আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

المسند الصحيح لمسلم

৫৬- দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও হৃদয়গ্রাহী বিষয়াদির বর্ণনা - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন...

হাদীস নং: ৭২৪১
আন্তর্জাতিক নং: ৩০০৯-৪
১৯. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হিজরত সম্পর্কিত হাদীস
৭২৪১। সালামা ইবনে শাবীব (রাহঃ) ......... বারা’ ইবনে আযিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) আমার পিতার নিকট আসলেন এবং তাঁর থেকে একটি হাওদা খরীদ করলেন। অতঃপর তিনি (আমার পিতা) আযিবকে বললেন, তুমি তোমার ছেলেকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও, সে উহা আমার সাথে বহন করে আমার বাড়ী পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়ে আসবে। আমার পিতা আমাকে বললেন, তুমি উহা উঠিয়ে নাও। আমি উহা উঠিয়ে নিলাম। অতঃপর মূল্য আদায়ের জন্য আমার পিতাও তাঁর সাথে বের হলেন। পথিমধ্যে আমার পিতা তাকে বললেন, হে আবু বকর! যে রাতে আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে ভ্রমণ (হিজরত) করেছিলেন তখন আপনারা কি করেছিলেন, তা আমার নিকট আপনি বর্ণনা করুন।

তিনি বললেন, (তা হলে শোন), আমরা পুর্ণ রাত সফর করেছি। অবশেষে যখন দিন হল, ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় হল রাস্তা সম্পূর্ণ খালি হয়ে গেল এবং কোন মানুষ জন আর রাস্তা অতিক্রম করেছে না, তখন আমরা একটি বৃহদাকায় পাথর খণ্ড দেখতে পেলাম। এর ছায়া মাটিতে পড়ছিল এবং তখনো পর্যন্ত সেখানে রৌদ্র আসেনি। তাই আমরা সেখানে গেলাম এবং আমি নিজে পাথরটির নিকট গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ঘুমানোর জন্য একটু স্থান সমান্তরাল করলাম। এরপর একটি কম্বল উহাতে আমি বিছিয়ে দিলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি আপনার আশেপাশের শক্রদের অবস্থান সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাচ্ছি। একথা শুনে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন এবং আমি তাঁর পার্শ্ববর্তী স্থানসমূহে অনুসন্ধান চালালাম।

হঠোৎ একজন বকরীর রাখালকে দেখতে পেলাম। সে আমাদের মত উদ্দেশ্য নিয়েই পাথরটির দিকে এগিয়ে আসছে। আমি তার সাথে সাক্ষাত করলাম এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ওহে! তুমি কার গোলাম? সে বলল, আমি শহরবাসী এক ব্যক্তির গোলাম। আমি বললাম, তোমার বকরীতে দুধ আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ, আছে। আমি বললাম, তাহলে আমার জন্য উহা দোহন করবে কি? সে বলল, হ্যাঁ করব। অতঃপর সে একটি বকরী নিয়ে এল। তখন আমি তাকে বললাম, প্রথমে পশম, মাটি এবং খড়কুটা হতে স্তনটি একবার ঝেড়ে নাও। রাবী বলেন, এ সময় আমি বারাআ ইবনে আযিবকে এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে ঝাড়তে দেখেছি।

অতঃপর সে কাষ্ঠের একটি পেয়ালাতে আমার জন্য সামান্য দুধ দোহন করল। আবু বকর (রাযিঃ) বলেন, আমার নিকট একটি পাত্র ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পান করা ও উযু করার জন্য উহাতে আমি পানি রাখতাম। অতঃপর আমি নবী (ﷺ) এর নিকট আসলাম। কিন্তু তাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করতে আমার ইচ্ছা ছিলনা। তবে তার প্রতি আমি চেয়ে দেখি যে, তিনি নিজে নিজেই জাগ্রত হয়ে গিয়েছেন। এরপর দুধের মাঝে আমি পানি ঢাললাম। ফলে উহা শীতল হয়ে গেল। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! এ থেকে একটু দুধ পান করে নিন। তিনি দুধ পান করলেন এবং খুব খুশী হলেন।

অতঃপর তিনি বললেনঃ এখনো কি যাত্রার সময় হয়নি! আমি বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। ঠিক দ্বিপ্রহরের পর আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। এদিকে সুরাকা ইবনে মালিক আমাদের অনুসরণ করে চলছে। আমরা তখন এক শক্ত ভূমিতে ছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল আমাদেরকে তো ধরে ফেলেছে। তিনি বললেনঃ চিন্তিত হয়োনা, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার উপর বদ-দুআ করলেন। এতে তার ঘোড়া পেট পর্যন্ত যমীনে ধ্বসে গেল। আমি তা দেখতে পাচ্ছিলাম। অতঃপর সে বলল, আমি জানি, তোমরা আমার জন্য বদ-দুআ করেছ। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি তোমাদের তালাশকারীদের তোমাদের (এদিক) থেকে ফিরিয়ে দিব। সুতরাং তোমরা আমার জন্য দুআ কর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর নিকট দুআ করলেন। এতে সে মুক্তি পেয়ে গেল।

