আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

১৮- তাহাজ্জুদ - নফল নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ১১২৮
৭১৯. তাহাজ্জুদ ও নফল ইবাদতের প্রতি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উৎসাহ প্রদান, অবশ্য তিনি তা ওয়াজিব করেন নি।
১০৬১। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে আমল করা পছন্দ করতেন, সে আমল কোন কোন সময় এ আশঙ্কায় ছেড়ে দিতেন যে, লোকেরা সে আমল করতে থাকবে, ফলে তাদের উপর তা ফরয হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো চাশতের নামায আদায় করেন নি।* আমি সে নামায আদায় করি।

*আয়িশা (রাযিঃ) এ কথা তাঁর জানা অনুসারে বলেছেন। উম্মে হানী (রাযিঃ) এর রিওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চাশত আদায় প্রমাণিত আছে। - আইনী

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ উম্মতের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গভীর মমত্ববোধের পরিচয় বহন করে। এতে জানানো হয়েছে যে, কোনও কোনও আমল তাঁর খুব পসন্দ ছিল। একান্তভাবে তিনি তা করতে চাইতেন। কিন্তু তিনি তা করা হতে বিরত থাকতেন এই ভয়ে যে, তাঁর অনুসরণে সাহাবীগণ তা নিয়মিত করতে থাকবে আর এ কারণে তাদের উপর তা ফরয করে দেওয়া হবে। যদি তা ফরয করে দেওয়া হয়, তবে তো সর্বাবস্থায় তাদেরকে তা পালন করে যেতে হবে, যা তাদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যাবে এবং নিয়মিত তা করে যাওয়া তাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য হবে। উম্মতের কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হওয়াটা তাঁকে পীড়া দিত। বিশেষত তাঁর কারণে উম্মত কোনও কষ্টে পড়ুক এটা তিনি বিলকুল পসন্দ করতেন না। এ কারণেই গভীর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তিনি তা করা হতে বিরত থাকতেন।
এ জাতীয় আমলের একাধিক দৃষ্টান্ত আছে। যেমন তারাবির নামায। তিনি একদিন মসজিদে তা আদায় করলে তার দেখাদেখি সাহাবায়ে কেরামও এ নামায পড়লেন। তিনি পরদিনও তা পড়লেন। এদিন লোক বেড়ে গেল। তারপর তৃতীয় দিন তো লোক অনেক বেড়ে গেল। এদিন আর তিনি মসজিদে আসলেন না। পরদিন ভোরে তিনি বললেনঃ- قد رأيت الذي صنعتم، لم يمنعني من الخروج إليكم إلا أني خشيت أن تفرض عليكم 'তোমরা যা করেছ আমি দেখেছি। তবে আমি তোমাদের কাছে বের হয়ে আসিনি এ কারণে যে, আমার ভয় হয়েছে তোমাদের উপর কিনা তা ফরয করে দেওয়া হয়।[১]
এমনিভাবে প্রতিটি যুদ্ধে অংশগ্রহণের একান্ত কামনা থাকা সত্ত্বেও তিনি অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছেন, প্রত্যেক নামাযের আগে ওযুতে মিসওয়াক করা পসন্দনীয় হওয়া সত্ত্বেও তার হুকুম দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন, ইশার নামায রাতের এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ দেরি করে পড়া প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার হুকুম দেননি। এসবই এ কারণে যে, তাতে উম্মতের কষ্ট হবে।
ইবাদত-বন্দেগীর মত প্রিয় আমলে যখন উম্মতকে কষ্ট দেওয়া তাঁর পসন্দ ছিল না, তখন অন্যসব কাজে তিনি কিভাবে কষ্ট দিতে পারেন? তা দেনওনি কখনও। সারা জীবন সকলকে আরাম ও শান্তি দেওয়ারই চেষ্টা করেছেন। উম্মতকেও তিনি এ শিক্ষাই দিয়েছেন যে, কেউ যেন কারও পক্ষে কোনওভাবেই কষ্টের কারণ না হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা উম্মতের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গভীর মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

খ. এর দ্বারা ত্যাগেরও শিক্ষা পাওয়া যায় যে, অন্যদের কষ্টের আশঙ্কার ক্ষেত্রে নিজের প্রিয় ও কাম্য বিষয় পরিত্যাগ করা চাই (যদি তাতে শরীআতের কোনও বিধান লঙ্ঘন না হয়), যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের কষ্ট বিবেচনায় অনেক কাম্য বিষয় পরিত্যাগ করেছেন।

গ. উলামা-মাশায়েখ ও নেতৃস্থানীয় কোনও ব্যক্তি অনুসারীদের মধ্যে প্রচলিত কোনও আমলের পরিপন্থী কাজ করলে তাদের কর্তব্য তার ব্যাখ্যা করে দেওয়া, যাতে সে সম্পর্কে তাদের মধ্যে কোনও বিভ্রান্তি দেখা না দেয়।

ঘ. উলামা-মাশায়েখ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির কর্তব্য তাদের পসন্দনীয় কোনও আমল দ্বারা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলে তা করা হতে বিরত থাকা, যদি না তাতে শরীআতের কোনও বিধান লঙ্ঘন হয়।

[১]সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১১২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৬১; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৩৭৩; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ১৬০৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৫৪৪৬; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ২৫৪২; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১৩৭৬
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন