আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

১৮- তাহাজ্জুদ - নফল নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১১১৩
আন্তর্জতিক নং: ১১৮৪

পরিচ্ছেদঃ ৭৪৯. মাগরিবের আগে নামায ।

১১১৩। আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ (রাহঃ) ......... মারসাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইয়াযানী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উকবা ইবনে আমির জুহানী (রাযিঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে বললাম, আবু তামীম (রাহঃ) সম্পর্কে এ কথা বলে কি আমি আপনাকে বিস্মিত করে দিব না যে, তিনি মাগরিবের (ফরয) নামাযের আগে দু’রাকআত (নফল) নামায আদায় করে থাকেন? উকবা (রাযিঃ) বললেন, (এতে বিস্মিত হওয়ার কি আছে?) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সময়ে তো আমরা তা আদায় করতাম। আমি প্রশ্ন করলাম, তাহলে এখন কিসে আপনাকে বিরত রাখছে? তিনি বললেন, কর্মব্যস্ততা।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

মাগরিবের আগে নফল পড়ার বিধান: মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়া সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। তবে তা জায়েয আছে। খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এ সময় কোনো নামায পড়তেন না। মাগরিবের পূর্বের নফল নামায পড়াকে সুন্নাহ বলা যাবে না। এটা সবসময়ের আমল বা সুন্নাহ নয়। নিরেট বৈধতার জন্যই নিষেধ করা হয়নি। অন্যথায় সবসময়ের আমল হল, না পড়া। তাই নবীজী কখনো এ নামায পড়েননি। এবং কাউকে জোরালোভাবে উৎসাহিত করেননি। এ সকল কারণে তিন খলীফাসহ অন্যরা তা পড়তেন না। যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.কে মাগরিবের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কাউকে উক্ত নামায পড়তে দেখিনি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১২৭৮ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,মুহাজির সাহাবীগণ মাগরিবের আগে দুই রাকাত নামায পড়তেন না। আর আনসারী সাহাবীগণ তা পড়তেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস : ৩৯৮৪ রাসূলের উৎসাহ না থাকার কারণে পরবর্তীতে সাহাবায়ে কিরাম এ নামায পড়তেন না। তাই একদিন এক সাহাবী এ নামায পড়ায় এক তাবেয়ী খুবই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। হাদীসে এসেছে, মারাসাদ ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন- أَتَيْتُ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجهنيَّ فَقُلْتُ أَلَا اُعْجِبُكَ مِنْ اَبِيْ تَمِيْمٍ يَرْكَعُ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ. আমি (একদিন) উকবা বিন আমের আলজুহানী রা. এর কাছে এসে বললাম, আমি কি আপনাকে আবু তামিমের বিস্ময়কর খবর দিব না, তিনি মাগরিবের আগে দু’রাকাত পড়েন -সহীহ বুখারী, হাদীস: ১১৮৪ ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,আবু বকর,উমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৩৯৮৫ হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর ও উমর রা. তা পড়েননি। -কিতাবুল আছার ১/১৬৩ সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই যেহেতু এ সময় কোনো নফল নামায পড়তেন না এবং এ সময়ের নফল নামাযের বিশেষ কোনো ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত নেই; অন্যদিকে মাগরিবের নামায আযানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত আদায় করার কথা অন্যান্য হাদীসে এসেছে তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফী,মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উক্ত দু’ রাকাত নফল নামাযকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি। আর শাফেয়ী মাযহাবে এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী এ সময় দু’ রাকাত নফল পড়া মুস্তাহাব। আর অপর মত অনুযায়ী তা জায়েয। যারা মুস্তাহাব বলেন তারা এ সংক্রান্ত একটি হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন। হাদীসটি হল- بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة، ثم قال في الثالثة : لمن شاء (অর্থ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। অতপর তৃতীয়বার বললেন, ‘যে ব্যক্তি চায়।’-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৭ তবে ভিন্নমতের লোকজন বলেন যে,এটি শুধু জায়েয হওয়ার দলিল,মুস্তাহাব হওয়ার নয়। আর সুন্নত হবার তো প্রশ্নই উঠে না। (সংগৃহীত)


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন