আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

المسند الصحيح لمسلم

৪৭- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন...

হাদীস নং: ৬১৮৫
আন্তর্জাতিক নং: ২৫০৩
৪১. জা’ফার ইবনে আবু তালিব, আসমা বিনতে উমায়স (রাযিঃ) ও তাদের নৌযান সঙ্গীদের ফযীলত
৬১৮৫। আব্দুল্লাহ ইবনে বাররাদ আশআরী ও মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল হামদানী (রাহঃ) ......... আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হিজরতের খবর পৌছল তখন আমরা ইয়ামানে ছিলাম। তখন আমরা আমি ও আমার দুই ভাই তার কাছে হিজরত করার জন্য রওয়ানা হলাম। আমি ছিলাম সে দুইজনের ছোট। তাঁদের একজনের নাম ছিল আবু বুরদাহ (রাযিঃ) অপরজন ছিলেন আবু রুহম (রাযিঃ)। তিনি হয়ত বলেছেন,আমাদের গোত্রের (কিছু লোক) তিপ্পান্ন জন কিংবা বায়ান্নজন লোক ছিল। আমরা একটি (পালের) জাহাজে আরোহণ করলাম। জাহাজটি আমাদের নিয়ে আবিসিনিয়ায় গিয়ে উপনীত হল, যেখানের বাদশাহ ছিলেন নাজ্জাশী।

তখন আমরা তার কাছে জাফর ইবনে আবু তালিব (রাযিঃ) ও তাঁর সঙ্গীদের দেখা পেলাম। এরপর জাফর (রাযিঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন। এবং এখানে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আপনারা আমাদের সঙ্গে অবস্থান করুন। তিনি বলেন, আমরা তার সঙ্গে থাকতে লাগলাম, অবশেষে আমরা সবাই একত্রে ফিরে এলাম।

তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খায়বর বিজয়ের সময়ে মিলিত হলাম। তিনি আমাদেরও গনিমতের মালের অংশ দিলেন অথবা তিনি বলেছেন, তিনি তা থেকে আমাদেরও দান করেছেন। খায়বর বিজয়ে অনুপস্থিত কাউকে তিনি হিসসা দেননি। শুধু যারা তার সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন (তাদের দিয়েছেন) তাদের ব্যতিত কাউকে গণিমতের হিসসা দেননি। তবে জাফর ও তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে আমাদের জাহাজে আরোহী সাথীদেরও তাঁদের সঙ্গে হিসসা প্রদান করেছিলেন।

বর্ণনাকারী বলেন, লোকদের কেউ কেউ আমাদের অর্থাৎ জাহাজের আরোহীদের বলে বেড়াত যে, আমরা অগ্রগামী হিজরতকারী। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমাদের নৌকায় সফর সঙ্গিনী আসমা বিনতে উমায়স (রাযিঃ) নবী (ﷺ) এর সহধর্মিনী হাফসা (রাযিঃ) এর সঙ্গে দেখা করার জন্য গমন করেন। যাঁরা নাজ্জাশীর কাছে হিজরত করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতমা।

ইত্যবসরে উমর (রাযিঃ) হাফসার কাছে এলেন। আসমা বিনতে উমায়স (রাযিঃ) তখন তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তখন উমর (রাযিঃ) আসমাকে দেখে বললেন, ইনি কে? হাফসা (রাযিঃ) বললেন, ইনি আসমা বিনতে উমায়স। উমর (রাযিঃ) বললেন, এই কি হাবশায় হিজরতকারিণী, জাহাজে আরোহণকারিণী? তখন আসমা (রাযিঃ) বললেন, জ্বী, হ্যাঁ। উমর (রাযিঃ) বললেন, হিজরতে আমরা তোমাদের চাইতে অগ্রগামী। সুতরাং তোমাদের তুলনায় আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ব্যাপারে অধিকতর হকদার।

তখন আসমা (রাযিঃ) রাগাম্বিত হলেন এবং বললেন, হে উমর। কথাটি সঠিক নয়। কখনো নয়। আল্লাহর কসম! তোমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহচর্যে ছিলে। তিনি তোমাদের ক্ষুধার্তদের আহার দান করতেন, জ্ঞানহীনদের জ্ঞানের আলো বিলাতেন। আর আমরা আবিসিনিয়ায় প্রবাসে অনাত্মীয়দের মাঝে প্রতিকুল পরিবেশে অবস্থান করছিলাম। এটা ছিল কেবল আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টির জন্যই। আল্লাহর কসম! তুমি যা বলেছ তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে আলোচনা না করা পর্যন্ত আমি কোন আহার গ্রহণ করব না এবং পানীয় দ্রব্য স্পর্শ করব না। আমরা (বিদেশ বিভুঁইয়ে) সারাক্ষণ বিপদ ও ভয়ভীতির মধ্যে থাকতাম।

আমি বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে পেশ করব এবং জিজ্ঞাসা করব। আল্লাহর কসম! আমি মিথ্যা বলব না, কোন কিছু বিকৃত করব না এবং প্রকৃত ঘটনার চাইতে বাড়িয়ে বলব না। বর্ণনাকারী বলেন, যখন নবী (ﷺ) আসলেন তখন আসমা (রাযিঃ) বললেন, ইয়া নবীয়্যাল্লাহ! উমর (রাযিঃ) এই এই বলেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আমার প্রতি তোমাদের চেয়ে তার হক বেশী নেই। কেননা তার ও তার সঙ্গীদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র হিজরত। আর তোমাদের জাহাজ আরোহীদের জন্য রয়েছে দুটি হিজরত।

আসমা (রাযিঃ) বলেন, আমি আবু মুসা (রাযিঃ) ও জাহাজের আরোহীদের দলে দলে এসে আমার কাছে এই হাদীস খানি জিজ্ঞাসা করতে দেখেছি। তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেছেন তাঁদের কাছে এর চাইতে অধিকতর আনন্দদায়ক ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কোন বিষয় দুনিয়াতে ছিল না। আবু বুরদাহ (রাযিঃ) বলেন যে, আসমা (রাযিঃ) বলেছেন, আমি আবু মুসা (রাযিঃ) কে দেখেছি, তিনি আমার কাছ থেকে বারবার এই হাদীসখানি শুনতেন।
باب مِنْ فَضَائِلِ جَعْفَرِ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَأَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ وَأَهْلِ سَفِينَتِهِمْ رضى
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بَرَّادٍ الأَشْعَرِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ الْهَمْدَانِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ حَدَّثَنِي بُرَيْدٌ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ بَلَغَنَا مَخْرَجُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ بِالْيَمَنِ فَخَرَجْنَا مُهَاجِرِينَ إِلَيْهِ أَنَا وَأَخَوَانِ لِي أَنَا أَصْغَرُهُمَا أَحَدُهُمَا أَبُو بُرْدَةَ وَالآخَرُ أَبُو رُهْمٍ - إِمَّا قَالَ بِضْعًا وَإِمَّا قَالَ ثَلاَثَةً وَخَمْسِينَ أَوِ اثْنَيْنِ وَخَمْسِينَ رَجُلاً مِنْ قَوْمِي - قَالَ فَرَكِبْنَا سَفِينَةً فَأَلْقَتْنَا سَفِينَتُنَا إِلَى النَّجَاشِيِّ بِالْحَبَشَةِ فَوَافَقْنَا جَعْفَرَ بْنَ أَبِي طَالِبٍ وَأَصْحَابَهُ عِنْدَهُ فَقَالَ جَعْفَرٌ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَعَثَنَا هَا هُنَا وَأَمَرَنَا بِالإِقَامَةِ فَأَقِيمُوا مَعَنَا . فَأَقَمْنَا مَعَهُ حَتَّى قَدِمْنَا جَمِيعًا - قَالَ - فَوَافَقْنَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ افْتَتَحَ خَيْبَرَ فَأَسْهَمَ لَنَا - أَوْ قَالَ أَعْطَانَا مِنْهَا - وَمَا قَسَمَ لأَحَدٍ غَابَ عَنْ فَتْحِ خَيْبَرَ مِنْهَا شَيْئًا إِلاَّ لِمَنْ شَهِدَ مَعَهُ إِلاَّ لأَصْحَابِ سَفِينَتِنَا مَعَ جَعْفَرٍ وَأَصْحَابِهِ قَسَمَ لَهُمْ مَعَهُمْ - قَالَ - فَكَانَ نَاسٌ مِنَ النَّاسِ يَقُولُونَ لَنَا - يَعْنِي لأَهْلِ السَّفِينَةِ - نَحْنُ سَبَقْنَاكُمْ بِالْهِجْرَةِ .

