আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ
المسند الصحيح لمسلم
৪৭- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ৪ টি
অনুসন্ধান করুন...
হাদীস নং: ৬১৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৭৩-১
২৮. আবু যর (রাযিঃ) এর ফযীলত
৬১৩৫। হাদ্দাব ইবনে খালিদ আযদী (রাহঃ) ......... আবু যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আমাদের গিফার গোত্র থেকে বের হলাম। তারা হারাম মাসগুলোকে হালাল গণ্য করত। আমি আমার ভাই উনায়স এবং আমাদের মা সহ বের হলাম এবং আমরা আমাদের এক মামার কাছে উঠলাম। আমাদের মামা খুব সম্মান দেখালেন এবং আমাদের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করলেন। এতে তাঁর গোত্রের লোকেরা আমাদের প্রতি হিংসা করতে লাগল। তারা বলল, তুমি যখন তোমার পরিবার থেকে বের হও তখন উনায়স তোমার অনুপস্থিতিতে তাদের কাছে যাতায়াত করে।
এরপর আমাদের মামা আসলেন এবং তাকে যা বলা হয়েছে তিনি তা আমাদের নিকট প্রকাশ করে দিলেন। তখন আমি বললাম আপনি আমাদের সাথে অতীতে যে সদ্ব্যবহার করেছেন তাকে ম্লান করে দিলেন। এরপর আপনার সঙ্গে আমাদের একত্রে থাকার অবকাশ নেই। তারপর আমরা আমাদের উটগুলোকে নিকটবর্তী করলাম এবং তাদের উপর আরোহণ করলাম। তখন আমাদের মামা তাঁর কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে কাঁদতে শুরু করলেন। আমরা রওয়ানা হয়ে মক্কার নিকটে অবতরণ করলাম। উনায়স আমাদের পশুগুলো এবং সে পরিমাণ পশুর মধ্যে (কবিতা রচনার) বাজি ধরল। তারপর তারা উভয়ে এক গণকের কাছে গেল।
গণক উনায়সকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করল। এরপর উনায়স আমাদের উটগুলো এবং তার সমপরিমাণ উট নিয়ে আমাদের নিকট ফিরে এল। আবু যর (রাযিঃ) বললেন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে সাক্ষাতের তিন বছর পূর্বে নামায আদায় করেছি। আমি (রাবী) বললাম, কার জন্যে? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্যে। আমি (রাবী) “বললাম, কোন দিকে মুখ ফিরাতেন? তিনি বললেন, আমার মহান প্রতিপালক যে দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সে দিকে মুখ ফিরাতাম। আমি ইশার নামায আদায় করতে করতে রাতের শেষ অংশে নিদ্রার চাদরে ঢলে পড়তাম, যতক্ষণ না সূর্য আমার উপর পড়ত।
তারপর উনায়স (রাযিঃ) বললেন, মক্কায় আমার একটু প্রয়োজন আছে। কাজেই আপনি আমার সংসার তত্ত্বাবধান করবেন। তারপর উনায়স (রাযিঃ) চলে গেল এবং মক্কায় পৌছলো এবং সে বিলম্বে আমার কাছে ফিরে এল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কী করলে? সে বলল, আমি মক্কায় এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাত লাভ করেছি, যে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি দাবী করেন যে, আল্লাহ তাকে (রাসুল হিসেবে) প্রেরণ করেছেন। [আমি আবু যর (রাযিঃ)] বললাম, লোকেরা তাঁর সম্পর্কে কী বলে? সে বলল, তারা তাঁকে কবি, গণক ও যাদুকর বলে।
উনায়স (রাযিঃ) নিজেও একজন কবি ছিল। উনায়স (রাযিঃ) বলল, আমি অনেক গণকের কথা শুনেছি; কিন্তু ঐ ব্যক্তির কথা গণকের মত নয়। আমি তাঁর বাক্যকে কবিদের রচনার সাথে তুলনা করে দেখেছি; কিন্তু কোন কবির ভাষার সাথে তার কোন মিল নেই। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তিনি সত্যবাদী এবং ওরা মিথ্যাবাদী। তিনি বললেন, আমি বললাম, তুমি আমার সংসার দেখাশোনা কর এবং আমি গিয়ে একটু দেখে নিই।
তিনি বললেন, আমি মক্কায় এলাম এবং তাদের এক দুর্বল ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললাম, সে ব্যক্তি কোথায়, যাকে তোমরা সাবী (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলে ডাক? সে আমার প্রতি ইশারা করল এবং বলল, এই সাবী। এরপর মক্কা উপত্যকার লোকেরা ঢিল ও হাড়সহ আমার উপর চড়াও হল, এমন কি আমি বেহুশ হয়ে পড়ে গেলাম। তিনি বললেন, আমি যখন উঠলম তখন লাল মূর্তির (অর্থাৎ রক্তে রঞ্জিত) অবস্থায় উঠলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি যমযম কূপের কাছে এসে আমার রক্ত ধুয়ে নিলাম। এরপর তার পানি পান করলামা হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমি সেখানে ত্রিশ রাত্র-দিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় যমযমের পানি ছাড়া আমার কাছে কোন খাদ্য ছিলনা। অতঃপর আমি স্থুলদেহী হয়ে গেলাম। এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাজ পড়ে গেল। আমি আমার কলিজায় ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করিনি।
তিনি বললেন, ইতিমধ্যে মক্কাবাসীরা যখন এক উজ্জ্বল চাঁদনী রাতে ঘুমিয়ে পড়ল, তখন কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিল না। সে সময় তাদের মধ্য থেকে দু'জন মহিলা ইসাফ ও নায়েলাকে* ডাকছিল। তিনি বললেন, তারা তাওয়াফ করতে করতে আমার কাছে এসে পড়ল। আমি বললাম, তাদের একজনকে অপরজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। তিনি বললেন, তবু তারা তাদের কথা থেকে বিরত হল না। তিনি বলেন, তারা আবার আমার সম্মুখ দিয়ে এল। আমি (বিরক্ত হয়ে) বললাম, (ওদের) লজ্জাস্থান পুরুষাঙ্গ ও যোনিদ্বার কাঠের মত। তিনি বললেন, আমি তাদের নাম স্পষ্ট উচ্চারণ করিনি। এতে তারা অভিশাপ দিতে দিতে চলে গেল এবং বলতে লাগল এখানে যদি আমাদের লোকদের কেউ থাকত (তাহলে এই বেআদবকে শাস্তি দিত)!
প্রতিমধ্যে এই দুই মহিলার সাথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) এর সাক্ষাত হল। তখন তারা দু’জন নীচে (অর্থাৎ বাইরে থেকে কাবা চত্বরে) অবতরণ করছিলেন। তিনি তাদের দু’জনকে বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল কাবা ও তাঁর পর্দার মাঝখানে এক বিধর্মী অবস্থান করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে তোমাদের কি বলেছে? তারা বলল, সে এমন কথা বলেছে যাতে মুখ ভরে যায় (অর্থাৎ মুখে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এসে তাঁর সঙ্গীসহ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে নামায আদায় করলেন। যখন তিনি তাঁর নামায সমাপন করলেন [তখন আবু যর (রাযিঃ) বললেন] আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তাকে ইসলামী কায়দায় সালাম জানিয়ে বললাম, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ (হে আল্লাহর রাসুল, আপনার প্রতি সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক)। উত্তরে তিনি বলেলেন, ওয়া আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ (তোমার প্রতিও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক)।
অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কে? তিনি বললেন, আমি গিফার গোত্রের লোক। তিনি বললেন, তখন তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন এবং তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো কপালে রাখলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, গিফার গোত্রের প্রতি আমার সম্পর্ককে তিনি অপছন্দ করছেন। এরপর আমি তাঁর হাত ধরতে চাইলাম। তাঁর সঙ্গী আমাকে বাঁধা দিলেন। তিনি তাকে আমার চাইতে অনেক বেশী ভালো জানতেন। তারপর তিনি মাথা তুলে তাকালেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কতদিন যাবত এখানে আছ? আমি বললাম, আমি এখানে ত্রিশটি রাতদিন অবস্থান করছি। তিনি বললেন, তোমাকে কে খাওয়াত? আমি বললাম, যমযম কূপের পানি ছাড়া আমার জন্য কোন খাদ্য ছিল না। এই পানি পান করেই আমি মোটাতাজা হয়ে গেছি, এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাজ পড়েছে এবং আমি কখনো ক্ষুধা (জঠর জ্বালা) অনুভব করি নি। তিনি বললেন, তাতো বরকতময় এবং তা অনেক খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ খাবার।
এরপর আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাঁর আজ রাতের খানার (মেহমানদারীর) জন্য আমাকে অনুমতি দিন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) রওয়ানা হলেন এবং আমিও তাদের সাথে চললাম। আবু বকর (রাযিঃ) একটি দরজা খুললেন এবং আমাদের জন্য তিনি মুষ্টি ভরে তায়েফের কিসমিস পরিবেশন করলেন। এটাই ছিল আমার প্রথম খাদ্য যা সেখানে (মক্কায়) আমি খেলাম। তারপর যতদিন থাকার ততদিন রইলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, আমাকে খেজুর গাছ সমৃদ্ধ একটি দেশের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আমার ধারণা সেটি ইয়াসরিব (মদীনার পূর্ব নাম) ছাড়া অন্য কোন স্থান নয়।
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি আমার পক্ষ থেকে তোমার গোত্রের কাছে আমার পয়গাম পৌঁছিয়ে দিবে? হয়ত তোমার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের উপকৃত করবেন এবং এদের (হিদায়াতের) কারণে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। এরপর আমি উনায়সের কাছে ফিরে এলাম। সে বলল, আপনি কি করেছেন? আমি বললাম, আমি তো ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং বিশ্বাস করেছি। সে (উনায়স) বলল, আপনার দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন আপত্তি নেই। আমিও ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং বিশ্বাস করছি।
এরপর আমরা উভয়ে মায়ের কাছে এলাম। তিনি বললেন, তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন আপত্তি নেই, আমিও ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং বিশ্বাস করলাম। তারপর আমরা সওয়ার হয়ে আমদের গিফার গোত্রের কাছে এলাম। তাদের অর্ধেক লোক ইসলাম গ্রহণ করল এবং ঈমা ইবনে রাহাদা গিফারী তাদের ইমমত করেন। তিনি ছিলেন তাদের সর্দার। তাদের বাকী অর্ধেক বলল, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় আসবেন তখন আমরা ইসলাম গ্রহণ করব।
পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনাতে আসলেন এবং তাদের (গিফার গোত্রের) অবশিষ্ট অর্ধেক লোক ইসলামে দীক্ষিত হল। তারপর আসলাম গোত্রের লোকেরা এল। তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের ভাইয়েরা (মিত্রেরা) যার উপরে ইসলাম কবুল করছেন আমরাও তাদের মত ইসলাম গ্রহণ করলাম। এভাবে তারাও ইসলামে দীক্ষিত হল।
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা মাগফিরাত দান করুন এবং আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তাআলা সালামাত (নিরাপত্তা) দান করুন।
* ইসাফ ও নায়েলা নামে সাফা ও মারওয়াতে দুটি মুর্তি ছিল। ইসাফ ছিল পুরুষ এবং নায়েলা স্ত্রী। মক্কাবাসীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল যে এরা উভয়ে হারামে যিনায় লিপ্ত হয়েছিল বলে শাস্তিস্বরূপ ওদের বিকৃত করে পাথরে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়, কিন্তু তারা প্রতীমা হিসেবে এগুলির পৃজা করত।
এরপর আমাদের মামা আসলেন এবং তাকে যা বলা হয়েছে তিনি তা আমাদের নিকট প্রকাশ করে দিলেন। তখন আমি বললাম আপনি আমাদের সাথে অতীতে যে সদ্ব্যবহার করেছেন তাকে ম্লান করে দিলেন। এরপর আপনার সঙ্গে আমাদের একত্রে থাকার অবকাশ নেই। তারপর আমরা আমাদের উটগুলোকে নিকটবর্তী করলাম এবং তাদের উপর আরোহণ করলাম। তখন আমাদের মামা তাঁর কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে কাঁদতে শুরু করলেন। আমরা রওয়ানা হয়ে মক্কার নিকটে অবতরণ করলাম। উনায়স আমাদের পশুগুলো এবং সে পরিমাণ পশুর মধ্যে (কবিতা রচনার) বাজি ধরল। তারপর তারা উভয়ে এক গণকের কাছে গেল।
গণক উনায়সকে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করল। এরপর উনায়স আমাদের উটগুলো এবং তার সমপরিমাণ উট নিয়ে আমাদের নিকট ফিরে এল। আবু যর (রাযিঃ) বললেন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে সাক্ষাতের তিন বছর পূর্বে নামায আদায় করেছি। আমি (রাবী) বললাম, কার জন্যে? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্যে। আমি (রাবী) “বললাম, কোন দিকে মুখ ফিরাতেন? তিনি বললেন, আমার মহান প্রতিপালক যে দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সে দিকে মুখ ফিরাতাম। আমি ইশার নামায আদায় করতে করতে রাতের শেষ অংশে নিদ্রার চাদরে ঢলে পড়তাম, যতক্ষণ না সূর্য আমার উপর পড়ত।
তারপর উনায়স (রাযিঃ) বললেন, মক্কায় আমার একটু প্রয়োজন আছে। কাজেই আপনি আমার সংসার তত্ত্বাবধান করবেন। তারপর উনায়স (রাযিঃ) চলে গেল এবং মক্কায় পৌছলো এবং সে বিলম্বে আমার কাছে ফিরে এল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কী করলে? সে বলল, আমি মক্কায় এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাত লাভ করেছি, যে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি দাবী করেন যে, আল্লাহ তাকে (রাসুল হিসেবে) প্রেরণ করেছেন। [আমি আবু যর (রাযিঃ)] বললাম, লোকেরা তাঁর সম্পর্কে কী বলে? সে বলল, তারা তাঁকে কবি, গণক ও যাদুকর বলে।
উনায়স (রাযিঃ) নিজেও একজন কবি ছিল। উনায়স (রাযিঃ) বলল, আমি অনেক গণকের কথা শুনেছি; কিন্তু ঐ ব্যক্তির কথা গণকের মত নয়। আমি তাঁর বাক্যকে কবিদের রচনার সাথে তুলনা করে দেখেছি; কিন্তু কোন কবির ভাষার সাথে তার কোন মিল নেই। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তিনি সত্যবাদী এবং ওরা মিথ্যাবাদী। তিনি বললেন, আমি বললাম, তুমি আমার সংসার দেখাশোনা কর এবং আমি গিয়ে একটু দেখে নিই।
তিনি বললেন, আমি মক্কায় এলাম এবং তাদের এক দুর্বল ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললাম, সে ব্যক্তি কোথায়, যাকে তোমরা সাবী (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলে ডাক? সে আমার প্রতি ইশারা করল এবং বলল, এই সাবী। এরপর মক্কা উপত্যকার লোকেরা ঢিল ও হাড়সহ আমার উপর চড়াও হল, এমন কি আমি বেহুশ হয়ে পড়ে গেলাম। তিনি বললেন, আমি যখন উঠলম তখন লাল মূর্তির (অর্থাৎ রক্তে রঞ্জিত) অবস্থায় উঠলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি যমযম কূপের কাছে এসে আমার রক্ত ধুয়ে নিলাম। এরপর তার পানি পান করলামা হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমি সেখানে ত্রিশ রাত্র-দিন অবস্থান করেছিলাম। সে সময় যমযমের পানি ছাড়া আমার কাছে কোন খাদ্য ছিলনা। অতঃপর আমি স্থুলদেহী হয়ে গেলাম। এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাজ পড়ে গেল। আমি আমার কলিজায় ক্ষুধার কষ্ট অনুভব করিনি।
তিনি বললেন, ইতিমধ্যে মক্কাবাসীরা যখন এক উজ্জ্বল চাঁদনী রাতে ঘুমিয়ে পড়ল, তখন কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিল না। সে সময় তাদের মধ্য থেকে দু'জন মহিলা ইসাফ ও নায়েলাকে* ডাকছিল। তিনি বললেন, তারা তাওয়াফ করতে করতে আমার কাছে এসে পড়ল। আমি বললাম, তাদের একজনকে অপরজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। তিনি বললেন, তবু তারা তাদের কথা থেকে বিরত হল না। তিনি বলেন, তারা আবার আমার সম্মুখ দিয়ে এল। আমি (বিরক্ত হয়ে) বললাম, (ওদের) লজ্জাস্থান পুরুষাঙ্গ ও যোনিদ্বার কাঠের মত। তিনি বললেন, আমি তাদের নাম স্পষ্ট উচ্চারণ করিনি। এতে তারা অভিশাপ দিতে দিতে চলে গেল এবং বলতে লাগল এখানে যদি আমাদের লোকদের কেউ থাকত (তাহলে এই বেআদবকে শাস্তি দিত)!
প্রতিমধ্যে এই দুই মহিলার সাথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) এর সাক্ষাত হল। তখন তারা দু’জন নীচে (অর্থাৎ বাইরে থেকে কাবা চত্বরে) অবতরণ করছিলেন। তিনি তাদের দু’জনকে বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল কাবা ও তাঁর পর্দার মাঝখানে এক বিধর্মী অবস্থান করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে তোমাদের কি বলেছে? তারা বলল, সে এমন কথা বলেছে যাতে মুখ ভরে যায় (অর্থাৎ মুখে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এসে তাঁর সঙ্গীসহ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে নামায আদায় করলেন। যখন তিনি তাঁর নামায সমাপন করলেন [তখন আবু যর (রাযিঃ) বললেন] আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তাকে ইসলামী কায়দায় সালাম জানিয়ে বললাম, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ (হে আল্লাহর রাসুল, আপনার প্রতি সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক)। উত্তরে তিনি বলেলেন, ওয়া আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ (তোমার প্রতিও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক)।
অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কে? তিনি বললেন, আমি গিফার গোত্রের লোক। তিনি বললেন, তখন তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন এবং তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো কপালে রাখলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, গিফার গোত্রের প্রতি আমার সম্পর্ককে তিনি অপছন্দ করছেন। এরপর আমি তাঁর হাত ধরতে চাইলাম। তাঁর সঙ্গী আমাকে বাঁধা দিলেন। তিনি তাকে আমার চাইতে অনেক বেশী ভালো জানতেন। তারপর তিনি মাথা তুলে তাকালেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কতদিন যাবত এখানে আছ? আমি বললাম, আমি এখানে ত্রিশটি রাতদিন অবস্থান করছি। তিনি বললেন, তোমাকে কে খাওয়াত? আমি বললাম, যমযম কূপের পানি ছাড়া আমার জন্য কোন খাদ্য ছিল না। এই পানি পান করেই আমি মোটাতাজা হয়ে গেছি, এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাজ পড়েছে এবং আমি কখনো ক্ষুধা (জঠর জ্বালা) অনুভব করি নি। তিনি বললেন, তাতো বরকতময় এবং তা অনেক খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ খাবার।
এরপর আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাঁর আজ রাতের খানার (মেহমানদারীর) জন্য আমাকে অনুমতি দিন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আবু বকর (রাযিঃ) রওয়ানা হলেন এবং আমিও তাদের সাথে চললাম। আবু বকর (রাযিঃ) একটি দরজা খুললেন এবং আমাদের জন্য তিনি মুষ্টি ভরে তায়েফের কিসমিস পরিবেশন করলেন। এটাই ছিল আমার প্রথম খাদ্য যা সেখানে (মক্কায়) আমি খেলাম। তারপর যতদিন থাকার ততদিন রইলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, আমাকে খেজুর গাছ সমৃদ্ধ একটি দেশের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আমার ধারণা সেটি ইয়াসরিব (মদীনার পূর্ব নাম) ছাড়া অন্য কোন স্থান নয়।
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি আমার পক্ষ থেকে তোমার গোত্রের কাছে আমার পয়গাম পৌঁছিয়ে দিবে? হয়ত তোমার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের উপকৃত করবেন এবং এদের (হিদায়াতের) কারণে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। এরপর আমি উনায়সের কাছে ফিরে এলাম। সে বলল, আপনি কি করেছেন? আমি বললাম, আমি তো ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং বিশ্বাস করেছি। সে (উনায়স) বলল, আপনার দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন আপত্তি নেই। আমিও ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং বিশ্বাস করছি।
এরপর আমরা উভয়ে মায়ের কাছে এলাম। তিনি বললেন, তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন আপত্তি নেই, আমিও ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং বিশ্বাস করলাম। তারপর আমরা সওয়ার হয়ে আমদের গিফার গোত্রের কাছে এলাম। তাদের অর্ধেক লোক ইসলাম গ্রহণ করল এবং ঈমা ইবনে রাহাদা গিফারী তাদের ইমমত করেন। তিনি ছিলেন তাদের সর্দার। তাদের বাকী অর্ধেক বলল, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় আসবেন তখন আমরা ইসলাম গ্রহণ করব।
পরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনাতে আসলেন এবং তাদের (গিফার গোত্রের) অবশিষ্ট অর্ধেক লোক ইসলামে দীক্ষিত হল। তারপর আসলাম গোত্রের লোকেরা এল। তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের ভাইয়েরা (মিত্রেরা) যার উপরে ইসলাম কবুল করছেন আমরাও তাদের মত ইসলাম গ্রহণ করলাম। এভাবে তারাও ইসলামে দীক্ষিত হল।
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা মাগফিরাত দান করুন এবং আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তাআলা সালামাত (নিরাপত্তা) দান করুন।
* ইসাফ ও নায়েলা নামে সাফা ও মারওয়াতে দুটি মুর্তি ছিল। ইসাফ ছিল পুরুষ এবং নায়েলা স্ত্রী। মক্কাবাসীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল যে এরা উভয়ে হারামে যিনায় লিপ্ত হয়েছিল বলে শাস্তিস্বরূপ ওদের বিকৃত করে পাথরে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়, কিন্তু তারা প্রতীমা হিসেবে এগুলির পৃজা করত।
باب مِنْ فَضَائِلِ أَبِي ذَرٍّ رضى الله عنه
حَدَّثَنَا هَدَّابُ بْنُ خَالِدٍ الأَزْدِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، أَخْبَرَنَا حُمَيْدُ بْنُ هِلاَلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ قَالَ أَبُو ذَرٍّ خَرَجْنَا مِنْ قَوْمِنَا غِفَارٍ وَكَانُوا يُحِلُّونَ الشَّهْرَ الْحَرَامَ فَخَرَجْتُ أَنَا وَأَخِي أُنَيْسٌ وَأُمُّنَا فَنَزَلْنَا عَلَى خَالٍ لَنَا فَأَكْرَمَنَا خَالُنَا وَأَحْسَنَ إِلَيْنَا فَحَسَدَنَا قَوْمُهُ فَقَالُوا إِنَّكَ إِذَا خَرَجْتَ عَنْ أَهْلِكَ خَالَفَ إِلَيْهِمْ أُنَيْسٌ فَجَاءَ خَالُنَا فَنَثَا عَلَيْنَا الَّذِي قِيلَ لَهُ فَقُلْتُ لَهُ أَمَّا مَا مَضَى مِنْ مَعْرُوفِكَ فَقَدْ كَدَّرْتَهُ وَلاَ جِمَاعَ لَكَ فِيمَا بَعْدُ . فَقَرَّبْنَا صِرْمَتَنَا فَاحْتَمَلْنَا عَلَيْهَا وَتَغَطَّى خَالُنَا ثَوْبَهُ فَجَعَلَ يَبْكِي فَانْطَلَقْنَا حَتَّى نَزَلْنَا بِحَضْرَةِ مَكَّةَ فَنَافَرَ أُنَيْسٌ عَنْ صِرْمَتِنَا وَعَنْ مِثْلِهَا فَأَتَيَا الْكَاهِنَ فَخَيَّرَ أُنَيْسًا فَأَتَانَا أُنَيْسٌ بِصِرْمَتِنَا وَمِثْلِهَا مَعَهَا - قَالَ - وَقَدْ صَلَّيْتُ يَا ابْنَ أَخِي قَبْلَ أَنْ أَلْقَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِثَلاَثِ سِنِينَ . قُلْتُ لِمَنْ قَالَ لِلَّهِ . قُلْتُ فَأَيْنَ تَوَجَّهُ قَالَ أَتَوَجَّهُ حَيْثُ يُوَجِّهُنِي رَبِّي أُصَلِّي عِشَاءً حَتَّى إِذَا كَانَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ أُلْقِيتُ كَأَنِّي خِفَاءٌ حَتَّى تَعْلُوَنِي الشَّمْسُ . فَقَالَ أُنَيْسٌ إِنَّ لِي حَاجَةً بِمَكَّةَ فَاكْفِنِي . فَانْطَلَقَ أُنَيْسٌ حَتَّى أَتَى مَكَّةَ فَرَاثَ عَلَىَّ ثُمَّ جَاءَ فَقُلْتُ مَا صَنَعْتَ قَالَ لَقِيتُ رَجُلاً بِمَكَّةَ عَلَى دِينِكَ يَزْعُمُ أَنَّ اللَّهَ أَرْسَلَهُ . قُلْتُ فَمَا يَقُولُ النَّاسُ قَالَ يَقُولُونَ شَاعِرٌ كَاهِنٌ سَاحِرٌ . وَكَانَ أُنَيْسٌ أَحَدَ الشُّعَرَاءِ . قَالَ أُنَيْسٌ لَقَدْ سَمِعْتُ قَوْلَ الْكَهَنَةِ فَمَا هُوَ بِقَوْلِهِمْ وَلَقَدْ وَضَعْتُ قَوْلَهُ عَلَى أَقْرَاءِ الشِّعْرِ فَمَا يَلْتَئِمُ عَلَى لِسَانِ أَحَدٍ بَعْدِي أَنَّهُ شِعْرٌ وَاللَّهِ إِنَّهُ لَصَادِقٌ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ . قَالَ قُلْتُ فَاكْفِنِي حَتَّى أَذْهَبَ فَأَنْظُرَ . قَالَ فَأَتَيْتُ مَكَّةَ فَتَضَعَّفْتُ رَجُلاً مِنْهُمْ فَقُلْتُ أَيْنَ هَذَا الَّذِي تَدْعُونَهُ الصَّابِئَ فَأَشَارَ إِلَىَّ فَقَالَ الصَّابِئَ . فَمَالَ عَلَىَّ أَهْلُ الْوَادِي بِكُلِّ مَدَرَةٍ وَعَظْمٍ حَتَّى خَرَرْتُ مَغْشِيًّا عَلَىَّ - قَالَ - فَارْتَفَعْتُ حِينَ ارْتَفَعْتُ كَأَنِّي نُصُبٌ أَحْمَرُ - قَالَ - فَأَتَيْتُ زَمْزَمَ فَغَسَلْتُ عَنِّي الدِّمَاءَ وَشَرِبْتُ مِنْ مَائِهَا وَلَقَدْ لَبِثْتُ يَا ابْنَ أَخِي ثَلاَثِينَ بَيْنَ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي وَمَا وَجَدْتُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ - قَالَ - فَبَيْنَا أَهْلُ مَكَّةَ فِي لَيْلَةٍ قَمْرَاءَ إِضْحِيَانَ إِذْ ضُرِبَ عَلَى أَسْمِخَتِهِمْ فَمَا يَطُوفُ بِالْبَيْتِ أَحَدٌ وَامْرَأَتَيْنِ مِنْهُمْ تَدْعُوَانِ إِسَافًا وَنَائِلَةَ - قَالَ - فَأَتَتَا عَلَىَّ فِي طَوَافِهِمَا فَقُلْتُ أَنْكِحَا أَحَدَهُمَا الأُخْرَى - قَالَ - فَمَا تَنَاهَتَا عَنْ قَوْلِهِمَا - قَالَ - فَأَتَتَا عَلَىَّ فَقُلْتُ هَنٌ مِثْلُ الْخَشَبَةِ غَيْرَ أَنِّي لاَ أَكْنِي . فَانْطَلَقَتَا تُوَلْوِلاَنِ وَتَقُولاَنِ لَوْ كَانَ هَا هُنَا أَحَدٌ مِنْ أَنْفَارِنَا . قَالَ فَاسْتَقْبَلَهُمَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ وَهُمَا هَابِطَانِ قَالَ " مَا لَكُمَا " . قَالَتَا الصَّابِئُ بَيْنَ الْكَعْبَةِ وَأَسْتَارِهَا قَالَ " مَا قَالَ لَكُمَا " . قَالَتَا إِنَّهُ قَالَ لَنَا كَلِمَةً تَمْلأُ الْفَمَ . وَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى اسْتَلَمَ الْحَجَرَ وَطَافَ بِالْبَيْتِ هُوَ وَصَاحِبُهُ ثُمَّ صَلَّى فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ قَالَ أَبُو ذَرٍّ . فَكُنْتُ أَنَا أَوَّلُ مَنْ حَيَّاهُ بِتَحِيَّةِ الإِسْلاَمِ - قَالَ - فَقُلْتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ . فَقَالَ " وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ " . ثُمَّ قَالَ " مَنْ أَنْتَ " . قَالَ قُلْتُ مِنْ غِفَارٍ - قَالَ - فَأَهْوَى بِيَدِهِ فَوَضَعَ أَصَابِعَهُ عَلَى جَبْهَتِهِ فَقُلْتُ فِي نَفْسِي كَرِهَ أَنِ انْتَمَيْتُ إِلَى غِفَارٍ . فَذَهَبْتُ آخُذُ بِيَدِهِ فَقَدَعَنِي صَاحِبُهُ وَكَانَ أَعْلَمَ بِهِ مِنِّي ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ ثُمَّ قَالَ " مَتَى كُنْتَ هَا هُنَا " . قَالَ قُلْتُ قَدْ كُنْتُ هَا هُنَا مُنْذُ ثَلاَثِينَ بَيْنَ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ قَالَ " فَمَنْ كَانَ يُطْعِمُكَ " . قَالَ قُلْتُ مَا كَانَ لِي طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ . فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِي وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِي سُخْفَةَ جُوعٍ قَالَ " إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ " . فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ ائْذَنْ لِي فِي طَعَامِهِ اللَّيْلَةَ . فَانْطَلَقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبُو بَكْرٍ وَانْطَلَقْتُ مَعَهُمَا فَفَتَحَ أَبُو بَكْرٍ بَابًا فَجَعَلَ يَقْبِضُ لَنَا مِنْ زَبِيبِ الطَّائِفِ وَكَانَ ذَلِكَ أَوَّلَ طَعَامٍ أَكَلْتُهُ بِهَا ثُمَّ غَبَرْتُ مَا غَبَرْتُ ثُمَّ أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " إِنَّهُ قَدْ وُجِّهَتْ لِي أَرْضٌ ذَاتُ نَخْلٍ لاَ أُرَاهَا إِلاَّ يَثْرِبَ فَهَلْ أَنْتَ مُبَلِّغٌ عَنِّي قَوْمَكَ عَسَى اللَّهُ أَنْ يَنْفَعَهُمْ بِكَ وَيَأْجُرَكَ فِيهِمْ " . فَأَتَيْتُ أُنَيْسًا فَقَالَ مَا صَنَعْتَ قُلْتُ صَنَعْتُ أَنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ وَصَدَّقْتُ . قَالَ مَا بِي رَغْبَةٌ عَنْ دِينِكَ فَإِنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ وَصَدَّقْتُ . فَأَتَيْنَا أُمَّنَا فَقَالَتْ مَا بِي رَغْبَةٌ عَنْ دِينِكُمَا فَإِنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ وَصَدَّقْتُ . فَاحْتَمَلْنَا حَتَّى أَتَيْنَا قَوْمَنَا غِفَارًا فَأَسْلَمَ نِصْفُهُمْ وَكَانَ يَؤُمُّهُمْ إِيمَاءُ بْنُ رَحَضَةَ الْغِفَارِيُّ وَكَانَ سَيِّدَهُمْ . وَقَالَ نِصْفُهُمْ إِذَا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ أَسْلَمْنَا . فَقَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ فَأَسْلَمَ نِصْفُهُمُ الْبَاقِي وَجَاءَتْ أَسْلَمُ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِخْوَتُنَا نُسْلِمُ عَلَى الَّذِي أَسْلَمُوا عَلَيْهِ . فَأَسْلَمُوا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " غِفَارُ غَفَرَ اللَّهُ لَهَا وَأَسْلَمُ سَالَمَهَا اللَّهُ " .

তাহকীক:

বর্ণনাকারী:
হাদীস নং: ৬১৩৬
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৭৩-২
২৮. আবু যর (রাযিঃ) এর ফযীলত
৬১৩৬। ইসহাক ইবনে ইবরাহীম হানযালী (রাহঃ) ......... হুমায়দ ইবনে হিলাল (রাযিঃ) থেকে এই সনদে (রাবী) আবু যর (রাযিঃ) এর কথা “আমি বললাম, তুমি এখানে অবস্থান কর, আমি গিয়ে সে ব্যক্তিকে দেখে নই।” এরপরে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বললেন, আচ্ছা, তবে মক্কাবাসীদের ব্যপারে সতর্ক থাকবেন। তারা তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং কঠোর ও রুঢ় আচরণ করে।
باب مِنْ فَضَائِلِ أَبِي ذَرٍّ رضى الله عنه
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، أَخْبَرَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ، بْنُ الْمُغِيرَةِ حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ هِلاَلٍ، بِهَذَا الإِسْنَادِ وَزَادَ بَعْدَ قَوْلِهِ قُلْتُ فَاكْفِنِي حَتَّى أَذْهَبَ فَأَنْظُرَ . قَالَ نَعَمْ وَكُنْ عَلَى حَذَرٍ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ فَإِنَّهُمْ قَدْ شَنِفُوا لَهُ وَتَجَهَّمُوا .

তাহকীক:

বর্ণনাকারী:
হাদীস নং: ৬১৩৭
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৭৩-৩
২৮. আবু যর (রাযিঃ) এর ফযীলত
৬১৩৭। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না আনাযী (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে সামিত (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু যর (রাযিঃ) বলেছেন , হে ভ্রাতুষ্পুত্র! নবী (ﷺ) এর আবির্ভাবের পূর্বে আমি দুই বছর নামায আদায় করেছি। রাবী বললেন, আমি বললাম, আপনি কোন দিকে মুখ করতেন। তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] বললেন, আল্লাহ যে দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সেদিকে। ...... এরপর তিনি সুলাইমান ইবনে মুগীরা (রাহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
আর তিনি হাদীসে বলেছেন, এরপর (কাব্য রচনায় শ্রেষ্ঠত্বের বাজি ধরেন) উভয়ে এক জ্যোতিষীর কাছে গেলেন। তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] বলেন, আমার ভাই উনায়স কবিতায় এই জ্যোতিষীর প্রশংসা করতে লাগল, অবশেষে প্রতিপক্ষের উপর জয়ী হল। রাবী বলেন, তারপর আমরা তার পশুগুলো নিলাম এবং আমাদের পশুগুলোর সাথে মিলিয়ে ফেললাম।
তিনি তার হাদীসে আরও বলেছেন, তারপর নবী (ﷺ) আসলেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। এরপর মাকামে ইবরাহীম এর পিছনে দু’রাক'আত নামায আদায় করলেন। তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] বলেন, আমি তাঁর [নবী (ﷺ)] এর নিকট এলাম এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তাঁকে ইসলামী নিয়মে সালাম করলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! (হে আল্লাহর রাসূল আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!) তিনি [নবী (ﷺ)] বললেন, ‘ওয়া আলাইকাস সালাম’ (তোমার প্রতিও সালাম বর্ষিত হোক)। তুমি কে?
তার বর্ণিত হাদীসে আরও আছে যে, তারপর তিনি বললেন, তুমি এখানে কতদিন যাবৎ আছ? আমি বললাম, পনের (দিন) ধরে অবস্থান করছি। এই হাদীসে আরও আছে, তারপর আবু বকর (রাযিঃ) বললেন , তাঁকে এক রাত্রির মেহমানদারীর সুযোগ আমাকে দিন।
আর তিনি হাদীসে বলেছেন, এরপর (কাব্য রচনায় শ্রেষ্ঠত্বের বাজি ধরেন) উভয়ে এক জ্যোতিষীর কাছে গেলেন। তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] বলেন, আমার ভাই উনায়স কবিতায় এই জ্যোতিষীর প্রশংসা করতে লাগল, অবশেষে প্রতিপক্ষের উপর জয়ী হল। রাবী বলেন, তারপর আমরা তার পশুগুলো নিলাম এবং আমাদের পশুগুলোর সাথে মিলিয়ে ফেললাম।
তিনি তার হাদীসে আরও বলেছেন, তারপর নবী (ﷺ) আসলেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। এরপর মাকামে ইবরাহীম এর পিছনে দু’রাক'আত নামায আদায় করলেন। তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] বলেন, আমি তাঁর [নবী (ﷺ)] এর নিকট এলাম এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তাঁকে ইসলামী নিয়মে সালাম করলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! (হে আল্লাহর রাসূল আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!) তিনি [নবী (ﷺ)] বললেন, ‘ওয়া আলাইকাস সালাম’ (তোমার প্রতিও সালাম বর্ষিত হোক)। তুমি কে?
তার বর্ণিত হাদীসে আরও আছে যে, তারপর তিনি বললেন, তুমি এখানে কতদিন যাবৎ আছ? আমি বললাম, পনের (দিন) ধরে অবস্থান করছি। এই হাদীসে আরও আছে, তারপর আবু বকর (রাযিঃ) বললেন , তাঁকে এক রাত্রির মেহমানদারীর সুযোগ আমাকে দিন।
باب مِنْ فَضَائِلِ أَبِي ذَرٍّ رضى الله عنه
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى الْعَنَزِيُّ، حَدَّثَنِي ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، قَالَ أَنْبَأَنَا ابْنُ عَوْنٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ هِلاَلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الصَّامِتِ، قَالَ قَالَ أَبُو ذَرٍّ يَا ابْنَ أَخِي صَلَّيْتُ سَنَتَيْنِ قَبْلَ مَبْعَثِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . قَالَ قُلْتُ فَأَيْنَ كُنْتَ تَوَجَّهُ قَالَ حَيْثُ وَجَّهَنِيَ اللَّهُ . وَاقْتَصَّ الْحَدِيثَ بِنَحْوِ حَدِيثِ سُلَيْمَانَ بْنِ الْمُغِيرَةِ وَقَالَ فِي الْحَدِيثِ فَتَنَافَرَا إِلَى رَجُلٍ مِنَ الْكُهَّانِ . قَالَ فَلَمْ يَزَلْ أَخِي أُنَيْسٌ يَمْدَحُهُ حَتَّى غَلَبَهُ - قَالَ - فَأَخَذْنَا صِرْمَتَهُ فَضَمَمْنَاهَا إِلَى صِرْمَتِنَا . وَقَالَ أَيْضًا فِي حَدِيثِهِ قَالَ فَجَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَطَافَ بِالْبَيْتِ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ خَلْفَ الْمَقَامِ - قَالَ - فَأَتَيْتُهُ فَإِنِّي لأَوَّلُ النَّاسِ حَيَّاهُ بِتَحِيَّةِ الإِسْلاَمِ - قَالَ - قُلْتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ مَنْ أَنْتَ " . وَفِي حَدِيثِهِ أَيْضًا فَقَالَ " مُنْذُ كَمْ أَنْتَ هَا هُنَا " . قَالَ قُلْتُ مُنْذُ خَمْسَ عَشْرَةَ . وَفِيهِ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ أَتْحِفْنِي بِضِيَافَتِهِ اللَّيْلَةَ .

তাহকীক:

বর্ণনাকারী:
হাদীস নং: ৬১৩৮
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৭৪
২৮. আবু যর (রাযিঃ) এর ফযীলত
৬১৩৮। ইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আর’আরা সামী ও মুহাম্মাদ ইবনে হাতিম (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আবু যর (রাযিঃ) এর কাছে খবর পৌছল যে, মক্কায় নবী (ﷺ) প্রেরিত হয়েছেন, তখন তিনি তাঁর ভাইকে বললেন, তুমি সওয়ারীতে আরোহণ করে সেই (মক্কা) উপত্যকায় যাও এবং সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আমাকে জানাও, যিনি দাবি করেন যে, আসমান থেকে তাঁর কাছে ওহী আসে। তাঁর কথা ভাল করে শুনবে এবং তারপর তুমি আমার কাছে আসবে। তখন অপর ব্যক্তি (তার ভাই) রওয়ানা হয়ে মক্কা এল এবং তার কথা শুনল।
তারপর সে আবু যর (রাযিঃ)-এর কাছে ফিরে এল এবং সে বলল, আমি তাঁকে লক্ষ্য করেছি যে, তিনি উত্তম চরিত্রের নির্দেশ দেন এবং এমন বাণী শোনান, যা কবিতা নয়। তখন তিনি (আবু যর (রাযিঃ) বললেন, তুমি আমার চাহিদা মেটাতে পারলে না। তারপর তিনি পাথেয় জোগাড় করলেন এবং একটি পানি ভর্তি মশক নিলেন। অবশেষে মক্কায় পৌছে তিনি মসজিদুল হারামে এলেন। আর নবী (ﷺ) কে তালাশ করলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে চিনতেন না। আর তাঁর সম্পর্কে (কারও কাছে) জিজ্ঞাসা করাও অপছন্দ করলেন।
অবশেষে রাত হয়ে গেল। তিনি শুয়ে পড়লেন। তখন আলী (রাযিঃ) তাকে দেখলেন এবং তিনি বুঝতে পারলেন যে ইনি একজন আগন্তুক। যখন তিনি তাকে দেখলেন (তাঁর আহবানে) তাঁর [আলী (রাযিঃ)] অনুসরণ করলেন; কিন্তু কেউ কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি (এভাবে) ভোর হয়ে গেল। এরপর তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] তাঁর আসবাবপত্র ও মশক মসজিদে রাখলেন এবং সেদিনটি সেখানে অতিবাহিত করলেন। তিনি নবী (ﷺ) কে দেখতে পেলেন না, এমনকি সন্ধ্যা হয়ে গেল। তারপর তিনি তাঁর শোবার জায়গায় ফিরে এলেন।
আলী (রাযিঃ) তাঁর কাছে এলেন, তিনি বললেন, এখনো সময় আসেনি, যে সে ব্যক্তি (আপনি) তাঁর উদ্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে অবগত হবে। এরপর তিনি তাকে উঠিয়ে সঙ্গে নিয়ে চললেন। তবে কেউ কারো কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি তৃতীয় দিন এসে গেল। এই দিনও সেইরূপ করলেন। আলী (রাযিঃ) তাকে তাঁর সঙ্গে উঠিয়ে নিয়ে নিলেন এবং তাকে বললেন, আপনি কি আমাকে জানাবেন না, কিসে আপনাকে এই শহরে এনেছে? তিনি (আবু যর (রাযিঃ) বললেন, আপনি যদি আমাকে সঠিক পথ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দেন ও প্রতিজ্ঞা করেন তাহলে আমি আপনার কাছে বলব। তিনি ওয়াদা করলেন।
তখন (আবু যর (রাযিঃ) তাকে সব অবহিত করলেন। এরপর আলী (রাযিঃ) বললেন, তিনি [নবী (ﷺ)] সত্য এবং তিনি আল্লাহর রাসুল। সকাল হলে আপনি আমাকে অনুসরণ করবেন। আমি যদি এমন কিছু দেখতে পাই যাতে আপনার আশঙ্কা আছে, তখন আমি দাঁড়িয়ে যাব, যেন আমি মুত্র ত্যাগ করছি। আর যদি আমি চলতে থাকি তাহলে আমাকে অনুসরণ করবেন। অবশেষে আমার প্রবেশস্থলে আপনি ঢুকে পড়বেন। তিনি তাই করলেন। তিনি তাঁর পিছনে চললেন, শেষ পর্যন্ত তিনি [আলী (রাযিঃ)] নবী (ﷺ) এর নিকট প্রবেশ করলেন আর আবু যর (রাযিঃ) ও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করলেন।
তারপর তিনি তার (নবী (ﷺ) এর) কথা শুনলেন এবং সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করলেন। এরপর নবী (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি তোমার গোত্রের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দাও। এ আমার নির্দেশ তোমার কাছে পৌছা পর্যন্ত (এভাবে থাকবে)। এরপর তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] বললেন, সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, আমি তা মক্কাবাসীদের মাঝে চিৎকার করে ঘোষণা করব। তারপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন। তারপর উচ্চস্বরে ঘোষণা করলেনঃ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ″আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসুল।″
এতে লোকেরা তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলল। আব্বাস (রাযিঃ) সেখানে এলেন এবং ঝুকে পড়ে তাকে দেখলেন। তিনি [আব্বাস (রাযিঃ)] বললেন, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি জান না যে, ইনি গিফার গোত্রের লোক? তোমাদের সিরিয়া দেশে বাণিজ্যের যাতায়াতের রাস্তা তাদের এলাকায়। তারপর তিনি তাকে তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনলেন। পরের দিন তিনি আবার আগের দিনের মতই করলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করল। আব্বাস (রাযিঃ) তাকে আড়াল করলেন এবং তাঁকে তিনি মুক্ত করলেন।
তারপর সে আবু যর (রাযিঃ)-এর কাছে ফিরে এল এবং সে বলল, আমি তাঁকে লক্ষ্য করেছি যে, তিনি উত্তম চরিত্রের নির্দেশ দেন এবং এমন বাণী শোনান, যা কবিতা নয়। তখন তিনি (আবু যর (রাযিঃ) বললেন, তুমি আমার চাহিদা মেটাতে পারলে না। তারপর তিনি পাথেয় জোগাড় করলেন এবং একটি পানি ভর্তি মশক নিলেন। অবশেষে মক্কায় পৌছে তিনি মসজিদুল হারামে এলেন। আর নবী (ﷺ) কে তালাশ করলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে চিনতেন না। আর তাঁর সম্পর্কে (কারও কাছে) জিজ্ঞাসা করাও অপছন্দ করলেন।
অবশেষে রাত হয়ে গেল। তিনি শুয়ে পড়লেন। তখন আলী (রাযিঃ) তাকে দেখলেন এবং তিনি বুঝতে পারলেন যে ইনি একজন আগন্তুক। যখন তিনি তাকে দেখলেন (তাঁর আহবানে) তাঁর [আলী (রাযিঃ)] অনুসরণ করলেন; কিন্তু কেউ কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি (এভাবে) ভোর হয়ে গেল। এরপর তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] তাঁর আসবাবপত্র ও মশক মসজিদে রাখলেন এবং সেদিনটি সেখানে অতিবাহিত করলেন। তিনি নবী (ﷺ) কে দেখতে পেলেন না, এমনকি সন্ধ্যা হয়ে গেল। তারপর তিনি তাঁর শোবার জায়গায় ফিরে এলেন।
আলী (রাযিঃ) তাঁর কাছে এলেন, তিনি বললেন, এখনো সময় আসেনি, যে সে ব্যক্তি (আপনি) তাঁর উদ্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে অবগত হবে। এরপর তিনি তাকে উঠিয়ে সঙ্গে নিয়ে চললেন। তবে কেউ কারো কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি তৃতীয় দিন এসে গেল। এই দিনও সেইরূপ করলেন। আলী (রাযিঃ) তাকে তাঁর সঙ্গে উঠিয়ে নিয়ে নিলেন এবং তাকে বললেন, আপনি কি আমাকে জানাবেন না, কিসে আপনাকে এই শহরে এনেছে? তিনি (আবু যর (রাযিঃ) বললেন, আপনি যদি আমাকে সঠিক পথ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দেন ও প্রতিজ্ঞা করেন তাহলে আমি আপনার কাছে বলব। তিনি ওয়াদা করলেন।
তখন (আবু যর (রাযিঃ) তাকে সব অবহিত করলেন। এরপর আলী (রাযিঃ) বললেন, তিনি [নবী (ﷺ)] সত্য এবং তিনি আল্লাহর রাসুল। সকাল হলে আপনি আমাকে অনুসরণ করবেন। আমি যদি এমন কিছু দেখতে পাই যাতে আপনার আশঙ্কা আছে, তখন আমি দাঁড়িয়ে যাব, যেন আমি মুত্র ত্যাগ করছি। আর যদি আমি চলতে থাকি তাহলে আমাকে অনুসরণ করবেন। অবশেষে আমার প্রবেশস্থলে আপনি ঢুকে পড়বেন। তিনি তাই করলেন। তিনি তাঁর পিছনে চললেন, শেষ পর্যন্ত তিনি [আলী (রাযিঃ)] নবী (ﷺ) এর নিকট প্রবেশ করলেন আর আবু যর (রাযিঃ) ও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করলেন।
তারপর তিনি তার (নবী (ﷺ) এর) কথা শুনলেন এবং সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করলেন। এরপর নবী (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি তোমার গোত্রের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দাও। এ আমার নির্দেশ তোমার কাছে পৌছা পর্যন্ত (এভাবে থাকবে)। এরপর তিনি [আবু যর (রাযিঃ)] বললেন, সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, আমি তা মক্কাবাসীদের মাঝে চিৎকার করে ঘোষণা করব। তারপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন। তারপর উচ্চস্বরে ঘোষণা করলেনঃ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ ″আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসুল।″
এতে লোকেরা তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলল। আব্বাস (রাযিঃ) সেখানে এলেন এবং ঝুকে পড়ে তাকে দেখলেন। তিনি [আব্বাস (রাযিঃ)] বললেন, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি জান না যে, ইনি গিফার গোত্রের লোক? তোমাদের সিরিয়া দেশে বাণিজ্যের যাতায়াতের রাস্তা তাদের এলাকায়। তারপর তিনি তাকে তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনলেন। পরের দিন তিনি আবার আগের দিনের মতই করলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করল। আব্বাস (রাযিঃ) তাকে আড়াল করলেন এবং তাঁকে তিনি মুক্ত করলেন।
باب مِنْ فَضَائِلِ أَبِي ذَرٍّ رضى الله عنه
وَحَدَّثَنِي إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنُ عَرْعَرَةَ السَّامِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ حَاتِمٍ، - وَتَقَارَبَا فِي سِيَاقِ الْحَدِيثِ وَاللَّفْظُ لاِبْنِ حَاتِمٍ - قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ حَدَّثَنَا الْمُثَنَّى بْنُ سَعِيدٍ عَنْ أَبِي جَمْرَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ لَمَّا بَلَغَ أَبَا ذَرٍّ مَبْعَثُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِمَكَّةَ قَالَ لأَخِيهِ ارْكَبْ إِلَى هَذَا الْوَادِي فَاعْلَمْ لِي عِلْمَ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ يَأْتِيهِ الْخَبَرُ مِنَ السَّمَاءِ فَاسْمَعْ مِنْ قَوْلِهِ ثُمَّ ائْتِنِي . فَانْطَلَقَ الآخَرُ حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ وَسَمِعَ مِنْ قَوْلِهِ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَبِي ذَرٍّ فَقَالَ رَأَيْتُهُ يَأْمُرُ بِمَكَارِمِ الأَخْلاَقِ وَكَلاَمًا مَا هُوَ بِالشِّعْرِ . فَقَالَ مَا شَفَيْتَنِي فِيمَا أَرَدْتُ . فَتَزَوَّدَ وَحَمَلَ شَنَّةً لَهُ فِيهَا مَاءٌ حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ فَأَتَى الْمَسْجِدَ فَالْتَمَسَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَلاَ يَعْرِفُهُ وَكَرِهَ أَنْ يَسْأَلَ عَنْهُ حَتَّى أَدْرَكَهُ - يَعْنِي اللَّيْلَ - فَاضْطَجَعَ فَرَآهُ عَلِيٌّ فَعَرَفَ أَنَّهُ غَرِيبٌ فَلَمَّا رَآهُ تَبِعَهُ فَلَمْ يَسْأَلْ وَاحِدٌ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ عَنْ شَىْءٍ حَتَّى أَصْبَحَ ثُمَّ احْتَمَلَ قُرَيْبَتَهُ وَزَادَهُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَظَلَّ ذَلِكَ الْيَوْمَ وَلاَ يَرَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى أَمْسَى فَعَادَ إِلَى مَضْجَعِهِ فَمَرَّ بِهِ عَلِيٌّ فَقَالَ مَا أَنَى لِلرَّجُلِ أَنْ يَعْلَمَ مَنْزِلَهُ فَأَقَامَهُ فَذَهَبَ بِهِ مَعَهُ وَلاَ يَسْأَلُ وَاحِدٌ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ عَنْ شَىْءٍ حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمُ الثَّالِثِ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ فَأَقَامَهُ عَلِيٌّ مَعَهُ ثُمَّ قَالَ لَهُ أَلاَ تُحَدِّثُنِي مَا الَّذِي أَقْدَمَكَ هَذَا الْبَلَدَ قَالَ إِنْ أَعْطَيْتَنِي عَهْدًا وَمِيثَاقًا لَتُرْشِدَنِّي فَعَلْتُ . فَفَعَلَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ فَإِنَّهُ حَقٌّ وَهُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا أَصْبَحْتَ فَاتَّبِعْنِي فَإِنِّي إِنْ رَأَيْتُ شَيْئًا أَخَافُ عَلَيْكَ قُمْتُ كَأَنِّي أُرِيقُ الْمَاءَ فَإِنْ مَضَيْتُ فَاتَّبِعْنِي حَتَّى تَدْخُلَ مَدْخَلِي . فَفَعَلَ فَانْطَلَقَ يَقْفُوهُ حَتَّى دَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَدَخَلَ مَعَهُ فَسَمِعَ مِنْ قَوْلِهِ وَأَسْلَمَ مَكَانَهُ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " ارْجِعْ إِلَى قَوْمِكَ فَأَخْبِرْهُمْ حَتَّى يَأْتِيَكَ أَمْرِي " . فَقَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لأَصْرُخَنَّ بِهَا بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ . فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى الْمَسْجِدَ فَنَادَى بِأَعْلَى صَوْتِهِ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ . وَثَارَ الْقَوْمُ فَضَرَبُوهُ حَتَّى أَضْجَعُوهُ فَأَتَى الْعَبَّاسُ فَأَكَبَّ عَلَيْهِ فَقَالَ وَيْلَكُمْ أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ مِنْ غِفَارٍ وَأَنَّ طَرِيقَ تُجَّارِكُمْ إِلَى الشَّامِ عَلَيْهِمْ . فَأَنْقَذَهُ مِنْهُمْ ثُمَّ عَادَ مِنَ الْغَدِ بِمِثْلِهَا وَثَارُوا إِلَيْهِ فَضَرَبُوهُ فَأَكَبَّ عَلَيْهِ الْعَبَّاسُ فَأَنْقَذَهُ .

তাহকীক: