কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
كتاب السنن للإمام أبي داود
৫. হজ্ব আদায়ের নিয়মাবলীর বিবরণ - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৫ টি
অনুসন্ধান করুন...
হাদীস নং:১৯০৩
আন্তর্জাতিক নং: ১৯০৫
৫৫. মহানবী (ﷺ) - এর বিদায় হজ্জের বিবরণ।
১৯০৩. আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আন-নুয়াফলী .... জা‘ফর ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমরা তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার পর (অন্ধ হওয়া কারণে আগমনকারীদের সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করেন। আমার নিকট তাঁর প্রশ্নটি সমাপ্ত হওয়ার পর আমি বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন (রাযিঃ)। এতদশ্রবণে তিনি আমার মাথায় তাঁর হাত বোলান এবং কামীসের (জামার) উপর ও নিম্নাংশ টেনে তাঁর হস্ততালু আমার বুকের উপর স্থাপন করেন। এ সময় আমি যুবক ছিলাম।
অতঃপর তিনি (জাবির) বলেনঃ তোমার জন্য মারহাবা ও খোশ-আমদেদ! হে ভ্রাতুষ্পুত্র তোমার যা ইচ্ছা, আমাকে জিজ্ঞাসা কর। আমি তাঁকে প্রশ্ন করি, আর তিনি ছিলেন অন্ধ। অতঃপর নামাযের সময় উপস্থিত হওয়ায় তিনি (জাবির) জায়নামাযে দণ্ডায়মান হন, এমতাবস্থায় যে, তাঁর কাঁধে ভাঁজ করা চাঁদর ঝুলন্ত ছিল। অতঃপর তিনি (ইমাম) আমাদের সাথে নামায আদায় করেন এবং তাঁর বড় চাদর আলনায় সংরক্ষিত ছিল। আমি বললাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিদায় হজ্জ সম্পর্কে কিছু বলুন।
জাবির (রাযিঃ) তাঁর হাতের প্রতি ইশারা করেন এবং (দু’ হাতের) নয়টি আঙ্গুল বন্ধ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় নয় বছর অবস্থান করেন এবং এই সময় তিনি কোন হজ্জ সম্পন্ন করেননি। অতঃপর (অষ্টম হিজরীতে) মক্কা বিজয়ের পর, দশম হিজরীতে লোকদের নিকট এরূপ ঘোষণা দেয়া হয়ঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হজ্জে গমন করবেন। এতে মদীনায় অসংখ্য লোকের সমাগম হয় এবং প্রত্যেকেই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর ইক্তিদা করে তাঁর অনুরূপ আমল করতে চায়।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) রওয়ানা হলে, আমরাও তাঁর সাথে রওয়ানা হই। অতঃপর আমরা যুল হুলাইফাতে উপনীত হই। ঐ সময় আসমা বিনতে উমায়স (রাযিঃ) মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকরকে প্রসব করেন। তখন তিনি (আসমা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট ইহরামের ব্যাপারে কী করবেন, তা জানার জন্য লোক পাঠান। তিনি বলেন, তুমি (পবিত্রতা হাসিলের জন্য) গোসল কর, কাপড় দ্বারা নিজের লজ্জাস্থান ব্যান্ডেজ কর এবং ইহরাম বাঁধ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যুল হুলাইফার মসজিদে দু‘ই রাকআত নামায আদায় করেন।
অতঃপর তিনি তাঁর বাহণে (কাসওয়ায়) আররোহণ করে বায়দা নামক স্থানে উপস্থিত হন। জাবের (রাযিঃ) বলেন, আমি তাঁর সম্মুখভাগে, আমার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত কেবল আরোহী এবং পদাতিক লোকদের দেখি। তাঁর ডানে, বামে এবং পশ্চাতেও অনুরূপ লোক ছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মধ্যে ছিলেন এবং তাঁর নিকট তখনও কুরআন নাযিল হচ্ছিল। আর তিনি এর ব্যাখ্যা সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল ছিলেন। আর তিনি যেরূপ আমল করছিলেন, আমরাও সেরূপ করছিলাম।
অতঃপর তিনি তালবিয়া পাঠ শুরু করেন, যা তাওহীদ ভিত্তিক ছিল। (لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ) (অর্থ) ‘আমি উপস্থিত হে আল্লাহ্! আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত, তোমার কোনো শরীক নেই, আমি উপস্থিত, সকল প্রশংসা ও নেআমত তোমারই এবং সাম্রাজ্য, তোমার কোনো শরীক নেই।’’ আর লোকেরা এ কথার দ্বারা এবং এর অধিক দ্বারাও তালবিয়া পাঠ করছিল; কিন্তু এতদসত্তেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা নিষেধ করেননি। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় তালবিয়া পাঠ অব্যাহত রাখেন।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, আমরা হজ্জের নিয়ত করি এবং উমরা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। অতঃপর (যিল হজ্জের চতুর্থ দিনে) আমরা তাঁর সাথে বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী হই। তিনি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেন এবং তিনবার রমল এবং চারবার হেঁটে (তাওয়াফ) সম্পন্ন করেন। অতঃপর তিনি মাকামে উপস্থিত হন এবং বলেন, তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থানে পরিণত কর। অতঃপর তিনি মাকামে ইবরাহীমের পশ্চাতে দু‘ই রাকআত নামায আদায় করেন। রাবী (জা‘ফর ইবনে মুহাম্মাদ) বলেন, আমার পিতা (মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন) বলতেন, রাবী ইবনে নুফায়ল ও উসমান বলেন, তিনি নামাযে কী পড়েন তা আমার জানা নেই। তবে সুলাইমান নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দুই রাকআতের এক রাকআতে সূরা ইখলাস ও অন্য রাকআতে সূরা কাফিরূণ পড়বে।
অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর নিকট আগমন করেন এবং হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। অতঃপর এর দরজা দিয়ে বের হয়ে তিন সাফার দিকে গমন করেন। তিনি সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিলোওয়াত করেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া, আল্লাহর নির্দেশবিলীর অন্যতম।’’ অতঃপর তিনি সাফা হতে সা‘ঈ শুরু করেন এবং এর উপর আরোহণ করে বায়তুল্লাহর ঘর দেখে বলেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর জন্যই সাম্রাজ্য, আর তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা, তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। এক একক আল্লাহ্ ভিন্ন কোনো ইলাহ্ নেই, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং তা বান্দা মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সাহায্য করেছেন, এবং তিনি একাই সকল বাহিনীকে পরাভূত করেছেন।’’
অতঃপর তিনি এর মধ্যে দুআ করেন এবং তিনবার উত্তমরূপ ইরশাদ করেন। অতঃপর তিনি মারওয়ার দিকে গমন করেন এবং দু’ পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে রমল করেন। তিনি মারওয়ার উপর আরোহণ করে ঐ সমস্ত আমল করেন, যা তিনি সাফা পাহাড়ের উপর উঠে করেছিলেন। অতঃপর তিনি মারওয়ার তাওয়াফ সমাপ্ত করে বলেন, যা আমি পরে অবগত হয়েছি, যদি তা পূর্বে অবগত হতে পাতাম, তবে আমি কুরবানীর পশু অগ্রে প্রেরণ করতাম না এবং একে (হজ্জকে) উমরায় রূপান্তরিত করতাম। আর তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু নেই, তারা যেন উমরার পর হালাল হয়, যাতে তা কেবল উমরা হয়।
তখন নবী করীম (ﷺ) এবং ঐ সমস্ত ব্যক্তিবর্গ যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত অন্য সমস্ত লোকেরা হালাল হয় এবং তাদের চুল মুণ্ডন বা ছোট করে। তখন সুরাকা ইবনে জাআশাম দন্ডয়মান হয়ে প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এরূপ ব্যবস্থা (হজ্জের মধ্যে উমরা পালন) কি কেবল এ বছরের জন্য, না সর্বকালের জন্য? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর একহাতের অঙ্গুলি দু‘বার উচ্চারণ করেন। আর তা সর্বকালের জন্য।
অতঃপর তিনি (জাবির) বলেন, এ সময় আলী (রাযিঃ) ইয়ামান হতে তাঁর নবী করীম (ﷺ) এর কুরবানীর পশু সহ আগমন করেন। ঐ সময় তিনি ফাতিমা (রাযিঃ)-কে হালাল অবস্থায় রংিন কাপড় পরিহিতা এবং সুরমা ব্যবহারকারিণী দেখতে পেয়ে অপছন্দ করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, তোমাকে কে এরূপ করতে বলেছে? তিনি বলেন, আমার পিতা। জাবির (রাযিঃ) বলেন, আলী (রাযিঃ), যিনি তখন ইরাকের শাসনকর্তা ছিলেন বলেন, আমি তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খিদমতে ফাতিমার কাজে রাগান্বিত হয়ে উপস্থিত হই এবং ঐ সম্পর্কে ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করি, যা সে আমাকে বলেছিল। আর আমি তার কাজে অসুন্তুষ্ট হওয়ার কথা প্রকাশ করায়, ‘আমার পিতা আমাকে এরূপ করতে বলছে’’, তাও তাঁর কাছে বলি। তিনি বলেন, সে সত্য বলেছে, সে সত্য বলেছে।
আচ্ছা, তুমি যখন হজ্জের নিয়ত করেছ, তখন কী বলেছ? তিনি বলেন, আমি বলেছে, ইয়া আল্লাহ্! আমি ঐরূপ ইহরাম বাঁধছি, যেরূপ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেঁধেছেন। তিনি বলেন, আমার সাথে কুরবানীর পশু আছে, কাজেই তুমি আমার মত হালাল হতে পারবে না। জাবির বলেন, কুরবানীর পশু, যা আলী (রাযিঃ) ইয়ামান হতে সঙ্গে আনেন এবং যা মদীনা হতে নবী করীম (ﷺ) এর সাথে এনেছিলেন এর মোট সংখ্যা ছিল এক‘শ। এমতাবস্থায় নবী করীম (ﷺ) এবং যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তারা ব্যতীত অন্য সকলে হালাল হয় এবং তাদের মস্তক মুণ্ডন বা চুল ছোট করে।
রাবী (জাবির (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর তালবিয়ার দিন (৮ই যিল হজ্জ) আসলে, তাঁরা মিনায় গমন করেন এবং হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর বাহণে সওয়ার হন এবং মিনায় পৌঁছে যোহর, আসর, মাগরিব এশা এবং ফজরের আযান আদায় করেন এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত সে স্থানে অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি তাঁর জন্য একটি পশমী কাপড়ের তাঁবু টানাতে নির্দেশ দেন। তাঁর জন্য নামেরা নামক স্থানে তা টানানো হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে গমন করেন। যাতে কুরাশরা এরূপ সন্দেহ করতে না পারে যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হারামের নিকটবর্তী স্থান মুযদালিফায় অবস্থান করবেন, (এবং আরাফাতে গমন করবেন না), যেরূপ কুরাইশরা জাহিলীয়াতের যুগে করত।
এরপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুযদালিফা অতিক্রম করে আরাফাতে পৌঁছান এবং তাঁর জন্য প্রস্তুতকৃত তাঁবু যা নামেরাতে স্থাপন করা হয়, সেখানে উপস্থিত হন। অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে তিনি তাঁর বাহণ প্রস্তুতের নির্দেশ দেন এবং তাতে আরোহণ করে বাতনে ওয়াদী নামক স্থানে গমন করেন। অতঃপর তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান প্রসঙ্গে বলেন, তোমাদের রক্ত ও সম্পদ (একে অপরের জন্য) হারাম। যেমন হারাম (পবিত্র) তোমাদের আজকের এ দিন, এ মাস ও এ শহর।
খবরদার! জাহিলীয়া যুগের সর্বপ্রকার কাজকর্ম (আজ) আমার পায়ের নীচে বাতিল ঘোষিত হল। জাহিলীয়া যুগের রক্ত (প্রতিশোধ গ্রহণ) পরিত্যক্ত হল। আর সর্বপ্রথম আমি আমার পক্ষ হতে (আহলে ইসলামের) যে রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, তা দাবি পরিত্যাগ করলাম। উসমান বলেন, এটা আবু রাবীআর রক্ত। আর সুলাইমান (রাযিঃ) বলেন, এটা রাবীআ ইবনুল হারিস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের খুনের রক্ত। সে (ইবনে রাবীআ) ছিল বনী সা’দ গোত্রের একটি শিশুপুত্র, যাকে হুযায়ল গোত্রের লোকেরা হত্যা করে। আর জাহিলীয়া যুগের সুদ প্রথা বাতিল ঘোষিত হল। আর এ প্রসঙ্গে আমি আমাদের প্রাপ্য সুদ, যা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সবই বাতিল করলাম। আর তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ, আর আল্লাহর তাআলার নির্দেশে তোমরা তাদের স্ত্রী-অঙ্গ (ব্যবহার) হালাল করেছ (অর্থাৎ শরীআত সম্মত পন্থায় ইজাব-কবুলের দ্বারা তাদের বিবাহ করেছ)। তাদের উপর তোমাদের হক এই যে, তারা যেন তোমাদের বিছানায় এমন কোন লোককে আসার অনুমতি প্রদান না করে, যাকে সে (স্বামী) অপছন্দ করে।
যদি তারা এরূপ করে, তবে তাদের (এ জন্য) সামান্য প্রহার করবে। আর তোমাদের উপর তাদের উত্তমরূপে ভরণপোষনের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে একটি বিশেষ বস্তু রেখে যাচ্ছি। আমার পরে যদি তোমরা তা মজবুত ভাবে ধারণ কর, তবে তোমরা কখনও গোমরাহ্ হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব। আর তোমাদেরকে (কিয়ামতের দিন) আমার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা আমার সম্পর্কে কী বলবে? সাহাবীগণ বলেন, আমরা এরূপ সাক্ষ্য প্রদান করব যে, আপনি আপনার (রিসালাতের) দায়িত্ব সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছেন, আপনার (আমানতের) হক আদায় করেছেন এবং আপনি আপনার (উম্মতকে) নসীহত করেছেন। অতঃপর তিনি তাঁর শাহাদাত অঙ্গুলি আকাশের দিকে উত্তোলন করেন এবং পরে লোকদের প্রতি ইশারা কবলেন, হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থেকো, হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থোকো, হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থেকো।
অতঃপর তিনি বিলাল (রাযিঃ)-কে আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং যোহরের নামায আদায় করেন। অতঃপর দণ্ডায়মান হয়ে আসরের নামাযও আদায় করেন এবং তিনি এর সাথে অন্য কোনো কিছুই (সুন্নত, নফল ইত্যাদি আদায় করেননি। (অর্থাৎ যোহর ও আসরের নামায পরপর আদায় করেন।) অতঃপর তিঁনি তাঁর বাহনে সওয়ার হন এবং আরাফাতে (মূল ভূমিতে) গমন করেন। অতঃপর তিনি তাঁর বাহণ উটকে বড় প্রস্তরের নিকট (যা জাবালে রহমতের নিকটে অবস্থিত) নিয়ে যান এবং হাবল আল মাশাত-কে সম্মুখে রাখেন এবং কিবলামুখী হন। আর সূর্যাআস্ত পর্যন্ত সেখানে তিনি অবস্থান করেন।
অতঃপর সূর্যের লালিমা বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি উসামাকে স্বীয় উটের পশ্চাতে বসিয়ে নেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরাফার হতে মুযদালিফায় গমন করেন। ঐ সময় তিনি তাঁর উটের লাগাম নিজের হাতে নেন, যাতে তাঁর (উটের) মাথা, পাদানির নিকট পৌঁছায়। আর এসময় তিনি ডান হস্তদ্বারা ইশারা করে বলেন, শান্ত হও (অর্থাৎ তোমরা এখন শান্তু বা স্বস্তি গ্রহণ কর)। হে জনগণ! তোমরা স্বস্তি গ্রহণ কর। হে লোক সকল! তোমরা শান্তি কবুল কর। অতঃপর তিনি যখন কোন পাহাড়ের নিকটবর্তী হন, তখন উটের লাগামকে কিছুটা ঢিল দেন এবং এই অবস্থায় মুযদালিফায় গমন করেন। আর এ স্থানে তিনি মাগরিব ও এশার নামায একই আযান ও দুই ইকামতের দ্বারা একত্রে আদায় করেন।
রাবী উসমান বলেন, তিনি মাগরিব ও এশার নামায (একত্রে আদায়ের সময়) এর মধ্যবর্তী সময়ে কোন তাসবীহ পাঠ করেন নাই। অতঃপর সমস্ত রাবী একমত হয়ে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সকাল পর্যন্ত নিদ্রা যান। আর ফজরের সময় হওয়ার পর তিনি ফজরের নামায আদায় করেন। রাবী সুলাইমান বলেন, তিনি একই আযান এবং একই ইকামতে তা আদায় করেন। অতঃপর সকল রাবী ঐক্যমতে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর তিনি তাঁর বাহণে আরোহণ করে মাশআরুল হারামে গমন করেন এবং সেখানে অবতরণ করেন। রাবী উসমান ও সুলাইমান বলেন, এ সময় তিনি কিবলামুখী হন এবং আল্লাহ্ তাআলার হামদ ও তাকবীর পাঠ করেন। রাবী উসমান একা এরূপ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আর তিনি সে স্থানে ততক্ষণ অবস্থান করেন, যতক্ষণ না স্পষ্টরূপে (পূর্বের আকাশ) পরিষ্কার হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফা হতে মিনায় গমন করেন। আর এ সময় তাঁর উটের পশ্চাতে ফযল ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) ছিলেন। আর ইনি ছিলেন কালো চুল, সুন্দর ও সুশ্রী দেহের অধিকারী যুবক।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুযদালিফা হতে গমনকালে যখন স্ত্রীলোকদের বাহণের পার্শ্ব দিয়ে করতে থাকেন, তখন ফযল (রাযিঃ) তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে থাকলে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফযলের চেহারায় হস্ত স্থাপন করে তার মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। অতঃপর ফযল (রাযিঃ) অন্যদিকে মুখ ফিরালে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তার চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। অতঃপর ফযল আবার তাঁর চেহারা অন্যদিকে ফিরাবার সময় তাঁরা ‘মুহাসসার’ নামক স্থানে পৌঁছান।
এ সময় তাঁর উট কিছুটা দ্রুতগামী হয় এবং তা মধ্যবর্তী রাস্তায় গমন করে, যে রাস্তা ছিল জামরাতুল কুবরায় গমনের পথ। অতঃপর তিনি জামরার নিকটবর্তী হন, যা বৃক্ষের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। অতঃপর তিনি সে স্থানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন এবং প্রত্যেকবার কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বাতনুল ওয়াদীতে (গমনপূর্বক) কংকর নিক্ষেপ করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কুরবানীর স্থানে উপস্থিত হন এবং স্বহস্তে তেষট্টিটি পশু কুরবানী করেন এবং কুরবানীর অবশিষ্ট পশুগুলি আলী (রাযিঃ)-কে কুরবানী করার নির্দেশ দেন। আর তিনি প্রত্যেক কুরবানীর পশুর গোশত হতে এক টুকরা গোশত তাঁকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। অতঃপর তা একটি পাতিলের মধ্যে রান্না করা হয়। তখন তাঁরা সকলে তা ভক্ষণ করেন এবং (তৃপ্তি সহকারে) আহার করেন।
রাবী সুলাইমান বলেন, অতঃপর তিনি তাঁর বাহনে আরোহণ করেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কা‘বা ঘরে গমন করেন। অতঃপর তিনি মক্কায় যোহরের নামায আদায় করেন। পরে তিনি বনী আব্দুল মুত্তালিবদের নিকট গমন করেন, যারা যমযমের নিকট (লোকদের) পানি পান করাচ্ছিল। অতঃপর তিনি তাঁদেরকে বলেন, তোমরা লোকদেরকে অধিক পানি পান করাতে থাকো। আর আমি যদি লোকদের অত্যধিক ভিড়ের আশঙ্কা না করতাম তবে আমিও তোমাদের সাথে পানি তুলে লোকদের পান করাতাম। অতঃপর তারা তাঁকে এক বালতি যমযমের পানি সরবরাহ করলে তিনি তা হতে কিছু পান করেন।
অতঃপর তিনি (জাবির) বলেনঃ তোমার জন্য মারহাবা ও খোশ-আমদেদ! হে ভ্রাতুষ্পুত্র তোমার যা ইচ্ছা, আমাকে জিজ্ঞাসা কর। আমি তাঁকে প্রশ্ন করি, আর তিনি ছিলেন অন্ধ। অতঃপর নামাযের সময় উপস্থিত হওয়ায় তিনি (জাবির) জায়নামাযে দণ্ডায়মান হন, এমতাবস্থায় যে, তাঁর কাঁধে ভাঁজ করা চাঁদর ঝুলন্ত ছিল। অতঃপর তিনি (ইমাম) আমাদের সাথে নামায আদায় করেন এবং তাঁর বড় চাদর আলনায় সংরক্ষিত ছিল। আমি বললাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিদায় হজ্জ সম্পর্কে কিছু বলুন।
জাবির (রাযিঃ) তাঁর হাতের প্রতি ইশারা করেন এবং (দু’ হাতের) নয়টি আঙ্গুল বন্ধ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় নয় বছর অবস্থান করেন এবং এই সময় তিনি কোন হজ্জ সম্পন্ন করেননি। অতঃপর (অষ্টম হিজরীতে) মক্কা বিজয়ের পর, দশম হিজরীতে লোকদের নিকট এরূপ ঘোষণা দেয়া হয়ঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হজ্জে গমন করবেন। এতে মদীনায় অসংখ্য লোকের সমাগম হয় এবং প্রত্যেকেই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর ইক্তিদা করে তাঁর অনুরূপ আমল করতে চায়।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) রওয়ানা হলে, আমরাও তাঁর সাথে রওয়ানা হই। অতঃপর আমরা যুল হুলাইফাতে উপনীত হই। ঐ সময় আসমা বিনতে উমায়স (রাযিঃ) মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকরকে প্রসব করেন। তখন তিনি (আসমা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট ইহরামের ব্যাপারে কী করবেন, তা জানার জন্য লোক পাঠান। তিনি বলেন, তুমি (পবিত্রতা হাসিলের জন্য) গোসল কর, কাপড় দ্বারা নিজের লজ্জাস্থান ব্যান্ডেজ কর এবং ইহরাম বাঁধ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যুল হুলাইফার মসজিদে দু‘ই রাকআত নামায আদায় করেন।
অতঃপর তিনি তাঁর বাহণে (কাসওয়ায়) আররোহণ করে বায়দা নামক স্থানে উপস্থিত হন। জাবের (রাযিঃ) বলেন, আমি তাঁর সম্মুখভাগে, আমার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত কেবল আরোহী এবং পদাতিক লোকদের দেখি। তাঁর ডানে, বামে এবং পশ্চাতেও অনুরূপ লোক ছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মধ্যে ছিলেন এবং তাঁর নিকট তখনও কুরআন নাযিল হচ্ছিল। আর তিনি এর ব্যাখ্যা সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল ছিলেন। আর তিনি যেরূপ আমল করছিলেন, আমরাও সেরূপ করছিলাম।
অতঃপর তিনি তালবিয়া পাঠ শুরু করেন, যা তাওহীদ ভিত্তিক ছিল। (لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ) (অর্থ) ‘আমি উপস্থিত হে আল্লাহ্! আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত, তোমার কোনো শরীক নেই, আমি উপস্থিত, সকল প্রশংসা ও নেআমত তোমারই এবং সাম্রাজ্য, তোমার কোনো শরীক নেই।’’ আর লোকেরা এ কথার দ্বারা এবং এর অধিক দ্বারাও তালবিয়া পাঠ করছিল; কিন্তু এতদসত্তেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা নিষেধ করেননি। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় তালবিয়া পাঠ অব্যাহত রাখেন।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, আমরা হজ্জের নিয়ত করি এবং উমরা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। অতঃপর (যিল হজ্জের চতুর্থ দিনে) আমরা তাঁর সাথে বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী হই। তিনি হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেন এবং তিনবার রমল এবং চারবার হেঁটে (তাওয়াফ) সম্পন্ন করেন। অতঃপর তিনি মাকামে উপস্থিত হন এবং বলেন, তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের স্থানে পরিণত কর। অতঃপর তিনি মাকামে ইবরাহীমের পশ্চাতে দু‘ই রাকআত নামায আদায় করেন। রাবী (জা‘ফর ইবনে মুহাম্মাদ) বলেন, আমার পিতা (মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন) বলতেন, রাবী ইবনে নুফায়ল ও উসমান বলেন, তিনি নামাযে কী পড়েন তা আমার জানা নেই। তবে সুলাইমান নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দুই রাকআতের এক রাকআতে সূরা ইখলাস ও অন্য রাকআতে সূরা কাফিরূণ পড়বে।
অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর নিকট আগমন করেন এবং হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। অতঃপর এর দরজা দিয়ে বের হয়ে তিন সাফার দিকে গমন করেন। তিনি সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিলোওয়াত করেনঃ ‘‘নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া, আল্লাহর নির্দেশবিলীর অন্যতম।’’ অতঃপর তিনি সাফা হতে সা‘ঈ শুরু করেন এবং এর উপর আরোহণ করে বায়তুল্লাহর ঘর দেখে বলেনঃ অর্থাৎ আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, তাঁর জন্যই সাম্রাজ্য, আর তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা, তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। এক একক আল্লাহ্ ভিন্ন কোনো ইলাহ্ নেই, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং তা বান্দা মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সাহায্য করেছেন, এবং তিনি একাই সকল বাহিনীকে পরাভূত করেছেন।’’
অতঃপর তিনি এর মধ্যে দুআ করেন এবং তিনবার উত্তমরূপ ইরশাদ করেন। অতঃপর তিনি মারওয়ার দিকে গমন করেন এবং দু’ পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে রমল করেন। তিনি মারওয়ার উপর আরোহণ করে ঐ সমস্ত আমল করেন, যা তিনি সাফা পাহাড়ের উপর উঠে করেছিলেন। অতঃপর তিনি মারওয়ার তাওয়াফ সমাপ্ত করে বলেন, যা আমি পরে অবগত হয়েছি, যদি তা পূর্বে অবগত হতে পাতাম, তবে আমি কুরবানীর পশু অগ্রে প্রেরণ করতাম না এবং একে (হজ্জকে) উমরায় রূপান্তরিত করতাম। আর তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু নেই, তারা যেন উমরার পর হালাল হয়, যাতে তা কেবল উমরা হয়।
তখন নবী করীম (ﷺ) এবং ঐ সমস্ত ব্যক্তিবর্গ যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত অন্য সমস্ত লোকেরা হালাল হয় এবং তাদের চুল মুণ্ডন বা ছোট করে। তখন সুরাকা ইবনে জাআশাম দন্ডয়মান হয়ে প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এরূপ ব্যবস্থা (হজ্জের মধ্যে উমরা পালন) কি কেবল এ বছরের জন্য, না সর্বকালের জন্য? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর একহাতের অঙ্গুলি দু‘বার উচ্চারণ করেন। আর তা সর্বকালের জন্য।
অতঃপর তিনি (জাবির) বলেন, এ সময় আলী (রাযিঃ) ইয়ামান হতে তাঁর নবী করীম (ﷺ) এর কুরবানীর পশু সহ আগমন করেন। ঐ সময় তিনি ফাতিমা (রাযিঃ)-কে হালাল অবস্থায় রংিন কাপড় পরিহিতা এবং সুরমা ব্যবহারকারিণী দেখতে পেয়ে অপছন্দ করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, তোমাকে কে এরূপ করতে বলেছে? তিনি বলেন, আমার পিতা। জাবির (রাযিঃ) বলেন, আলী (রাযিঃ), যিনি তখন ইরাকের শাসনকর্তা ছিলেন বলেন, আমি তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খিদমতে ফাতিমার কাজে রাগান্বিত হয়ে উপস্থিত হই এবং ঐ সম্পর্কে ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করি, যা সে আমাকে বলেছিল। আর আমি তার কাজে অসুন্তুষ্ট হওয়ার কথা প্রকাশ করায়, ‘আমার পিতা আমাকে এরূপ করতে বলছে’’, তাও তাঁর কাছে বলি। তিনি বলেন, সে সত্য বলেছে, সে সত্য বলেছে।
আচ্ছা, তুমি যখন হজ্জের নিয়ত করেছ, তখন কী বলেছ? তিনি বলেন, আমি বলেছে, ইয়া আল্লাহ্! আমি ঐরূপ ইহরাম বাঁধছি, যেরূপ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেঁধেছেন। তিনি বলেন, আমার সাথে কুরবানীর পশু আছে, কাজেই তুমি আমার মত হালাল হতে পারবে না। জাবির বলেন, কুরবানীর পশু, যা আলী (রাযিঃ) ইয়ামান হতে সঙ্গে আনেন এবং যা মদীনা হতে নবী করীম (ﷺ) এর সাথে এনেছিলেন এর মোট সংখ্যা ছিল এক‘শ। এমতাবস্থায় নবী করীম (ﷺ) এবং যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তারা ব্যতীত অন্য সকলে হালাল হয় এবং তাদের মস্তক মুণ্ডন বা চুল ছোট করে।
রাবী (জাবির (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর তালবিয়ার দিন (৮ই যিল হজ্জ) আসলে, তাঁরা মিনায় গমন করেন এবং হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর বাহণে সওয়ার হন এবং মিনায় পৌঁছে যোহর, আসর, মাগরিব এশা এবং ফজরের আযান আদায় করেন এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত সে স্থানে অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি তাঁর জন্য একটি পশমী কাপড়ের তাঁবু টানাতে নির্দেশ দেন। তাঁর জন্য নামেরা নামক স্থানে তা টানানো হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে গমন করেন। যাতে কুরাশরা এরূপ সন্দেহ করতে না পারে যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হারামের নিকটবর্তী স্থান মুযদালিফায় অবস্থান করবেন, (এবং আরাফাতে গমন করবেন না), যেরূপ কুরাইশরা জাহিলীয়াতের যুগে করত।
এরপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুযদালিফা অতিক্রম করে আরাফাতে পৌঁছান এবং তাঁর জন্য প্রস্তুতকৃত তাঁবু যা নামেরাতে স্থাপন করা হয়, সেখানে উপস্থিত হন। অতঃপর সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে তিনি তাঁর বাহণ প্রস্তুতের নির্দেশ দেন এবং তাতে আরোহণ করে বাতনে ওয়াদী নামক স্থানে গমন করেন। অতঃপর তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান প্রসঙ্গে বলেন, তোমাদের রক্ত ও সম্পদ (একে অপরের জন্য) হারাম। যেমন হারাম (পবিত্র) তোমাদের আজকের এ দিন, এ মাস ও এ শহর।
খবরদার! জাহিলীয়া যুগের সর্বপ্রকার কাজকর্ম (আজ) আমার পায়ের নীচে বাতিল ঘোষিত হল। জাহিলীয়া যুগের রক্ত (প্রতিশোধ গ্রহণ) পরিত্যক্ত হল। আর সর্বপ্রথম আমি আমার পক্ষ হতে (আহলে ইসলামের) যে রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, তা দাবি পরিত্যাগ করলাম। উসমান বলেন, এটা আবু রাবীআর রক্ত। আর সুলাইমান (রাযিঃ) বলেন, এটা রাবীআ ইবনুল হারিস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের খুনের রক্ত। সে (ইবনে রাবীআ) ছিল বনী সা’দ গোত্রের একটি শিশুপুত্র, যাকে হুযায়ল গোত্রের লোকেরা হত্যা করে। আর জাহিলীয়া যুগের সুদ প্রথা বাতিল ঘোষিত হল। আর এ প্রসঙ্গে আমি আমাদের প্রাপ্য সুদ, যা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সবই বাতিল করলাম। আর তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ, আর আল্লাহর তাআলার নির্দেশে তোমরা তাদের স্ত্রী-অঙ্গ (ব্যবহার) হালাল করেছ (অর্থাৎ শরীআত সম্মত পন্থায় ইজাব-কবুলের দ্বারা তাদের বিবাহ করেছ)। তাদের উপর তোমাদের হক এই যে, তারা যেন তোমাদের বিছানায় এমন কোন লোককে আসার অনুমতি প্রদান না করে, যাকে সে (স্বামী) অপছন্দ করে।
