আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
৩১- আদালত-বিচার-সাক্ষ্য-শুনানির বিধান
হাদীস নং: ৪৩৪৪
৭. বাতিল সিদ্ধান্ত খণ্ডন ও বিদ’আতী কার্যকলাপ উচ্ছেদ
৪৩৪৪। ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ও আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ......... সা’দ ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, যার তিনটি বাসস্থান ছিল। অতঃপর, সে (মৃত্যুকালে) প্রত্যেক বাসস্থানের এক তৃতীয়াংশ দান করার ওসিয়্যাত করে যায়। তিনি বললেন, এ সকল অংশকে এক বাসস্থানে একত্রিত করা হবে। এরপর তিনি বললেন, আমাকে আয়িশা (রাযিঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন কোন কর্ম করলো যা আমাদের ধর্মে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।
باب نَقْضِ الأَحْكَامِ الْبَاطِلَةِ وَرَدِّ مُحْدَثَاتِ الأُمُورِ
وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، جَمِيعًا عَنْ أَبِي عَامِرٍ، قَالَ عَبْدٌ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عَمْرٍو، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ الزُّهْرِيُّ، عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ سَأَلْتُ الْقَاسِمَ بْنَ مُحَمَّدٍ عَنْ رَجُلٍ، لَهُ ثَلاَثَةُ مَسَاكِنَ فَأَوْصَى بِثُلُثِ كُلِّ مَسْكَنٍ مِنْهَا قَالَ يُجْمَعُ ذَلِكَ كُلُّهُ فِي مَسْكَنٍ وَاحِدٍ ثُمَّ قَالَ أَخْبَرَتْنِي عَائِشَةُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
বিদ'আত অৰ্থ নতুন উদ্ভাবন। একে 'ইহদাছ'-ও বলা হয়। নতুন উদ্ভাবিত বিষয়কে বলা হয় 'মুহদাছ'। আবার একে বিদআতও বলা হয়। সুতরাং বিদ'আত ও মুহদাছ শব্দদু'টি সমার্থবোধক। শরী'আতে বিদ'আত বলা হয় এমন কাজকে, যাকে আল্লাহ তা'আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের অন্তর্ভুক্ত না করা সত্ত্বেও তাকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করা ও দীনের অঙ্গ বানিয়ে নেওয়া এবং তাকে ছাওয়াবের কাজ মনে করা বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম বলে বিশ্বাস করা।
ইসলামে বিদ'আত অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এটা কালিমা তায়্যিবার দাবি ও চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কালিমা তায়্যিবার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বান্দা ও রাসূল। এ সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা হয় আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য আমি কেবল ওই পন্থাই অবলম্বন করব, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর শিক্ষা পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়েছেঃ- الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নি'আমত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম।
আল্লাহ তা'আলা তাঁর দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও তা পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি সমবেত জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি তোমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছি? সকলে সমস্বরে উত্তর দিয়েছিল, হাঁ, আপনি যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং আমানত আদায় করেছেন।
দীন যখন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমাদের কাছে তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছানোও হয়েছে, তখন আর এর মধ্যে কারও কোনওকিছু যোগ বা বিয়োগ করার সুযোগ নেই।। কেউ যদি নতুন কোনও আমল তৈরি করে তাকে দীনের অংশ বানিয়ে দেয় এবং দীনের অন্যান্য বিধানাবলীর মত সেটাকেও পালন করা জরুরি মনে করে, তবে সে যেন দাবি করছে- আল্লাহ তাঁর দীন পরিপূর্ণ করেননি বা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিপূর্ণভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাননি। আমি এ আমলটির মাধ্যমে সেই অপূর্ণতা পূরণ করে দিলাম!
বলাবাহুল্য, এ দাবি হবে কুরআন মাজীদের ওই ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সেইসঙ্গে এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে- যেন তিনি তাঁর দা'ওয়াতী দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেননি। তদুপরি এটা কালেমা তায়্যিবায় দেওয়া সাক্ষ্যেরও পরিপন্থী হবে। কেননা সে সাক্ষ্যে বলা হয়েছিল আমি ইবাদত-বন্দেগীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষারই অনুসরণ করব, তার বাইরে যাব না। বিদ'আত দ্বারা কার্যত তার বাইরে যাওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে বিদ'আতী কর্ম দ্বারা প্রথমত আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণাকে আঘাত করা হয়। দ্বিতীয়ত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতী দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তৃতীয়ত কালেমা পাঠের মধ্যে নিহিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়।
এজন্যই বিদ'আত অত্যন্ত কঠিন গুনাহ। এর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে এবং কুফর ও শিরকের পর বিদ'আতকে একটি কঠিনতম গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এটা এমনই এক গুনাহ, যা থেকে সাধারণত তাওবাও নসীব হয় না। কারণ যে ব্যক্তি বিদ'আতী কর্ম করে, সে তো তা করে দীনের অংশ ও ছাওয়াবের কাজ মনে করে। তাই সে তা থেকে তাওবা করার কথা চিন্তাই করতে পারে না। ফলে এ গুনাহের বোঝা কাঁধে নিয়েই তাকে কবরে যেতে হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, যাতে কোনওরকম বিদ'আতী কাজে লিপ্ত হয়ে না পড়ি।
এ হাদীছে দীনকে ‘আম্র' (امر) শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ‘আম্র' অর্থ বিষয়, পথ ইত্যাদি। দীনে ইসলামকে ‘আম্র' বা বিষয় বলে বোঝানো হচ্ছে যে, দীনই আমাদের একমাত্র বিষয়, যার প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং সর্বাবস্থায় তার এমন অনুসরণ করি, যাতে আমাদের কোনও কথা ও কাজ তার বাইরে চলে না যায়।
তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও বিষয় নতুনভাবে তৈরি করে, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কুরআন সুন্নাহ'র দ্বারা প্রমাণিত নয় অর্থাৎ তার পক্ষে কুরআন-হাদীছের প্রকাশ্য বা ইঙ্গিতমূলক কোনও দলীল নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত, সে বিষয়টি বিশ্বাসগত হোক বা কর্মগত। আল্লাহ তা'আলার কাছে তা তো কবূল হবেই না; বরং ভিত্তিহীন কাজকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করার কারণে কঠিন গুনাহ হবে। তাই তা থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
কয়েকটি বিশ্বাসগত বিদ'আতঃ- বিশেষ নক্ষত্রের উদয়-অস্তের সাথে ভাগ্যের ভালো মন্দের সম্পর্ক আছে বলে মনে করা; কোনও মাজারে গেলে উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা; বিশেষ কোনও মাস, বিশেষ কোনও দিন বা বিশেষ সময় সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা যে, তখন বিবাহ-শাদী করা, ব্যবসা শুরু করা, গৃহ নির্মাণ করা ইত্যাদি অশুভ; বিশেষ কোনও পাখির ডাককে কুলক্ষণ মনে করা; যাত্রাকালে হাঁচি দিলে সে যাত্রা অশুভ হয় বলে মনে করা ইত্যাদি।
কয়েকটি কর্মগত বিদ'আতঃ- কবর ও মাজারে বাতি জ্বালানো; ওরস করা; কবরে চাদর দেওয়া; কারও মৃত্যুর পর চল্লিশা করা; খৎনার অনুষ্ঠান করা; শবে বরাতে হালুয়া রুটি বিতরণ করা; প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম করা; শবে বরাত ও শবে কদরে গোসল করাকে সুন্নত মনে করা; ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা; ফাতেহা দোয়াজদহম পালন করা; বিয়েতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, এ হাদীছটি দীনের প্রধান মূলনীতিসমূহের একটি। ইমাম নববী রহ. বলেন, এ হাদীছটি মুখস্থ রাখা চাই। অন্যায় ও আপত্তিকর কাজের খণ্ডনে এটি একটি মজবুত দলীল। কেউ কেউ বলেন, এটি শরী'আতের দলীলসমূহের অর্ধেক। কেননা কাজ তো দু'রকম— অর্জনীয় ও বর্জনীয়। যা-কিছু বর্জনীয় তার বর্জন সম্পর্কে দলীল হিসেবে এই এক হাদীছই যথেষ্ট।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ প্রমাণ করে, ইসলাম এক পরিপূর্ণ দীন। এতে নতুন কিছু যোগ করার সুযোগ নেই।
খ. কারও মনগড়া বিশ্বাস ও কর্ম গ্রহণ করতে নেই। কেননা তা দীনের মধ্যে নতুন সংযোজনের নামান্তর।
গ. সমাজে দীনের নামে কোনওকিছু চালু থাকলেই তা সত্যিকারের দীন হয়ে যায় না। দেখতে হবে কুরআন-সুন্নাহ তা সমর্থন করে কি না। সমর্থন না করলে তা বিদ'আত। সুতরাং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাতে সমাজ যাই মনে করুক না কেন।
ইসলামে বিদ'আত অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এটা কালিমা তায়্যিবার দাবি ও চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কালিমা তায়্যিবার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বান্দা ও রাসূল। এ সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা হয় আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য আমি কেবল ওই পন্থাই অবলম্বন করব, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর শিক্ষা পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়েছেঃ- الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নি'আমত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম।
আল্লাহ তা'আলা তাঁর দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও তা পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি সমবেত জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি তোমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছি? সকলে সমস্বরে উত্তর দিয়েছিল, হাঁ, আপনি যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং আমানত আদায় করেছেন।
দীন যখন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমাদের কাছে তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছানোও হয়েছে, তখন আর এর মধ্যে কারও কোনওকিছু যোগ বা বিয়োগ করার সুযোগ নেই।। কেউ যদি নতুন কোনও আমল তৈরি করে তাকে দীনের অংশ বানিয়ে দেয় এবং দীনের অন্যান্য বিধানাবলীর মত সেটাকেও পালন করা জরুরি মনে করে, তবে সে যেন দাবি করছে- আল্লাহ তাঁর দীন পরিপূর্ণ করেননি বা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিপূর্ণভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাননি। আমি এ আমলটির মাধ্যমে সেই অপূর্ণতা পূরণ করে দিলাম!
বলাবাহুল্য, এ দাবি হবে কুরআন মাজীদের ওই ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সেইসঙ্গে এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে- যেন তিনি তাঁর দা'ওয়াতী দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেননি। তদুপরি এটা কালেমা তায়্যিবায় দেওয়া সাক্ষ্যেরও পরিপন্থী হবে। কেননা সে সাক্ষ্যে বলা হয়েছিল আমি ইবাদত-বন্দেগীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষারই অনুসরণ করব, তার বাইরে যাব না। বিদ'আত দ্বারা কার্যত তার বাইরে যাওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে বিদ'আতী কর্ম দ্বারা প্রথমত আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণাকে আঘাত করা হয়। দ্বিতীয়ত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতী দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তৃতীয়ত কালেমা পাঠের মধ্যে নিহিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়।
এজন্যই বিদ'আত অত্যন্ত কঠিন গুনাহ। এর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে এবং কুফর ও শিরকের পর বিদ'আতকে একটি কঠিনতম গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এটা এমনই এক গুনাহ, যা থেকে সাধারণত তাওবাও নসীব হয় না। কারণ যে ব্যক্তি বিদ'আতী কর্ম করে, সে তো তা করে দীনের অংশ ও ছাওয়াবের কাজ মনে করে। তাই সে তা থেকে তাওবা করার কথা চিন্তাই করতে পারে না। ফলে এ গুনাহের বোঝা কাঁধে নিয়েই তাকে কবরে যেতে হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, যাতে কোনওরকম বিদ'আতী কাজে লিপ্ত হয়ে না পড়ি।
এ হাদীছে দীনকে ‘আম্র' (امر) শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ‘আম্র' অর্থ বিষয়, পথ ইত্যাদি। দীনে ইসলামকে ‘আম্র' বা বিষয় বলে বোঝানো হচ্ছে যে, দীনই আমাদের একমাত্র বিষয়, যার প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং সর্বাবস্থায় তার এমন অনুসরণ করি, যাতে আমাদের কোনও কথা ও কাজ তার বাইরে চলে না যায়।
তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও বিষয় নতুনভাবে তৈরি করে, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কুরআন সুন্নাহ'র দ্বারা প্রমাণিত নয় অর্থাৎ তার পক্ষে কুরআন-হাদীছের প্রকাশ্য বা ইঙ্গিতমূলক কোনও দলীল নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত, সে বিষয়টি বিশ্বাসগত হোক বা কর্মগত। আল্লাহ তা'আলার কাছে তা তো কবূল হবেই না; বরং ভিত্তিহীন কাজকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করার কারণে কঠিন গুনাহ হবে। তাই তা থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
কয়েকটি বিশ্বাসগত বিদ'আতঃ- বিশেষ নক্ষত্রের উদয়-অস্তের সাথে ভাগ্যের ভালো মন্দের সম্পর্ক আছে বলে মনে করা; কোনও মাজারে গেলে উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা; বিশেষ কোনও মাস, বিশেষ কোনও দিন বা বিশেষ সময় সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা যে, তখন বিবাহ-শাদী করা, ব্যবসা শুরু করা, গৃহ নির্মাণ করা ইত্যাদি অশুভ; বিশেষ কোনও পাখির ডাককে কুলক্ষণ মনে করা; যাত্রাকালে হাঁচি দিলে সে যাত্রা অশুভ হয় বলে মনে করা ইত্যাদি।
কয়েকটি কর্মগত বিদ'আতঃ- কবর ও মাজারে বাতি জ্বালানো; ওরস করা; কবরে চাদর দেওয়া; কারও মৃত্যুর পর চল্লিশা করা; খৎনার অনুষ্ঠান করা; শবে বরাতে হালুয়া রুটি বিতরণ করা; প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম করা; শবে বরাত ও শবে কদরে গোসল করাকে সুন্নত মনে করা; ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা; ফাতেহা দোয়াজদহম পালন করা; বিয়েতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, এ হাদীছটি দীনের প্রধান মূলনীতিসমূহের একটি। ইমাম নববী রহ. বলেন, এ হাদীছটি মুখস্থ রাখা চাই। অন্যায় ও আপত্তিকর কাজের খণ্ডনে এটি একটি মজবুত দলীল। কেউ কেউ বলেন, এটি শরী'আতের দলীলসমূহের অর্ধেক। কেননা কাজ তো দু'রকম— অর্জনীয় ও বর্জনীয়। যা-কিছু বর্জনীয় তার বর্জন সম্পর্কে দলীল হিসেবে এই এক হাদীছই যথেষ্ট।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ প্রমাণ করে, ইসলাম এক পরিপূর্ণ দীন। এতে নতুন কিছু যোগ করার সুযোগ নেই।
খ. কারও মনগড়া বিশ্বাস ও কর্ম গ্রহণ করতে নেই। কেননা তা দীনের মধ্যে নতুন সংযোজনের নামান্তর।
গ. সমাজে দীনের নামে কোনওকিছু চালু থাকলেই তা সত্যিকারের দীন হয়ে যায় না। দেখতে হবে কুরআন-সুন্নাহ তা সমর্থন করে কি না। সমর্থন না করলে তা বিদ'আত। সুতরাং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাতে সমাজ যাই মনে করুক না কেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
