আশ-শামাঈলুল মুহাম্মাদিয়্যাহ- ইমাম তিরমিযী রহঃ

الشمائل المحمدية للإمام الترمذي

শামাইলে নববীর পরিচ্ছেদসমূহ - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন...

হাদীস নং:২৫৩
রাসূলুল্লাহ্ এর রাত্রে গল্প বলা (উম্মে যারা'র হাদীস)
২৫৩। আলী ইবন হুজ্ (রাহঃ)... আয়িশা (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার এগারজন স্ত্রীলোক এই মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলো যে, তারা তাদের নিজ নিজ স্বামীর ব্যাপারে যথার্থ অবস্থা তুলে ধরবে। প্রথম মহিলা বলল, আমার স্বামী অলস, অকর্মণ্য, দুর্বল উটের গোশত তুল্য, তাও আবার পর্বত চূড়ায় সংরক্ষিত; যা ধরাছোঁয়া দুঃসাধ্য। তার আচরণ রুক্ষ। এতে তার কাছে যাওয়া যায় না। সে স্বাস্থ্যবানও নয়, আর তাকে ত্যাগও করতে পারছি না।

দ্বিতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী এমন যে, আমি আশংকা করছি তার দোষত্রুটি বর্ণনা করে শেষ করতে পারব না। আর আমি যদি বর্ণনা দেই, তাহলে কেবল দোষত্রুটিই বর্ণনা করব।

তৃতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী দীর্ঘদেহ বিশিষ্ট (কদাকার আকৃতির)। আমি কথা বললে (উত্তর আসে) তালাক । আর নীরব থাকলে সে তো ঝুলন্ত অসি (অর্থাৎ কিছু চাইলে বদ মেজাজের কোপানলে পড়তে হয় এবং চুপ থাকলে বঞ্চিত হতে হয়)।

চতুর্থ মহিলা বলল, আমার স্বামী তাহামার রাত্রির ন্যায়- না ( প্রচণ্ড গরম, আর না ( প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। তার থেকে কোন ভয়ভীতি কিংবা অস্বস্তির কারণ নেই।

পঞ্চম মহিলা বলল, আমার স্বামী এলে মনে হয় চিতাবাঘ আর বাইরে সে হয় সাহসী শার্দুল। বাড়িতে কি ঘটল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে না।

ষষ্ঠ মহিলা বলল, আমার স্বামী যখন খায়, তৃপ্তি ভরে খায়। আর পান করলে অবশিষ্ট রাখে না। আর যখন ঘুমোতে যায়, চাদর দেহে জড়িয়ে দেয়। আমার কোন বিপদাপদ আছে কিনা তা হাত বাড়িয়েও দেখে না।

সপ্তম মহিলা বলল, আমার স্বামী উপগত হতে অক্ষম, কথা বলতে অপারগ, সর্বাধিক রোগে আক্রান্ত। সে আমার মস্তক চূর্ণ করতে পারে অথবা মারধোর করে সর্বাঙ্গ একত্র করে দিতে পারে।

অষ্টম মহিলা বলল, আমার স্বামীর পরশ খরগোশের ন্যায় কোমল। (তার ব্যবহৃত সুগন্ধি) জাফরানের সুগন্ধির ন্যায়।

নবম মহিলা বলল, আমার স্বামী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। অতীন অতিথি পরায়ণ, দীর্ঘ দেহ বিশিষ্ট, তার বৈঠকখানা ঘরের সন্নিকটবর্তী।

দশম মহিলা বলল, আমার স্বামী মালিক। মালিকের প্রশংসা কীর্তন কী বা করব (অর্থাৎ উপরে বর্ণিতদের প্রশংসা একত্র করলেও তার প্রশংসা করে শেষ করা যাবে না)। তার রয়েছে অসংখ্য উট, আর আস্তাবল ঘরের কাছেই। মাঠে খুব কমই চরানো হয়। এসব উট যখন বাজনার ঝংকার শোনে তখন প্রত্যয় জন্মে যে, তাদের যবেহ করা হবে।

একাদশ মহিলা উম্মে যার'আ বলল, আমার স্বামী আবু যার'আ। আবু যার আর কী বা প্রশংসা করব, সে তো অলংকার দিয়ে আমার দুই কান ন্যূব্জ করে দিয়েছে, উপাদেয় খাবার খাইয়ে দুই বাহু চর্বিযুক্ত করে দিয়েছে। আমাকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে রেখেছে। ফলে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছি। আমি ছিলাম বকরী রাখালের মেয়ে, খুব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হতো। আমি এখন অসংখ্য ঘোড়া, উট ও বকরী পালের মধ্যে তথা পর্যাপ্ত ধন-সম্পদের মধ্যে আছি। আমি তাকে কিছু বললেও ও আমাকে মন্দ বলতো না। সারাক্ষণ নিদ্রায় কাটালেও কিছু বলতো না। পর্যাপ্ত আহারের পরও অবশিষ্ট থাকত। উন্মু আবু যার আর (একাদশ মহিলার শাশুড়ি) প্রশংসাই বা কীভাবে করব! তার বড় বড় পাত্রগুলো সর্বদা খানায় পরিপূর্ণ থাকে আর তার বাড়ির চৌহদ্দী খুবই বিশাল। ইবন আবু যার'আ (আবু যার'আর ছেলে) সম্পর্কে কী বলব! তার শরীর হালকা-পাতলা গোছের, কে মরখানি তরবারির ন্যায় সূক্ষ্ম, বকরীর একটি উরুর গোশত তার জন্য যথেষ্ট। আবু যার আর কন্যা সম্পর্কেই কী বলব! পিতামাতার অনুগত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী স্বাস্থ্যবান সতীনদের অন্তর্জালার কারণ। আবু যার আর পরিচারিকার কথাই বা কী বলব! সে ঘরের গোপন তথ্য ফাঁস করে না, আমাদের খাবার বিনানুমতিতে তসরূপ করে না। বাড়িঘরে কখনো আবর্জনা জমা করে রাখে না। সে (একাদশ মহিলা) বলল, একবার আবু যার'আ বাইরে যান এবং দেখতে পান যে, স্বাস্থ্যবান দু'টি শিশু তাদের মায়ের স্তন নিয়ে খেলা করছে। এরপর সে (আবু যারআ) আমাকে তালাক দিয়ে তাকে পরিণয় সূত্রে আব্দ্ধ করে ফেলে।

এরপর আমি একজন ধনাঢ্য উষ্ট্রারোহী ব্যক্তিকে বিবাহ করি। সেও আমাকে পর্যাপ্ত সামগ্রী জোড়ায় জোড়ায় দিল। সে (স্বামী) বলল, উম্মু যার'আ! তৃপ্তি সহকারে খাও এবং ইচ্ছেমত তোমার আত্মীয়দের জন্য পাঠাও। সে (মহিলা) বলল, তার দান-দক্ষিণার যাবতীয় বস্তুরাজি একত্র করলেও আবু যার 'আর সামান্যও হবে না। আয়িশা (রাযিঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে বললেন : আবু যার'আ যেমন উন্মু যার আর জন্য, আমিও ঠিক তোমার জন্য তদ্রূপ। (কিন্তু আমি কখনো আবু যার আর মত তোমাকে তালাক দেব না)।
باب ما جاء في كلام رسول الله صلى الله عليه وسلم في السمر
حديث أم زرع
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ قَالَ : حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنِ أَخِيهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُرْوَةَ ، عَنْ عُرْوَةَ ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : جَلَسَتْ إِحْدَى عَشْرَةَ امْرَأَةً فَتَعَاهَدْنَ وَتَعَاقَدْنَ أَنْ لاَ يَكْتُمْنَ مِنْ أَخْبَارِ أَزْوَاجِهِنَّ شَيْئًا : فَقَالَتِ الْأُولَى : زَوْجِي لَحْمُ جَمَلٍ غَثٍّ عَلَى رَأْسِ جَبَلٍ وَعْرٍ ، لاَ سَهْلٌ فَيُرْتَقَى ، وَلاَ سَمِينٌ فَيُنْتَقَلُ . قَالَتِ الثَّانِيَةُ : زَوْجِي لاَ أَبُثُّ خَبَرَهُ ، إِنِّي أَخَافُ أَنْ لاَ أَذَرَهُ ، إِنْ أَذْكُرْهُ أَذْكُرْ عُجَرَهُ وَبُجَرَهُ . قَالَتِ الثَّالِثَةُ : زَوْجِي الْعَشَنَّقُ ، إِنْ أَنْطِقْ أُطَلَّقْ ، وَإِنْ أَسْكُتْ أُعَلَّقْ . قَالَتِ الرَّابِعَةُ : زَوْجِي كَلَيْلِ تِهَامَةَ ، لاَ حَرٌّ وَلاَ قُرٌّ ، وَلاَ مَخَافَةَ وَلاَ سَآمَةَ . قَالَتِ الْخَامِسَةُ : زَوْجِي إِنْ دَخَلَ فَهِدَ وَإِنْ خَرَجَ أَسِدَ ، وَلاَ يَسْأَلُ عَمَّا عَهِدَ . قَالَتِ السَّادِسَةُ : زَوْجِي إِنْ أَكَلَ لَفَّ ، وَإِنْ شَرِبَ اشْتَفَّ ، وَإِنِ اضْطَجَعَ الْتَفَّ ، وَلاَ يُولِجُ الْكَفَّ لِيَعْلَمَ الْبَثَّ . قَالَتِ السَّابِعَةُ : زَوْجِي عَيَايَاءُ أَوْ غَيَايَاءُ طَبَاقَاءُ كُلُّ دَاءٍ لَهُ دَاءٌ ، شَجَّكِ أَوْ فَلَّكِ أَوْ جَمَعَ كُلًّا لَكِ . قَالَتِ الثَّامِنَةُ : زَوْجِي الْمَسُّ مَسُّ أَرْنَبٍ وَالرِّيحُ رِيحُ زَرْنَبٍ . قَالَتِ التَّاسِعَةُ : زَوْجِي رَفِيعُ الْعِمَادِ طَوِيلُ النِّجَادِ عَظِيمُ الرَّمَادِ قَرِيبُ الْبَيْتِ مِنَ النَّادِ . قَالَتِ الْعَاشِرَةُ : زَوْجِي مَالِكٌ وَمَا مَالِكٌ مَالِكٌ خَيْرٌ مِنْ ذَلِكِ ، لَهُ إِبِلٌ كَثِيرَاتُ الْمَبَارِكِ ، قَلِيلاَتُ الْمَسَارِحِ ، إِذَا سَمِعْنَ صَوْتَ الْمِزْهَرِ أَيْقَنَّ أَنَّهُنَّ هَوَالِكُ . قَالَتِ الْحَادِيَةَ عَشْرَةَ : زَوْجِي أَبُو زَرْعٍ وَمَا أَبُو زَرْعٍ ؟ أَنَاسَ مِنْ حُلِيٍّ أُذُنَيَّ ، وَمَلَأَ مِنْ شَحْمٍ عَضُدَيَّ ، وَبَجَّحَنِي فَبَجَحَتْ إِلَيَّ نَفْسِي ، وَجَدَنِي فِي أَهْلِ غُنَيْمَةٍ بِشِقٍّ فَجَعَلَنِي فِي أَهْلِ صَهِيلٍ وَأَطِيطٍ وَدَائِسٍ وَمُنَقٍّ ، فَعِنْدَهُ أَقُولُ فَلاَ أُقَبَّحُ ، وَأَرْقُدُ فَأَتَصَبَّحُ وَأَشْرَبُ فَأَتَقَمَّحُ ، أُمُّ أَبِي زَرْعٍ فَمَا أُمُّ أَبِي زَرْعٍ ، عُكُومُهَا رَدَاحٌ ، وَبَيْتُهَا فَسَاحٌ ، ابْنُ أَبِي زَرْعٍ ، فَمَا ابْنُ أَبِي زَرْعٍ ، مَضْجَعُهُ كَمَسَلِّ شَطْبَةٍ ، وَتُشْبِعُهُ ذِرَاعُ الْجَفْرَةِ ، بِنْتُ أَبِي زَرْعٍ ، فَمَا بِنْتُ أَبِي زَرْعٍ ، طَوْعُ أَبِيهَا وَطَوْعُ أُمِّهَا ، مِلْءُ كِسَائِهَا ، وَغَيْظُ جَارَتِهَا ، جَارِيَةُ أَبِي زَرْعٍ ، فَمَا جَارِيَةُ أَبِي زَرْعٍ ، لاَ تَبُثُّ حَدِيثَنَا تَبْثِيثًا ، وَلاَ تُنَقِّثُ مِيرَتَنَا تَنْقِيثًا ، وَلاَ تَمْلَأُ بَيْتَنَا تَعْشِيشًا ، قَالَتْ : خَرَجَ أَبُو زَرْعٍ وَالأَوْطَابُ تُمْخَضُ ، فَلَقِيَ امْرَأَةً مَعَهَا وَلَدَانِ لَهَا كَالْفَهْدَيْنِ ، يَلْعَبَانِ مِنْ تَحْتِ خَصْرِهَا بِرُمَّانَتَيْنِ ، فَطَلَّقَنِي وَنَكَحَهَا ، فَنَكَحْتُ بَعْدَهُ رَجُلاً سَرِيًّا ، رَكِبَ شَرِيًّا ، وَأَخَذَ خَطِّيًّا ، وَأَرَاحَ عَلَيَّ نَعَمًا ثَرِيًّا ، وَأَعْطَانِي مِنْ كُلِّ رَائِحَةٍ زَوْجًا ، وَقَالَ : كُلِي أُمَّ زَرْعٍ ، وَمِيرِي أَهْلَكِ ، فَلَوْ جَمَعْتُ كُلَّ شَيْءٍ أَعْطَانِيهِ ، مَا بَلَغَ أَصْغَرَ آنِيَةِ أَبِي زَرْعٍ . قَالَتْ عَائِشَةُ : فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : كُنْتُ لَكِ كَأَبِي زَرْعٍ لِأُمِّ زَرْعٍ.