আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

১৬- হজ্ব - উমরার অধ্যায়

হাদীস নং: ৩০২৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৩০৫-৩
৫২. কুরবানীর দিন সুন্নতসম্মত নিয়ম এই যে, প্রথমে (জামরায়) কংকর নিক্ষেপ করতে হবে, তারপর কুরবানী করতে হবে, তারপর মাথা মুণ্ডন করতে হবে এবং তা ডানপাশ থেকে শুরু করতে হবে
৩০২৪। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না (রাহঃ) ......... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করলেন, অতঃপর কুরবানীর উটের নিকট ফিরে এসে তা যবেহ করলেন। ক্ষৌরকার নিকটেই বসা ছিল। তিনি মাথার দিকে হাতের ইশারা করলেন এবং সে তার মাথার ডানপার্শ্বের চুল কামিয়ে দিল। তিনি তা নিকটস্থ লোকদের মধ্যে বণ্টন করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ মাথার অপরাংশ কামাও। তিনি বললেনঃ আবু তালহা কোথায়? তখন তিনি সেগুলো তাকে দান করলেন।
باب بَيَانِ أَنَّ السُّنَّةَ يَوْمَ النَّحْرِ أَنْ يَرْمِيَ ثُمَّ يَنْحَرَ ثُمَّ يَحْلِقَ وَالاِبْتِدَاءِ فِي الْحَلْقِ بِالْجَانِبِ الأَيْمَنِ مِنْ رَأْسِ الْمَحْلُوقِ
وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَنَسِ، بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَمَى جَمْرَةَ الْعَقَبَةِ ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى الْبُدْنِ فَنَحَرَهَا وَالْحَجَّامُ جَالِسٌ وَقَالَ بِيَدِهِ عَنْ رَأْسِهِ فَحَلَقَ شِقَّهُ الأَيْمَنَ فَقَسَمَهُ فِيمَنْ يَلِيهِ ثُمَّ قَالَ " احْلِقِ الشِّقَّ الآخَرَ " . فَقَالَ " أَيْنَ أَبُو طَلْحَةَ " . فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজ্জ পালনের অংশবিশেষ বর্ণিত হয়েছে। তিনি মিনার জামারাতে আসেন এবং জামারাতুল কুবরায় পাথর নিক্ষেপ করেন। তারপর কুরবানী করেন। তারপর মাথা মুণ্ডন করেন। তিনি মাথা মুণ্ডন কীভাবে করেছেন তাও হাদীছটিতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি প্রথমে মাথার ডানদিক পেতে দেন এবং ক্ষৌরকারকে সেদিক মুণ্ডাতে বলেন। সেদিক মুণ্ডানো শেষ হলে বামদিক পেতে দেন। এভাবে তিনি মাথা মুণ্ডানোর কাজ শেষ করেন।

হাদীছটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুণ্ডিত চুল সাহাবীদের মধ্যে বিতরণ করা। হাদীসে আছে, তাঁর মাথার ডানদিক মুণ্ডন করা শেষ হলে তিনি হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-কে ডাকলেন এবং পবিত্র সেই চুল তাঁকে দিলেন। তারপর মাথার বামদিক কামানো হল। তিনি সেদিকের চুল আবূ তালহা আনসারী রাযি.-কে দিয়ে বললেন, এগুলো লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দাও। তিনি তা বিতরণ করে দিলেন।

কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, ডানদিকের চুল সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল আর বাম দিকেরগুলো হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-কে দেওয়া হয়েছিল।

এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি.-কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। বলা যায় আনসারদের মধ্যে তিনি তাঁর সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়দের একজন ছিলেন। তাঁর অতটা ঘনিষ্ঠতা হয়তো বহু মুহাজিরও লাভ করতে পারেননি। সে ঘনিষ্ঠতার নিদর্শন যে, পবিত্র মাথার ডানদিকের মুবারক চুল বিশেষভাবে তাঁকেই দিলেন। তারপর বাম দিকেরগুলো সাধারণভাবে সকলের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

তবে হাঁ, কাউকে বিশেষ কোনও ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়ার দ্বারা সামগ্রিকভাবে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না। এটা একটা শাখাগত শ্রেষ্ঠত্ব। নয়তো আশারায়ে মুবাশশারাসহ বহু সাহাবী মর্যাদায় আরও অনেক উপরে রয়েছেন।

এ হাদীছটি দ্বারা তাবাররুকের প্রমাণ পাওয়া যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি জিনিসই ছিল বরকতময়। তাঁর চুল, তাঁর থুথু, তাঁর ঘাম, তাঁর জামা, তাঁর জুতো সবই বরকতময়। কেউ যদি বরকতের উদ্দেশ্যে এসব নিজের কাছে রাখে, তবে এ হাদীছ দ্বারা তা বৈধ প্রমাণিত হয়। বরং এর বৈধতায় কোনও সন্দেহ নেই, যেহেতু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তাঁর মুণ্ডিত চুল বিতরণ করেছেন, যাতে সাহাবায়ে কেরাম তা দ্বারা বরকত গ্রহণ করতে পারেন।

বস্তুত নিজের কাছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত রাখতে পারাটা অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। এর দ্বারা বুযুর্গানে দীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনওকিছুকে তাবাররুক হিসেবে সংরক্ষণ করার বৈধতাও প্রমাণিত হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. জামারায় পাথর নিক্ষেপ করা হজ্জের একটি অবশ্যপালনীয় বিধান (ওয়াজিব)।

খ. কিরান বা তামাত্তু' হজ্জকারীর জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। একে 'দমে শোকর' বলে

গ. হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছাঁটা জরুরি।

ঘ. মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা ডানদিক থেকে শুরু করা সুন্নত।

ঙ. এ হাদীছ দ্বারা তাবাররুকের বৈধতা প্রমাণিত হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)