আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১৮- দুগ্ধপান সংক্রান্ত আহকাম

হাদীস নং: ৩৫১৭
৯. মহিলাদের সম্পর্কে ওসিয়ত
৩৫১৭। মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
باب الْوَصِيَّةِ بِالنِّسَاءِ
وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا عِمْرَانُ بْنُ أَبِي أَنَسٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْحَكَمِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِمِثْلِهِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

স্ত্রীর কোনও কোনও দোষ বা আপত্তিকর বিষয় দেখে তার প্রতি সম্পূর্ণরূপে বিরূপ হয়ে যাওয়া উচিত নয়। দুনিয়ায় নির্দোষ কোনও মানুষ নেই। দোষের কারণে কাউকে ত্যাগ করলে চলার মত লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না, একাকীই থাকতে হবে। স্ত্রীর বেলায়ও কথাটি সমান প্রযোজ্য। কিছু না কিছু দোষত্রুটি যেমন স্ত্রীর মধ্যে থাকে, তেমনি থাকে স্বামীর মধ্যেও। উভয়ে যদি উভয়ের দোষটাই দেখে, তবে একে অন্যের সঙ্গে চলবে কী করে?
তাই এ হাদীছ নির্দেশনা দিচ্ছে, যখন স্ত্রীর কোনও দোষত্রুটি নজরে পড়ে, তখন সেটি নিয়ে বসে না থেকে তার গুণের প্রতি লক্ষ কর। লক্ষ করলে তার মধ্যে এমন এমন গুণ পেয়ে যাবে, যা তোমাকে মুগ্ধ করবে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا

‘তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যে, তোমরা কোনও জিনিসকে অপছন্দ করছ অথচ আল্লাহ তাতে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।’৩২৯
তার গায়ের রং কালো বলে তুমি অখুশি? একটু লক্ষ করে দেখ তার কত কত শুভ্র-উজ্জ্বল গুণ, তোমার মন ভরে যাবে। তার চেহারা আকর্ষণীয় নয়? দেখ তার আচরণ কত মধুর। তা তোমাকে স্থায়ী মুগ্ধতা দেবে। তুমি তার রাগের কারণে বিরক্ত? সে রাগের আবরণে ঢাকা গভীর ভালোবাসাও দেখ। তুমি ঠিকই তার অনুরক্ত হয়ে উঠবে। এটাই আসল তরীকা। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ঘরে-বাইরে সব জায়গায়ই কল্যাণকর। এ হাদীছ ইতিবাচকতারই চর্চা করতে বলছে।
লক্ষণীয়, হাদীছটিতে স্বামী ও স্ত্রী না বলে মুমিন নর-নারী বলা হয়েছে। এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে, স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর প্রতি মুমিনসুলভ আচরণ করা। মুমিনের শান হচ্ছে যে, সে এক মুমিন নারীর প্রতি সম্পূর্ণরূপে বিরূপ ও বিমুখ হয়ে যাবে না, যার পরিণাম হবে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটানো। তার সদ্গুণের কারণে তাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিত। তার প্রীতিকর স্বভাব-চরিত্রের দিকে লক্ষ করে অপ্রীতিকর বিষয়গুলো উপেক্ষা করা চাই। এটাই দাম্পত্যজীবনের সুখ-শান্তির চাবিকাঠি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর প্রতি আচরণে ঈমানী চিন্তা-চেতনার পরিচয় দেওয়া এবং সেমতে উদারতা ও সহনশীলতাপূর্ণ জীবনাচারে অভ্যস্ত হওয়া।

খ. দোষক্রটির প্রতি লক্ষ করে স্ত্রীর প্রতি সম্পূর্ণরূপে বিমুখ হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। তার ভালো দিক ও সৎ গুণাবলীসমূহের মূল্যায়ন করত তার দোষত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিত।

৩২৭. ইমাম নববী রহ. يفرك হাদীছের শব্দটির উচ্চারণ সম্পর্কে বলছেন যে, এর ي হরফটি 'যবর'- এর সাথে, ف হরফটি ‘সুকূন'-এর সাথে এবং ر হরফটি 'যবর'-এর সাথে পড়তে হবে। এর অর্থ ঘৃণা করা, অপসন্দ করা। এর অতীত ক্রিয়াপদে ر হরফে যের হবে। বলা হয়ে থাকে- فركت المرأة زوجها (স্ত্রী তার স্বামীকে অপসন্দ করল) এবং وفركها زوجها (স্ত্রীকে তার স্বামী অপসন্দ করল)।
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, فرك শব্দটি মূলত মহিলাদের বেলায়ই ব্যবহৃত হয়। পুরুষদের জন্য এর ব্যবহার বিরল ও রূপক। আলোচ্য হাদীছে তাই হয়েছে।

৩২৯. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৯
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন