মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

مشكاة المصابيح للتبريزي

৯- কুরআনের ফাযাঈল অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

অনুসন্ধান করুন

হাদীস নংঃ ২২১৮
details icon

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২১৮। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সূরাসমূহের মধ্যে পার্থক্য বুঝিয়া উঠিতে পারিতেন না, যাবৎ না ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম' নাযিল হইত। —আবু দাউদ

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ২২১৯
details icon

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২১৯। (তাবেয়ী) হযরত আলকামা (রঃ) বলেন, আমরা হেমস শহরে ছিলাম। এ সময় একবার হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) সূরা ইউসুফ পড়িলেন। তখন এক ব্যক্তি বলিয়া উঠিল, ইহা এইরূপ নাযিল হয় নাই। হযরত আব্দুল্লাহ্ বলিলেন, খোদার কসম, আমি ইহা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর আমলে (তাঁহার দরবারে) পড়িয়াছি আর তিনি বলিয়াছেন, বেশ পড়িয়াছ। আলকামা বলেন, সে তাঁহার সহিত কথা বলিতেছিল এমন সময় তাহার মুখ হইতে শরাবের গন্ধ পাওয়া গেল। তখন হযরত আব্দুল্লাহ্ বলিলেন, (পাজি,—) শরাব খাও আর আল্লাহর কিতাবকে মিথ্যা প্রতিপন্ন কর ? অতঃপর তিনি তাহাকে (শরাব পানের) শাস্তি দিলেন। – মোত্তাঃ

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ২২২০
details icon

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২০। হযরত যায়দ ইবনে সাবেত (রাঃ) বলেন, ইয়ামামা যুদ্ধের সময় (অর্থাৎ, অব্যবহিত পরে) খলীফা আবু বকর আমাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। আমি যাইয়া দেখি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁহার নিকট বসা। হযরত আবু বকর বলিলেন, ওমর আমার নিকট আসিয়া বলেন, ইয়ামামা যুদ্ধে বহু হাফেযে কোরআন শহীদ হইয়াছেন, আমার আশংকা হয়, যদি বিভিন্ন স্থানে এভাবে হাফেযে কোরআন শহীদ হইতে থাকেন, তাহা হইলে কোরআনের অনেকাংশ লোপ পাইবে। অতএব, আমি সঙ্গত মনে করি যে, আপনি কোরআনকে (মাসহাফ বা কিতাব আকারে) একত্র করিতে নির্দেশ দিবেন। আমি ওমরকে বলিলাম, আপনি এমন কাজ কেমন করিয়া করিবেন যাহা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) করেন নাই? ওমর (রাঃ) বলিলেন, খোদার কসম, ইহা অতি উত্তম হইবে। এইরূপে ওমর আমাকে ইহা বার বার বলিতে লাগিলেন। অবশেষে ইহার জন্য আল্লাহ্ আমার অন্তরকে প্রশস্ত করিয়া দিলেন এবং আমিও সঙ্গত মনে করিলাম যাহা ওমর সঙ্গত মনে করিয়াছেন।
যায়দ বলেন, হযরত আবু বকর আমাকে বলিলেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান ও বিশ্বাসী জোয়ান, যাহার প্রতি আমরা কোন সন্দেহ পোষণ করি না, তুমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ওহীও লিখিতে। সুতরাং তুমি কোরআনের আয়াতসমূহ অনুসন্ধান কর এবং উহা (মাসহাফ আকারে) একত্র কর ? যায়দ বলেন, যদি তাঁহারা আমাকে পাহাড়সমূহের একটি পাহাড় স্থানান্তরিত করার দায়িত্ব অর্পণ করিতেন, তবে উহা আমার পক্ষে কোরআন একত্র করার যে গুরুদায়িত্ব তাহারা আমার উপর অর্পণ করিলেন, তাহা অপেক্ষা অধিকতর দুঃসাধ্য হইত না। যায়দ বলেন, আমি বলিলাম, আপনারা কেমন করিয়া এমন কাজ করিবেন যাহা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) করেন নাই ? তিনি বলিলেন, খোদার কসম, ইহা বড় উত্তম কাজ।
মোটকথা, হযরত আবু বকর এভাবে আমাকে পুনঃ পুনঃ বলিতে লাগিলেন, অবশেষে আল্লাহ্ আমার অন্তরকেও প্রশস্ত করিয়া দিলেন, যাহার জন্য হযরত আবু বকর ও ওমরের অন্তরকে প্রশস্ত করিয়া দিয়াছেন। সুতরাং আমি উহা সংগ্রহ করিলাম খেজুর ডালা, সাদা পাথর, পশুর হাড় ও মানুষের (হাফেযদের) অন্তর বা স্মৃতি হইতে। অবশেষে সূরা তওবার শেষাংশ— 'লাকাদ জা-আকুম রাসূলুম মিন আনফুসিকুম' – হইতে সূরার শেষ পর্যন্ত পাইলাম আবু খুযাইমা আনসারীর নিকট। উহা আমি তিনি ছাড়া অপর কাহারও নিকট পাই নাই। (যায়দ বলেন,) এই লিখিত সহীফাগুলি খলীফা হযরত আবু বকরের নিকট ছিল, যাবৎ না আল্লাহ্ তা'আলা তাঁহাকে উঠাইয়া লন। অতঃপর খলীফা হযরত ওমর ফারুকের নিকট তাঁহার জীবনাবধি, অতঃপর তাঁহার কন্যা উম্মুল মু'মিনীন হযরত হাফসার নিকট। —বুখারী

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ২২২১
details icon

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২১। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান খলীফা ওসমান গনী (রাঃ)-এর নিকট মদীনায় আগমন করিলেন, আর তখন তিনি (হুযায়ফা) ইরাকীদের সাথে থাকিয়া আর্মেনিয়া ও আযারবাইজান জয় করার জন্য শামবাসীদের সহিত যুদ্ধ করিতেছিলেন। লোকের বিভিন্ন রীতিতে কোরআন পাঠ হযরত হুযায়ফাকে উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিল। হুযায়ফা হযরত ওসমানকে বলিলেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! ইহুদী ও নাসারা -দের ন্যায় আল্লাহর কিতাবে বিভিন্নতা সৃষ্টির পূর্বে আপনি এই জাতিকে রক্ষা করুন। সুতরাং হযরত ওসমান উম্মুল মু'মিনীন হযরত হাফসার নিকট বলিয়া পাঠাইলেন, আপনার নিকট রক্ষিত কোরআনের সহীফাসমূহ (খণ্ডসমূহ) আমাদের নিকট পাঠাইয়া দিন। আমরা উহা বিভিন্ন মাসহাফে (কিতাবে) অনুলিপি করিয়া অতঃপর উহা আপনাকে ফিরাইয়া দিব। বিবি হাফসা উহা হযরত ওসমানের নিকট পাঠাইয়া দিলেন আর হযরত ওসমান সাহাবী যায়দ ইবনে সাবেত, আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবায়র, সায়ীদ ইবনে আ'স ও আব্দুল্লাহ্ ইবনে হারেস ইবনে হেশামকে উহা লিপি করিতে নির্দেশ দিলেন। সেমতে তাঁহারা বিভিন্ন মাসহাফে উহার অনুলিপি করিলেন। সে সময় হযরত ওসমান কুরাইশী তিনজনকে বলিয়া দিয়াছিলেন, যখন কোরআনের কোন স্থানে যায়দের সাথে আপনাদের মতভেদ হইবে, তখন আপনারা উহা কুরাইশদের রীতিতেই লিপিবদ্ধ করিবেন। কেননা, কোরআন (মূলতঃ) তাহাদের রীতিতেই নাযিল হইয়াছে। তাঁহারা সে মতে কাজ করিলেন। অবশেষে যখন তাঁহারা সমস্ত সহীফা বিভিন্ন মাসহাফে অনুলিপি করিলেন, হযরত ওসমান উক্ত সহীফাসমূহ বিবি হাফসার নিকট ফেরত পাঠাইলেন এবং তাহারা যাহা অনুলিপি করিয়াছিলেন উহার এক এক কপি রাজ্যের এক এক এলাকায় পাঠাইয়া দিলেন, আর ইহাছাড়া যে কোন সহীফায় বা মাসহাফে লেখা কোরআনকে জ্বালাইয়া দিতে নির্দেশ দিলেন।
ইবনে শেহার মুহরী বলেন, যায়দ ইবনে সাবেতের পুত্র খারেজা আমাকে জানাইয়াছেন যে, তিনি তাঁহার পিতা যায়দ ইবনে সাবেতকে বলিতে শুনিয়াছেন, আমরা যখন কোরআন নকল করি, তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত পাইলাম না, যাহা আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে পড়িতে শুনিয়াছি। অতএব, আমরা উহা তালাশ করিলাম এবং খুযাইমা ইবনে সাবেত আনসারীর নিকট উহা পাইলাম। অতঃপর আমরা উহাকে উহার সূরায় মাসহাফে সংযোজন করিলাম। তাহা হইতেছে, “মিনাল মু'মিনীনা রিজালুন সাদাকু মা আহাদুল্লাহা আলাইহি।” —বুখারী