অতঃপর সে ফিরে গেল। এবং যে কোন কাফিরের সাথে দেখা হলে সে বলত, এদিকে আমি সব দেখে এসেছি। এদিকে কোন কিছুই নেই। মোটকথা, যার সাথেই তার দেখা হত সে তাকে ফিরিয়ে দিত। আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) বলেন, সুরাকা তার অঙ্গীকার পূর্ণ করেছিল।

যুহাইর ইবনে হারব (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনে হারব (রাহঃ) ......... বারা’ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) আমার পিতার নিকট হতে তের দিরহামের বিনিময়ে একটি হাওদা ক্রয় করেছেন। অতঃপর তিনি যুহাইরের সূত্রে ইসহাক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে (ইসরাঈল) উসমান ইবনে উমর (রাহঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, সে নিকটবর্তী হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার জন্য বদ-দুআ করেছেন। এতে পেট পর্যন্ত তার ঘোড়ার পা যমীনে ধ্বসে যায়। সুরাকা তার ঘোড়ার উপর থেকে লাফ দিল। পরে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি জানি, এ তোমারই কাজ। আমি যে বিপদে আছি এ থেকে যেন আল্লাহ আমাকে মুক্তি দেন, এ ব্যাপারে তুমি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ কর। আমি তোমাকে ওয়াদা দিচ্ছি যে, আমার পেছনে যারাই তোমার তালাশে থাকবে আমি তাদের থেকে তোমার অবস্থান গোপন রাখব এবং এ হচ্ছে আমার তীরদানী, এ থেকে তুমি একটি তীর নিয়ে যাও। কিছু দুর পরই অমুক স্থানে তুমি আমার উট ও গোলামদেরকে দেখতে পাবে, এর থেকে তুমি তোমার প্রয়োজন অনুপাতে নিয়ে যাবে।

তিনি (নবী (ﷺ)) বললেনঃ তোমার উটের আমার কোন প্রয়োজন নেই। আবু বকর (রাযিঃ) বলেন, রাতে আমরা মদীনায় পৌছলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কার বাড়ীতে অবস্থান করবেন, এ নিয়ে লোকদের মাঝে বিতর্ক শুরু হল। তখন তিনি বললেনঃ আমি আব্দুল মুত্তালিবের মামার বংশ বনু নাজ্জারে অবতরণ করবো। এর দ্বারা তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। অতঃপর পুরুষ লোকেরা পাহাড়ে আরোহণ করে, মহিলাগণ নিজ নিজ গৃহে এবং যুবক ও ক্রীতদাসগণ রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষিপ্ত হয়ে এ আওয়াজ দিতে লাগল যে, হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রাসুল! হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রাসুল!
باب فِي حَدِيثِ الْهِجْرَةِ
حَدَّثَنِي سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ، حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ أَعْيَنَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا أَبُو إِسْحَاقَ، قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ، يَقُولُ جَاءَ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ إِلَى أَبِي فِي مَنْزِلِهِ فَاشْتَرَى مِنْهُ رَحْلاً فَقَالَ لِعَازِبٍ ابْعَثْ مَعِيَ ابْنَكَ يَحْمِلْهُ مَعِي إِلَى مَنْزِلِي فَقَالَ لِي أَبِي احْمِلْهُ . فَحَمَلْتُهُ وَخَرَجَ أَبِي مَعَهُ يَنْتَقِدُ ثَمَنَهُ فَقَالَ لَهُ أَبِي يَا أَبَا بَكْرٍ حَدِّثْنِي كَيْفَ صَنَعْتُمَا لَيْلَةَ سَرَيْتَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ نَعَمْ أَسْرَيْنَا لَيْلَتَنَا كُلَّهَا حَتَّى قَامَ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ وَخَلاَ الطَّرِيقُ فَلاَ يَمُرُّ فِيهِ أَحَدٌ حَتَّى رُفِعَتْ لَنَا صَخْرَةٌ طَوِيلَةٌ لَهَا ظِلٌّ لَمْ تَأْتِ عَلَيْهِ الشَّمْسُ بَعْدُ فَنَزَلْنَا عِنْدَهَا فَأَتَيْتُ الصَّخْرَةَ فَسَوَّيْتُ بِيَدِي مَكَانًا يَنَامُ فِيهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي ظِلِّهَا ثُمَّ بَسَطْتُ عَلَيْهِ فَرْوَةً ثُمَّ قُلْتُ نَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَنَا أَنْفُضُ لَكَ مَا حَوْلَكَ فَنَامَ وَخَرَجْتُ أَنْفُضُ مَا حَوْلَهُ فَإِذَا أَنَا بِرَاعِي غَنَمٍ مُقْبِلٍ بِغَنَمِهِ إِلَى الصَّخْرَةِ يُرِيدُ مِنْهَا الَّذِي أَرَدْنَا فَلَقِيتُهُ فَقُلْتُ لِمَنْ أَنْتَ يَا غُلاَمُ فَقَالَ لِرَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ قُلْتُ أَفِي غَنَمِكَ لَبَنٌ قَالَ نَعَمْ . قُلْتُ أَفَتَحْلُبُ لِي قَالَ نَعَمْ . فَأَخَذَ شَاةً فَقُلْتُ لَهُ انْفُضِ الضَّرْعَ مِنَ الشَّعَرِ وَالتُّرَابِ وَالْقَذَى - قَالَ فَرَأَيْتُ الْبَرَاءَ يَضْرِبُ بِيَدِهِ عَلَى الأُخْرَى يَنْفُضُ - فَحَلَبَ لِي فِي قَعْبٍ مَعَهُ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ قَالَ وَمَعِي إِدَاوَةٌ أَرْتَوِي فِيهَا لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لِيَشْرَبَ مِنْهَا وَيَتَوَضَّأَ - قَالَ - فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُ مِنْ نَوْمِهِ فَوَافَقْتُهُ اسْتَيْقَظَ فَصَبَبْتُ عَلَى اللَّبَنِ مِنَ الْمَاءِ حَتَّى بَرَدَ أَسْفَلُهُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ اشْرَبْ مِنْ هَذَا اللَّبَنِ - قَالَ - فَشَرِبَ حَتَّى رَضِيتُ ثُمَّ قَالَ " أَلَمْ يَأْنِ لِلرَّحِيلِ " . قُلْتُ بَلَى . قَالَ فَارْتَحَلْنَا بَعْدَ مَا زَالَتِ الشَّمْسُ وَاتَّبَعَنَا سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكٍ - قَالَ - وَنَحْنُ فِي جَلَدٍ مِنَ الأَرْضِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أُتِينَا فَقَالَ " لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا " . فَدَعَا عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَارْتَطَمَتْ فَرَسُهُ إِلَى بَطْنِهَا أُرَى فَقَالَ إِنِّي قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكُمَا قَدْ دَعَوْتُمَا عَلَىَّ فَادْعُوَا لِي فَاللَّهُ لَكُمَا أَنْ أَرُدَّ عَنْكُمَا الطَّلَبَ . فَدَعَا اللَّهَ فَنَجَى فَرَجَعَ لاَ يَلْقَى أَحَدًا إِلاَّ قَالَ قَدْ كَفَيْتُكُمْ مَا هَا هُنَا فَلاَ يَلْقَى أَحَدًا إِلاَّ رَدَّهُ - قَالَ - وَوَفَى لَنَا .
وَحَدَّثَنِيهِ زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، ح وَحَدَّثَنَاهُ إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، كِلاَهُمَا عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ اشْتَرَى أَبُو بَكْرٍ مِنْ أَبِي رَحْلاً بِثَلاَثَةَ عَشَرَ دِرْهَمًا وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِمَعْنَى حَدِيثِ زُهَيْرٍ عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ وَقَالَ فِي حَدِيثِهِ مِنْ رِوَايَةِ عُثْمَانَ بْنِ عُمَرَ فَلَمَّا دَنَا دَعَا عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَاخَ فَرَسُهُ فِي الأَرْضِ إِلَى بَطْنِهِ وَوَثَبَ عَنْهُ وَقَالَ يَا مُحَمَّدُ قَدْ عَلِمْتُ أَنَّ هَذَا عَمَلُكَ فَادْعُ اللَّهَ أَنْ يُخَلِّصَنِي مِمَّا أَنَا فِيهِ وَلَكَ عَلَىَّ لأُعَمِّيَنَّ عَلَى مَنْ وَرَائِي وَهَذِهِ كِنَانَتِي فَخُذْ سَهْمًا مِنْهَا فَإِنَّكَ سَتَمُرُّ عَلَى إِبِلِي وَغِلْمَانِي بِمَكَانِ كَذَا وَكَذَا فَخُذْ مِنْهَا حَاجَتَكَ قَالَ " لاَ حَاجَةَ لِي فِي إِبِلِكَ " . فَقَدِمْنَا الْمَدِينَةَ لَيْلاً فَتَنَازَعُوا أَيُّهُمْ يَنْزِلُ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " أَنْزِلُ عَلَى بَنِي النَّجَّارِ أَخْوَالِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ أُكْرِمُهُمْ بِذَلِكَ " . فَصَعِدَ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ فَوْقَ الْبُيُوتِ وَتَفَرَّقَ الْغِلْمَانُ وَالْخَدَمُ فِي الطُّرُقِ يُنَادُونَ يَا مُحَمَّدُ يَا رَسُولَ اللَّهِ يَا مُحَمَّدُ يَا رَسُولَ اللَّهِ .