আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
১৮- তাহাজ্জুদ - নফল নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ১১৭১
৭৪২. ফজরের (সুন্নত) দু’ রাকাআতে কতটুকু কিরাআত পড়া হবে।
১১০২। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার ও আহমদ ইবনে ইউনুস (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) ফজরের (ফরয) নামাযের আগের দু’রাকআত (সুন্নত) এত সংক্ষিপ্ত করতেন এমনকি আমি (মনে মনে) বলতাম, তিনি কি (শুধু) উম্মুল কিতাব (সূরা ফাতিহা) তিলাওয়াত করলেন?
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকাত নামায পড়তেন। ফজর হয়ে গেলে হালকাভাবে দু'রাকাত নামায পড়তেন। তারপর ডানকাতে শুয়ে থাকতেন, যতক্ষণ না মুআযযিন এসে তাঁকে (জামাতের প্রস্তুতির কথা) জানাতেন।
এ হাদীছটিতে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ আছে- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ নামাযের রাকাতের সংখ্যা, ফজরের দু'রাকাত তিনি যেভাবে পড়তেন এবং সুন্নত পড়ার পর ফরয নামায আদায়ের আগে তাঁর শয়ন।
প্রথমে বলা হয়েছে যে, তিনি রাত্রে এগারো রাকাত নামায পড়তেন। তার মানে আট রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন, আর তিন রাকাত বিতর। শেষরাতে ঘুম থেকে উঠে যে নামায পড়া হয় তাকে তাহাজ্জুদ বলে। এটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ছিল ফরয, অন্যদের জন্য নফল, তবে সর্বোত্তম নফল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিতই ঘুম থেকে জেগে আট রাকাত তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন। এ নামাযের বিপুল ফযীলত। সবকালেই আল্লাহওয়ালাগণ এ নামাযের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।
ফজরের সুন্নত সম্পর্কে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের ওয়াক্ত হলে হালকাভাবে দু'রাকাত সুন্নত পড়তেন। অন্যান্য বর্ণনায় আছে, তিনি প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। এছাড়া কুরআন মাজীদের অন্যান্য স্থান থেকে পড়ার কথাও বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। অবশ্য এ নামায লম্বা করাতেও কোনও দোষ নেই। কেননা কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও এ নামায লম্বাও করতেন।
হাদীছটিতে তৃতীয়ত বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু'রাকাত সুন্নত পড়ার পর কাত হয়ে শুয়ে থাকতেন। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তিনি তাহাজ্জুদের নামায পড়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম যেতেন। তারপর মুআযযিন এসে যখন জামাতের সময় হওয়ার কথা জানাতেন, তখন উঠে দু'রাকাত সুন্নাত পড়তেন। আবার কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. যাদি সজাগ থাকতেন, তবে তিনি না শুয়ে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। তারপর জামাতের সময় হলে মসজিদে চলে যেতেন। বোঝা গেল, তিনি কখনও শুইতেন তাহাজ্জুদ পড়ার পর ফজরের সুন্নতের আগে, কখনও শুইতেন সুন্নত পড়ার পর আবার কখনও শুইতেনও না। তিন রকম আমলই তাঁর ছিল। তাই এ বিষয়ে বিশেষ কোনও আমলকে সুন্নত বলা যায় না।
হাদীছটিতে সবশেষে জানানো হয়েছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের পর ঘরেই অবস্থান করতেন। মুআযযিন যখন এসে জামাতের সময় হওয়ার কথা জানাত, তখনই তিনি মসজিদে যেতেন। এর দ্বারা বোঝা যায় নামাযের জন্য অপেক্ষা করার যে ফযীলত, সেজন্য মসজিদে অবস্থান করা জরুরি নয়। ঘরে বসেও যদি কেউ জামাতের অপেক্ষায় থাকে এবং জামাতের সময় হয়ে গেলে মসজিদে গিয়ে তাতে শামিল হয়, সেও নামাযের জন্য অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুত ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
হাদীছটিতে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের পর ফজরের দু'রাকাত সুন্নত পড়তেন, তারপর ফজরের দু'রাকাত ফরয। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি ফজর হওয়ার পর ফজরের দু'রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনও নফল পড়তেন না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর নফল পড়তে নিষেধ করেছেন। সুতরাং এ সময় কোনও নফল পড়া যাবে না; পড়লে তা মাকরূহ হবে। অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত সাধারণ নামায কেবল চার রাকাতই। ফজরের দু'রাকাত সুন্নত ও দু'রাকাত ফরয। কোনও নফল নেই। হাঁ, কাযা নামায থাকলে তা পড়া যেতে পারে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদের আট রাকাত নামায আদায় করতেন। তাঁর অনুসরণে আমাদেরও এ নামাযের প্রতি গুরুত্ত দেওয়া উচিত।
খ. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নামায পড়ে, সে ফজরের দু'রাকাত সুন্নতের আগে বা পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে পারে।
গ. ডানকাতে শোওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকাত নামায পড়তেন। ফজর হয়ে গেলে হালকাভাবে দু'রাকাত নামায পড়তেন। তারপর ডানকাতে শুয়ে থাকতেন, যতক্ষণ না মুআযযিন এসে তাঁকে (জামাতের প্রস্তুতির কথা) জানাতেন।
এ হাদীছটিতে তিনটি বিষয়ের উল্লেখ আছে- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ নামাযের রাকাতের সংখ্যা, ফজরের দু'রাকাত তিনি যেভাবে পড়তেন এবং সুন্নত পড়ার পর ফরয নামায আদায়ের আগে তাঁর শয়ন।
প্রথমে বলা হয়েছে যে, তিনি রাত্রে এগারো রাকাত নামায পড়তেন। তার মানে আট রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন, আর তিন রাকাত বিতর। শেষরাতে ঘুম থেকে উঠে যে নামায পড়া হয় তাকে তাহাজ্জুদ বলে। এটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ছিল ফরয, অন্যদের জন্য নফল, তবে সর্বোত্তম নফল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিতই ঘুম থেকে জেগে আট রাকাত তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন। এ নামাযের বিপুল ফযীলত। সবকালেই আল্লাহওয়ালাগণ এ নামাযের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।
ফজরের সুন্নত সম্পর্কে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের ওয়াক্ত হলে হালকাভাবে দু'রাকাত সুন্নত পড়তেন। অন্যান্য বর্ণনায় আছে, তিনি প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। এছাড়া কুরআন মাজীদের অন্যান্য স্থান থেকে পড়ার কথাও বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। অবশ্য এ নামায লম্বা করাতেও কোনও দোষ নেই। কেননা কোনও কোনও বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও এ নামায লম্বাও করতেন।
হাদীছটিতে তৃতীয়ত বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু'রাকাত সুন্নত পড়ার পর কাত হয়ে শুয়ে থাকতেন। কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, তিনি তাহাজ্জুদের নামায পড়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম যেতেন। তারপর মুআযযিন এসে যখন জামাতের সময় হওয়ার কথা জানাতেন, তখন উঠে দু'রাকাত সুন্নাত পড়তেন। আবার কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. যাদি সজাগ থাকতেন, তবে তিনি না শুয়ে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। তারপর জামাতের সময় হলে মসজিদে চলে যেতেন। বোঝা গেল, তিনি কখনও শুইতেন তাহাজ্জুদ পড়ার পর ফজরের সুন্নতের আগে, কখনও শুইতেন সুন্নত পড়ার পর আবার কখনও শুইতেনও না। তিন রকম আমলই তাঁর ছিল। তাই এ বিষয়ে বিশেষ কোনও আমলকে সুন্নত বলা যায় না।
হাদীছটিতে সবশেষে জানানো হয়েছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের পর ঘরেই অবস্থান করতেন। মুআযযিন যখন এসে জামাতের সময় হওয়ার কথা জানাত, তখনই তিনি মসজিদে যেতেন। এর দ্বারা বোঝা যায় নামাযের জন্য অপেক্ষা করার যে ফযীলত, সেজন্য মসজিদে অবস্থান করা জরুরি নয়। ঘরে বসেও যদি কেউ জামাতের অপেক্ষায় থাকে এবং জামাতের সময় হয়ে গেলে মসজিদে গিয়ে তাতে শামিল হয়, সেও নামাযের জন্য অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুত ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
হাদীছটিতে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের পর ফজরের দু'রাকাত সুন্নত পড়তেন, তারপর ফজরের দু'রাকাত ফরয। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি ফজর হওয়ার পর ফজরের দু'রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনও নফল পড়তেন না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর নফল পড়তে নিষেধ করেছেন। সুতরাং এ সময় কোনও নফল পড়া যাবে না; পড়লে তা মাকরূহ হবে। অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত সাধারণ নামায কেবল চার রাকাতই। ফজরের দু'রাকাত সুন্নত ও দু'রাকাত ফরয। কোনও নফল নেই। হাঁ, কাযা নামায থাকলে তা পড়া যেতে পারে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদের আট রাকাত নামায আদায় করতেন। তাঁর অনুসরণে আমাদেরও এ নামাযের প্রতি গুরুত্ত দেওয়া উচিত।
খ. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের নামায পড়ে, সে ফজরের দু'রাকাত সুন্নতের আগে বা পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে পারে।
গ. ডানকাতে শোওয়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।