যদি তারা এরূপ করে, তবে তাদের (এ জন্য) সামান্য প্রহার করবে। আর তোমাদের উপর তাদের উত্তমরূপে ভরণপোষনের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে একটি বিশেষ বস্তু রেখে যাচ্ছি। আমার পরে যদি তোমরা তা মজবুত ভাবে ধারণ কর, তবে তোমরা কখনও গোমরাহ্ হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব। আর তোমাদেরকে (কিয়ামতের দিন) আমার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা আমার সম্পর্কে কী বলবে? সাহাবীগণ বলেন, আমরা এরূপ সাক্ষ্য প্রদান করব যে, আপনি আপনার (রিসালাতের) দায়িত্ব সঠিকভাবে পৌঁছিয়েছেন, আপনার (আমানতের) হক আদায় করেছেন এবং আপনি আপনার (উম্মতকে) নসীহত করেছেন। অতঃপর তিনি তাঁর শাহাদাত অঙ্গুলি আকাশের দিকে উত্তোলন করেন এবং পরে লোকদের প্রতি ইশারা কবলেন, হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থেকো, হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থোকো, হে আল্লাহ্! তুমি সাক্ষী থেকো।
অতঃপর তিনি বিলাল (রাযিঃ)-কে আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং যোহরের নামায আদায় করেন। অতঃপর দণ্ডায়মান হয়ে আসরের নামাযও আদায় করেন এবং তিনি এর সাথে অন্য কোনো কিছুই (সুন্নত, নফল ইত্যাদি আদায় করেননি। (অর্থাৎ যোহর ও আসরের নামায পরপর আদায় করেন।) অতঃপর তিঁনি তাঁর বাহনে সওয়ার হন এবং আরাফাতে (মূল ভূমিতে) গমন করেন। অতঃপর তিনি তাঁর বাহণ উটকে বড় প্রস্তরের নিকট (যা জাবালে রহমতের নিকটে অবস্থিত) নিয়ে যান এবং হাবল আল মাশাত-কে সম্মুখে রাখেন এবং কিবলামুখী হন। আর সূর্যাআস্ত পর্যন্ত সেখানে তিনি অবস্থান করেন।
অতঃপর সূর্যের লালিমা বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি উসামাকে স্বীয় উটের পশ্চাতে বসিয়ে নেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরাফার হতে মুযদালিফায় গমন করেন। ঐ সময় তিনি তাঁর উটের লাগাম নিজের হাতে নেন, যাতে তাঁর (উটের) মাথা, পাদানির নিকট পৌঁছায়। আর এসময় তিনি ডান হস্তদ্বারা ইশারা করে বলেন, শান্ত হও (অর্থাৎ তোমরা এখন শান্তু বা স্বস্তি গ্রহণ কর)। হে জনগণ! তোমরা স্বস্তি গ্রহণ কর। হে লোক সকল! তোমরা শান্তি কবুল কর। অতঃপর তিনি যখন কোন পাহাড়ের নিকটবর্তী হন, তখন উটের লাগামকে কিছুটা ঢিল দেন এবং এই অবস্থায় মুযদালিফায় গমন করেন। আর এ স্থানে তিনি মাগরিব ও এশার নামায একই আযান ও দুই ইকামতের দ্বারা একত্রে আদায় করেন।
রাবী উসমান বলেন, তিনি মাগরিব ও এশার নামায (একত্রে আদায়ের সময়) এর মধ্যবর্তী সময়ে কোন তাসবীহ পাঠ করেন নাই। অতঃপর সমস্ত রাবী একমত হয়ে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সকাল পর্যন্ত নিদ্রা যান। আর ফজরের সময় হওয়ার পর তিনি ফজরের নামায আদায় করেন। রাবী সুলাইমান বলেন, তিনি একই আযান এবং একই ইকামতে তা আদায় করেন। অতঃপর সকল রাবী ঐক্যমতে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর তিনি তাঁর বাহণে আরোহণ করে মাশআরুল হারামে গমন করেন এবং সেখানে অবতরণ করেন। রাবী উসমান ও সুলাইমান বলেন, এ সময় তিনি কিবলামুখী হন এবং আল্লাহ্ তাআলার হামদ ও তাকবীর পাঠ করেন। রাবী উসমান একা এরূপ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আর তিনি সে স্থানে ততক্ষণ অবস্থান করেন, যতক্ষণ না স্পষ্টরূপে (পূর্বের আকাশ) পরিষ্কার হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফা হতে মিনায় গমন করেন। আর এ সময় তাঁর উটের পশ্চাতে ফযল ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) ছিলেন। আর ইনি ছিলেন কালো চুল, সুন্দর ও সুশ্রী দেহের অধিকারী যুবক।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মুযদালিফা হতে গমনকালে যখন স্ত্রীলোকদের বাহণের পার্শ্ব দিয়ে করতে থাকেন, তখন ফযল (রাযিঃ) তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে থাকলে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফযলের চেহারায় হস্ত স্থাপন করে তার মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। অতঃপর ফযল (রাযিঃ) অন্যদিকে মুখ ফিরালে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তার চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। অতঃপর ফযল আবার তাঁর চেহারা অন্যদিকে ফিরাবার সময় তাঁরা ‘মুহাসসার’ নামক স্থানে পৌঁছান।
এ সময় তাঁর উট কিছুটা দ্রুতগামী হয় এবং তা মধ্যবর্তী রাস্তায় গমন করে, যে রাস্তা ছিল জামরাতুল কুবরায় গমনের পথ। অতঃপর তিনি জামরার নিকটবর্তী হন, যা বৃক্ষের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। অতঃপর তিনি সে স্থানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন এবং প্রত্যেকবার কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বাতনুল ওয়াদীতে (গমনপূর্বক) কংকর নিক্ষেপ করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কুরবানীর স্থানে উপস্থিত হন এবং স্বহস্তে তেষট্টিটি পশু কুরবানী করেন এবং কুরবানীর অবশিষ্ট পশুগুলি আলী (রাযিঃ)-কে কুরবানী করার নির্দেশ দেন। আর তিনি প্রত্যেক কুরবানীর পশুর গোশত হতে এক টুকরা গোশত তাঁকে দেওয়ার নির্দেশ দেন। অতঃপর তা একটি পাতিলের মধ্যে রান্না করা হয়। তখন তাঁরা সকলে তা ভক্ষণ করেন এবং (তৃপ্তি সহকারে) আহার করেন।
রাবী সুলাইমান বলেন, অতঃপর তিনি তাঁর বাহনে আরোহণ করেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কা‘বা ঘরে গমন করেন। অতঃপর তিনি মক্কায় যোহরের নামায আদায় করেন। পরে তিনি বনী আব্দুল মুত্তালিবদের নিকট গমন করেন, যারা যমযমের নিকট (লোকদের) পানি পান করাচ্ছিল। অতঃপর তিনি তাঁদেরকে বলেন, তোমরা লোকদেরকে অধিক পানি পান করাতে থাকো। আর আমি যদি লোকদের অত্যধিক ভিড়ের আশঙ্কা না করতাম তবে আমিও তোমাদের সাথে পানি তুলে লোকদের পান করাতাম। অতঃপর তারা তাঁকে এক বালতি যমযমের পানি সরবরাহ করলে তিনি তা হতে কিছু পান করেন।
باب صِفَةِ حَجَّةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ النُّفَيْلِيُّ، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَهِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، وَسُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الدِّمَشْقِيَّانِ، - وَرُبَّمَا زَادَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ الْكَلِمَةَ وَالشَّىْءَ - قَالُوا حَدَّثَنَا حَاتِمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ دَخَلْنَا عَلَى جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَيْهِ سَأَلَ عَنِ الْقَوْمِ حَتَّى انْتَهَى إِلَىَّ فَقُلْتُ أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ . فَأَهْوَى بِيَدِهِ إِلَى رَأْسِي فَنَزَعَ زِرِّي الأَعْلَى ثُمَّ نَزَعَ زِرِّي الأَسْفَلَ ثُمَّ وَضَعَ كَفَّهُ بَيْنَ ثَدْيَىَّ وَأَنَا يَوْمَئِذٍ غُلاَمٌ شَابٌّ . فَقَالَ مَرْحَبًا بِكَ وَأَهْلاً يَا ابْنَ أَخِي سَلْ عَمَّا شِئْتَ . فَسَأَلْتُهُ وَهُوَ أَعْمَى وَجَاءَ وَقْتُ الصَّلاَةِ فَقَامَ فِي نِسَاجَةٍ مُلْتَحِفًا بِهَا يَعْنِي ثَوْبًا مُلَفَّقًا كُلَّمَا وَضَعَهَا عَلَى مَنْكِبِهِ رَجَعَ طَرَفَاهَا إِلَيْهِ مِنْ صِغَرِهَا فَصَلَّى بِنَا وَرِدَاؤُهُ إِلَى جَنْبِهِ عَلَى الْمِشْجَبِ . فَقُلْتُ أَخْبِرْنِي عَنْ حَجَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَ بِيَدِهِ فَعَقَدَ تِسْعًا . ثُمَّ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَكَثَ تِسْعَ سِنِينَ لَمْ يَحُجَّ ثُمَّ أُذِّنَ فِي النَّاسِ فِي الْعَاشِرَةِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَاجٌّ فَقَدِمَ الْمَدِينَةَ بَشَرٌ كَثِيرٌ كُلُّهُمْ يَلْتَمِسُ أَنْ يَأْتَمَّ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَيَعْمَلَ بِمِثْلِ عَمَلِهِ فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَخَرَجْنَا مَعَهُ حَتَّى أَتَيْنَا ذَا الْحُلَيْفَةِ فَوَلَدَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ مُحَمَّدَ بْنَ أَبِي بَكْرٍ فَأَرْسَلَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَيْفَ أَصْنَعُ قَالَ " اغْتَسِلِي وَاسْتَذْفِرِي بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِي " . فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الْمَسْجِدِ ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى إِذَا اسْتَوَتْ بِهِ نَاقَتُهُ عَلَى الْبَيْدَاءِ . قَالَ جَابِرٌ نَظَرْتُ إِلَى مَدِّ بَصَرِي مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ مِنْ رَاكِبٍ وَمَاشٍ وَعَنْ يَمِينِهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَعَنْ يَسَارِهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَمِنْ خَلْفِهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَظْهُرِنَا وَعَلَيْهِ يَنْزِلُ الْقُرْآنُ وَهُوَ يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ فَمَا عَمِلَ بِهِ مِنْ شَىْءٍ عَمِلْنَا بِهِ فَأَهَلَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالتَّوْحِيدِ " لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ " . وَأَهَلَّ النَّاسُ بِهَذَا الَّذِي يُهِلُّونَ بِهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم شَيْئًا مِنْهُ وَلَزِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَلْبِيَتَهُ . قَالَ جَابِرٌ لَسْنَا نَنْوِي إِلاَّ الْحَجَّ لَسْنَا نَعْرِفُ الْعُمْرَةَ حَتَّى إِذَا أَتَيْنَا الْبَيْتَ مَعَهُ اسْتَلَمَ الرُّكْنَ فَرَمَلَ ثَلاَثًا وَمَشَى أَرْبَعًا ثُمَّ تَقَدَّمَ إِلَى مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ فَقَرَأَ ( وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى ) فَجَعَلَ الْمَقَامَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَيْتِ قَالَ فَكَانَ أَبِي يَقُولُ قَالَ ابْنُ نُفَيْلٍ وَعُثْمَانُ وَلاَ أَعْلَمُهُ ذَكَرَهُ إِلاَّ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . قَالَ سُلَيْمَانُ وَلاَ أَعْلَمُهُ إِلاَّ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ بِـ ( قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ) وَبِـ ( قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ) ثُمَّ رَجَعَ إِلَى الْبَيْتِ فَاسْتَلَمَ الرُّكْنَ ثُمَّ خَرَجَ مِنَ الْبَابِ إِلَى الصَّفَا فَلَمَّا دَنَا مِنَ الصَّفَا قَرَأَ ( إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ ) " نَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ " . فَبَدَأَ بِالصَّفَا فَرَقِيَ عَلَيْهِ حَتَّى رَأَى الْبَيْتَ فَكَبَّرَ اللَّهَ وَوَحَّدَهُ وَقَالَ " لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ " . ثُمَّ دَعَا بَيْنَ ذَلِكَ وَقَالَ مِثْلَ هَذَا ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ نَزَلَ إِلَى الْمَرْوَةِ حَتَّى إِذَا انْصَبَّتْ قَدَمَاهُ رَمَلَ فِي بَطْنِ الْوَادِي حَتَّى إِذَا صَعِدَ مَشَى حَتَّى أَتَى الْمَرْوَةَ فَصَنَعَ عَلَى الْمَرْوَةِ مِثْلَ مَا صَنَعَ عَلَى الصَّفَا حَتَّى إِذَا كَانَ آخِرُ الطَّوَافِ عَلَى الْمَرْوَةِ قَالَ " إِنِّي لَوِ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِي مَا اسْتَدْبَرْتُ لَمْ أَسُقِ الْهَدْىَ وَلَجَعَلْتُهَا عُمْرَةً فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ لَيْسَ مَعَهُ هَدْىٌ فَلْيَحْلِلْ وَلْيَجْعَلْهَا عُمْرَةً " . فَحَلَّ النَّاسُ كُلُّهُمْ وَقَصَّرُوا إِلاَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ كَانَ مَعَهُ هَدْىٌ فَقَامَ سُرَاقَةُ بْنُ جُعْشُمٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلِعَامِنَا هَذَا أَمْ لِلأَبَدِ فَشَبَّكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَصَابِعَهُ فِي الأُخْرَى ثُمَّ قَالَ " دَخَلَتِ الْعُمْرَةُ فِي الْحَجِّ " . هَكَذَا مَرَّتَيْنِ " لاَ بَلْ لأَبَدِ أَبَدٍ لاَ بَلْ لأَبَدِ أَبَدٍ " . قَالَ وَقَدِمَ عَلِيٌّ - رضى الله عنه - مِنَ الْيَمَنِ بِبُدْنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَوَجَدَ فَاطِمَةَ - رضى الله عنها - مِمَّنْ حَلَّ وَلَبِسَتْ ثِيَابًا صَبِيغًا وَاكْتَحَلَتْ فَأَنْكَرَ عَلِيٌّ ذَلِكَ عَلَيْهَا وَقَالَ مَنْ أَمَرَكِ بِهَذَا فَقَالَتْ أَبِي . فَكَانَ عَلِيٌّ يَقُولُ بِالْعِرَاقِ ذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُحَرِّشًا عَلَى فَاطِمَةَ فِي الأَمْرِ الَّذِي صَنَعَتْهُ مُسْتَفْتِيًا لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي الَّذِي ذَكَرَتْ عَنْهُ فَأَخْبَرْتُهُ أَنِّي أَنْكَرْتُ ذَلِكَ عَلَيْهَا فَقَالَتْ إِنَّ أَبِي أَمَرَنِي بِهَذَا . فَقَالَ " صَدَقَتْ صَدَقَتْ مَاذَا قُلْتَ حِينَ فَرَضْتَ الْحَجَّ " . قَالَ قُلْتُ اللَّهُمَّ إِنِّي أُهِلُّ بِمَا أَهَلَّ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَ " فَإِنَّ مَعِيَ الْهَدْىَ فَلاَ تَحْلِلْ " . قَالَ وَكَانَ جَمَاعَةُ الْهَدْىِ الَّذِي قَدِمَ بِهِ عَلِيٌّ مِنَ الْيَمَنِ وَالَّذِي أَتَى بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْمَدِينَةِ مِائَةً فَحَلَّ النَّاسُ كُلُّهُمْ وَقَصَّرُوا إِلاَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَمَنْ كَانَ مَعَهُ هَدْىٌ قَالَ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ التَّرْوِيَةِ وَوَجَّهُوا إِلَى مِنًى أَهَلُّوا بِالْحَجِّ فَرَكِبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى بِمِنًى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ وَالصُّبْحَ ثُمَّ مَكَثَ قَلِيلاً حَتَّى طَلَعَتِ الشَّمْسُ وَأَمَرَ بِقُبَّةٍ لَهُ مِنْ شَعَرٍ فَضُرِبَتْ بِنَمِرَةَ فَسَارَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ تَشُكُّ قُرَيْشٌ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَاقِفٌ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ بِالْمُزْدَلِفَةِ كَمَا كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصْنَعُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَأَجَازَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى أَتَى عَرَفَةَ فَوَجَدَ الْقُبَّةَ قَدْ ضُرِبَتْ لَهُ بِنَمِرَةَ فَنَزَلَ بِهَا حَتَّى إِذَا زَاغَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِالْقَصْوَاءِ فَرُحِلَتْ لَهُ فَرَكِبَ حَتَّى أَتَى بَطْنَ الْوَادِي فَخَطَبَ النَّاسَ فَقَالَ " إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا أَلاَ إِنَّ كُلَّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ تَحْتَ قَدَمَىَّ مَوْضُوعٌ وَدِمَاءُ الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعَةٌ وَأَوَّلُ دَمٍ أَضَعُهُ دِمَاؤُنَا دَمُ " . قَالَ عُثْمَانُ " دَمُ ابْنِ رَبِيعَةَ " . وَقَالَ سُلَيْمَانُ " دَمُ رَبِيعَةَ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ " . وَقَالَ بَعْضُ هَؤُلاَءِ كَانَ مُسْتَرْضَعًا فِي بَنِي سَعْدٍ فَقَتَلَتْهُ هُذَيْلٌ " وَرِبَا الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ وَأَوَّلُ رِبًا أَضَعُهُ رِبَانَا رِبَا عَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَإِنَّهُ مَوْضُوعٌ كُلُّهُ اتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانَةِ اللَّهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ وَإِنَّ لَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لاَ يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ فَإِنْ فَعَلْنَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَإِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللَّهِ وَأَنْتُمْ مَسْئُولُونَ عَنِّي فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ " . قَالُوا نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ . ثُمَّ قَالَ بِأُصْبُعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكِبُهَا إِلَى النَّاسِ " اللَّهُمَّ اشْهَدِ اللَّهُمَّ اشْهَدِ اللَّهُمَّ اشْهَدْ " . ثُمَّ أَذَّنَ بِلاَلٌ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ وَلَمْ يُصَلِّ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى أَتَى الْمَوْقِفَ فَجَعَلَ بَطْنَ نَاقَتِهِ الْقَصْوَاءَ إِلَى الصَّخَرَاتِ وَجَعَلَ حَبْلَ الْمُشَاةِ بَيْنَ يَدَيْهِ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَذَهَبَتِ الصُّفْرَةُ قَلِيلاً حِينَ غَابَ الْقُرْصُ وَأَرْدَفَ أُسَامَةَ خَلْفَهُ فَدَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ شَنَقَ لِلْقَصْوَاءِ الزِّمَامَ حَتَّى إِنَّ رَأْسَهَا لَيُصِيبُ مَوْرِكَ رَحْلِهِ وَهُوَ يَقُولُ بِيَدِهِ الْيُمْنَى " السَّكِينَةَ أَيُّهَا النَّاسُ السَّكِينَةَ أَيُّهَا النَّاسُ " . كُلَّمَا أَتَى حَبْلاً مِنَ الْحِبَالِ أَرْخَى لَهَا قَلِيلاً حَتَّى تَصْعَدَ حَتَّى أَتَى الْمُزْدَلِفَةَ فَجَمَعَ بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِأَذَانٍ وَاحِدٍ وَإِقَامَتَيْنِ - قَالَ عُثْمَانُ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ اتَّفَقُوا - ثُمَّ اضْطَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ فَصَلَّى الْفَجْرَ حِينَ تَبَيَّنَ لَهُ الصُّبْحُ - قَالَ سُلَيْمَانُ بِنِدَاءٍ وَإِقَامَةٍ ثُمَّ اتَّفَقُوا - ثُمَّ رَكِبَ الْقَصْوَاءَ حَتَّى أَتَى الْمَشْعَرَ الْحَرَامَ فَرَقِيَ عَلَيْهِ قَالَ عُثْمَانُ وَسُلَيْمَانُ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَحَمِدَ اللَّهَ وَكَبَّرَهُ وَهَلَّلَهُ زَادَ عُثْمَانُ وَوَحَّدَهُ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى أَسْفَرَ جِدًّا ثُمَّ دَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَأَرْدَفَ الْفَضْلَ بْنَ عَبَّاسٍ وَكَانَ رَجُلاً حَسَنَ الشَّعْرِ أَبْيَضَ وَسِيمًا فَلَمَّا دَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ الظُّعُنُ يَجْرِينَ فَطَفِقَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهِنَّ فَوَضَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَهُ عَلَى وَجْهِ الْفَضْلِ وَصَرَفَ الْفَضْلُ وَجْهَهُ إِلَى الشِّقِّ الآخَرِ وَحَوَّلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدَهُ إِلَى الشِّقِّ الآخَرِ وَصَرَفَ الْفَضْلُ وَجْهَهُ إِلَى الشِّقِّ الآخَرِ يَنْظُرُ حَتَّى أَتَى مُحَسِّرًا فَحَرَّكَ قَلِيلاً ثُمَّ سَلَكَ الطَّرِيقَ الْوُسْطَى الَّذِي يُخْرِجُكَ إِلَى الْجَمْرَةِ الْكُبْرَى حَتَّى أَتَى الْجَمْرَةَ الَّتِي عِنْدَ الشَّجَرَةِ فَرَمَاهَا بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ يُكَبِّرُ مَعَ كُلِّ حَصَاةٍ مِنْهَا بِمِثْلِ حَصَى الْخَذْفِ فَرَمَى مِنْ بَطْنِ الْوَادِي ثُمَّ انْصَرَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْمَنْحَرِ فَنَحَرَ بِيَدِهِ ثَلاَثًا وَسِتِّينَ وَأَمَرَ عَلِيًّا فَنَحَرَ مَا غَبَرَ - يَقُولُ مَا بَقِيَ - وَأَشْرَكَهُ فِي هَدْيِهِ ثُمَّ أَمَرَ مِنْ كُلِّ بَدَنَةٍ بِبَضْعَةٍ فَجُعِلَتْ فِي قِدْرٍ فَطُبِخَتْ فَأَكَلاَ مِنْ لَحْمِهَا وَشَرِبَا مِنْ مَرَقِهَا قَالَ سُلَيْمَانُ ثُمَّ رَكِبَ ثُمَّ أَفَاضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْبَيْتِ فَصَلَّى بِمَكَّةَ الظُّهْرَ ثُمَّ أَتَى بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَهُمْ يَسْقُونَ عَلَى زَمْزَمَ فَقَالَ " انْزِعُوا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَلَوْلاَ أَنْ يَغْلِبَكُمُ النَّاسُ عَلَى سِقَايَتِكُمْ لَنَزَعْتُ مَعَكُمْ " . فَنَاوَلُوهُ دَلْوًا فَشَرِبَ مِنْهُ .

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নং:১৯০৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৯০৬
৫৫. মহানবী (ﷺ) - এর বিদায় হজ্জের বিবরণ।
১৯০৪. আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসলামা, আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহঃ) .... জা‘ফর ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী করীম (ﷺ) আরাফাতে একই আযানে এবং দুই ইকামতে যোহর ও আসরের নামায আদায় করেন এবং তিনি এর মধ্যবর্তী সময়ে কোন তাসবীহ পাঠ করেননি। আর তিনি (মুযদালিফাতে) মাগরিব ও এশার নামায একই আযানে এবং দুই ইকামতের সাথে আদায় করেন এবং এর মধ্যবর্তী সময়ে কোনরূপ তাসবীহ পাঠ করেননি।
ইমাম আবু দাউদ (রাহঃ) জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মাগরিব ও এশার নামায একই আযান ও একই ইকামত আদায় করেন।
ইমাম আবু দাউদ (রাহঃ) জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে এরূপ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মাগরিব ও এশার নামায একই আযান ও একই ইকামত আদায় করেন।
باب صِفَةِ حَجَّةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ يَعْنِي ابْنَ بِلاَلٍ، ح وَحَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ الثَّقَفِيُّ، - الْمَعْنَى وَاحِدٌ - عَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ بِأَذَانٍ وَاحِدٍ بِعَرَفَةَ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا وَإِقَامَتَيْنِ وَصَلَّى الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ بِجَمْعٍ بِأَذَانٍ وَاحِدٍ وَإِقَامَتَيْنِ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا . قَالَ أَبُو دَاوُدَ هَذَا الْحَدِيثُ أَسْنَدَهُ حَاتِمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ فِي الْحَدِيثِ الطَّوِيلِ وَوَافَقَ حَاتِمَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ عَلَى إِسْنَادِهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْجُعْفِيُّ عَنْ جَعْفَرٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَابِرٍ إِلاَّ أَنَّهُ قَالَ فَصَلَّى الْمَغْرِبَ وَالْعَتَمَةَ بِأَذَانٍ وَإِقَامَةٍ .

তাহকীক:
তাহকীক চলমান

বর্ণনাকারী:
হাদীস নং:১৯০৫
আন্তর্জাতিক নং: ১৯০৭
৫৫. মহানবী (ﷺ) - এর বিদায় হজ্জের বিবরণ।
১৯০৫. আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহঃ) ...... জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ আমি এ স্থানে কুরবানী করেছি এবং মিনাতেও অবস্থানের সময় কুরবানী করেছি। আর তিনি আরাফাতেও অবস্থান করেন। রাবী (জাবির) বলেন, আমিও এ স্থানে, আরাফাতে ও অন্যান্য স্থানে, (যেখানে নবী করীম (ﷺ) অবস্থান করতেন) অবস্থান করি। আর তিনি মুযদালিফাতেও অবস্থান করেন। রাবী বলেন, আমিও এ স্থানে এবং অন্যান্য অবস্থানের স্থানে (যেখানে নবী করীম (ﷺ) অবস্থান করতেন) অবস্থান করি।
باب صِفَةِ حَجَّةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا جَعْفَرٌ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " قَدْ نَحَرْتُ هَا هُنَا وَمِنًى كُلُّهَا مَنْحَرٌ " . وَوَقَفَ بِعَرَفَةَ فَقَالَ " قَدْ وَقَفْتُ هَا هُنَا وَعَرَفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ " . وَوَقَفَ فِي الْمُزْدَلِفَةِ فَقَالَ " قَدْ وَقَفْتُ هَا هُنَا وَمُزْدَلِفَةُ كُلُّهَا مَوْقِفٌ " .

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নং:১৯০৬
আন্তর্জাতিক নং: ১৯০৮
৫৫. মহানবী (ﷺ) - এর বিদায় হজ্জের বিবরণ।
১৯০৬. মুসাদ্দাদ ..... জা‘ফর (রাহঃ) হতে পূর্বোক্ত হাদীসের সনদে হাদীস বর্ণিত্ হয়েছে। রাবী (হাফস ইবনে গিয়াস) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তোমরা তোমাদের বাহনে (আরোহণের স্থানে অর্থাৎ মিনায়) কুরবানী করবে।
باب صِفَةِ حَجَّةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ، عَنْ جَعْفَرٍ، بِإِسْنَادِهِ زَادَ " فَانْحَرُوا فِي رِحَالِكُمْ " .

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নং:১৯০৭
আন্তর্জাতিক নং: ১৯০৯
৫৫. মহানবী (ﷺ) - এর বিদায় হজ্জের বিবরণ।
১৯০৭. ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) সূত্রে ও মিলিত সনদে জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। আর রাবী (ইয়াহয়া ইবনে সাঈদ) এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর রাবী ইয়াহয়া আল কাত্তান তাঁর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, (আ্ল্লাহর বাণী) : ‘আর তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে তোমাদের নামাযের স্থান হিসাবে গ্রহণ কর’’ রাবী বলেন, এ স্থানে নামায আদায়ের সময় তিনি সূরা ইখলাস ও সূরা কাফিরূন পাঠ করেন।
باب صِفَةِ حَجَّةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقَطَّانُ، عَنْ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ جَابِرٍ، فَذَكَرَ هَذَا الْحَدِيثَ وَأَدْرَجَ فِي الْحَدِيثِ عِنْدَ قَوْلِهِ ( وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى ) قَالَ فَقَرَأَ فِيهَا بِالتَّوْحِيدِ وَ ( قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ ) وَقَالَ فِيهِ قَالَ عَلِيٌّ - رضى الله عنه - بِالْكُوفَةِ قَالَ أَبِي هَذَا الْحَرْفُ لَمْ يَذْكُرْهُ جَابِرٌ فَذَهَبْتُ مُحَرِّشًا . وَذَكَرَ قِصَّةَ فَاطِمَةَ رضى الله عنها .

তাহকীক:
তাহকীক চলমান