আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
১৭- বিবাহ-শাদীর অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৩০৫
আন্তর্জাতিক নং: ১৪০৭-৫
৩. মুত’আ বিবাহ তা বৈধ ছিল, পরে তা বাতিল করা হয়, তারপর বৈধ করা হয়, আবার বাতিল করা হয় এবং এখন কিয়ামত পর্যন্ত তার অবৈধতা বলবৎ থাকবে
৩৩০৫। আবু তাহির ও হারামালা (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) কে লক্ষ্য করে আলী (রাযিঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খায়বরের যুদ্বের দিন মুত’আ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ করেছেন।*
*মুত,আ এক ধরনের অস্থায়ী বা সাময়িক বিবাহ। একটি নির্দিষ্টকালের জন্য মাহরের বিনিময়ে কোন স্ত্রীলোকের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বিবাহের চুক্তি বাতিল হয়ে যায় এবং স্ত্রীলোকটি স্বামীর তালাক প্রদান ছাড়াই বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
ইসলাম পূর্ব আরবে এই ধরনের বিবাহ প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামী শরীআতে তা জায়েয ছিল। যুগ যুগ ধরে আরব সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কূপ্রথা রাসূলুল্লাহ্ ধীরস্থির ও হিকমতপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে যেভাবে বিলুপ্ত করেছেন, ঠিক তদ্রূপ বিবাহের এই কূপ্রথাও তিনি সময়মত পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং এর বিলুপ্তি সাধন করেন। ৭ম হিজরীতে খায়বারের যুদ্ধের সময় তিনি এই বিবাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন অতঃপর মক্কা বিজয়কালে আওতাস যুদ্ধ চলাকালীন তিন দিনের জন্য তার অনুমতি প্রদান করেন এবং এরপর তা হারাম ঘোষণা করেন। অতঃপর বিদায় হজ্জের সময় তিনি চিরকারের জন্য এই প্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেন (আবু দাউদ)। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা'আতভুক্ত মাযহাবসমূহে এই বিবাহ চিরকালের জন্য হারাম। এ ব্যাপারে সাহাবা, তাবিঈন এবং হাদীস ও ফিকহের ইমামগণের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এবং তাবিঈদের মধ্যে আতা, তাউস ও সাঈদ ইব্ন জুবায়রের মতে নিরূপায় অবস্থায় এই ধরনের বিবাহ জায়েয। কিন্তু ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) শেষ জীবনে তাঁর এই মত প্রত্যাহার করেছেন বলে কথিত আছে, যদিও তার সনদসূত্র দুর্বল বলে মুহাদ্দিসগণ মত প্রকাশ করেছেন (ফাতহুল রাবী, ৯ খ.: যাদুল মা'আদ, ২ খ, পৃ. ২৫৮)।
রাসূলুল্লাহ -এর সুস্পষ্ট নির্দেশ ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে মুত'আ বিবাহ হারাম প্রমাণিত হয়। কারণ যে নারীর সাথে মুত'আ করা হবে সে না স্ত্রীরূপে গণ্য, না ক্রীতদাসীরূপে। সে যে ক্রীতদাসী নয় তা সুস্পষ্ট। আর সে স্ত্রীও নয়- এজন্য যে, স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন-বিধানের কোনটিই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। যেমন, সে পুরুষ লোকটির ওয়ারিস হতে পারে না এবং পুরুষ লোকটি ও তার ওয়ারিস হতে পারে না। তার তালাক বা ইদ্দত পালনেরও কোন প্রশ্ন উঠে না। সে নফকার (ভরণ-পোষণ) দাবীও করতে পারে না এবং ঈলা, যিহার, লি'আন, খোলা ইত্যাদিও তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এমন সে একই সময় চার স্ত্রী গ্রহণের অনুমতির সীমার বহির্ভূত। অতএব সে যখন “স্ত্রী” বা “দাসী” কোনটাই নয় তখন কি করে সে একজন পুরুষের জন্য হালাল হতে পারে বরং এই ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনকারীরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমালংঘনকারী হিসাবেই গণ্য হবে।
ইয়ামিয়া মাযহাবের লোকেরা (আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত) সূরা নিসার ২৪ নং আয়াত ও এবং তাদের ইমামদের সূত্রে বর্ণিত হাদীসের ভিত্তিতে মুত'আ বিবাহকে জায়িয মনে করে। সুন্নী মুহাদ্দিসগণ প্রমাণ করেছেন যে, এসব হাদীস দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আর কুরআনের আয়াত সম্পর্কে বলা যায় যে, উল্লেখিত আয়াত বৈধ পন্থার বিবাহের পর স্ত্রীর সাথে জৈবিক সম্পর্ক স্থাপন এবং তার প্রাপ্য মাহর প্রদানের কথা বলা হয়েছে।।
প্রসঙ্গত আরও একটি কথা বলে দেওয়া প্রয়োজন যে, মুত'আ বিবাহ হয়রত উমর ফারুক (রাযিঃ) তাঁর খিলাফতকালে নিষিদ্ধ মোষণা করেন এবং নবীন কর্তৃক তা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় নি বলে যে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করা হয় তা আদৌ কোন ভিত্তি নেই। এর হারাম হওয়ার কথা স্বয়ং নবী থেকে প্রমাণিত, উমর (রাযিঃ) এর উদ্গাতা নন। তিনি শুধু এই নিষেধাজ্ঞার প্রচারক ও তা কার্যকরকারী। নবীন যেহেতু এই কূপ্রথার মূলোচ্ছেদ করেন তাঁর জীবনের শেষদিকে, তাই তা সাধারণে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে পারে নি। এই কারণে উত্তর (রাযিঃ) তার ব্যাপক প্রচার করেন এবং সরকারী ফরমানের মাধ্যমে তা কার্যকর করেন।
তাছাড়া মুতা আকে বৈধ মনে করা হলে তা এমন যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার দ্বার খুলে দিবে যে, ইসলামের মত একটি মানবতাবাদী মহান ধর্মে তা বৈধ হওয়া তো দূরের কথা- সুস্থ রুচি ও বিবেক ও তা সহ্য করতে পারে না। মুতা আকে জায়িয করতে হলে সমাজে বারবণীতাদের ন্যায় নিম্নস্তরের একদল নারীকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে- যাদের সাথে মুতা'আ করা যাবে। অথবা কেবল গরীব লোকদের মেয়ে-বোনদের সাথে মুত আ করা হবে, আর ধনিক শ্রেণীর পুরুষের এর সুযোগ গ্রহণ করবে। নবী মুহাম্মাদ ন -এর স্ত্রী আতে এরূপ অন্যায় আচরণপূর্ণ কোন আইন থাকতে পারে না। - (অনুবাদক)
*মুত,আ এক ধরনের অস্থায়ী বা সাময়িক বিবাহ। একটি নির্দিষ্টকালের জন্য মাহরের বিনিময়ে কোন স্ত্রীলোকের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বিবাহের চুক্তি বাতিল হয়ে যায় এবং স্ত্রীলোকটি স্বামীর তালাক প্রদান ছাড়াই বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
ইসলাম পূর্ব আরবে এই ধরনের বিবাহ প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামী শরীআতে তা জায়েয ছিল। যুগ যুগ ধরে আরব সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কূপ্রথা রাসূলুল্লাহ্ ধীরস্থির ও হিকমতপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে যেভাবে বিলুপ্ত করেছেন, ঠিক তদ্রূপ বিবাহের এই কূপ্রথাও তিনি সময়মত পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং এর বিলুপ্তি সাধন করেন। ৭ম হিজরীতে খায়বারের যুদ্ধের সময় তিনি এই বিবাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন অতঃপর মক্কা বিজয়কালে আওতাস যুদ্ধ চলাকালীন তিন দিনের জন্য তার অনুমতি প্রদান করেন এবং এরপর তা হারাম ঘোষণা করেন। অতঃপর বিদায় হজ্জের সময় তিনি চিরকারের জন্য এই প্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেন (আবু দাউদ)। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা'আতভুক্ত মাযহাবসমূহে এই বিবাহ চিরকালের জন্য হারাম। এ ব্যাপারে সাহাবা, তাবিঈন এবং হাদীস ও ফিকহের ইমামগণের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এবং তাবিঈদের মধ্যে আতা, তাউস ও সাঈদ ইব্ন জুবায়রের মতে নিরূপায় অবস্থায় এই ধরনের বিবাহ জায়েয। কিন্তু ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) শেষ জীবনে তাঁর এই মত প্রত্যাহার করেছেন বলে কথিত আছে, যদিও তার সনদসূত্র দুর্বল বলে মুহাদ্দিসগণ মত প্রকাশ করেছেন (ফাতহুল রাবী, ৯ খ.: যাদুল মা'আদ, ২ খ, পৃ. ২৫৮)।
রাসূলুল্লাহ -এর সুস্পষ্ট নির্দেশ ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে মুত'আ বিবাহ হারাম প্রমাণিত হয়। কারণ যে নারীর সাথে মুত'আ করা হবে সে না স্ত্রীরূপে গণ্য, না ক্রীতদাসীরূপে। সে যে ক্রীতদাসী নয় তা সুস্পষ্ট। আর সে স্ত্রীও নয়- এজন্য যে, স্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন-বিধানের কোনটিই তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। যেমন, সে পুরুষ লোকটির ওয়ারিস হতে পারে না এবং পুরুষ লোকটি ও তার ওয়ারিস হতে পারে না। তার তালাক বা ইদ্দত পালনেরও কোন প্রশ্ন উঠে না। সে নফকার (ভরণ-পোষণ) দাবীও করতে পারে না এবং ঈলা, যিহার, লি'আন, খোলা ইত্যাদিও তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এমন সে একই সময় চার স্ত্রী গ্রহণের অনুমতির সীমার বহির্ভূত। অতএব সে যখন “স্ত্রী” বা “দাসী” কোনটাই নয় তখন কি করে সে একজন পুরুষের জন্য হালাল হতে পারে বরং এই ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনকারীরা আল্লাহর নির্ধারিত সীমালংঘনকারী হিসাবেই গণ্য হবে।
ইয়ামিয়া মাযহাবের লোকেরা (আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত) সূরা নিসার ২৪ নং আয়াত ও এবং তাদের ইমামদের সূত্রে বর্ণিত হাদীসের ভিত্তিতে মুত'আ বিবাহকে জায়িয মনে করে। সুন্নী মুহাদ্দিসগণ প্রমাণ করেছেন যে, এসব হাদীস দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আর কুরআনের আয়াত সম্পর্কে বলা যায় যে, উল্লেখিত আয়াত বৈধ পন্থার বিবাহের পর স্ত্রীর সাথে জৈবিক সম্পর্ক স্থাপন এবং তার প্রাপ্য মাহর প্রদানের কথা বলা হয়েছে।।
প্রসঙ্গত আরও একটি কথা বলে দেওয়া প্রয়োজন যে, মুত'আ বিবাহ হয়রত উমর ফারুক (রাযিঃ) তাঁর খিলাফতকালে নিষিদ্ধ মোষণা করেন এবং নবীন কর্তৃক তা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় নি বলে যে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করা হয় তা আদৌ কোন ভিত্তি নেই। এর হারাম হওয়ার কথা স্বয়ং নবী থেকে প্রমাণিত, উমর (রাযিঃ) এর উদ্গাতা নন। তিনি শুধু এই নিষেধাজ্ঞার প্রচারক ও তা কার্যকরকারী। নবীন যেহেতু এই কূপ্রথার মূলোচ্ছেদ করেন তাঁর জীবনের শেষদিকে, তাই তা সাধারণে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হতে পারে নি। এই কারণে উত্তর (রাযিঃ) তার ব্যাপক প্রচার করেন এবং সরকারী ফরমানের মাধ্যমে তা কার্যকর করেন।
তাছাড়া মুতা আকে বৈধ মনে করা হলে তা এমন যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার দ্বার খুলে দিবে যে, ইসলামের মত একটি মানবতাবাদী মহান ধর্মে তা বৈধ হওয়া তো দূরের কথা- সুস্থ রুচি ও বিবেক ও তা সহ্য করতে পারে না। মুতা আকে জায়িয করতে হলে সমাজে বারবণীতাদের ন্যায় নিম্নস্তরের একদল নারীকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে- যাদের সাথে মুতা'আ করা যাবে। অথবা কেবল গরীব লোকদের মেয়ে-বোনদের সাথে মুত আ করা হবে, আর ধনিক শ্রেণীর পুরুষের এর সুযোগ গ্রহণ করবে। নবী মুহাম্মাদ ন -এর স্ত্রী আতে এরূপ অন্যায় আচরণপূর্ণ কোন আইন থাকতে পারে না। - (অনুবাদক)
باب نِكَاحِ الْمُتْعَةِ وَبَيَانِ أَنَّهُ أُبِيحَ ثُمَّ نُسِخَ ثُمَّ أُبِيحَ ثُمَّ نُسِخَ وَاسْتَقَرَّ تَحْرِيمُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
وَحَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، قَالاَ أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنِ الْحَسَنِ، وَعَبْدِ اللَّهِ، ابْنَىْ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عَنْ أَبِيهِمَا، أَنَّهُ سَمِعَ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ، يَقُولُ لاِبْنِ عَبَّاسٍ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ مُتْعَةِ النِّسَاءِ يَوْمَ خَيْبَرَ وَعَنْ أَكْلِ لُحُومِ الْحُمُرِ الإِنْسِيَّةِ .