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান

হাদীস নংঃ ২২২২
details icon

পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২২। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি একবার খলীফা হযরত ওসমানকে জিজ্ঞাসা করিলাম, কিসে আপনাদিগকে উদ্বুদ্ধ করিল যে, আপনারা সূরা আনফাল’, যাহা মাসানির অন্তর্গত ও সূরা 'বারাআত' যাহা মেয়ীনের অন্তর্গত, উভয়কে এক জায়গায় করিয়া দিলেন, আবার উহাদের মধ্যখানে 'বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম' লাইনও লেখিলেন না আর উহাদিগকে স্থান দিলেন সাবয়ে তেওয়ালের মধ্যে ?—কিসে আপনাদিগকে এইরূপ করিতে উদ্বুদ্ধ করিল? হযরত ওসমান বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর অবস্থা এই ছিল যে, দীর্ঘদিন এমনি অতিবাহিত হইত (তাহার উপর কিছু নাযিল হইত না); আবার কখনও তাঁহার উপর বিভিন্ন সূরা নাযিল হইত; যখন তাঁহার উপর কোরআনের কোন কিছু নাযিল হইত, তিনি তাহার কোন লেখক সাহাবীকে ডাকিয়া বলিতেন, এসকল আয়াতকে অমুক সূরায় রাখ, যাহাতে অমুক অমুক বর্ণনা রহিয়াছে, অতঃপর যখন অপর কোন আয়াত নাযিল হইত, বলিতেন, এই আয়াতকে অমুক সূরায় রাখ যাহাতে অমুক অমুক বর্ণনা রহিয়াছে। সূরা 'আনফাল' হইল মদীনায় প্রথম অবতীর্ণ সূরাসমূহের অন্তর্গত আর 'বারাআত' হইল অবতীর্ণের দিক দিয়া শেষ, অথচ ইহার বিবরণ উহার বিবরণেরই অনুরূপ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে উঠাইয়া লওয়া হইল, অথচ তিনি আমাদিগকে বলিয়া যাইতে পারিলেন না উহা আনফালের অন্তর্গত কিনা। এ কারণেই (অর্থাৎ, উভয়ের মদনী হওয়ার ও বিবরণ এক হওয়ার কারণেই) আমি পরস্পরকে মিলাইয়া দিয়াছি এবং বিসমিল্লাহর ছতরও লেখি নাই এবং উহাকে সাবয়ে তেওয়ালের মধ্যে স্থান দিয়াছি। —আহমদ, তিরমিযী ও আবু দাউদ

tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক চলমান