদের খুব কাছের মানুষ মনে করত। আর রোমের খ্রিস্টানরা আহলে কিতাব হওয়ার কারণে মুসলমানদের কাছের লোক বলে বিবেচিত হত। এ কারণে পারস্যের বিজয়ের খবর আসলে মুশরিকরা খুশি হত। কেননা পারস্যের বিজয় সংবাদে মক্কার মুশরিকরা মনে করত পারস্যবাসী অগ্নিপূজকরা যেমন আহলে কিতাব খ্রিস্টান রোমবাসীর উপর বিজয়ী হয়েছে, তেমন তওহীদবাদী ইসলামের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারাও বিজয়ী হবে। তারা তখন নানা ধরনের স্বপ্ন দেখত।

পক্ষান্তরে আহলে কিতাব রোমকদের পরাজয়ের সংবাদ শুনলে মুসলমানদের খারাপ লাগত। মুসলমানদের এ দুঃখ ভারাক্রান্ত অবস্থায় কাফির ও মুশরিকরা আনন্দ পেত। আর শেষে ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে যখন চন্দ্রমাসের হিসেবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়স ৪৫ বছর এবং নবুওয়তের পাঁচবছর অতিবাহিত হয়, তখন খসরু পারভেজের শাসন আমলে পারস্যবাসী রোমকে বিরাট আকারে পরাজিত করে। ফলে শাম, মিসর ও এশিয়া সবকয়টি রাজ্য রোমসম্রাটের হাতছাড়া হয়ে যায়। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে ইরানী সৈনারা কুস্তনতুনিয়ায় (কনস্ট্যান্টিনোপল) আশ্রয় নিতে বাধ্য করে এবং রোম সম্রাট এক ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। বড় বড় পাদ্রী নিহত অথবা বন্দী হয়। বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে খ্রিস্টানদের কথিত পবিত্র ক্রুশ ইরানীরা নিশ্চিহ্ন করে দেয়। রোম সম্রাটের ক্ষমতা সমূলে ধ্বংস হয়। বাহ্যত রোমের জন্য পারস্যের একচ্ছত্র শাসন থেকে বের হওয়ার কোন উপায় অবশিষ্ট থাকল না। এ অবস্থায় মক্কার মুশরিকরা অত্যধিক উৎফুল্ল হয়। তারা লম্বা লম্বা আশা পোষণ করতে শুরু করে। এমনকি কোন কোন মুশরিক আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু কে বলল, আজ আমাদের ইরানী ভাইরা তোমাদের রোম ভাইদেরকে পরাজিত করেছে। আগামীতে আমরাও তোমাদেরকে তেমনিভাবে পরাজিত করব। তখনই কুরআন কারীম বাহ্যিক উপকরণের সম্পূর্ণ বিপরীত ঘোষণা করে দিল।

الم غلبت الروم في أذى الأرض وهم من بعد عليهم سيغلبون في يضع سنين، (روم) "

আলিফ-লাম-মীম। রোমানরা পরাজিত হয়েছে নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্ত্বর বিজয়ী হবে কয়েক বছরের মধ্যে।”

৩. কুরআনের উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর উপর ভিত্তি করে আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু কতিপয় মুশরিকের সাথে শর্ত করলেন, যদি এত বছরের মধ্যে রোমানরা বিজয়ী না হয়, তাহলে আমি তোমাদেরকে একশ উট দেব। অন্যথায় তোমরা আমাকে সেই পরিমাণ উট দেবে (এরূপ বাজি ধরা তখনও হারাম হয়নি)।
এদিকে চুক্তি সম্পাদিত হচ্ছে আর ওদিকে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস সকল নৈরাশ্যপূর্ণ অবস্থা থেকে উত্তরে আল্লাহর সাহায্যের উপর ভরসা করে নিজের বিলুপ্ত রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি ও ক্ষমতার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাতে লাগলেন। মান্নত করলেন, যদি আল্লাহ তা'য়ালা পারস্যের উপর আমাকে বিজয় দান করেন, তা হলে আমি হেমস (সিরিয়ার প্রসিদ্ধ শহর) থেকে পায়ে হেঁটে ঈলিয়ায় (বাইতুল মুকাদ্দাস) পৌছব (বাইতুল মুকাদ্দাস তাদের কেবলা ছিল, যেমন আমাদের জন্যে বাইতুল্লাহ্)।

৪. রোমের বিজয় এবং পারস্যের পরাজয়

কুরআন কারীমের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঠিক নয় বছর পর দ্বিতীয় হিজরীতে বদরের যুদ্ধে যখন কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলমানগণ বিজয়ী হন, ঠিক একই সময় আহলে কিতাব রোমক খ্রিস্টানরা অগ্নিপূজারী মুশরিক পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করে। এই খবর শুনে সকলে আরো অধিক আনন্দিত হলেন। রোমানদের বিজয় সংবাদ শুনে এবং পারসিকদের পরাজয়ের গ্লানির সাথে মুশরিকদের অপদস্থতা-লাঞ্ছনা আরও বেড়ে যায়
বাহ্যিক উপায় উপকরণের বিপরীতে কুরমান করীমের এ আশ্চর্যপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তব দেখে অনেক লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। আর আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু শর্ত অনুযায়ী মুশরিকদের কাছ থেকে একশ উট আদায় করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে সেগুলো সদকা করে দেন।

৫. দিহইয়া কালবী রাযি. আবূ সুফিয়ান ও হিরাক্লিয়াসের সম্মিলন

বদর যুদ্ধে যদিও মুসলমানদের বিরাট বিজয় ও সফলতা অর্জিত হয়েছে, এতদসত্ত্বেও যুদ্ধের ধারাক্রম অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় হিজরীতে বদর, তৃতীয় হিজরীতে উৎপ, চতুর্থ হিজরীতে বদরে সুগরা (ছোট বদর), পঞ্চাম হিজরীতে খন্দক (একে আহযাব যুদ্ধও বলা হয়) এ বছরই সংঘটিত ধনী মুস্তালিক যুদ্ধ (যাকে মুরাইসী যুদ্ধও বলা হয়) প্রভৃতি যুদ্ধের কারণে একদিকে মুসলমানদের সফর করা এবং বহির্বিশ্বে বিভিন্ন দেশের শাসক সম্রাটনের নিকট ইসলাম পৌঁছানো এক রকম অসম্ভব ছিল। অন্যদিকে মক্কার কুরাইশদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার কেন্দ্র ছিল সিরিয়া। মদীনার নিকট দিয়ে তাদের সিরিয়ায় যাতায়াত করতে হত। এ কারণে সিরিয়ায় কুরাইশনের ব্যবসা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর ষষ্ঠ হিজরীতে হুদাইবিয়ার সন্ধি হলে পুনরায় সিরিয়ার সাথে কুরাইশদের ব্যবসা পূর্ববৎ চালু হয়।

৬. হুদাইবিয়ার সন্ধির মোটামুটি ঘটনা হল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লান একটি স্বপ্ন দেখে ষষ্ঠ হিজরীতে ফিলকান মাসে দেড় হাজার সাহাবীকে সাথে নিয়ে উমরা করার উদ্দেশ্যে মঞ্চাভিমুখে রওয়ানা হন। মক্কা মুকাররমার নিকটবর্তী হুদাইবিয়া নামক স্থানে পৌঁছে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটনী বসে পড়ে। কোন ভাবেই সেটিকে উঠানো যাচ্ছিল না। ওখানে অনেক ঘটনা ঘটার পর মক্কার কতিপয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । এর নিকট উপস্থিত হয় এবং সন্ধিনামা লেখার সিদ্ধান্ত হয়। সন্ধির শর্তাবলী বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলমানদের বিপক্ষে ছিল। ফলে মুসলমানগণ তলোয়ারের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার লোকদের হঠকারিতা সত্ত্বেও তাদের মতামত মনযুর করে নেন এবং সঙ্গিনামা তৈরী হয়। সঙ্গির শর্তসমূহের একটি শর্ত ছিল, দশ বছর মুসলমান ও কুরাইশদের মাঝে কোন প্রকার যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হবে না।

হুদাইবিয়ার সন্ধির সুবাদে যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ হওয়ার দরুণ কুরাইশদের পক্ষে নিরাপদে নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করার এবং মুসলমানদের জন্যে বহির্বিশ্বসহ আরব উপদ্বীপের সর্বত্র ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার সুযোগ আসে। যুদ্ধের কারণে এতদিন কুরাইশদের সিরিয়কেন্দ্রিক যে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আবূ সুফিয়ানের নেতৃত্বে তা পুনরায় শুরু হয়। সেমতে ত্রিশজনের এক কাফেলা সঙ্গে করে তিনি সিরিয়ায় পৌঁছেন। এদিকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুযোগ পেয়ে রোম, পারস্য, হাবশা, সিরিয়া ও ইয়ামানের সম্রাটদেরকে ইসলামের দাওয়াত-সম্বলিত পত্র লিখে পাঠালেন।

৭. হুদাইবিয়ার সন্ধির পর ষষ্ঠ হিজরীর শেষের দিকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে ইসলামের প্রতি আহবান জানিয়ে একখানা পত্র লিখেন। সাহাবী দেহইয়া কালবী রাদিয়াল্লাহ আনছ এ পত্র বয়ে নিয়ে যান। তিনি ৭ম হিজরীর মুহাররাম মাসের শুরুতে এ পত্র নিয়ে রোম সম্রাটের দরবারে পৌঁছেন।

৮. দেহইয়া কালবী রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন পত্র নিয়ে পৌঁছেন। পারস্যের পরাজয় হলে তিনি রোম সম্রাট হামস থেকে পায়ে হেঁটে তার মান্নত পুরা করার লক্ষ্যে বাইতুল মুকাদ্দাস পৌঁছেছিলেন। দেহইয়া রাদিয়াল্লাহ আনছ বসবার আমীরের মাধ্যমে হিরাক্লিয়াসের নিকট পত্রখানা পৌঁছান। পর পেয়ে রোম সম্রাট এই মর্মে আদেশ করলেন, আলোচিত নবীর নিকটতম আত্মীয়দের কেউ এখানে থাকলে তাকে ডেকে পাঠাও। আবু সুফিয়ান ও তাঁর সঙ্গীদের ডাকা হল। আবু সুফিয় হিরাক্লিয়াসের মাঝে যে কথাবার্তা হয়েছে তার বিবরণ হাদীসেই রয়েছে।

রোম সম্রাটের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি ও সম্রাটের তদন্ত:

হিজরী ৬ সালে মক্কার মুশরিকদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি সন্ধি স্থাপিত হয়। হিজরতের পর থেকে সন্ধিস্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত একের পর এক যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকে। অধিকাংশ সময় নবী কারীম সাল্লা 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে চতুর্দিকে ইসলাম প্রচারে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া যায়নি। হিজরী ৬ষ্ঠ সালে তিনি প্রায় দেড় হাজার সাহাবীসহ উমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররামায় যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু মুশরিকগণ তাঁকে সে সুযোগ দেয়নি। তিনি হুদায়বিয়া নামক স্থানে শিবির ফেলতে বাধ্য হন। সেখানে অনেক আলাপ-আলোচনার পর কুরায়শদের সংগে তাঁর যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থাপিত হয়। এ চুক্তির ফলে পূর্ণোদ্যমে দা'ওয়াতী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ হয়। অভ্যন্তরীণ প্রচার-প্রচারণার বাইরেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাদের কাছে দা'ওয়াতীপত্র প্রেরণ করতে থাকেন। এরকম একটি পত্র পাঠানো হয়েছিল রোমের বাদশার কাছেও। পত্রবাহক ছিলেন হযরত দিহয়া কালবী রাযি.।

তখনকার রোমের বাদশা ছিলেন হিরাল (হেরাক্লিয়াস)। উপাধি কায়সার/কাইযার। রোমের প্রত্যেক বাদশাকেই কাইযার বলা হত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি যখন তার হাতে পৌঁছায়, তখন তিনি ঈলিয়া (বায়তুল মুকাদ্দাস) অবস্থান করছিলেন।

হিরাকল অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ শাসক ছিলেন। চিঠি পাওয়ার পর চটজলদি কোনও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন না। তিনি চাইলেন পত্রপ্রেরক (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন। তারপর ভালোভাবে জেনেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তাঁর সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রদান আরবের কোনও লোকের পক্ষেই সম্ভব। সে লোক যদি মক্কার হয়, বিশেষত তাঁর জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়, তবে আরও ভালো। এমন কোনও লোক পাওয়া যায় কিনা, তিনি খোঁজ নিতে বললেন।

ঘটনাক্রমে আবূ সুফয়ানের বাণিজ্য কাফেলা এ সময় ফিলিস্তীনে অবস্থান করছিল।

তারাও যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্যস্ত থাকায় এতদিন ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগ দিতে পারেনি।
যাহোক হিরাকলের লোকজন আবূ সুফয়ানের বাণিজ্য কাফেলার সন্ধান পেয়ে গেল এবং তারা তাদেরকে রাজদরবারে নিয়ে হাজির করল। কাফেলার প্রত্যেকের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার পর জানা গেল আবূ সুফয়ানই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ। উভয়ে একই কুরায়শ বংশের লোক ও মক্কার বাসিন্দা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা ভালো ধারণা তিনিই দিতে পারবেন। কাজেই কথোপকথনের জন্য কাফেলার লোকদের মধ্যে হিরাকল তাকেই নির্বাচন করলেন।

রোম সম্রাটের দরবারে আবূ সুফয়ান:

সম্রাটের পারিষদবর্গের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন দরবারে উপস্থিত। আবূ সুফয়ানকে তাদের সামনে বসানো হল। তার সঙ্গীদের বসানো হল তার পেছনে। এটা ছিল হিরাকলের সতর্কতা। যাতে তারা পরস্পর ইশারা-ইঙ্গিতে ভাবের লেনদেন করতে না পারে।
হিরাকল তাকে নবী কারীম 'সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম' সম্পর্কে অনেকগুলো প্রশ্ন করলেন। আবূ সুফয়ান তার প্রত্যেকটির সঠিক উত্তর দান করেন। একটি প্রশ্নেরও উত্তরে কোনও অসত্যকথা বলেননি। রাজনৈতিক কুটকৌশলের দিকে লক্ষ করলে এ ক্ষেত্রে তার মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কথা ছিল। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার শত্রু। তাঁকে দমন করার জন্য এ যাবতকাল অনেক শক্তি ক্ষয় করেছেন। কিন্তু তাতে সফলতা লাভ করতে পারেননি। এবার সফলতা লাভের একটা বড় সুযোগ হাতে এসে গেছে। রোমসম্রাট বলে কথা!! তখনকার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শক্তি। তাকে যদি খেপিয়ে দেওয়া যায়, তবে মদীনায় হামলা চালিয়ে নিমিষেই সবকিছু চুরমার করে দিতে পারে। ইসলামের মূলোৎপাটন করার এ এক সুবর্ণ সুযোগ। কোনও বুদ্ধিমান ব্যক্তি শত্রু দমনের এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে পারে না। আবূ সুফয়ানেরও তা করার কথা নয়। কিন্তু সেজন্য যে কিছু মিথ্যাকথা বলতে হয়! সমস্যা এখানেই। আবূ সুফয়ান বলেন, আল্লাহর কসম! লজ্জাই বাধ সেধেছে। আমি মিথ্যা বলি- এ কথা দেশময় প্রচার হয়ে যাবে। সেই লজ্জা! নয়তো আমি অবশ্যই তাঁর সম্পর্কে মিথ্যাকথা বলতাম।

এর থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে। আবূ সুফয়ান তখনও কাফের এবং ইসলামের ঘোরশত্রু। তা সত্ত্বেও তিনি মিথ্যা বলাকে নিজের পক্ষে লজ্জাস্কর মনে করেছেন। লোকে জানবে তিনি মিথ্যা বলেন, এটাকে নিজের পক্ষে অপমানকর মনে করেছেন। বিশেষত তিনি একজন জননেতা। লোকে জানবে তাদের নেতা মিথ্যা বলে।
সেই লজ্জায় তিনি মিথ্যা বলা হতে বিরত থেকেছেন। আজ আমাদের কী অবস্থা!
কথায় কথায় মিথ্যা বলি। তা জনসম্মুখে প্রকাশ্যেই বলি। ছোটদের সামনে বলি, বড়দের সামনেও বলি। আপন-পর সকলের সামনেই বলি।

সংক্ষিপ্ত নববী শিক্ষার ভেতর পূর্ণাঙ্গ ইসলামের ছবি:

যাহোক হিরাকল আবূ সুফয়ানকে অনেকগুলো প্রশ্ন করেছিলেন। আমরা তার বিস্তারিত বিবরণের দিকে যাচ্ছি না। এখানে কেবল এতটুকু উল্লেখ্য যে, হিরাকল তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কী আদেশ করেন (অর্থাৎ কী শিক্ষা দেন)? আবূ সুফয়ান উত্তর দিলেন, তিনি বলে থাকেন- তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কোনওকিছুকে শরীক করো না। তোমাদের বাপ-দাদাগণ যা বলে তা পরিত্যাগ কর। আর তিনি আমাদেরকে সালাত, সিদক (সততা ও সত্যবাদিতা), আফাফ (সংযম ও শুচিতা) ও আত্মীয়তা রক্ষার নির্দেশ দেন।