قَالَ فَدَخَلَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ - وَهِيَ مِمَّنْ قَدِمَ مَعَنَا - عَلَى حَفْصَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم زَائِرَةً وَقَدْ كَانَتْ هَاجَرَتْ إِلَى النَّجَاشِيِّ فِيمَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِ فَدَخَلَ عُمَرُ عَلَى حَفْصَةَ وَأَسْمَاءُ عِنْدَهَا فَقَالَ عُمَرُ حِينَ رَأَى أَسْمَاءَ مَنْ هَذِهِ قَالَتْ أَسْمَاءُ بِنْتُ عُمَيْسٍ . قَالَ عُمَرُ الْحَبَشِيَّةُ هَذِهِ الْبَحْرِيَّةُ هَذِهِ فَقَالَتْ أَسْمَاءُ نَعَمْ . فَقَالَ عُمَرُ سَبَقْنَاكُمْ بِالْهِجْرَةِ فَنَحْنُ أَحَقُّ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْكُمْ . فَغَضِبَتْ وَقَالَتْ كَلِمَةً كَذَبْتَ يَا عُمَرُ كَلاَّ وَاللَّهِ كُنْتُمْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُطْعِمُ جَائِعَكُمْ وَيَعِظُ جَاهِلَكُمْ وَكُنَّا فِي دَارِ أَوْ فِي أَرْضِ الْبُعَدَاءِ الْبُغَضَاءِ فِي الْحَبَشَةِ وَذَلِكَ فِي اللَّهِ وَفِي رَسُولِهِ وَايْمُ اللَّهِ لاَ أَطْعَمُ طَعَامًا وَلاَ أَشْرَبُ شَرَابًا حَتَّى أَذْكُرَ مَا قُلْتَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ كُنَّا نُؤْذَى وَنُخَافُ وَسَأَذْكُرُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَسْأَلُهُ وَوَاللَّهِ لاَ أَكْذِبُ وَلاَ أَزِيغُ وَلاَ أَزِيدُ عَلَى ذَلِكَ . قَالَ فَلَمَّا جَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّ عُمَرَ قَالَ كَذَا وَكَذَا . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَيْسَ بِأَحَقَّ بِي مِنْكُمْ وَلَهُ وَلأَصْحَابِهِ هِجْرَةٌ وَاحِدَةٌ وَلَكُمْ أَنْتُمْ أَهْلَ السَّفِينَةِ هِجْرَتَانِ " . قَالَتْ فَلَقَدْ رَأَيْتُ أَبَا مُوسَى وَأَصْحَابَ السَّفِينَةِ يَأْتُونِي أَرْسَالاً يَسْأَلُونِي عَنْ هَذَا الْحَدِيثِ مَا مِنَ الدُّنْيَا شَىْءٌ هُمْ بِهِ أَفْرَحُ وَلاَ أَعْظَمُ فِي أَنْفُسِهِمْ مِمَّا قَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَ أَبُو بُرْدَةَ فَقَالَتْ أَسْمَاءُ فَلَقَدْ رَأَيْتُ أَبَا مُوسَى وَإِنَّهُ لَيَسْتَعِيدُ هَذَا الْحَدِيثَ مِنِّي .