আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ

المسند الصحيح لمسلم

৪৭- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন...

হাদীস নং: ৬১৮০
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৯৭
৩৮. আবু মুসা আশআরী ও আবু আমির আশআরী (রাযিঃ) এর ফযীলত
৬১৮০। আবু আমির আশআরী ও আবু কুরায়ব (রাহঃ) ......... আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) এর খিদমতে ছিলাম। সে সময় তিনি মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী জিইররানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিলাল (রাযিঃ)ও ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এক আরব বেদুঈন এল। সে বলল, ইয়া মুহাম্মাদ! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা কি পুরন করবেন না? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেনঃ “তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর”। তখন সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলল, আপনি তো অনেকবারই বলেছেনঃ “সুসংবাদ গ্রহণ কর”। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আবু মুসা ও বিলাল (রাযিঃ) এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, দেখ এই ব্যক্তি সুসংবাদ প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং তোমরা দুইজন তা গ্রহণ কর।

তখন তারা দুইজনে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা কবুল করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি পানি ভর্তি পেয়ালা আনালেন। তিনি তাঁর দুই হাত ও মুখমণ্ডল ধুলেন এবং তাতে কুলি করলেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা দুইজনে এ থেকে পানি পান কর এবং তোমাদের মুখমণ্ডলে ও বক্ষদেশে ঢেলে দাও, আর তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা দুইজনে পেয়ালাটি গ্রহণ করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশ মোতাবেক কাজ করলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা (রাযিঃ) পর্দার আড়াল থেকে তাদের ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্য তোমাদের পাত্রে কিন্তু পানি রেখে দাও। তখন তারা তাঁর জন্য সামান্য পরিমাণ উদ্ধৃত্ত রাখলেন।
باب مِنْ فَضَائِلِ أَبِي مُوسَى وَأَبِي عَامِرٍ الأَشْعَرِيَّيْنِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا
حَدَّثَنَا أَبُو عَامِرٍ الأَشْعَرِيُّ، وَأَبُو كُرَيْبٍ جَمِيعًا عَنْ أَبِي أُسَامَةَ، قَالَ أَبُو عَامِرٍ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا بُرَيْدٌ، عَنْ جَدِّهِ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ نَازِلٌ بِالْجِعْرَانَةِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ وَمَعَهُ بِلاَلٌ فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ أَلاَ تُنْجِزُ لِي يَا مُحَمَّدُ مَا وَعَدْتَنِي فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَبْشِرْ " . فَقَالَ لَهُ الأَعْرَابِيُّ أَكْثَرْتَ عَلَىَّ مِنْ " أَبْشِرْ " . فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى أَبِي مُوسَى وَبِلاَلٍ كَهَيْئَةِ الْغَضْبَانِ فَقَالَ " إِنَّ هَذَا قَدْ رَدَّ الْبُشْرَى فَاقْبَلاَ أَنْتُمَا " . فَقَالاَ قَبِلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ . ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقَدَحٍ فِيهِ مَاءٌ فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيهِ وَمَجَّ فِيهِ ثُمَّ قَالَ " اشْرَبَا مِنْهُ وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوهِكُمَا وَنُحُورِكُمَا وَأَبْشِرَا " . فَأَخَذَا الْقَدَحَ فَفَعَلاَ مَا أَمَرَهُمَا بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَنَادَتْهُمَا أُمُّ سَلَمَةَ مِنْ وَرَاءِ السِّتْرِ أَفْضِلاَ لأُمِّكُمَا مِمَّا فِي إِنَائِكُمَا . فَأَفْضَلاَ لَهَا مِنْهُ طَائِفَةً .
হাদীস নং: ৬১৮১
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৯৮
৩৮. আবু মুসা আশআরী ও আবু আমির আশআরী (রাযিঃ) এর ফযীলত
৬১৮১। আব্দুল্লাহ ইবনে বাররাদ আবু আমির আশআরী ও আবু কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রাহঃ) ......... আবু বুরদাহ (রাযিঃ) এর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ﷺ) যখন হুনায়ন যুদ্ধ সম্পন্ন করেন তখন আবু আমির (রাযিঃ) কে একটি বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করা আওতাস’ অভিযানে প্রেরণ করেন। তিনি দুরায়দ ইবনে সিম্মাহ এর মুখোমুখি হলে। দুরায়দ নিহত হল এবং আল্লাহ তাঁর বাহিনীকে পরাস্থ করলেন। এরপর আবু মুসা (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে আবু আমিরের সঙ্গে পাঠিয়ে ছিলেন। আবু আমিরের হাঁটুতে তীরের আঘাত লেগেছিল। জুছাম গোত্রের জনৈক ব্যক্তি সেই তীরটি নিক্ষেপ করেছিল। এই তীরটি তাঁর ঘাড়ে বিদ্ধ হয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম, চাচাজান! কে আপনাকে তীর বিদ্ধ করেছে? তখন আবু আমির ইশারায় আবু মুসা (রাযিঃ) কে জানালেন, ঐ আমার ঘাতক যাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ, সেই আমাকে তীরবিদ্ধ করেছে।

আবু মুসা (রাযিঃ) বলেন, আমি তাকে আক্রমণ করে হত্যা করার প্রতিজ্ঞা করলাম। আমি তাঁর মুখোমুখি হলাম, সে আমাকে দেখা মাত্রই পালিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাকে ধাওয়া করলাম এবং বলছিলাম, হে বেহায়া, বেশরম! পালাচ্ছ কেন? তুমি কি আরবী নও? বীরত্ব আছে তো দাঁড়িয়ে যাও, ভাগছ কেন? তখন সে থামল। এরপর সে ও আমি কাছাকাছি হলাম। আমরা পরস্পরে দুইবার আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ করলাম। আমি তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে ধরাশায়ী করলাম এবং শেষ অবধী হত্যা করলাম। এরপর আমি আবু আমির (রাযিঃ) এর কাছে ফিরে এলাম এবং তাকে বললাম, আল্লাহ আপনার ঘাতককে হত্যা করেছেন।

তখন আবু আমির (রাযিঃ) বললেন, এই তীরটি বের করে নাও। আমি সেটি তুলে ফেললাম। তখন তা থেকে পানি বের হচ্ছিল। এরপর তিনি বললেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে যাও এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দিও। আর তাঁর কাছে গিয়ে আরয করবে, আবু আমির আপনাকে তাঁর জন্য মাগফিরাতের দুআ চেয়েছেন। তিনি (আবু মুসা) বলেন, আবু আমির আমাকে লোকের উপর কর্মকর্তা (শাসক) নিয়োগ করলেন এবং কিছু সময় এ অবস্থায় থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করলেন।

আমি নবী (ﷺ) এর কাছে গেলাম এবং তাঁর খিদমতে হাজির হলাম। তখন তিনি চাটাইপাতা খাটের উপর ছিলেন এবং ঐ খাটের উপর চাঁদর বিছানো ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পিঠে ও পাজরে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। এরপর আমি তাঁর কাছে আমাদের ও আবু আমিরের খবর দিলাম এবং আমি তাকে বললাম, তিনি (আবু আমির) বলেছেন, তাঁর জন্য আপনাকে মাগফিরাতের দুআ করতে।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পানি আনালেন এবং তা দিয়ে উযু করলেন। এরপর দু’হাত দুলে বললেনঃ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِي عَامِرٍ “হে আল্লাহ! উবাইদ আবু আমিরকে ক্ষমা করে দাও” (হাত উচু করার কারণে) তখন আমি তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখছিলাম। পুনরায় তিনি বললেনঃ اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيرٍ مِنْ خَلْقِكَ أَوْ مِنَ النَّاسِ “হে আল্লাহ! তাকে কিয়ামতের দিন তোমার মাখলুকের অনেকের উপরে অথবা অনেক মানুষের উপরে স্থান দিও”।

তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্যও মাগফিরাতের দুআ করুন। তখন নবী (ﷺ) বললেনঃ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ ذَنْبَهُ وَأَدْخِلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُدْخَلاً كَرِيمًا “হে আল্লাহ! আব্দুল্লাহ ইবনে কায়েসের গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং তাকে কিয়ামত দিবসে সম্মানজনক জান্নাতে প্রবেশ করাও।“ আবু বুরদাহ (রাযিঃ) বলেন, একটি দুআ আবু আমিরের জন্য এবং অন্যটি আবু মুসা আশআরীর জন্য।
باب مِنْ فَضَائِلِ أَبِي مُوسَى وَأَبِي عَامِرٍ الأَشْعَرِيَّيْنِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بَرَّادٍ أَبُو عَامِرٍ الأَشْعَرِيُّ، وَأَبُو كُرَيْبٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ - وَاللَّفْظُ لأَبِي عَامِرٍ - قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ بُرَيْدٍ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ لَمَّا فَرَغَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ حُنَيْنٍ بَعَثَ أَبَا عَامِرٍ عَلَى جَيْشٍ إِلَى أَوْطَاسٍ فَلَقِيَ دُرَيْدَ بْنَ الصِّمَّةِ فَقُتِلَ دُرَيْدٌ وَهَزَمَ اللَّهُ أَصْحَابَهُ فَقَالَ أَبُو مُوسَى وَبَعَثَنِي مَعَ أَبِي عَامِرٍ - قَالَ - فَرُمِيَ أَبُو عَامِرٍ فِي رُكْبَتِهِ رَمَاهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي جُشَمٍ بِسَهْمٍ فَأَثْبَتَهُ فِي رُكْبَتِهِ فَانْتَهَيْتُ إِلَيْهِ فَقُلْتُ يَا عَمِّ مَنْ رَمَاكَ فَأَشَارَ أَبُو عَامِرٍ إِلَى أَبِي مُوسَى فَقَالَ إِنَّ ذَاكَ قَاتِلِي تَرَاهُ ذَلِكَ الَّذِي رَمَانِي . قَالَ أَبُو مُوسَى فَقَصَدْتُ لَهُ فَاعْتَمَدْتُهُ فَلَحِقْتُهُ فَلَمَّا رَآنِي وَلَّى عَنِّي ذَاهِبًا فَاتَّبَعْتُهُ وَجَعَلْتُ أَقُولُ لَهُ أَلاَ تَسْتَحْيِي أَلَسْتَ عَرَبِيًّا أَلاَ تَثْبُتُ فَكَفَّ فَالْتَقَيْتُ أَنَا وَهُوَ فَاخْتَلَفْنَا أَنَا وَهُوَ ضَرْبَتَيْنِ فَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ فَقَتَلْتُهُ ثُمَّ رَجَعْتُ إِلَى أَبِي عَامِرٍ فَقُلْتُ إِنَّ اللَّهَ قَدْ قَتَلَ صَاحِبَكَ . قَالَ فَانْزِعْ هَذَا السَّهْمَ فَنَزَعْتُهُ فَنَزَا مِنْهُ الْمَاءُ فَقَالَ يَا ابْنَ أَخِي انْطَلِقْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَقْرِئْهُ مِنِّي السَّلاَمَ وَقُلْ لَهُ يَقُولُ لَكَ أَبُو عَامِرٍ اسْتَغْفِرْ لِي . قَالَ وَاسْتَعْمَلَنِي أَبُو عَامِرٍ عَلَى النَّاسِ وَمَكَثَ يَسِيرًا ثُمَّ إِنَّهُ مَاتَ فَلَمَّا رَجَعْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم دَخَلْتُ عَلَيْهِ وَهُوَ فِي بَيْتٍ عَلَى سَرِيرٍ مُرْمَلٍ وَعَلَيْهِ فِرَاشٌ وَقَدْ أَثَّرَ رِمَالُ السَّرِيرِ بِظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَنْبَيْهِ فَأَخْبَرْتُهُ بِخَبَرِنَا وَخَبَرِ أَبِي عَامِرٍ وَقُلْتُ لَهُ قَالَ قُلْ لَهُ يَسْتَغْفِرْ لِي . فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِمَاءٍ فَتَوَضَّأَ مِنْهُ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ " اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعُبَيْدٍ أَبِي عَامِرٍ " . حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ إِبْطَيْهِ ثُمَّ قَالَ " اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَوْقَ كَثِيرٍ مِنْ خَلْقِكَ أَوْ مِنَ النَّاسِ " . فَقُلْتُ وَلِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَاسْتَغْفِرْ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ ذَنْبَهُ وَأَدْخِلْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُدْخَلاً كَرِيمًا " . قَالَ أَبُو بُرْدَةَ إِحْدَاهُمَا لأَبِي عَامِرٍ وَالأُخْرَى لأَبِي مُوسَى .