আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১৭- বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৩৫৯
আন্তর্জাতিক নং: ১৪২৭ -
১৩. মোহর প্রসঙ্গ- কুরআন শিক্ষা দেওয়া, লোহার আংটি ইত্যাদি বস্তু কম বা বেশী মোহর হতে পারে এবং যার জন্য কষ্টকর না হয়, তার জন্য পাঁচশত দিরহাম মোহর দেওয়া মুস্তাহাব
৩৩৫৯। ইয়াহয়া ইবনে ইয়াহয়া তামিমী, আবুর রাবী, সুলাইমান ইবনে দাউদ আতাকী ও কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) এর কাপড়ে হলুদ রং দেখে বললেন, এ কি? তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি এক নাওয়াত (খেজুরের বীচি) ওজনের সোনার বিনিময়ে এক মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দন করুন, তুমি ওলীমা কর, যদিও একটি বকরী দ্বারা হয়।
باب الصَّدَاقِ وَجَوَازِ كَوْنِهِ تَعْلِيمَ قُرْآنٍ وَخَاتَمَ حَدِيدٍ وَغَيْرَ ذَلِكَ مِنْ قَلِيلٍ وَكَثِيرٍ وَاسْتِحْبَابِ كَوْنِهِ خَمْسَمِائَةِ دِرْهَمٍ لِمَنْ لاَ يُجْحَفُ بِهِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى التَّمِيمِيُّ، وَأَبُو الرَّبِيعِ، سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ الْعَتَكِيُّ وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ وَاللَّفْظُ لِيَحْيَى قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ فَقَالَ " مَا هَذَا " . قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ . قَالَ " فَبَارَكَ اللَّهُ لَكَ أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ ".

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ওলীমা বলা হয় ওই দাওয়াতের অনুষ্ঠানকে, যা বিবাহের পর ছেলের বাড়িতে করা হয়ে থাকে। এটা করা সুন্নত। হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাযি. বিবাহ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে হুকুম করলেন أولم ولو بشاة “তুমি ওলীমা কর, যদিও একটি ছাগল দ্বারা হয়।২৯৫
ওলীমার অনুষ্ঠান যখন সুন্নত, তখন সামর্থ্য অনুযায়ী এটা করা উচিত। আর এটা যেহেতু সুন্নত, তখন করাও উচিত সুন্নতের মর্যাদা রক্ষা করে শরীআতবিরোধী কোনও কর্মকাণ্ড তাতে যুক্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়। ওলীমার অনুষ্ঠান যদি শরীআতবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়, তবে তার দাওয়াত কবুল করা চাই। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন إذا دعي أحدكم إلى الوليمة فليأتها ‘তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হলে সে যেন তাতে আসে।২৯৬

ওলীমার দাওয়াত কবুল করা জরুরি কেবল তখনই, যখন তাতে আপত্তিকর কিছু না থাকে। যদি তাতে আপত্তিকর কিছু থাকে, তখন তা কবুল করা জরুরি নয়। ইদানীংকার অধিকাংশ দাওয়াতই এমন, যাতে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। সুন্নত দাওয়াতকেও নানারকম পাপাচারে পঙ্কিল করে ফেলা হয়েছে। ওলীমার দাওয়াত সুন্নত। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ ওলীমার অনুষ্ঠান সহীহ পন্থায় হয় না। তাতে গানবাদ্য থাকে, পর্দার পরিবর্তে থাকে পর্দাহীনতার প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একই জায়গায় বসে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, থাকে উপহারের প্রদর্শনী ও উপহার লেনদেনের সামাজিক বাধ্যবাধকতা, এছাড়াও নানারকম অনুচিত উপসর্গ। দীনদার ব্যক্তির এ জাতীয় দাওয়াতে যাওয়ার কোনও উপায় থাকে না। তাদের বরং না যাওয়াই উচিত। হাঁ, যদি সেখানে গিয়ে আপত্তিকর বিষয়গুলো অপসারণ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে ভিন্ন কথা। আগেও এরকম শর্ত দেওয়া যেতে পারে যে, অনুষ্ঠানে আপত্তিকর কিছু করা চলবে না। তারপর যাওয়ার পর যদি দেখা যায় যথাযথভাবে কথা রাখা হয়নি, তবে কোনও কিছুর পরওয়া না করে ফিরে আসবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ছবিযুক্ত পর্দা দেখে নিজ ঘরেই ঢোকা হতে বিরত থেকেছিলেন। একবার মেয়ে-জামাতা হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-এর বাড়ি থেকেও ফিরে এসেছিলেন। একবার হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. এক দাওয়াতে গিয়ে দেখতে পান দেওয়ালে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন অর্থের এ অপচয়, এ কারণে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাঁরা আমাদের আদর্শ। তাঁদের পথে চলাতেই সঠিক সমাজগঠন ও সমাজ সংস্কারে সফলতা নির্ভর করে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওলীমা করা সুন্নত।

খ. সামর্থ্য অনুযায়ী ওলীমা করা উচিত।

২৯৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২০৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১০৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৩৫১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৬৮৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১০৪১০; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৫৯

২৯৬. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৭৩৬; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৫৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫২৯৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৫১৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩১৩
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন