আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

২১- গোলাম আযাদ করা

হাদীস নং: ৩৬৫৭
৫. পিতাকে মুক্ত করার ফযীলত
৩৬৫৭। আবু বকর ইবনে আবি শাঈবা ও যুহাইর ইবনে হারব (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কোন সন্তান তার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। তবে হ্যাঁ, সে যদি তার পিতাকে ক্রীতদাস হিসেবে দেখতে পায় এবং তখনি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দেয় (তাহলে ভিন্ন কথা)।

ইবনে আবি শাঈবা (রাহঃ) এর বর্ণনায়আছেوَلَدٌ وَالِدَهُ ’সন্তান তার পিতার’।
باب فَضْلِ عِتْقِ الْوَالِدِ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَجْزِي وَلَدٌ وَالِدًا إِلاَّ أَنْ يَجِدَهُ مَمْلُوكًا فَيَشْتَرِيَهُ فَيُعْتِقَهُ " . وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ أَبِي شَيْبَةَ " وَلَدٌ وَالِدَهُ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারা সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার অপরিসীম অনুগ্রহ ও কল্যাণের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। জানানো হচ্ছে যে, সে অনুগ্রহ ও কল্যাণ এত বিপুল, যার প্রতিদান দেওয়া কোনও সন্তানের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। এ হাদীছে যে একটি উপায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে মূলত সে অসম্ভাব্যতার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। হাদীছে বলা হয়েছে, সন্তান তার পিতাকে প্রতিদান দিতে পারে কেবল একটি উপায়ে। আর তা হচ্ছে পিতাকে কারও দাসরূপে পেলে তার মনিবের কাছ থেকে তাকে কিনে নিয়ে আযাদ করে দেওয়া। কিন্তু এটি একটি অসম্ভব উপায়। কেননা এ উপায়টিতে পিতাকে ক্রয় করার পর নিজের পক্ষ থেকে আযাদ করার কথা বলা হয়েছে। ওদিকে মাসআলা হলো, কারও পিতা যদি অন্যের গোলাম হয় আর পুত্র তাকে ক্রয় করে, তবে ক্রয় করা মাত্রই সে পিতা আপনা-আপনিই আযাদ হয়ে যায়; পুত্রের পক্ষ থেকে আযাদ করার দরকার হয় না। এমনিভাবে কারও সন্তান যদি গোলাম হয় আর পিতা তাকে মনিবের কাছ থেকে ক্রয় করে, তবে সে সন্তানও আপনা-আপনিই আযাদ হয়ে যায়; পিতার পক্ষ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে আযাদ করার দরকার হয় না। সুতরাং কোনও সন্তানের পক্ষে ‘দাস পিতা'-কে ইচ্ছাকৃতভাবে আযাদ করা সম্ভব নয়। আর তা যখন সম্ভব নয়, তখন সন্তানের পক্ষে পিতাকে প্রতিদান দেওয়াও অসম্ভব।

অবশ্য ক্রয় করার দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হলেও পিতা যেহেতু আযাদ হয়ে যায়, তাই এতটুকু তো অনস্বীকার্য যে, তার আযাদ হওয়ার পেছনে সন্তানের একটা ভূমিকা আছে। কাজেই এর দ্বারা পুরোপুরি না হলেও একপর্যায়ের প্রতিদান হবে বলে ধারণা করা যায়। এই হিসেবে বলা যেতে পারে, সন্তানের পক্ষ থেকে পিতাকে কিছুটা হলেও প্রতিদান দেওয়া কেবল এ উপায়েই সম্ভব। এছাড়া আর যত বড় কাজই হোক না কেন এবং তা দ্বারা পিতার যত বড় উপকারই সাধিত হোক না কেন, সে কাজকে আংশিক প্রতিদানরূপেও অভিহিত করা যায় না ।

পিতাকে আযাদ করায় ভূমিকা রাখার দ্বারা যে আংশিক প্রতিদান হয় তার কারণ এই যে, কারও গোলাম হয়ে যাওয়াটা একপর্যায়ের অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়ার মত। কেননা গোলামের তার নিজের উপর কোনও কর্তৃত্ব থাকে না। সে তার মনিবের মালিকানাধীন বস্তুতে পরিণত হয়ে যায়। সে নিজে কিছু উপার্জন করলে তাও তার মনিবের মালিকানায় চলে যায়। মনিবের অনুমতি ছাড়া তার নিজের কোনওকিছু করার এখতিয়ারই থাকে না। সেই হিসেবে সে যেন থেকেও নেই। তারপর সে কোনও উপায়ে যদি মুক্তিলাভ করতে পারে, তবে যেন সে নবজীবন লাভ করল। সে যেন অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বমান হলো। কাজেই কোনও পুত্র যদি ‘দাস পিতা'র মুক্তিলাভে ভূমিকা রাখে, তবে তা যেন তার অস্তিত্বলাভেই ভূমিকা রাখা হয়। পিতা হতে পুত্রের জন্মলাভের বিষয়টাও তো এরকমই। পুত্রের প্রকৃত অস্তিত্বদাতা আল্লাহ তাআলা। তবে বাহ্যিকভাবে তার সে অস্তিত্বলাভে পিতার একরকম ভূমিকা থাকে। তারপর প্রকৃত প্রতিপালন তো আল্লাহ তাআলাই করেন, কিন্তু বাহ্যিকভাবে তার লালন-পালনে পিতারও একরকম মেহনত থাকে। তার অস্তিত্বের সূচনা থেকে পূর্ণতাপ্রাপ্তি পর্যন্ত পিতার পর্যায়ক্রমিক সেবাযত্ন থাকে। ব্যস এ মিলের কারণেই বলা হয়েছে, পিতাকে ক্রয় করার পর আযাদ করে দিলে সেটা একরকম প্রতিদানরূপে গণ্য হয়।

উল্লেখ্য, সন্তানের জন্ম ও প্রতিপালনে পিতা অপেক্ষা মায়ের ভূমিকা অনেক বেশি। কাজেই এ হাদীছ দ্বারা যখন জানা গেল যে, কোনও সন্তানের পক্ষে তার পিতাকে পুরোপুরি প্রতিদান দেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়, তখন সন্তানের পক্ষে মায়ের প্রতিদান দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। দুনিয়ার সন্তানগণ মায়ের এ মর্যাদার গুরুত্ব ঠিক কতটুকু উপলব্ধি করে?

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা সন্তানের প্রতি পিতার এবং আরও অধিক পরিমাণে মায়ের অনুগ্রহ ও কল্যাণের বিপুলতা সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়।

খ.কোনও সন্তানের পক্ষে তার পিতা-মাতাকে প্রতিদান দেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয় ।

গ.সন্তানের কর্তব্য পিতা-মাতার সেবাযত্ন করা ও তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন