আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

৩৩- জিহাদের বিধানাবলী ও নবীজীর যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং: ৪৪২৮
আন্তর্জাতিক নং: ১৭৫৯-১
১৬. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ আমাদের (নবীগণের) মীরাস বণ্টন হয় না, আমরা যা কিছু রেখে যাই সবই সাদ্‌কা
৪৪২৮। মুহাম্মাদ ইবনে রাফি (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ফাতিমা বিনতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু বকর এর নিকট লোক পাঠালেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্পদ থেকে তার প্রাপ্য মীরাস এর দাবী করে, যা আল্লাহ তাআলা তাকে মদীনা ও ফাদাক এর ফাই এবং খায়বরের অবশিষ্ট এক পঞ্চমাংশ থেকে প্রদান করেছিলেন। তখন আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলে গিয়েছেনঃ আমাদের (নবীগণের) (পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে) মীরাস হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা হবে সাদ্‌কা। মুহাম্মাদ (ﷺ) এর পরিবারবর্গ তা থেকে জীবিকা গ্রহণ করবেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, মুহাম্মাদ (ﷺ) এর সময়কালে সাদ্‌কার যে অবস্থা চালু ছিল তা আমি পরিবর্তন করব না। আর এতে আমি নিশ্চয়ই সে কাজ করবো, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) করে গিয়েছেন।

অতএব, আবু বকর (রাযিঃ) ফাতিমা (রাযিঃ) কে তা থেকে কিছু প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। সুতরাং ফাতিমা (রাযিঃ) এতে রাগাম্বিত হয়ে তাঁকে পরিত্যাগ করলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে (এ ব্যাপারে) আর কোন কথা বলেননি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইন্‌তিকালের পর তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন। এরপর যখন ইন্তিকাল করলেন তখন তাঁর স্বামী আলী ইবনে আবু তালিব (রাযিঃ) তাকে রাতে দাফন করলেন এবং ফাতিমা (রাযিঃ) এর মৃত্যু সংবাদ পর্যন্ত আবু বকর (রাযিঃ) কে দেননি। আলী (রাযিঃ) তাঁর জানাযার নামায আদায় করলেন। ফাতিমা (রাযিঃ) এর জীবিতকাল পর্যন্ত আলী (রাযিঃ) এর প্রতি জনগণের বিশেষ মর্যাদাবোধ ছিল।

এরপর যখন তাঁর ইন্‌তিকাল হল তখন তিনি লোকের চেহারায় অন্যভাব দেখতে পেলেন। অতএব, তিনি আবু বকর (রাযিঃ) এর সঙ্গে আপোষ করে তার বায়আত গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। কয়েক মাস তিনি তার বায়আত করেননি। তারপর আলী (রাযিঃ), আবু বকর (রাযিঃ) এর নিকট লোক পাঠিয়ে সংবাদ দিলেন যে, আপনি একাকী আমাদের এখানে আসুন। আপনার সাথে অন্য কাউকে আনাবেন না। (কেননা তিনি উমর (রাযিঃ) এর আগমনকে অপছন্দ করছিলেন।) উমর (রাযিঃ) আবু বকরকে বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি একাকী তাঁদের কাছে যাবেন না। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, তারা আমার সাথে কি বা করবেন। আল্লাহর কসম! আমি একাকীই যাব। পরিশেষে আবু বকর (রাযিঃ) তাঁদের কাছে গেলেন।

এরপর আলী ইবনে আবু তালেব (রাযিঃ) তাশাহ্‌হুদ [তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য বাণী] পাঠ করলেন, তারপর বললেন, হে আবু বকর! আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে সম্মান প্রদান করেছেন, তা আমরা জানি। আর আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে নিআমত প্রদান করেছেন, তাতে আমার কোন ঈর্ষা নেই। কিন্তু আপনি আমাদের উপর শাসন ক্ষমতায় (খিলাফতের) একচ্ছত্রতা দেখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আত্মীয়তার কারণে আমরা মনে করতাম যে, আমাদেরও অধিকার আছে। আবু বকরের সঙ্গে তিনি কথা বলতে থাকলেন।

পরিশেষে আবু বকর (রাযিঃ) এর দু’চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হল। এরপর যখন আবু বকর (রাযিঃ) কথা বলতে শুরু করলেন, তখন তিনি বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আত্মীয়তার সৌহার্দ্য-সংযোগ রক্ষা করা আমার আত্মীয়তার প্রতি সংযোগ রক্ষার চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। তবে আমার এবং আপনাদের মধ্যে এই সম্পদ নিয়ে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তাতে আমি সত্য পরিহার করি নি। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে এতে যা করতে দেখেছি তা আমি পরিত্যাগ করি নি।

এরপর আলী (রাযিঃ), আবু বকর (রাযিঃ) কে বললেন যে, আমি বায়আতের জন্য আপনাকে আজ বিকাল বেলায় কথা দিলাম। যখন আবু বকর (রাযিঃ) যোহরের নামায শেষ করলেন তখন তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং তাশাহ্‌হুদ পাঠ করলেন। এরপর তিনি আলী (রাযিঃ) এর ঘটনা বর্ণনা করেন এবং তার বায়আত গ্রহণে বিলম্ব ও এ বিষয়ে তাঁর ওযর বর্ণনা করেন, যা আলী তার কাছে বর্ণনা করেছিল। এরপর তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

তারপর আলী ইবনে আবু তালিব (রাযিঃ) তাশাহ্‌হুদ পাঠ করলেন এবং আবু বকর (রাযিঃ) এর মহত্ত্ব বর্ণনা করলেন। আর তিনি ব্যক্ত করলেন যে, তিনি যা করেছেন, তার কারণ আবু বকর (রাযিঃ) এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা কিংবা আল্লাহ তাআলা তাকে যে সম্মান দিয়েছেন তার প্রতি অস্বীকৃতি নয়; বরং আমরা মনে করতাম যে, শাসন ক্ষমতায় (খিলাফতের) মধ্যে আমাদেরও অংশ আছে। কিন্তু আবু বকর (রাযিঃ) আমাদের বাদ দিয়ে একচ্ছত্ররূপে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এতে আমরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছি।

এ কথা শুনে মুসলিমগণ আনন্দিত হলেন এবং তাঁরা বললেন যে, আপনি ঠিকই করেছেন। যখন তখন তিনি সঙ্গত বিষয়ের দিকে ফিরে এলেন আবু বকর (রাযিঃ) এর বায়আত গ্রহণ করলেন, তখন থেকে মুসলিমগণ আলী (রাযিঃ) এর সান্নিধ্যে আসতে লাগলেন।
باب قَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَا فَهُوَ صَدَقَةٌ "
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، أَخْبَرَنَا حُجَيْنٌ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَرْسَلَتْ إِلَى أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ تَسْأَلُهُ مِيرَاثَهَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْهِ بِالْمَدِينَةِ وَفَدَكٍ وَمَا بَقِيَ مِنْ خُمْسِ خَيْبَرَ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ نُورَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ إِنَّمَا يَأْكُلُ آلُ مُحَمَّدٍ - صلى الله عليه وسلم - فِي هَذَا الْمَالِ " . وَإِنِّي وَاللَّهِ لاَ أُغَيِّرُ شَيْئًا مِنْ صَدَقَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ حَالِهَا الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهَا فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلأَعْمَلَنَّ فِيهَا بِمَا عَمِلَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَبَى أَبُو بَكْرٍ أَنْ يَدْفَعَ إِلَى فَاطِمَةَ شَيْئًا فَوَجَدَتْ فَاطِمَةُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ فِي ذَلِكَ - قَالَ - فَهَجَرَتْهُ فَلَمْ تُكَلِّمْهُ حَتَّى تُوُفِّيَتْ وَعَاشَتْ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سِتَّةَ أَشْهُرٍ فَلَمَّا تُوُفِّيَتْ دَفَنَهَا زَوْجُهَا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ لَيْلاً وَلَمْ يُؤْذِنْ بِهَا أَبَا بَكْرٍ وَصَلَّى عَلَيْهَا عَلِيٌّ وَكَانَ لِعَلِيٍّ مِنَ النَّاسِ وِجْهَةٌ حَيَاةَ فَاطِمَةَ فَلَمَّا تُوُفِّيَتِ اسْتَنْكَرَ عَلِيٌّ وُجُوهَ النَّاسِ فَالْتَمَسَ مُصَالَحَةَ أَبِي بَكْرٍ وَمُبَايَعَتَهُ وَلَمْ يَكُنْ بَايَعَ تِلْكَ الأَشْهُرَ فَأَرْسَلَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ أَنِ ائْتِنَا وَلاَ يَأْتِنَا مَعَكَ أَحَدٌ - كَرَاهِيَةَ مَحْضَرِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ - فَقَالَ عُمَرُ لأَبِي بَكْرٍ وَاللَّهِ لاَ تَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَحْدَكَ . فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ وَمَا عَسَاهُمْ أَنْ يَفْعَلُوا بِي إِنِّي وَاللَّهِ لآتِيَنَّهُمْ . فَدَخَلَ عَلَيْهِمْ أَبُو بَكْرٍ . فَتَشَهَّدَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ ثُمَّ قَالَ إِنَّا قَدْ عَرَفْنَا يَا أَبَا بَكْرٍ فَضِيلَتَكَ وَمَا أَعْطَاكَ اللَّهُ وَلَمْ نَنْفَسْ عَلَيْكَ خَيْرًا سَاقَهُ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَكِنَّكَ اسْتَبْدَدْتَ عَلَيْنَا بِالأَمْرِ وَكُنَّا نَحْنُ نَرَى لَنَا حَقًّا لِقَرَابَتِنَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَلَمْ يَزَلْ يُكَلِّمُ أَبَا بَكْرٍ حَتَّى فَاضَتْ عَيْنَا أَبِي بَكْرٍ فَلَمَّا تَكَلَّمَ أَبُو بَكْرٍ قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَرَابَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَحَبُّ إِلَىَّ أَنْ أَصِلَ مِنْ قَرَابَتِي وَأَمَّا الَّذِي شَجَرَ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ مِنْ هَذِهِ الأَمْوَالِ فَإِنِّي لَمْ آلُ فِيهِ عَنِ الْحَقِّ وَلَمْ أَتْرُكْ أَمْرًا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُهُ فِيهَا إِلاَّ صَنَعْتُهُ . فَقَالَ عَلِيٌّ لأَبِي بَكْرٍ مَوْعِدُكَ الْعَشِيَّةُ لِلْبَيْعَةِ . فَلَمَّا صَلَّى أَبُو بَكْرٍ صَلاَةَ الظُّهْرِ رَقِيَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَتَشَهَّدَ وَذَكَرَ شَأْنَ عَلِيٍّ وَتَخَلُّفَهُ عَنِ الْبَيْعَةِ وَعُذْرَهُ بِالَّذِي اعْتَذَرَ إِلَيْهِ ثُمَّ اسْتَغْفَرَ وَتَشَهَّدَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ فَعَظَّمَ حَقَّ أَبِي بَكْرٍ وَأَنَّهُ لَمْ يَحْمِلْهُ عَلَى الَّذِي صَنَعَ نَفَاسَةً عَلَى أَبِي بَكْرٍ وَلاَ إِنْكَارًا لِلَّذِي فَضَّلَهُ اللَّهُ بِهِ وَلَكِنَّا كُنَّا نَرَى لَنَا فِي الأَمْرِ نَصِيبًا فَاسْتُبِدَّ عَلَيْنَا بِهِ فَوَجَدْنَا فِي أَنْفُسِنَا فَسُرَّ بِذَلِكَ الْمُسْلِمُونَ وَقَالُوا أَصَبْتَ . فَكَانَ الْمُسْلِمُونَ إِلَى عَلِيٍّ قَرِيبًا حِينَ رَاجَعَ الأَمْرَ الْمَعْرُوفَ .
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ মুসলিম - হাদীস নং ৪৪২৮ | মুসলিম বাংলা