লক্ষ করলে বোঝা যায় এর ভেতর সংক্ষেপে ইসলামের মূল শিক্ষাসমূহ এসে গেছে। ইসলামের সর্বপ্রধান শিক্ষা ‘আকীদা-বিশ্বাস। আকীদা-বিশ্বাসের ভেতর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাওহীদ। অর্থাৎ আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা এবং তাঁর সংগে কাউকে শরীক না করা। এ হাদীছে প্রথমে সেই শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে। বলা যেতে পারে এটা 'আকীদা বিষয়ক একটি শিরোনাম। আখিরাত, রিসালাত, তাকদীর প্রভৃতি বিষয়ক বিশ্বাসও এর অন্তর্ভুক্ত। মু'মিন হওয়ার জন্য তার সবগুলোতেই বিশ্বাস রাখা জরুরি। তবে সবার আগে যেহেতু তাওহীদ, তাই শিরোনাম হিসেবে এখানে তাওহীদের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

বাপ-দাদাগণ যা বলে তা পরিহার করতে বলে মূলত শিরক পরিহারের কথাই বলা হয়েছে। আরবে যুগ-যুগ ধরে মূর্তিপূজা চলে আসছিল। পরের প্রজন্ম আগের প্রজন্মকে দেখে দেখে সেটাকেই সত্যধর্ম বলে বিশ্বাস করছিল। এর বিপরীত কোনও কথা তারা মানতে রাজি ছিল না। সাধারণভাবে সর্বত্র এটাই মানুষের চরিত্র। বাপ-দাদাদের যা করতে দেখে আসে তা করতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়, তার বিপরীত কিছু মানতে রাজি হয় না। আরব মুশরিকগণও তা মানছিল না। তাদের বড় অভিযোগ ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তাদের বাপ-দাদাদের আমল থেকে চলে আসা মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে কথা বলেন। আবূ সুফয়ান হয়তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ শিক্ষাটিকে অভিযোগ হিসেবেই উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি নিজেও বাপ-দাদার পথকে ভ্রান্ত আখ্যায়িত করে নতুন পথে চলছেন, অন্যদেরও সে পথে চালাতে চাচ্ছেন। এভাবে বাপ-দাদাকে গোমরাহ সাব্যস্ত করা ও যুগ-যুগ ধরে চলে আসা ধর্মমতকে ভ্রান্ত আখ্যায়িত করা কি কোনও সমর্থনযোগ্য কাজ? এটা কি চরম অন্যায় ও গর্হিত কাজ নয়? এজন্যই আমরা তার নতুন ধর্ম সমর্থন করতে পারছি না। সম্ভবত এই বলে তিনি হেরাক্লিয়াসকেও নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে চাচ্ছিলেন। কারণ হেরাক্লিয়াস ও তার জাতিও হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের রেখে যাওয়া সত্যধর্মের বিপরীতে বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা ভ্রান্ত রীতি-নীতি অনুসরণ করছিল আর তাকেই প্রকৃত খৃষ্টধর্ম বলে বিশ্বাস করছিল। কিন্তু আবূ সুফয়ানের সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। কেননা তার মুখ থেকে যাবতীয় তথ্য শোনার পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সত্য নবী এবং তিনিই সেই প্রতিশ্রুত শেষ পয়গম্বর, যাঁর সম্পর্কে আগের সমস্ত নবী-রাসূল ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। এ কারণে হেরাক্লিয়াস নিজেও ঈমান আনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু যখন পারিষদবর্গ ও যাজক-পুরোহিতদের স্পষ্ট বিরোধিতা লক্ষ করলেন এবং তার পরিণতিতে সিংহাসন হারানোরও আশংকা বোধ করলেন, তখন ভ্রান্ত জানা সত্ত্বেও প্রচলিত খৃষ্ট ধর্মমতেই অবিচল থাকলেন। ক্ষমতার মোহে পড়লে মানুষ এভাবেই সত্যবিমুখ হয়ে থাকে এবং ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার স্বার্থে আখিরাতের চিরস্থায়ী সফলতা বিসর্জন দেয়।
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)