আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
المسند الصحيح لمسلم
৫১- যিকর, দুআ, তাওবা ও ইসতিগফারের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৩ টি
অনুসন্ধান করুন...
হাদীস নং: ৬৭৬০
আন্তর্জাতিক নং: ২৭৬৯-২
৩৬. কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) ও তার দুই সঙ্গীর তাওবার বিবরণ
৬৭৬০। বনু উমাইয়ার আযাদকৃত গোলাম আবু তাহির আহমাদ ইবনে আমর ইবনে সারহ (রাহঃ) ......... ইবনে শিহাব (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাবুকের অভিযানে রওয়ানা হন। তাঁর লক্ষ্য ছিল, সিরিয়ার আরব খ্রীষ্টান ও রোমকরা। ইবনে শিহাব বলেন, আমাকে আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে কাব ইবনে মালিক (রাহঃ) বলেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে কাব বলেছেন, কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার সন্তানদের মধ্যে তিনি ছিলেন তার চালক। আমি কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) কে তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করার ইতিবৃত্ত (নিজ মুখে) বর্ণনা করতে শুনেছি।
কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যত যুদ্ধ করেছেন তাবুক যুদ্ধ ব্যতীত এর সবকটির মধ্যেই আমি তাঁর সঙ্গে শরীক ছিলাম। তবে বদর যুদ্ধে আমি তাঁর সাথে শরীক হতে পারিনি। আর যারা (এ বছর) থেকে পশ্চাতে রয়েছে তাদের কাউকেও অভিযুক্ত করেননি। তখন তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও মুসলমানগণ শুধুমাত্র কুরাইশ কাফিলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা মুসলমান ও কাফিরদের অনির্ধারিত সময়ে সমবেত করে দেন। আকাবার রাত্রে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার নিচ্ছিলেন, সে রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। বদর যুদ্ধ যদিও মানুষের নিকট সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, তথাপি আকাবা রজনীর পরিবর্তে বদর মুদ্ধে শরীক হওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় নয়।
তাবুক যুদ্ধে শরীক না হওয়ার ব্যাপারে আমার ঘটনা হচ্ছে এই যে, যখন এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমি যেমন শক্তিশালী ও স্বচ্ছল ছিলাম, তেমন আর কখনো ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর পূর্বে এমনকি দু’টি সওয়ারী আমি আর কখনো একত্রে জমা করতে পারিনি। কিন্তু এ যুদ্ধের সময় দু’টি সওয়ারীর অধিকারী ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ অভিযানে যান প্রচন্ড গরমের কালে। সফর ছিল মরু প্রান্তরের। বহু সংখ্যক শক্রর সন্মুখীন হতে যাচ্ছিলেন। তাই তিনি বিষয়টি মুসলমানদের সামনে খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করেন, যাতে তারা যুদ্ধের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নিতে পারে। যুদ্ধের গতিবিধি সম্পর্কেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে জানিয়ে দিলেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে মুসলমানের সংখ্যা ছিল অনেক এবং তাদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল না কোন সংরক্ষণকারীর কিতাবে; অর্থাৎ রেজিষ্টারে সংরক্ষিত ছিল না। কাব (রাযিঃ) বলেন, সুতরাং যে ব্যক্তি অনুরূপ থাকতে ইচ্ছা করে সে কমপক্ষে এ ধারণা করতে পারত যে, তার অনুপস্থিতি গোপন থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সম্পর্কে ওহী নাযিল হয়।
এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যখন গাছের ফল পাকছিল এবং বৃক্ষের ছায়া ছিল আনন্দদায়ক। আর আমিও ছিলাম এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও মুসলমানগণ যুদ্বের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিলেন। আমিও তাঁদের সাথে যুদ্ধে শরীক হওয়ার জন্য প্রস্ততি গ্রহণের লক্ষ্যে বাড়ী থেকে সকালে বের হতাম, কিন্তু কোন প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম, আমি তো যুদ্ধে যেতে সক্ষম, যখনই ইচ্ছা করি। আমার ব্যাপার এভাবেই চলতে লাগল।
এদিকে লোকজন বাস্তব প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে লাগল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যুষে রওয়ানা হলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিমগণও রওয়ানা হয়ে গেল। কিন্তু আমি কোন প্রস্তুতই গ্রহণ করি নি। পরদিন সকালে আমি বের হলাম। কিন্তু কোন প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই ফিরে এলাম। এভাবে আমার সময় দীর্ঘায়িত হতে লাগল। এদিকে লোকজন দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় আর মুজাহিদ্বীনের দল বহু দুরে চলে যায়। তখন আমি ভাবতে লাগলাম যে, আমিও রওয়ানা হয়ে তাদের সাথে মিলিত হয়ে যাই। আফসোস! আমি যদি তাই করতাম। কিন্তু আমার ভাগ্যে তা হয়নি।
পরবর্তী অবস্থা হল এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর আমি যখন রাস্তায় বের হতাম তখন এ ব্যাপার আমাকে ব্যথিত করত যে, আমি অনুসরণীয় কাউকে দেখতে পেতাম না, শুধু এমন লোক যাদের উপর নিফাকের অভিযোগ রয়েছে অথবা সে সকল অক্ষম লোক যাদের আল্লাহ তাআলা মা’যুর হিসেবে অবকাশ দিয়েছেন। এদিকে তাবুক পৌছার পূর্বে রাস্তায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার কথা মোটেই আলোচনা করেননি। কিন্তু তাবুক পৌছার পর লোকদের মাঝে বসা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, কা’ব ইবনে মালিক কি করছে? তখন বনু সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তার লাল (জোড়া) পোশাক এবং তার দেহের দু’ পাশের প্রতি দৃষ্টি তাকে বিরত রেখেছে। তখন মু’আয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) বললেন, তুমি বড় মন্দ কথা বলছ। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমরা তো তাকে ভালই জানি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নীরব রইলেন।
ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুভ্র বসন পরিহিত এক ব্যক্তিকে ধূলা উড়িয়ে আসতে দেখে বললেন, আবু খায়সামাই হবে। দেখা গেল, তিনি আনসারী সাহাবী আবু খায়সামা (রাযিঃ) আর তিনি সে ব্যক্তি যিনি এক সা খেজুর সাদ্কা করেছিলেন যাতে মুশরিকরা বিরূপ সমালোচনা করেছিল। কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাবুক থেকে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সংবাদ আমার নিকট পৌছার পর আমার উপর চিন্তার বোঝা নেমে এল। আমি মনে মনে মিথ্যা ওযর কল্পনা করতে লাগলাম এবং এমন কথা ভাবতে লাগলাম যা বলে আমি তার ক্রোধ থেকে বাচতে পারি। আর এ ব্যাপারে আমি বুদ্ধিমান আপন জনেরও সাহায্য নিতে লাগলাম।
অবশেষে যখন আমাকে বলা হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পৌছে গেছেন তখন আমার অন্তর থেকে সমস্ত মন্দ কল্পনা দূর হয়ে গেল। এমনকি আমি অনুভব করলাম যে, কোন কিছুতেই আমি তার কাছ থেকে অব্যহতি পাব না। তাই আমি তার কাছে সত্য বলারই সংকল্প করে নিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ভোর বেলা সফর থেকে আগমন করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে তিনি মসজিদে আসতেন এবং তথায় দু’রাক’আত (নামায) আদায় করে মানুষের সাথে সাক্ষাতের জন্য বসতেন। এবারও যখন তিনি বসলেন, তখন যারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি তারা এসে অজুহাত পেশ করতে শুরু করল এবং এর উপর কসম খেতে লাগল। এ সকল লোক সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের প্রকাশ্য ওজুহাত গ্রহণ করলেন এবং তাদের থেকে বায়আত নিয়ে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আর তাদের অন্তর্নিহিতা অবস্থা আল্লাহর উপর ন্যস্ত করলেন।
অবশেষে আমি উপস্থিত হয়ে সালাম করলাম। তখন তিনি ক্রুদ্ধ ব্যক্তির হাসির ন্যায় অস্পষ্ট হাসলেন। তারপর তিনি বললেন, এস। আমি এসে তাঁর সামনে বসলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে তোমাকে পশ্চাতে রেখেছিল? তুমি কি সওয়ারী ক্রয় করনি? তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যদি আপনি ছাড়া কোন দুনিয়াদার মানুষের নিকট বসতাম তবে আপনি দেখতেন যে অবশ্যই আমি কোন ওযর পেশ করে তার ক্রোধ থেকে বেঁচে যেতাম। কারণ আমাকে তর্কের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমার বিশ্বাস, আজ যদি আমি মিথ্যা কথা বলে আপনাকে আমার প্রতি রাযী করে নেই, তবে অচিরেই আল্লাহ তা'আলা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিবেন। আর যদি আমি সত্য কথা বলি এবং এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তষ্ট হন, তবে এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি কল্যাণজনক পরিণামের আশা রাখি।
আল্লাহর কসম! আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার (অভিযান) থেকে পিছনে থাকার সময়ের তুলনায় কোন সময় আমি অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ও অধিক প্রাচুর্যের অধিকারী ছিলাম না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ অবশ্যই এ ব্যক্তি সত্য কথা বলেছে। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি চলে যাও, যতক্ষণ না আল্লাহ তোমার সম্বন্ধে ফয়সালা দেন। তারপর আমি উঠে গেলাম। তখন বনু সালামা গোত্রের কতিপয় লোক দৌড়িয়ে আমার কাছে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তো ইতোপূর্বে তোমাকে আর কোন অন্যায় করতে দেখিনি। যারা পশ্চাতে রয়ে গিয়েছিল, তারা যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে ওযর পেশ করেছে সেভাবে ওযর পেশ করতে কি তুমি অপারগ ছিলে? অতএব, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইস্তিগফারই তোমার গুনাহের জন্য যথেষ্ট হতো।
তিনি বলেন, আল্লাহর কসম। এভাবে তারা আমাকে এত ভৎর্সনা করতে লাগল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট আবার গিয়ে আমার নিজের উক্তি মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ইচ্ছা হতে লাগল। আমি লোকদের বললাম, আমার মত আর কারো এমন অবস্থা হয়েছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, আরো দুই জন তোমার মত করেছেন। তুমি যা বলেছ তারাও অনুরূপ বলেছেন এবং তোমাকে যা বলা হয়েছে তাদেরও তাই বলা হয়েছে। আমি বললাম, তারা কারা? তারা বলল, তারা হলেন, মুররা ইবনে রাবীআ আমিরী এবং হেলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকিফী (রাযিঃ)।
কা’ব বলেন, তারা আমার নিকট এমন দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করল, যারা ছিলেন নেককার, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী। তারা দুইজনই ছিলেন অনুসরণযোগ্য। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, যখন তারা ঐ দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করল, তখন আমি চলে গেলাম। এদিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের মধ্য থেকে শুধু আমাদের তিন জনের সাথে মুসলমানদের কথা বলতে নিষেধ করে দিলেন। এরপর লোকেরা আমাদের পরিহার করল অথবা বলেছেন, আমাদের সাথে তাদের ব্যবহার বদলে গেল। এমনকি যমীনও যেন পরিবর্তিত হয়ে গেল, (মনে হল) যে ভূমি আমি চিনতাম, এ যেন তা নেই। এমনি করে পঞ্চাশ রাত্র কাটালাম। আর আমার দুই সাথী ছিলেন হীনবল, তাই তারা নিজ নিজ ঘরে চুপচাপ বসে রইলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। আর আমি তাদের মধ্যে কম বয়স্ক ও সবল ছিলাম। আমি রাস্তায় বের হতাম, নামাযে শরীক হতাম এবং বাজারেও ঘোরাফেরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কোন কথা বলতো না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায আদায়ের পর নিজ স্থানে বসা ছিলেন, এমতাবস্থায় আমি তার নিকট এলাম, তাকে সালাম করলাম এবং মনে মনে ভাবলাম, তিনি সালামের জওয়াব প্রদান করে তার ওষ্ঠযুগল নাড়িয়েছেন কি না? তারপর আমি তাঁর নিকটে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলাম এবং গোপন চাহনির মাধ্যমে আমি তার দিকে তাকালাম। যখন আমি নামাযে মশগুল হতাম তখন তিনি আমার প্রতি নযর দেন। কিস্তু আমি যখন তার দিকে তাকাই তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আমার প্রতি মুসলমানদের এ কঠোর আচরণ যখন দীর্ঘায়িত হয়ে গেল তখন আমি গিয়ে আবু কাতাদা (রাযিঃ) এর বাগানের প্রাচীরের উপর উঠলাম। তিনি ছিলেন আমার চাচাতো ভাই এবং আমার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি।
উপরে উঠেই আমি তাঁকে সালাম করলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি আমার সালামের কোন উত্তর দিলেন না। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান না যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ﷺ) কে ভালবাসি? তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমি পুনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তারপর আবারো আমি তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ই ভাল জানেন। এ কথা শুনে আমার দু’নয়ন দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। অবশেষে পিছন ফিরে আমি আবার দেওয়ালের উপর চড়লাম।
তারপর আমি কোন একদিন মদীনার বাজার দিয়ে যাচ্ছিলাম, এ সময় মদীনার বাজারে শাক-সবজি বিক্রির উদ্দেশ্যে আগত সিরিয়ার কৃষকদের মধ্য থেকে একজন বলতে লাগল, আমাকে কা’ব ইবনে মালিকের ঠিকানা বলতে পারে এমন কোন ব্যক্তি আছে কি? লোকেরা ইশারায় আমাকে দেখিয়ে দিলে সে আমার নিকট আসল এবং গাসশান সম্রাটের পক্ষ হতে আমাকে একটি পত্র দিল। আমি লেখাপড়া জানতাম। তাই আমি তা পাঠ করলাম। এতে লেখা ছিল, আমি জানতে পারলাম যে, তোমার সঙ্গী মুহাম্মাদ তোমার প্রতি যুলুম করয়ে অথচ আল্লাহ পাক তোমাকে নীচু ঘরে জন্য দেননি এবং ধ্বংসের স্থানেও নয়। সুতরাং তুমি আমাদের নিকট চলে এসো। আমরা তোমার সহযোগিতা করবো।
এ পত্র পাঠমাত্র আমি বললাম এও আরেক ধরনের পরীক্ষা। তখন এ পত্রটি নিয়ে আমি উনুনের নিকট গেলাম এবং উহা আগুনে জ্বালিয়ে দিলাম। চল্লিশ দিন অতিবাহিত হল। কিন্তু এদিকে কোন ওহী আসছে না। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এক বার্তাবাহক আমার নিকট এসে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাকে তোমার স্ত্রী হতে দূর হয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি বললেন, না তালাক দিতে হবে না। বরং তুমি তার থেকে পৃথক হয়ে যাও এবং তার সাথে সহবাস করো না। তিনি বলেন, আমার অন্য দুই সঙ্গীদের নিকটও অনুরূপ বার্তা প্রেরণ করা হল।
কা’ব (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিতার বাড়ী চলে যাও এবং যে পর্যন্ত আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কোন ফয়সালা না করেন ততদিন সেখানেই অবস্থান করবে। কাব (রাযিঃ) বলেন, তারপর হিলাল ইবনে উমাইয়া (রাযিঃ) এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হিলাল ইবনে উমাইয়া একজন বৃদ্ধ-অকেজো ব্যক্তি। তার কোন খাদিম নেই। যদি আমি তার খিদমত করি, আপনি কি তা অপছন্দ করেন? তিনি বললেন, না, তবে সে তোমার সাথে সহবাস করতে পারবে না। এ কথা শুনে হিলাল (রাযিঃ) এর স্ত্রী বললেন, আল্লাহর কসম! (কোন ব্যাপারেই) তার মনে কোন স্পন্দন নেই এবং আল্লাহর কসম! ঐ ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি সে কেঁদেই দিনাতিপাত করছে।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের কেউ কেউ বললেন, আচ্ছা তুমিও যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি নিয়ে নিতে। তিনি তো হিলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রীকে তার স্বামীর খিদমতের অনুমতি দিয়েছেন। কা’ব বলেন, আমি বললাম, আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব না। কারণ আমি যুবক মানুষ। আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করলে না জানি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি বলেন। এ অবস্থায় আরো দশ রাত কাটালাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন থেকে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছিলেন, তখন থেকে আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়।
কাব বলেন, পঞ্চাশতম রাতের ফজরের নামায আমি আমারর গৃহের ছাদের উপর আদায় করলাম। এরপর যখন আমি ঐ অবস্থায় বসা ছিলাম, যা আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ আমার জীবন আমার জন্য সংকটাপন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছে সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। তখন আমি একজন ঘোষণাকারীর আওয়াজ শুনলাম, যিনি সালা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে উচ্চস্বরে বলছেন, হে কাব ইবনে মালিক! সুসংবাদ গ্রহণ কর। কা’ব বলেন, তখন আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম এবং আমি বুঝতে পারলাম যে, সংকট মুক্তি এসে গেছে। কা’ব বলেন, এদিকে ফজরের নামাযের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লোকদের কাছে ঘোষণা করলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন।
তখনই লোকেরা আমাদের সুসংবাদ দেয়ার জন্য ছুটে চলল এবং আমার সাথীদ্বয়কে খোশখবরী পৌছানোর জন্য কয়েকজন লোক তাদের নিকট গেলেন। আর আমার দিকে একজন ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে রওয়ানা হলেন এবং আসলাম গোত্রের আর এক ব্যক্তিও রওয়ানা হলেন। তিনি পাহাড়ের উপর আরোহণ করে ঘোষণা দিলেন। অশ্বের চেয়েও আওয়াজের গতি আরো দ্রুত এর তারপর যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম তিনি আমার নিকট আসলে আমি আমার পরিধেয় বস্ত্র দু’টো সুসংবাদের পুরস্কার স্বরূপ তাকে দিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! সেদিন ঐ দু’টো কাপড় ব্যতীত আমি আর কোন কাপড়ের মালিক ছিলাম না। অতএব আমি দু’টো কাপড় ধার নিয়ে পরিধান করলাম।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আমি রওয়ানা দিলাম। আমার তাওবা কবুলের মুবারকবাদ জানানোর জন্য লোকেরা দলে দলে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করতে লাগল এবং বলতে লাগল, আল্লাহর ক্ষমা তোমার জন্য মুবারক হোক। এমতাবস্থায় আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদেই উপবিষ্ট আছেন এবং তাঁর পাশে লোকজন রয়েছে। তখন তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাযিঃ) দাঁড়ালেন এবং দৌড়ে এসে আমার সাথে মুসাফাহা করলেন এবং তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তখন তিনি ছাড়া আর কেউ (আমাকে দেখে) দাঁড়াননি।
রাবী বলেন, কা’ব তালহার এ সদাচরণের কথা ভুলেননি। কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, তারপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সালাম করলাম তখন তাঁর চেহারা খুশীতে চমকাতে ছিলো। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে জন্ম দেয়ার পর থেকে যতদিন অতিবাহিত হয়েছে, তার মধ্যে তোমার জন্য এ মুবারক দিনটির সুসংবাদ। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি আপনার পক্ষ থেকে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! না মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনি বললেন, না, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে।
আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন খুশী হতেন, তখন তাঁর চেহারা মুবারক এমনভাবে প্রদীপ্ত হতো যেন তা এক খণ্ড চাঁদ। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমরা তাঁর চেহারা দেখেই তা বুঝতে পারতাম। তিনি বলেন, আমি যখন তাঁর সামনে বসলাম তখন বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার তাওবার শুকরিয়া হিসেবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য সাদ্কা স্বরূপ দান করে আমার সমস্ত মাল থেকে মুক্ত হতে চাই। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ কিছু মাল তোমার নিজের জন্য রেখে দাও। এই তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তাহলে আমি খায়বরে প্রাপ্ত অংশটুকু রেখে দিব।
কা’ব (রাযিঃ) বলেন, এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সত্য কথাই আমাকে মুক্তি দিয়েছে; তাই যতদিন জীবিত থাকি আমি সত্য ছাড়া বলব না। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে সে সত্য কথা বলার পর, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন; আল্লাহ তাআলা আর কোন মুসলিম ব্যক্তির প্রতি এরূপ করেছেন বলে আমি জানি না। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে এ আলোচনা করার পর অদ্যাবধি ইচ্ছাকৃতভাবে আমি কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। আমার আশা, অবশিষ্ট জীবনেও আল্লাহ তাআলা আমাকে মিথ্যা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা তখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেছিলেনঃ “আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা তার অনুগমন করেছিলো সংকটকালে, এমনকি যখন তাদের এক দলের চিত্ত-বৈকল্যের উপক্রম হয়েছিলো। পরে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। তিনি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র পরম দয়ালু এবং তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য উহা সংকুচিত হয়েছিলো এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিলো এবং তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তাওবা করে। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা তাওবাঃ ১১৭-১১৯)
কাব (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট সেদিন সত্য কথা বলার কারণে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, অনুরূপ অনুগ্রহ ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি আর কখনো করেননি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট সেদিন আমি মিথ্যা বলিনি। যদি বলতাম তবে অবশ্যই আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম, যেমন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মিথ্যাবাদীগণ। ওহী অবতরণকালে আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের এমন কঠোর সমালোচনা করেছেন, যা আর কাউকে করেননি। তিনি বলেছেনঃ তোমরা তাদের নিকট ফিরে এলে তারা আল্লাহর শপথ করবে, যেন তোমরা তাদের উপেক্ষা কর সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করবে তারা অপবিত্র, তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ জাহান্নাম তাদের আবাস স্থল। তারা তোমাদের নিকট হলফ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ ফাসিক (সত্যত্যাগী) লোকদের প্রতি তুষ্ট হবেন না। (সূরা তাওবাঃ ৯৫ ও ৯৬)
কা’ব (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট শপথ করার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যাদের ওযর গ্রহণ করেছিলেন, যাদের বায়আত করেছিলেন এবং যাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাদের থেকে আমাদের তিনজনের বিষয়টিকে বিলম্বিত করা হয়েছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা আসা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বিষয়টিকে স্থগিত রেখেছিলেন। তাই আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আর তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও যাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।
এখানেخلفوا “যুদ্ধ হতে আমাদের পেছনে থাকা” নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, রাসুল (ﷺ) কর্তৃক “আমাদের বিষয়টিকে স্থগিত রাখা।” ঐ লোকদের বিপরীতে যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মুখে শপথ করেছিল এবং ওযর পেশ করেছিলো অতঃপর তিনি তা কবুল করেছিলেন।
মুহাম্মাদ ইবনে রাফি (রাহঃ) ......... ইবনে শিহাব (রাহঃ) এর সূত্রে যুহরী (রাহঃ) এর সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যত যুদ্ধ করেছেন তাবুক যুদ্ধ ব্যতীত এর সবকটির মধ্যেই আমি তাঁর সঙ্গে শরীক ছিলাম। তবে বদর যুদ্ধে আমি তাঁর সাথে শরীক হতে পারিনি। আর যারা (এ বছর) থেকে পশ্চাতে রয়েছে তাদের কাউকেও অভিযুক্ত করেননি। তখন তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও মুসলমানগণ শুধুমাত্র কুরাইশ কাফিলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা মুসলমান ও কাফিরদের অনির্ধারিত সময়ে সমবেত করে দেন। আকাবার রাত্রে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার নিচ্ছিলেন, সে রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। বদর যুদ্ধ যদিও মানুষের নিকট সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, তথাপি আকাবা রজনীর পরিবর্তে বদর মুদ্ধে শরীক হওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় নয়।
তাবুক যুদ্ধে শরীক না হওয়ার ব্যাপারে আমার ঘটনা হচ্ছে এই যে, যখন এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমি যেমন শক্তিশালী ও স্বচ্ছল ছিলাম, তেমন আর কখনো ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর পূর্বে এমনকি দু’টি সওয়ারী আমি আর কখনো একত্রে জমা করতে পারিনি। কিন্তু এ যুদ্ধের সময় দু’টি সওয়ারীর অধিকারী ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ অভিযানে যান প্রচন্ড গরমের কালে। সফর ছিল মরু প্রান্তরের। বহু সংখ্যক শক্রর সন্মুখীন হতে যাচ্ছিলেন। তাই তিনি বিষয়টি মুসলমানদের সামনে খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করেন, যাতে তারা যুদ্ধের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নিতে পারে। যুদ্ধের গতিবিধি সম্পর্কেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদেরকে জানিয়ে দিলেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে মুসলমানের সংখ্যা ছিল অনেক এবং তাদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল না কোন সংরক্ষণকারীর কিতাবে; অর্থাৎ রেজিষ্টারে সংরক্ষিত ছিল না। কাব (রাযিঃ) বলেন, সুতরাং যে ব্যক্তি অনুরূপ থাকতে ইচ্ছা করে সে কমপক্ষে এ ধারণা করতে পারত যে, তার অনুপস্থিতি গোপন থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সম্পর্কে ওহী নাযিল হয়।
এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যখন গাছের ফল পাকছিল এবং বৃক্ষের ছায়া ছিল আনন্দদায়ক। আর আমিও ছিলাম এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও মুসলমানগণ যুদ্বের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিলেন। আমিও তাঁদের সাথে যুদ্ধে শরীক হওয়ার জন্য প্রস্ততি গ্রহণের লক্ষ্যে বাড়ী থেকে সকালে বের হতাম, কিন্তু কোন প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম, আমি তো যুদ্ধে যেতে সক্ষম, যখনই ইচ্ছা করি। আমার ব্যাপার এভাবেই চলতে লাগল।
এদিকে লোকজন বাস্তব প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে লাগল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যুষে রওয়ানা হলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিমগণও রওয়ানা হয়ে গেল। কিন্তু আমি কোন প্রস্তুতই গ্রহণ করি নি। পরদিন সকালে আমি বের হলাম। কিন্তু কোন প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই ফিরে এলাম। এভাবে আমার সময় দীর্ঘায়িত হতে লাগল। এদিকে লোকজন দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় আর মুজাহিদ্বীনের দল বহু দুরে চলে যায়। তখন আমি ভাবতে লাগলাম যে, আমিও রওয়ানা হয়ে তাদের সাথে মিলিত হয়ে যাই। আফসোস! আমি যদি তাই করতাম। কিন্তু আমার ভাগ্যে তা হয়নি।
পরবর্তী অবস্থা হল এই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর আমি যখন রাস্তায় বের হতাম তখন এ ব্যাপার আমাকে ব্যথিত করত যে, আমি অনুসরণীয় কাউকে দেখতে পেতাম না, শুধু এমন লোক যাদের উপর নিফাকের অভিযোগ রয়েছে অথবা সে সকল অক্ষম লোক যাদের আল্লাহ তাআলা মা’যুর হিসেবে অবকাশ দিয়েছেন। এদিকে তাবুক পৌছার পূর্বে রাস্তায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার কথা মোটেই আলোচনা করেননি। কিন্তু তাবুক পৌছার পর লোকদের মাঝে বসা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, কা’ব ইবনে মালিক কি করছে? তখন বনু সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তার লাল (জোড়া) পোশাক এবং তার দেহের দু’ পাশের প্রতি দৃষ্টি তাকে বিরত রেখেছে। তখন মু’আয ইবনে জাবাল (রাযিঃ) বললেন, তুমি বড় মন্দ কথা বলছ। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমরা তো তাকে ভালই জানি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নীরব রইলেন।
ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুভ্র বসন পরিহিত এক ব্যক্তিকে ধূলা উড়িয়ে আসতে দেখে বললেন, আবু খায়সামাই হবে। দেখা গেল, তিনি আনসারী সাহাবী আবু খায়সামা (রাযিঃ) আর তিনি সে ব্যক্তি যিনি এক সা খেজুর সাদ্কা করেছিলেন যাতে মুশরিকরা বিরূপ সমালোচনা করেছিল। কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাবুক থেকে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সংবাদ আমার নিকট পৌছার পর আমার উপর চিন্তার বোঝা নেমে এল। আমি মনে মনে মিথ্যা ওযর কল্পনা করতে লাগলাম এবং এমন কথা ভাবতে লাগলাম যা বলে আমি তার ক্রোধ থেকে বাচতে পারি। আর এ ব্যাপারে আমি বুদ্ধিমান আপন জনেরও সাহায্য নিতে লাগলাম।
অবশেষে যখন আমাকে বলা হল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পৌছে গেছেন তখন আমার অন্তর থেকে সমস্ত মন্দ কল্পনা দূর হয়ে গেল। এমনকি আমি অনুভব করলাম যে, কোন কিছুতেই আমি তার কাছ থেকে অব্যহতি পাব না। তাই আমি তার কাছে সত্য বলারই সংকল্প করে নিলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ভোর বেলা সফর থেকে আগমন করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে তিনি মসজিদে আসতেন এবং তথায় দু’রাক’আত (নামায) আদায় করে মানুষের সাথে সাক্ষাতের জন্য বসতেন। এবারও যখন তিনি বসলেন, তখন যারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি তারা এসে অজুহাত পেশ করতে শুরু করল এবং এর উপর কসম খেতে লাগল। এ সকল লোক সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের প্রকাশ্য ওজুহাত গ্রহণ করলেন এবং তাদের থেকে বায়আত নিয়ে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আর তাদের অন্তর্নিহিতা অবস্থা আল্লাহর উপর ন্যস্ত করলেন।
অবশেষে আমি উপস্থিত হয়ে সালাম করলাম। তখন তিনি ক্রুদ্ধ ব্যক্তির হাসির ন্যায় অস্পষ্ট হাসলেন। তারপর তিনি বললেন, এস। আমি এসে তাঁর সামনে বসলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে তোমাকে পশ্চাতে রেখেছিল? তুমি কি সওয়ারী ক্রয় করনি? তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি যদি আপনি ছাড়া কোন দুনিয়াদার মানুষের নিকট বসতাম তবে আপনি দেখতেন যে অবশ্যই আমি কোন ওযর পেশ করে তার ক্রোধ থেকে বেঁচে যেতাম। কারণ আমাকে তর্কের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমার বিশ্বাস, আজ যদি আমি মিথ্যা কথা বলে আপনাকে আমার প্রতি রাযী করে নেই, তবে অচিরেই আল্লাহ তা'আলা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিবেন। আর যদি আমি সত্য কথা বলি এবং এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তষ্ট হন, তবে এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি কল্যাণজনক পরিণামের আশা রাখি।
আল্লাহর কসম! আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার (অভিযান) থেকে পিছনে থাকার সময়ের তুলনায় কোন সময় আমি অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ও অধিক প্রাচুর্যের অধিকারী ছিলাম না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ অবশ্যই এ ব্যক্তি সত্য কথা বলেছে। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি চলে যাও, যতক্ষণ না আল্লাহ তোমার সম্বন্ধে ফয়সালা দেন। তারপর আমি উঠে গেলাম। তখন বনু সালামা গোত্রের কতিপয় লোক দৌড়িয়ে আমার কাছে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তো ইতোপূর্বে তোমাকে আর কোন অন্যায় করতে দেখিনি। যারা পশ্চাতে রয়ে গিয়েছিল, তারা যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে ওযর পেশ করেছে সেভাবে ওযর পেশ করতে কি তুমি অপারগ ছিলে? অতএব, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ইস্তিগফারই তোমার গুনাহের জন্য যথেষ্ট হতো।
তিনি বলেন, আল্লাহর কসম। এভাবে তারা আমাকে এত ভৎর্সনা করতে লাগল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট আবার গিয়ে আমার নিজের উক্তি মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ইচ্ছা হতে লাগল। আমি লোকদের বললাম, আমার মত আর কারো এমন অবস্থা হয়েছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, আরো দুই জন তোমার মত করেছেন। তুমি যা বলেছ তারাও অনুরূপ বলেছেন এবং তোমাকে যা বলা হয়েছে তাদেরও তাই বলা হয়েছে। আমি বললাম, তারা কারা? তারা বলল, তারা হলেন, মুররা ইবনে রাবীআ আমিরী এবং হেলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকিফী (রাযিঃ)।
কা’ব বলেন, তারা আমার নিকট এমন দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করল, যারা ছিলেন নেককার, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী। তারা দুইজনই ছিলেন অনুসরণযোগ্য। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, যখন তারা ঐ দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করল, তখন আমি চলে গেলাম। এদিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের মধ্য থেকে শুধু আমাদের তিন জনের সাথে মুসলমানদের কথা বলতে নিষেধ করে দিলেন। এরপর লোকেরা আমাদের পরিহার করল অথবা বলেছেন, আমাদের সাথে তাদের ব্যবহার বদলে গেল। এমনকি যমীনও যেন পরিবর্তিত হয়ে গেল, (মনে হল) যে ভূমি আমি চিনতাম, এ যেন তা নেই। এমনি করে পঞ্চাশ রাত্র কাটালাম। আর আমার দুই সাথী ছিলেন হীনবল, তাই তারা নিজ নিজ ঘরে চুপচাপ বসে রইলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। আর আমি তাদের মধ্যে কম বয়স্ক ও সবল ছিলাম। আমি রাস্তায় বের হতাম, নামাযে শরীক হতাম এবং বাজারেও ঘোরাফেরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কোন কথা বলতো না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নামায আদায়ের পর নিজ স্থানে বসা ছিলেন, এমতাবস্থায় আমি তার নিকট এলাম, তাকে সালাম করলাম এবং মনে মনে ভাবলাম, তিনি সালামের জওয়াব প্রদান করে তার ওষ্ঠযুগল নাড়িয়েছেন কি না? তারপর আমি তাঁর নিকটে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলাম এবং গোপন চাহনির মাধ্যমে আমি তার দিকে তাকালাম। যখন আমি নামাযে মশগুল হতাম তখন তিনি আমার প্রতি নযর দেন। কিস্তু আমি যখন তার দিকে তাকাই তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আমার প্রতি মুসলমানদের এ কঠোর আচরণ যখন দীর্ঘায়িত হয়ে গেল তখন আমি গিয়ে আবু কাতাদা (রাযিঃ) এর বাগানের প্রাচীরের উপর উঠলাম। তিনি ছিলেন আমার চাচাতো ভাই এবং আমার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি।
উপরে উঠেই আমি তাঁকে সালাম করলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি আমার সালামের কোন উত্তর দিলেন না। আমি তাঁকে বললাম, হে আবু কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান না যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ﷺ) কে ভালবাসি? তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমি পুনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তারপর আবারো আমি তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ই ভাল জানেন। এ কথা শুনে আমার দু’নয়ন দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। অবশেষে পিছন ফিরে আমি আবার দেওয়ালের উপর চড়লাম।
তারপর আমি কোন একদিন মদীনার বাজার দিয়ে যাচ্ছিলাম, এ সময় মদীনার বাজারে শাক-সবজি বিক্রির উদ্দেশ্যে আগত সিরিয়ার কৃষকদের মধ্য থেকে একজন বলতে লাগল, আমাকে কা’ব ইবনে মালিকের ঠিকানা বলতে পারে এমন কোন ব্যক্তি আছে কি? লোকেরা ইশারায় আমাকে দেখিয়ে দিলে সে আমার নিকট আসল এবং গাসশান সম্রাটের পক্ষ হতে আমাকে একটি পত্র দিল। আমি লেখাপড়া জানতাম। তাই আমি তা পাঠ করলাম। এতে লেখা ছিল, আমি জানতে পারলাম যে, তোমার সঙ্গী মুহাম্মাদ তোমার প্রতি যুলুম করয়ে অথচ আল্লাহ পাক তোমাকে নীচু ঘরে জন্য দেননি এবং ধ্বংসের স্থানেও নয়। সুতরাং তুমি আমাদের নিকট চলে এসো। আমরা তোমার সহযোগিতা করবো।
এ পত্র পাঠমাত্র আমি বললাম এও আরেক ধরনের পরীক্ষা। তখন এ পত্রটি নিয়ে আমি উনুনের নিকট গেলাম এবং উহা আগুনে জ্বালিয়ে দিলাম। চল্লিশ দিন অতিবাহিত হল। কিন্তু এদিকে কোন ওহী আসছে না। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এক বার্তাবাহক আমার নিকট এসে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তোমাকে তোমার স্ত্রী হতে দূর হয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি বললেন, না তালাক দিতে হবে না। বরং তুমি তার থেকে পৃথক হয়ে যাও এবং তার সাথে সহবাস করো না। তিনি বলেন, আমার অন্য দুই সঙ্গীদের নিকটও অনুরূপ বার্তা প্রেরণ করা হল।
কা’ব (রাযিঃ) বলেন, অতঃপর আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিতার বাড়ী চলে যাও এবং যে পর্যন্ত আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কোন ফয়সালা না করেন ততদিন সেখানেই অবস্থান করবে। কাব (রাযিঃ) বলেন, তারপর হিলাল ইবনে উমাইয়া (রাযিঃ) এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হিলাল ইবনে উমাইয়া একজন বৃদ্ধ-অকেজো ব্যক্তি। তার কোন খাদিম নেই। যদি আমি তার খিদমত করি, আপনি কি তা অপছন্দ করেন? তিনি বললেন, না, তবে সে তোমার সাথে সহবাস করতে পারবে না। এ কথা শুনে হিলাল (রাযিঃ) এর স্ত্রী বললেন, আল্লাহর কসম! (কোন ব্যাপারেই) তার মনে কোন স্পন্দন নেই এবং আল্লাহর কসম! ঐ ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি সে কেঁদেই দিনাতিপাত করছে।
তিনি বলেন, আমার পরিবারের কেউ কেউ বললেন, আচ্ছা তুমিও যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি নিয়ে নিতে। তিনি তো হিলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রীকে তার স্বামীর খিদমতের অনুমতি দিয়েছেন। কা’ব বলেন, আমি বললাম, আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব না। কারণ আমি যুবক মানুষ। আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করলে না জানি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি বলেন। এ অবস্থায় আরো দশ রাত কাটালাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন থেকে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছিলেন, তখন থেকে আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়।
কাব বলেন, পঞ্চাশতম রাতের ফজরের নামায আমি আমারর গৃহের ছাদের উপর আদায় করলাম। এরপর যখন আমি ঐ অবস্থায় বসা ছিলাম, যা আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ আমার জীবন আমার জন্য সংকটাপন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছে সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। তখন আমি একজন ঘোষণাকারীর আওয়াজ শুনলাম, যিনি সালা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে উচ্চস্বরে বলছেন, হে কাব ইবনে মালিক! সুসংবাদ গ্রহণ কর। কা’ব বলেন, তখন আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম এবং আমি বুঝতে পারলাম যে, সংকট মুক্তি এসে গেছে। কা’ব বলেন, এদিকে ফজরের নামাযের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লোকদের কাছে ঘোষণা করলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন।
তখনই লোকেরা আমাদের সুসংবাদ দেয়ার জন্য ছুটে চলল এবং আমার সাথীদ্বয়কে খোশখবরী পৌছানোর জন্য কয়েকজন লোক তাদের নিকট গেলেন। আর আমার দিকে একজন ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে রওয়ানা হলেন এবং আসলাম গোত্রের আর এক ব্যক্তিও রওয়ানা হলেন। তিনি পাহাড়ের উপর আরোহণ করে ঘোষণা দিলেন। অশ্বের চেয়েও আওয়াজের গতি আরো দ্রুত এর তারপর যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম তিনি আমার নিকট আসলে আমি আমার পরিধেয় বস্ত্র দু’টো সুসংবাদের পুরস্কার স্বরূপ তাকে দিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! সেদিন ঐ দু’টো কাপড় ব্যতীত আমি আর কোন কাপড়ের মালিক ছিলাম না। অতএব আমি দু’টো কাপড় ধার নিয়ে পরিধান করলাম।
এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আমি রওয়ানা দিলাম। আমার তাওবা কবুলের মুবারকবাদ জানানোর জন্য লোকেরা দলে দলে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করতে লাগল এবং বলতে লাগল, আল্লাহর ক্ষমা তোমার জন্য মুবারক হোক। এমতাবস্থায় আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদেই উপবিষ্ট আছেন এবং তাঁর পাশে লোকজন রয়েছে। তখন তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাযিঃ) দাঁড়ালেন এবং দৌড়ে এসে আমার সাথে মুসাফাহা করলেন এবং তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তখন তিনি ছাড়া আর কেউ (আমাকে দেখে) দাঁড়াননি।
রাবী বলেন, কা’ব তালহার এ সদাচরণের কথা ভুলেননি। কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, তারপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে সালাম করলাম তখন তাঁর চেহারা খুশীতে চমকাতে ছিলো। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে জন্ম দেয়ার পর থেকে যতদিন অতিবাহিত হয়েছে, তার মধ্যে তোমার জন্য এ মুবারক দিনটির সুসংবাদ। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি আপনার পক্ষ থেকে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! না মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনি বললেন, না, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে।
আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন খুশী হতেন, তখন তাঁর চেহারা মুবারক এমনভাবে প্রদীপ্ত হতো যেন তা এক খণ্ড চাঁদ। কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমরা তাঁর চেহারা দেখেই তা বুঝতে পারতাম। তিনি বলেন, আমি যখন তাঁর সামনে বসলাম তখন বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার তাওবার শুকরিয়া হিসেবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য সাদ্কা স্বরূপ দান করে আমার সমস্ত মাল থেকে মুক্ত হতে চাই। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ কিছু মাল তোমার নিজের জন্য রেখে দাও। এই তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তাহলে আমি খায়বরে প্রাপ্ত অংশটুকু রেখে দিব।
কা’ব (রাযিঃ) বলেন, এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সত্য কথাই আমাকে মুক্তি দিয়েছে; তাই যতদিন জীবিত থাকি আমি সত্য ছাড়া বলব না। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে সে সত্য কথা বলার পর, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন; আল্লাহ তাআলা আর কোন মুসলিম ব্যক্তির প্রতি এরূপ করেছেন বলে আমি জানি না। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে এ আলোচনা করার পর অদ্যাবধি ইচ্ছাকৃতভাবে আমি কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। আমার আশা, অবশিষ্ট জীবনেও আল্লাহ তাআলা আমাকে মিথ্যা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
কা’ব (রাযিঃ) বলেন, আমার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা তখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেছিলেনঃ “আল্লাহ অনুগ্রহপরায়ণ হলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা তার অনুগমন করেছিলো সংকটকালে, এমনকি যখন তাদের এক দলের চিত্ত-বৈকল্যের উপক্রম হয়েছিলো। পরে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। তিনি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র পরম দয়ালু এবং তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য উহা সংকুচিত হয়েছিলো এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিলো এবং তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তাওবা করে। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা তাওবাঃ ১১৭-১১৯)
কাব (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট সেদিন সত্য কথা বলার কারণে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, অনুরূপ অনুগ্রহ ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি আর কখনো করেননি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট সেদিন আমি মিথ্যা বলিনি। যদি বলতাম তবে অবশ্যই আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম, যেমন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মিথ্যাবাদীগণ। ওহী অবতরণকালে আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের এমন কঠোর সমালোচনা করেছেন, যা আর কাউকে করেননি। তিনি বলেছেনঃ তোমরা তাদের নিকট ফিরে এলে তারা আল্লাহর শপথ করবে, যেন তোমরা তাদের উপেক্ষা কর সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করবে তারা অপবিত্র, তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ জাহান্নাম তাদের আবাস স্থল। তারা তোমাদের নিকট হলফ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ ফাসিক (সত্যত্যাগী) লোকদের প্রতি তুষ্ট হবেন না। (সূরা তাওবাঃ ৯৫ ও ৯৬)
কা’ব (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট শপথ করার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যাদের ওযর গ্রহণ করেছিলেন, যাদের বায়আত করেছিলেন এবং যাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাদের থেকে আমাদের তিনজনের বিষয়টিকে বিলম্বিত করা হয়েছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা আসা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের বিষয়টিকে স্থগিত রেখেছিলেন। তাই আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আর তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও যাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।
এখানেخلفوا “যুদ্ধ হতে আমাদের পেছনে থাকা” নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, রাসুল (ﷺ) কর্তৃক “আমাদের বিষয়টিকে স্থগিত রাখা।” ঐ লোকদের বিপরীতে যারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মুখে শপথ করেছিল এবং ওযর পেশ করেছিলো অতঃপর তিনি তা কবুল করেছিলেন।
মুহাম্মাদ ইবনে রাফি (রাহঃ) ......... ইবনে শিহাব (রাহঃ) এর সূত্রে যুহরী (রাহঃ) এর সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
باب حَدِيثِ تَوْبَةِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ وَصَاحِبَيْهِ
حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ سَرْحٍ مَوْلَى بَنِي أُمَيَّةَ أَخْبَرَنِي ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ ثُمَّ غَزَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم غَزْوَةَ تَبُوكَ وَهُوَ يُرِيدُ الرُّومَ وَنَصَارَى الْعَرَبِ بِالشَّامِ . قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبٍ كَانَ قَائِدَ كَعْبٍ مِنْ بَنِيهِ حِينَ عَمِيَ قَالَ سَمِعْتُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ يُحَدِّثُ حَدِيثَهُ حِينَ تَخَلَّفَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ قَالَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ لَمْ أَتَخَلَّفْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا قَطُّ إِلاَّ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ غَيْرَ أَنِّي قَدْ تَخَلَّفْتُ فِي غَزْوَةِ بَدْرٍ وَلَمْ يُعَاتِبْ أَحَدًا تَخَلَّفَ عَنْهُ إِنَّمَا خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالْمُسْلِمُونَ يُرِيدُونَ عِيرَ قُرَيْشٍ حَتَّى جَمَعَ اللَّهُ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ عَدُوِّهُمْ عَلَى غَيْرِ مِيعَادٍ وَلَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةَ الْعَقَبَةِ حِينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الإِسْلاَمِ وَمَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ وَإِنْ كَانَتْ بَدْرٌ أَذْكَرَ فِي النَّاسِ مِنْهَا وَكَانَ مِنْ خَبَرِي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ أَنِّي لَمْ أَكُنْ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْهُ فِي تِلْكَ الْغَزْوَةِ وَاللَّهِ مَا جَمَعْتُ قَبْلَهَا رَاحِلَتَيْنِ قَطُّ حَتَّى جَمَعْتُهُمَا فِي تِلْكَ الْغَزْوَةِ فَغَزَاهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي حَرٍّ شَدِيدٍ وَاسْتَقْبَلَ سَفَرًا بَعِيدًا وَمَفَازًا وَاسْتَقْبَلَ عَدُوًّا كَثِيرًا فَجَلاَ لِلْمُسْلِمِينَ أَمْرَهُمْ لِيَتَأَهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهِمْ فَأَخْبَرَهُمْ بِوَجْهِهِمُ الَّذِي يُرِيدُ وَالْمُسْلِمُونَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَثِيرٌ وَلاَ يَجْمَعُهُمْ كِتَابُ حَافِظٍ - يُرِيدُ بِذَلِكَ الدِّيوَانَ - قَالَ كَعْبٌ فَقَلَّ رَجُلٌ يُرِيدُ أَنْ يَتَغَيَّبَ يَظُنُّ أَنَّ ذَلِكَ سَيَخْفَى لَهُ مَا لَمْ يَنْزِلْ فِيهِ وَحْىٌ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَغَزَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تِلْكَ الْغَزْوَةَ حِينَ طَابَتِ الثِّمَارُ وَالظِّلاَلُ فَأَنَا إِلَيْهَا أَصْعَرُ فَتَجَهَّزَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالْمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَطَفِقْتُ أَغْدُو لِكَىْ أَتَجَهَّزَ مَعَهُمْ فَأَرْجِعُ وَلَمْ أَقْضِ شَيْئًا . وَأَقُولُ فِي نَفْسِي أَنَا قَادِرٌ عَلَى ذَلِكَ إِذَا أَرَدْتُ . فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ يَتَمَادَى بِي حَتَّى اسْتَمَرَّ بِالنَّاسِ الْجِدُّ فَأَصْبَحَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم غَادِيًا وَالْمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَلَمْ أَقْضِ مِنْ جَهَازِي شَيْئًا ثُمَّ غَدَوْتُ فَرَجَعْتُ وَلَمْ أَقْضِ شَيْئًا فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ يَتَمَادَى بِي حَتَّى أَسْرَعُوا وَتَفَارَطَ الْغَزْوُ فَهَمَمْتُ أَنْ أَرْتَحِلَ فَأُدْرِكَهُمْ فَيَا لَيْتَنِي فَعَلْتُ ثُمَّ لَمْ يُقَدَّرْ ذَلِكَ لِي فَطَفِقْتُ إِذَا خَرَجْتُ فِي النَّاسِ بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَحْزُنُنِي أَنِّي لاَ أَرَى لِي أُسْوَةً إِلاَّ رَجُلاً مَغْمُوصًا عَلَيْهِ فِي النِّفَاقِ أَوْ رَجُلاً مِمَّنْ عَذَرَ اللَّهُ مِنَ الضُّعَفَاءِ وَلَمْ يَذْكُرْنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى بَلَغَ تَبُوكًا فَقَالَ وَهُوَ جَالِسٌ فِي الْقَوْمِ بِتَبُوكَ " مَا فَعَلَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ " . قَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ يَا رَسُولَ اللَّهِ حَبَسَهُ بُرْدَاهُ وَالنَّظَرُ فِي عِطْفَيْهِ . فَقَالَ لَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ بِئْسَ مَا قُلْتَ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ إِلاَّ خَيْرًا . فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَبَيْنَمَا هُوَ عَلَى ذَلِكَ رَأَى رَجُلاً مُبَيِّضًا يَزُولُ بِهِ السَّرَابُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كُنْ أَبَا خَيْثَمَةَ " . فَإِذَا هُو أَبُو خَيْثَمَةَ الأَنْصَارِيُّ وَهُوَ الَّذِي تَصَدَّقَ بِصَاعِ التَّمْرِ حِينَ لَمَزَهُ الْمُنَافِقُونَ . فَقَالَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ فَلَمَّا بَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ تَوَجَّهَ قَافِلاً مِنْ تَبُوكَ حَضَرَنِي بَثِّي فَطَفِقْتُ أَتَذَكَّرُ الْكَذِبَ وَأَقُولُ بِمَ أَخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ غَدًا وَأَسْتَعِينُ عَلَى ذَلِكَ كُلَّ ذِي رَأْىٍ مِنْ أَهْلِي فَلَمَّا قِيلَ لِي إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَدْ أَظَلَّ قَادِمًا زَاحَ عَنِّي الْبَاطِلُ حَتَّى عَرَفْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْهُ بِشَىْءٍ أَبَدًا فَأَجْمَعْتُ صِدْقَهُ وَصَبَّحَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَادِمًا وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ لِلنَّاسِ فَلَمَّا فَعَلَ ذَلِكَ جَاءَهُ الْمُخَلَّفُونَ فَطَفِقُوا يَعْتَذِرُونَ إِلَيْهِ وَيَحْلِفُونَ لَهُ وَكَانُوا بِضْعَةً وَثَمَانِينَ رَجُلاً فَقَبِلَ مِنْهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلاَنِيَتَهُمْ وَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَوَكَلَ سَرَائِرَهُمْ إِلَى اللَّهِ حَتَّى جِئْتُ فَلَمَّا سَلَّمْتُ تَبَسَّمَ تَبَسُّمَ الْمُغْضَبِ ثُمَّ قَالَ " تَعَالَ " . فَجِئْتُ أَمْشِي حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ لِي " مَا خَلَّفَكَ " . أَلَمْ تَكُنْ قَدِ ابْتَعْتَ ظَهْرَكَ " . قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي وَاللَّهِ لَوْ جَلَسْتُ عِنْدَ غَيْرِكَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا لَرَأَيْتُ أَنِّي سَأَخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ بِعُذْرٍ وَلَقَدْ أُعْطِيتُ جَدَلاً وَلَكِنِّي وَاللَّهِ لَقَدْ عَلِمْتُ لَئِنْ حَدَّثْتُكَ الْيَوْمَ حَدِيثَ كَذِبٍ تَرْضَى بِهِ عَنِّي لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يُسْخِطَكَ عَلَىَّ وَلَئِنْ حَدَّثْتُكَ حَدِيثَ صِدْقٍ تَجِدُ عَلَىَّ فِيهِ إِنِّي لأَرْجُو فِيهِ عُقْبَى اللَّهِ وَاللَّهِ مَا كَانَ لِي عُذْرٌ وَاللَّهِ مَا كُنْتُ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْكَ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَمَّا هَذَا فَقَدْ صَدَقَ فَقُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللَّهُ فِيكَ " . فَقُمْتُ وَثَارَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ فَاتَّبَعُونِي فَقَالُوا لِي وَاللَّهِ مَا عَلِمْنَاكَ أَذْنَبْتَ ذَنْبًا قَبْلَ هَذَا لَقَدْ عَجَزْتَ فِي أَنْ لاَ تَكُونَ اعْتَذَرْتَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمَا اعْتَذَرَ بِهِ إِلَيْهِ الْمُخَلَّفُونَ فَقَدْ كَانَ كَافِيَكَ ذَنْبَكَ اسْتِغْفَارُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لَكَ . قَالَ فَوَاللَّهِ مَا زَالُوا يُؤَنِّبُونَنِي حَتَّى أَرَدْتُ أَنْ أَرْجِعَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأُكَذِّبَ نَفْسِي - قَالَ - ثُمَّ قُلْتُ لَهُمْ هَلْ لَقِيَ هَذَا مَعِي مِنْ أَحَدٍ قَالُوا نَعَمْ لَقِيَهُ مَعَكَ رَجُلاَنِ قَالاَ مِثْلَ مَا قُلْتَ فَقِيلَ لَهُمَا مِثْلُ مَا قِيلَ لَكَ - قَالَ - قُلْتُ مَنْ هُمَا قَالُوا مُرَارَةُ بْنُ رَبِيعَةَ الْعَامِرِيُّ وَهِلاَلُ بْنُ أُمَيَّةَ الْوَاقِفِيُّ - قَالَ - فَذَكَرُوا لِي رَجُلَيْنِ صَالِحَيْنِ قَدْ شِهِدَا بَدْرًا فِيهِمَا أُسْوَةٌ - قَالَ - فَمَضَيْتُ حِينَ ذَكَرُوهُمَا لِي . قَالَ وَنَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمُسْلِمِينَ عَنْ كَلاَمِنَا أَيُّهَا الثَّلاَثَةُ مِنْ بَيْنِ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ - قَالَ - فَاجْتَنَبَنَا النَّاسُ - وَقَالَ - تَغَيَّرُوا لَنَا حَتَّى تَنَكَّرَتْ لِي فِي نَفْسِيَ الأَرْضُ فَمَا هِيَ بِالأَرْضِ الَّتِي أَعْرِفُ فَلَبِثْنَا عَلَى ذَلِكَ خَمْسِينَ لَيْلَةً فَأَمَّا صَاحِبَاىَ فَاسْتَكَانَا وَقَعَدَا فِي بُيُوتِهِمَا يَبْكِيَانِ وَأَمَّا أَنَا فَكُنْتُ أَشَبَّ الْقَوْمِ وَأَجْلَدَهُمْ فَكُنْتُ أَخْرُجُ فَأَشْهَدُ الصَّلاَةَ وَأَطُوفُ فِي الأَسْوَاقِ وَلاَ يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ وَآتِي رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأُسَلِّمُ عَلَيْهِ وَهُوَ فِي مَجْلِسِهِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَأَقُولُ فِي نَفْسِي هَلْ حَرَّكَ شَفَتَيْهِ بِرَدِّ السَّلاَمِ أَمْ لاَ ثُمَّ أُصَلِّي قَرِيبًا مِنْهُ وَأُسَارِقُهُ النَّظَرَ فَإِذَا أَقْبَلْتُ عَلَى صَلاَتِي نَظَرَ إِلَىَّ وَإِذَا الْتَفَتُّ نَحْوَهُ أَعْرَضَ عَنِّي حَتَّى إِذَا طَالَ ذَلِكَ عَلَىَّ مِنْ جَفْوَةِ الْمُسْلِمِينَ مَشَيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ جِدَارَ حَائِطِ أَبِي قَتَادَةَ وَهُوَ ابْنُ عَمِّي وَأَحَبُّ النَّاسِ إِلَىَّ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَوَاللَّهِ مَا رَدَّ عَلَىَّ السَّلاَمَ فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا قَتَادَةَ أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمَنَّ أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ قَالَ فَسَكَتَ فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَسَكَتَ فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَقَالَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . فَفَاضَتْ عَيْنَاىَ وَتَوَلَّيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ الْجِدَارَ فَبَيْنَا أَنَا أَمْشِي فِي سُوقِ الْمَدِينَةِ إِذَا نَبَطِيٌّ مِنْ نَبَطِ أَهْلِ الشَّامِ مِمَّنْ قَدِمَ بِالطَّعَامِ يَبِيعُهُ بِالْمَدِينَةِ يَقُولُ مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ - قَالَ - فَطَفِقَ النَّاسُ يُشِيرُونَ لَهُ إِلَىَّ حَتَّى جَاءَنِي فَدَفَعَ إِلَىَّ كِتَابًا مِنْ مَلِكِ غَسَّانَ وَكُنْتُ كَاتِبًا فَقَرَأْتُهُ فَإِذَا فِيهِ أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنَا أَنَّ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَلَمْ يَجْعَلْكَ اللَّهُ بِدَارِ هَوَانٍ وَلاَ مَضْيَعَةٍ فَالْحَقْ بِنَا نُوَاسِكَ . قَالَ فَقُلْتُ حِينَ قَرَأْتُهَا وَهَذِهِ أَيْضًا مِنَ الْبَلاَءِ . فَتَيَامَمْتُ بِهَا التَّنُّورَ فَسَجَرْتُهَا بِهَا حَتَّى إِذَا مَضَتْ أَرْبَعُونَ مِنَ الْخَمْسِينَ وَاسْتَلْبَثَ الْوَحْىُ إِذَا رَسُولُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْتِينِي فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُكَ أَنْ تَعْتَزِلَ امْرَأَتَكَ . قَالَ فَقُلْتُ أُطَلِّقُهَا أَمْ مَاذَا أَفْعَلُ قَالَ لاَ بَلِ اعْتَزِلْهَا فَلاَ تَقْرَبَنَّهَا - قَالَ - فَأَرْسَلَ إِلَى صَاحِبَىَّ بِمِثْلِ ذَلِكَ - قَالَ - فَقُلْتُ لاِمْرَأَتِي الْحَقِي بِأَهْلِكِ فَكُونِي عِنْدَهُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللَّهُ فِي هَذَا الأَمْرِ - قَالَ - فَجَاءَتِ امْرَأَةُ هِلاَلِ بْنِ أُمَيَّةَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ هِلاَلَ بْنَ أُمَيَّةَ شَيْخٌ ضَائِعٌ لَيْسَ لَهُ خَادِمٌ فَهَلْ تَكْرَهُ أَنْ أَخْدُمَهُ قَالَ " لاَ وَلَكِنْ لاَ يَقْرَبَنَّكِ " . فَقَالَتْ إِنَّهُ وَاللَّهِ مَا بِهِ حَرَكَةٌ إِلَى شَىْءٍ وَوَاللَّهِ مَا زَالَ يَبْكِي مُنْذُ كَانَ مِنْ أَمْرِهِ مَا كَانَ إِلَى يَوْمِهِ هَذَا . قَالَ فَقَالَ لِي بَعْضُ أَهْلِي لَوِ اسْتَأْذَنْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي امْرَأَتِكَ فَقَدْ أَذِنَ لاِمْرَأَةِ هِلاَلِ بْنِ أُمَيَّةَ أَنْ تَخْدُمَهُ - قَالَ - فَقُلْتُ لاَ أَسْتَأْذِنُ فِيهَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَمَا يُدْرِينِي مَاذَا يَقُولُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اسْتَأْذَنْتُهُ فِيهَا وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌّ - قَالَ - فَلَبِثْتُ بِذَلِكَ عَشْرَ لَيَالٍ فَكَمُلَ لَنَا خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ حِينَ نُهِيَ عَنْ كَلاَمِنَا - قَالَ - ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلاَةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِنَا فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ عَلَى الْحَالِ الَّتِي ذَكَرَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنَّا قَدْ ضَاقَتْ عَلَىَّ نَفْسِي وَضَاقَتْ عَلَىَّ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِخٍ أَوْفَى عَلَى سَلْعٍ يَقُولُ بِأَعْلَى صَوْتِهِ يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أَبْشِرْ - قَالَ - فَخَرَرْتُ سَاجِدًا وَعَرَفْتُ أَنْ قَدْ جَاءَ فَرَجٌ . - قَالَ - فَآذَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم النَّاسَ بِتَوْبَةِ اللَّهِ عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاَةَ الْفَجْرِ فَذَهَبَ النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا فَذَهَبَ قِبَلَ صَاحِبَىَّ مُبَشِّرُونَ وَرَكَضَ رَجُلٌ إِلَىَّ فَرَسًا وَسَعَى سَاعٍ مِنْ أَسْلَمَ قِبَلِي وَأَوْفَى الْجَبَلَ فَكَانَ الصَّوْتُ أَسْرَعَ مِنَ الْفَرَسِ فَلَمَّا جَاءَنِي الَّذِي سَمِعْتُ صَوْتَهُ يُبَشِّرُنِي فَنَزَعْتُ لَهُ ثَوْبَىَّ فَكَسَوْتُهُمَا إِيَّاهُ بِبِشَارَتِهِ وَاللَّهِ مَا أَمْلِكُ غَيْرَهُمَا يَوْمَئِذٍ وَاسْتَعَرْتُ ثَوْبَيْنِ . فَلَبِسْتُهُمَا فَانْطَلَقْتُ أَتَأَمَّمُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَتَلَقَّانِي النَّاسُ فَوْجًا فَوْجًا يُهَنِّئُونِي بِالتَّوْبَةِ وَيَقُولُونَ لِتَهْنِئْكَ تَوْبَةُ اللَّهِ عَلَيْكَ . حَتَّى دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم جَالِسٌ فِي الْمَسْجِدِ وَحَوْلَهُ النَّاسُ فَقَامَ طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ يُهَرْوِلُ حَتَّى صَافَحَنِي وَهَنَّأَنِي وَاللَّهِ مَا قَامَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ غَيْرُهُ . قَالَ فَكَانَ كَعْبٌ لاَ يَنْسَاهَا لِطَلْحَةَ . قَالَ كَعْبٌ فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُورِ وَيَقُولُ " أَبْشِرْ بِخَيْرِ يَوْمٍ مَرَّ عَلَيْكَ مُنْذُ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ " . قَالَ فَقُلْتُ أَمِنْ عِنْدِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمْ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ فَقَالَ " لاَ بَلْ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ " . وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ كَأَنَّ وَجْهَهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ - قَالَ - وَكُنَّا نَعْرِفُ ذَلِكَ - قَالَ - فَلَمَّا جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَمْسِكْ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ " . قَالَ فَقُلْتُ فَإِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِيَ الَّذِي بِخَيْبَرَ - قَالَ - وَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ إِنَّمَا أَنْجَانِي بِالصِّدْقِ وَإِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ لاَ أُحَدِّثَ إِلاَّ صِدْقًا مَا بَقِيتُ - قَالَ - فَوَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ أَنَّ أَحَدًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ أَبْلاَهُ اللَّهُ فِي صِدْقِ الْحَدِيثِ مُنْذُ ذَكَرْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى يَوْمِي هَذَا أَحْسَنَ مِمَّا أَبْلاَنِي اللَّهُ بِهِ وَاللَّهِ مَا تَعَمَّدْتُ كَذْبَةً مُنْذُ قُلْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى يَوْمِي هَذَا وَإِنِّي لأَرْجُو أَنْ يَحْفَظَنِيَ اللَّهُ فِيمَا بَقِيَ . قَالَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ( لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ * وَعَلَى الثَّلاَثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ) حَتَّى بَلَغَ ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ) قَالَ كَعْبٌ وَاللَّهِ مَا أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَىَّ مِنْ نِعْمَةٍ قَطُّ بَعْدَ إِذْ هَدَانِي اللَّهُ لِلإِسْلاَمِ أَعْظَمَ فِي نَفْسِي مِنْ صِدْقِي رَسُولَ اللَّهُ صلى الله عليه وسلم أَنْ لاَ أَكُونَ كَذَبْتُهُ فَأَهْلِكَ كَمَا هَلَكَ الَّذِينَ كَذَبُوا إِنَّ اللَّهَ قَالَ لِلَّذِينَ كَذَبُوا حِينَ أَنْزَلَ الْوَحْىَ شَرَّ مَا قَالَ لأَحَدٍ وَقَالَ اللَّهُ ( سَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا انْقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ إِنَّهُمْ رِجْسٌ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ * يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنْ تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَرْضَى عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ) قَالَ كَعْبٌ كُنَّا خُلِّفْنَا أَيُّهَا الثَّلاَثَةُ عَنْ أَمْرِ أُولَئِكَ الَّذِينَ قَبِلَ مِنْهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ حَلَفُوا لَهُ فَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَأَرْجَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمْرَنَا حَتَّى قَضَى اللَّهُ فِيهِ فَبِذَلِكَ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ( وَعَلَى الثَّلاَثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا) وَلَيْسَ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ مِمَّا خُلِّفْنَا تَخَلُّفَنَا عَنِ الْغَزْوِ وَإِنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إِيَّانَا وَإِرْجَاؤُهُ أَمْرَنَا عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ وَاعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَبِلَ مِنْهُ .
وَحَدَّثَنِيهِ مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا حُجَيْنُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، بِإِسْنَادِ يُونُسَ عَنِ الزُّهْرِيِّ، سَوَاءً .
وَحَدَّثَنِيهِ مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا حُجَيْنُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، بِإِسْنَادِ يُونُسَ عَنِ الزُّهْرِيِّ، سَوَاءً .
হাদীস নং: ৬৭৬১
আন্তর্জাতিক নং: ২৭৬৯-৩
৩৬. কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) ও তার দুই সঙ্গীর তাওবার বিবরণ
৬৭৬১। আব্দ ইবনে হুমায়দ (রাহঃ) ......... আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব ইবনে মালিক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) যিনি অন্ধ হয়ে যাবার পর কাব (রাযিঃ) এর চালক ছিলেন, বলেছেন, তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে শরীক না হয়ে গৃহে বসে থাকার সময় কা'ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) কে আমি একথা বলতে শুনেছি। অতঃপর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে দিকে যুদ্ধ করার জন্য যেতেন সাধারণতঃ অন্য স্থান দিয়ে প্রস্থান করতেন (তিনি আলোচনায় ঐ জায়গার কথা উল্লেখ না করে অন্য জায়গার কথা উল্লেখ করতেন)। তবে এ যুদ্ধের কথা পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছিলেন। যুহরীর ভ্রাতুষ্পুত্রের এ হাদীসের মধ্যে আবু খায়সামার কথা এবং নবী (ﷺ) এর সঙ্গে তাঁর মিলিত হওয়ার কথা উল্লেখ নেই।
باب حَدِيثِ تَوْبَةِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ وَصَاحِبَيْهِ
وَحَدَّثَنِي عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنِي يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ سَعْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ، اللَّهِ بْنِ مُسْلِمٍ ابْنُ أَخِي الزُّهْرِيِّ عَنْ عَمِّهِ، مُحَمَّدِ بْنِ مُسْلِمٍ الزُّهْرِيِّ أَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ، بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ عُبَيْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، وَكَانَ، قَائِدَ كَعْبٍ حِينَ عَمِيَ قَالَ سَمِعْتُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ يُحَدِّثُ حَدِيثَهُ حِينَ تَخَلَّفَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ . وَسَاقَ الْحَدِيثَ وَزَادَ فِيهِ عَلَى يُونُسَ فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَلَّمَا يُرِيدُ غَزْوَةً إِلاَّ وَرَّى بِغَيْرِهَا حَتَّى كَانَتْ تِلْكَ الْغَزْوَةُ . وَلَمْ يَذْكُرْ فِي حَدِيثِ ابْنِ أَخِي الزُّهْرِيِّ أَبَا خَيْثَمَةَ وَلُحُوقَهُ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم .
হাদীস নং: ৬৭৬২
আন্তর্জাতিক নং: ২৭৬৯-৪
৩৬. কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) ও তার দুই সঙ্গীর তাওবার বিবরণ
৬৭৬২। সালামা ইবনে শাবীব (রাহঃ) ......... উবাইদুল্লাহ ইবনে কাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। কাব (রাযিঃ) চক্ষু রোগে আক্রান্ত হবার পর উবাইদুল্লাহ তাঁকে হাত ধরে নিয়ে যেতেন। উবাইদুল্লাহ (রাযিঃ) তার কওমের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবীদের হাদীস অধিক সংরক্ষণকারী ছিলেন। তিনি বলেন যে, তিন ব্যক্তির তাওবা আল্লাহ কবুল করেছিলেন, আমার পিতা কাব ইবনে মালিক (রাযিঃ) ঐ তিন ব্যক্তির একজন ছিলেন। আমি তাকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যত যুদ্ধ করেছেন এর মধ্যে তিনি দুটি ব্যতীত আর কোন যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে পেছনে থাকেন নি। তারপর তিনি আগের অনুরূপ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সৈন্য সামন্ত নিয়ে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের সংখ্যা দশ হাজারের চেয়েও অধিক ছিল। কোন তালিকায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করার অবকাশ ছিল না।
باب حَدِيثِ تَوْبَةِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ وَصَاحِبَيْهِ
وَحَدَّثَنِي سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ، حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ أَعْيَنَ، حَدَّثَنَا مَعْقِلٌ، - وَهُوَ ابْنُ عُبَيْدِ اللَّهِ - عَنِ الزُّهْرِيِّ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ عَمِّهِ، عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبٍ وَكَانَ قَائِدَ كَعْبٍ حِينَ أُصِيبَ بَصَرُهُ وَكَانَ أَعْلَمَ قَوْمِهِ وَأَوْعَاهُمْ لأَحَادِيثِ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ سَمِعْتُ أَبِي كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ وَهُوَ أَحَدُ الثَّلاَثَةِ الَّذِينَ تِيبَ عَلَيْهِمْ يُحَدِّثُ أَنَّهُ لَمْ يَتَخَلَّفْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا قَطُّ غَيْرَ غَزْوَتَيْنِ . وَسَاقَ الْحَدِيثَ وَقَالَ فِيهِ وَغَزَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِنَاسٍ كَثِيرٍ يَزِيدُونَ عَلَى عَشْرَةِ آلاَفٍ وَلاَ يَجْمَعُهُمْ دِيوَانُ حَافِظٍ .