মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
مشكاة المصابيح للتبريزي
৩- ইলমের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ
মোট হাদীস ১৪ টি
অনুসন্ধান করুন
হাদীস নংঃ ২০১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০১। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, স্বর্ণ রৌপ্যের খনিসমূহের ন্যায় মানব জাতিও (নানা গোত্র ও কবিলার) খনিসমূহ। তাদের মধ্যে যারা (যে গোত্র) অন্ধকার যুগে উত্তম ছিল, তারা ইসলামী যুগেও উত্তম, যখন দ্বীনের গভীর জ্ঞান লাভ করবে। -মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০২। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া কেউ ঈর্ষণীয় নয়। প্রথম ব্যক্তি-যাকে আল্লাহ্ ধন-সম্পদ দিয়েছেন এবং সাথে সাথে তাকে তা উত্তম কাজে ব্যয় করার জন্য মনোবৃত্তিও দান করেছেন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে আল্লাহ্ হেকমত (তীক্ষ্ণ জ্ঞান) দান করেছেন এবং সে তা কাজে লাগায় আর (অপরকেও) শিক্ষা দেয়। বুখারী, মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০৩

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৩। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, মানুষ মারা যাওয়ার সাথে সাথে তার আমলও তার পুণ্য বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু তিনটি আমল (ও তার পুণ্য) বন্ধ হয় না । যথাঃ (১) সাদাকায়ে জারিয়া, (২) ইলম-যদ্বারা (মানুষের) উপকার হয়ে থাকে এবং (৩) নেককার সন্তান-যে তার জন্য দুআ করে। -মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৪। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন মু'মিন ব্যক্তির দুনিয়ার কষ্ট-ক্লেশ হতে একটি কষ্ট দূর করে দিবে, আল্লাহ্ পাক তার রোজ কিয়ামতের কষ্টের মধ্য হতে একটি কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবী লোকের অভাব (সাহায্যের মাধ্যমে) মোচন করে দিবে, আল্লাহ্ পাক দুনিয়া ও আখেরাতে তার অভাব মোচন করে দিবেন এবং যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে, আল্লাহ্ পাক ইহ-পরকালে তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। আল্লাহ্ পাক বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার ভ্রাতার সাহায্য করতে থাকে। যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য কোন পথে চলে, আল্লাহ্ তার মাধ্যমে তার বেহেশতের পথ সহজ করে দিবেন এবং যখনই কোন একটি দল আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন একটি ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করতে থাকে এবং পরস্পর তার আলোচনা করে (আল্লাহর তরফ হতে) তাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হতে থাকে এবং আল্লাহ্র রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়। ফিরিশতাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং আল্লাহ্ পাক তার নিকটবর্তী ফিরিশতাগণের নিকট তাদের বিষয় আলোচনা করেন। আর যার আমল তাকে পিছনে হটিয়ে দেয় তার বংশ তাকে অগ্রসর করে দিতে পারে না। -মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৫। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, রোজ কিয়ামতে প্রথমে যার বিচার হবে, সে একজন শাহাদতপ্রাপ্ত লোক। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ্ পাক তাকে (দুনিয়ায় প্রদত্ত) নিজ নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর তারও তা স্মরণে আসবে। তারপর আল্লাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করবেন যে, (এই নিয়ামতের বিনিময়ে) তুমি দুনিয়ায় কি কাজ করেছ? সে বলবে, তোমার উদ্দেশ্যে তোমার রাস্তায় জিহাদ করেছি। এমন কি শেষ পর্যন্ত আমি শাহাদত বরণ করেছি। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি যুদ্ধ করেছিলে মানুষ তোমাকে বীর বাহাদুর বলবে এই উদ্দেশ্যে। আর তা তোমাকে বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে। তখন তাকে উপুড় অবস্থায় টেনে নিয়ে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে।
দ্বিতীয় ব্যক্তি হল যে ইলম শিখেছে এবং অপরকেও তা শিখিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে, তাকে দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ্ প্রথমে তাকে নিজ প্রদত্ত নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং তারও স্মরণে আসবে। তখন আল্লাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সকল নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনস্বরূপ তুমি কি করেছ? সে বলবে, আমি তোমার ইলম শিখেছি এবং অপরকেও শিখিয়েছি, আর তোমার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কুরআন পাঠ করেছি। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি ইলম শিখিয়েছিলে এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে আলিম বলা হবে, আর কুরআন পাঠ করেছিলে এই উদ্দেশ্যে , তোমাকে কারী বলা হবে। আর তা তোমাকে বলাও হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে দোযখে ফেলে দেয়া হবে।
তৃতীয় ব্যক্তি হল, যাকে আল্লাহ্ বহু সম্পদ দান করেছিলেন এবং সে নানাভাবে দান খয়রাতও করেছিল। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ্ তাকে স্বীয় নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। তারও তা স্মরণে আসবে। অতঃপর আল্লাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, (আমার প্রদত্ত) এই সকল নিয়ামতের শোকরস্বরূপ তুমি কি করেছ? সে বলবে, যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও, তেমন কোন রাস্তায়ই দান করতে আমি বাকী রাখিনি। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি দান করেছ এই উদ্দেশ্যে যে তোমাকে একজন দানশীল বলা হবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে। তখন তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে দোযখে ফেলে দেওয়া হবে। -মুসলিম
দ্বিতীয় ব্যক্তি হল যে ইলম শিখেছে এবং অপরকেও তা শিখিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে, তাকে দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ্ প্রথমে তাকে নিজ প্রদত্ত নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং তারও স্মরণে আসবে। তখন আল্লাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এই সকল নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনস্বরূপ তুমি কি করেছ? সে বলবে, আমি তোমার ইলম শিখেছি এবং অপরকেও শিখিয়েছি, আর তোমার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কুরআন পাঠ করেছি। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি ইলম শিখিয়েছিলে এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে আলিম বলা হবে, আর কুরআন পাঠ করেছিলে এই উদ্দেশ্যে , তোমাকে কারী বলা হবে। আর তা তোমাকে বলাও হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে দোযখে ফেলে দেয়া হবে।
তৃতীয় ব্যক্তি হল, যাকে আল্লাহ্ বহু সম্পদ দান করেছিলেন এবং সে নানাভাবে দান খয়রাতও করেছিল। তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ্ তাকে স্বীয় নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। তারও তা স্মরণে আসবে। অতঃপর আল্লাহ্ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, (আমার প্রদত্ত) এই সকল নিয়ামতের শোকরস্বরূপ তুমি কি করেছ? সে বলবে, যে সকল রাস্তায় দান করলে তুমি খুশী হও, তেমন কোন রাস্তায়ই দান করতে আমি বাকী রাখিনি। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি দান করেছ এই উদ্দেশ্যে যে তোমাকে একজন দানশীল বলা হবে। আর তা বলাও হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে। তখন তাকে উপুড় করে টেনে নিয়ে দোযখে ফেলে দেওয়া হবে। -মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৬। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, (শেষ যমানায়) আল্লাহ্ পাক ইলম তাঁর বান্দাদের অন্তর হতে টেনে বের করে উঠিয়ে নিবেন না; বরং আলিমদেরকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই ইলম তুলে নিবেন। শেষ পর্যন্ত দুনিয়ায় যখন আর কোন আলিমই অবশিষ্ট থাকবে না, তখন মানুষ অজ্ঞ-মূর্খদেরকে নেতারূপে মেনে নেবে। তারপর তাদের নিকটই মাসআলা মাসায়েল জিজ্ঞেস করা হবে আর তারা না জেনেই ফতোয়া দিবে। এভাবে নিজেরাও গোমরাহ হবে এবং অপরকেও গোমরাহ বানাবে। -বুখারী, মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০৭

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৭। হযরত শকীক (রহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) প্রত্যেক বৃহস্পতিবার লোকদের মাঝে ওয়াজ করতেন। একদা এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে আবু আব্দুর রহমান। আমার বাসনা যে, আপনি প্রত্যেকদিন এরূপ আমাদের মাঝে ওয়াজ করুন। তিনি বললেন, এ বিষয়টি আমাকে ঐরূপ করতে বাধা দেয় যে, আমি তোমাদের বিরক্তির উদ্রেক করতে অপছন্দ করি। যে কারণে আমি কয়েকদিন পরে পরেই তোমাদের মাঝে ওয়াজ করি। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ও আমাদের বিরক্তির আশংকায় মাঝে মাঝে আমাদের মধ্যে ওয়াজ করতেন। -বুখারী, মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৮। হযরত আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন কথা বলতেন তখন তিনবার তা বলতেন, যাতে উত্তমরূপে বুঝে নিতে পারা যায়। এভাবে তিনি কোন সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে তাদেরকে তিনবার করে* সালাম করতেন। -বুখারী
* তিনবার সালামকে পুনরাবৃত্তির ব্যাখ্যা হলো এই-
(ক) নবী করীম (ﷺ) যখন কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের নিকট যেতেন, প্রথমে সামনের দিকে সালাম দিতেন, দ্বিতীয়বার ডানদিকে এবং তৃতীয়বার বাম দিকে সালাম দিতেন। লোকেরা নবী করীম (ﷺ)-এর সালামকে খুব বরকতময় ও দুআ মনে করতেন। কাজেই তাঁর সালাম শোনা থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়; বরং সকলেই তা শুনতে পায়, এ জন্য তিনি তিনবার সালাম দিতেন।
(খ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনও কোনো বাড়িতে গেলে প্রথমত একটি সালাম দিতেন, তাতে কোনো উত্তর না আসলে দ্বিতীয়বার সালাম দিতেন, তাতেও কোনো উত্তম না আসলে তৃতীয়বার সালাম দিয়ে ফিরে আসতেন।
(গ) প্রথম সালাম অনুমতি লাভের জন্য, দ্বিতীয় সালাম মজলিসে প্রবেশের সময় এবং তৃতীয় সালাম বিদায়ের প্রাক্কালে দিতেন।
* তিনবার সালামকে পুনরাবৃত্তির ব্যাখ্যা হলো এই-
(ক) নবী করীম (ﷺ) যখন কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের নিকট যেতেন, প্রথমে সামনের দিকে সালাম দিতেন, দ্বিতীয়বার ডানদিকে এবং তৃতীয়বার বাম দিকে সালাম দিতেন। লোকেরা নবী করীম (ﷺ)-এর সালামকে খুব বরকতময় ও দুআ মনে করতেন। কাজেই তাঁর সালাম শোনা থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়; বরং সকলেই তা শুনতে পায়, এ জন্য তিনি তিনবার সালাম দিতেন।
(খ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনও কোনো বাড়িতে গেলে প্রথমত একটি সালাম দিতেন, তাতে কোনো উত্তর না আসলে দ্বিতীয়বার সালাম দিতেন, তাতেও কোনো উত্তম না আসলে তৃতীয়বার সালাম দিয়ে ফিরে আসতেন।
(গ) প্রথম সালাম অনুমতি লাভের জন্য, দ্বিতীয় সালাম মজলিসে প্রবেশের সময় এবং তৃতীয় সালাম বিদায়ের প্রাক্কালে দিতেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২০৯

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৯। হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাহনটি চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, আমাকে একটি বাহনের ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বললেন, এখন তো আমার নিকট কোন বাহন নেই। তখন এক লোক বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাকে একজন লোকের কথা বলতে পারি, যে তাকে বাহনের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কেউ কোন সৎকাজের পথ দেখিয়ে দিলে সৎকাজ সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব তার আমলনামায় লিখিত হয়। -মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২১০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২১০। হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা দিনের পূর্বাহ্নে আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে ছিলাম। এমন সময় একদল লোক প্রায় বিবস্ত্র দেহে একটি কালো ডোরাওয়ালা চাদর পেঁচিয়ে অথবা আবা পরে কোনরূপে শরীর ঢেকে (কাঁধে) তরবারী ঝুলিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হল। তাদের অধিকাংশ বরং প্রায় সকলেই মুদার গোত্রের লোক ছিল। তাদের মধ্যে ক্ষুধার চিহ্ন দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি তখন গৃহে প্রবেশ করলেন। অতঃপর বাইরে এসে হযরত বেলাল (রাযিঃ)-কে আযান ও একামত দিতে নির্দেশ করলেন। হযরত বেলাল (রাযিঃ) আযান ও একামত দিলে তিনি (সকলকে নিয়ে) নামায আদায় করলেন। অবশেষে তিনি ওয়াজ করার শুরুতে এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ "হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। তিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে পয়দা করেছেন এবং তার দ্বারাই তার স্ত্রী পয়দা করেছেন। তারপর তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দেন এবং তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট নিজ নিজ হক দাবী কর এবং সতর্ক থাকো আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা) থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।"
অতঃপর রাসূলে পাক (ﷺ) সূরা হাশরের এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ “তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং তোমাদের প্রত্যেকেরই লক্ষ্য রাখা উচিত যে, সে আগামীকাল অর্থাৎ রোজ কিয়ামতের জন্য কি অগ্রিম পাঠিয়েছে?”
এরপর রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই তার দীনার, দিরহাম, বস্ত্র, গমের পাত্র এবং খেজুরের পাত্র হতে দান-খয়রাত করা উচিত। অবশেষে তিনি বললেন, যদিও বা খেজুরের এক টুকরা মাত্র হয়। জারীর (রাযিঃ) বলেন, এটা শুনে আনসারীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এল, যা উত্তোলন করতে তার হাত প্রায় অসমর্থ হয়ে পড়ছিল; বরং সে তা তুলতেই পারছিল না। অতঃপর লোকজন একে অন্যের অনুসরণ করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল যে, খাদ্য ও বজ্রের দুইটি স্তূপ হয়ে গিয়েছে। আমি দেখলাম যে, খুশীতে ও আনন্দে রাসূলে পাক (ﷺ)-এর পবিত্র চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মনে হল যেন তা স্বর্ণখচিত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোন সুন্দর রীতির প্রচলন করবে তার জন্য তার কাজের ছওয়াব রয়েছে। আর তার পরে যারা ঐ কাজ করবে তাদের ছওয়াবও তার মিলবে। অথচ তাতে তাদের ছওয়াবের এতটুকু হ্রাস করা হবে না। এইভাবে যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ রীতি প্রচলন করবে, তার জন্যও তার কাজের গুনাহ এবং পরে যারা ঐ কাজ করবে তাদের গুনাহ রয়েছে। অথচ এতে তাদের গুনাহর এতটুকু মাত্র হ্রাস করা হবে না। -মুসলিম
অতঃপর রাসূলে পাক (ﷺ) সূরা হাশরের এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ “তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং তোমাদের প্রত্যেকেরই লক্ষ্য রাখা উচিত যে, সে আগামীকাল অর্থাৎ রোজ কিয়ামতের জন্য কি অগ্রিম পাঠিয়েছে?”
এরপর রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই তার দীনার, দিরহাম, বস্ত্র, গমের পাত্র এবং খেজুরের পাত্র হতে দান-খয়রাত করা উচিত। অবশেষে তিনি বললেন, যদিও বা খেজুরের এক টুকরা মাত্র হয়। জারীর (রাযিঃ) বলেন, এটা শুনে আনসারীদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এল, যা উত্তোলন করতে তার হাত প্রায় অসমর্থ হয়ে পড়ছিল; বরং সে তা তুলতেই পারছিল না। অতঃপর লোকজন একে অন্যের অনুসরণ করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল যে, খাদ্য ও বজ্রের দুইটি স্তূপ হয়ে গিয়েছে। আমি দেখলাম যে, খুশীতে ও আনন্দে রাসূলে পাক (ﷺ)-এর পবিত্র চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মনে হল যেন তা স্বর্ণখচিত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি ইসলামে কোন সুন্দর রীতির প্রচলন করবে তার জন্য তার কাজের ছওয়াব রয়েছে। আর তার পরে যারা ঐ কাজ করবে তাদের ছওয়াবও তার মিলবে। অথচ তাতে তাদের ছওয়াবের এতটুকু হ্রাস করা হবে না। এইভাবে যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ রীতি প্রচলন করবে, তার জন্যও তার কাজের গুনাহ এবং পরে যারা ঐ কাজ করবে তাদের গুনাহ রয়েছে। অথচ এতে তাদের গুনাহর এতটুকু মাত্র হ্রাস করা হবে না। -মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২১১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২১১। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে কোন লোককে জুলুম করে হত্যা করা হোক না কেন, তার হত্যার গুনাহর কিছু অংশ হত্যাকারী আদমের প্রথম সন্তানের উপর (অবশ্যই) বর্তাবে। কেননা সে-ই (দুনিয়ায়) প্রথম হত্যার প্রচলন ঘটিয়েছে। -বুখারী, মুসলিম

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২১২

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১২। হযরত কাছীর ইবনে কায়েস (রহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি দামেশকের মসজিদে একদা হযরত আবু দারদা (রাযিঃ)-এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় তার নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু দারদা! আমি সুদূর মদীনা হতে আপনার নিকট মাত্র একটি হাদীসের উদ্দেশ্যে আগমন করেছি। তা ছাড়া অন্য কোন প্রয়োজনে আসিনি। শুনলাম, আপনি নাকি সেই হাদীসটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে রেওয়ায়াত করে থাকেন? হযরত আবু দারদা (রাযিঃ) বললেন, হ্যাঁ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষা করার জন্য কোন পথ চলে, আল্লাহ্ পাক তাদ্বারা তাকে বেহেশতের যে কোন একটি পথে পৌঁছে দেন এবং ফিরিশতাগণ সে তালেবে ইলমের সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। এছাড়া আলিমদের জন্য সকল আসমান ও যমিনের অধিবাসীগণ আল্লাহর নিকট দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এমনকি পানির মধ্যে বসবাসকারী মৎস্যসমূহও। আলিমদের মাহাত্ম্য ও ফজীলত ইলমহীন আবেদগণের উপর, যেমন পূর্ণিমা রাতের পূর্ণচন্দ্রের মর্তবা যাবতীয় নক্ষত্রের উপর। আলিমগণ হলেন, নবী রাসূলগণের ওয়ারিস। আর নবী রাসূলগণ কোন দীনার বা দেরহাম মীরাছ রেখে যান না। তারা মীরাছস্বরূপ রেখে যান শুধু ইলম; সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম গ্রহণ করেছে, সে পূর্ণ অংশই গ্রহণ করেছে। -আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২১৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৩। হযরত আবু উমামাহ বাহেলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট দু'জন লোক সম্পর্কে আলোচনা করা হল। তাদের একজন হল আবেদ। আর একজন আলিম। (এদের মধ্যে কার ফজীলত বেশী?) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আবেদের উপর আলিমের ফজীলত এইরূপঃ যেমন আমার ফজীলত তোমাদের মধ্যে নিম্ন পর্যায়ের একজন সাধারণ লোকের উপর। এর পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করলেন, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর ফিরিশতাগণ এবং আসমান যমিনের অধিবাসীগণ এমন কি গর্ভের পিপীলিকা এবং মৎস্য পর্যন্ত ইলম শিক্ষাদানকারীর জন্য দুআ করে থাকে। -তিরমিযী

তাহকীক:
তাহকীক চলমান
হাদীস নংঃ ২১৪

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১৪। ইমাম দারেমী মাকহুল থেকে মুরসাল সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সেখানে তিনি رجلان শব্দটি উল্লেখ করেননি। (তাতে বলা হয়েছে) রাসূল (ﷺ) বলেছেন- فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ অর্থাৎ, আবিদের উপর আলিমের শ্রেষ্ঠত্ব, যেমন আমার শ্রেষ্ঠত্ব তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির উপর। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করেন- إِنَّمَا يخْشَى الله من عباده الْعلمَاء অর্থাৎ, একমাত্র আলেমগণই আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করে। এছাড়া তিনি হাদীসের বাকি অংশ ইমাম তিরমিযীর ন্যায়ই বর্ণনা করেছেন।

তাহকীক:
তাহকীক চলমান