আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৭৯- আহকাম (রাষ্ট্রনীতি) অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৬৬৭৭
আন্তর্জাতিক নং: ৭১৬৩ - ৭১৬৪
৩০২০. ব্যক্তি কখন বিচারক হওয়ার যোগ্য হয়।
হাসান (রাহঃ) বলেন, আল্লাহ্ তাআলা বিচারকদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, তারা যেন কখনও প্রবৃত্তির অনুসরণ না করেন, মানুষকে ভয় না করেন এবং স্বল্পমূল্যের বিনিময়ে আল্লাহর আয়াতকে বিক্রয় না করেন। এরপর তিনি (এর প্রমাণ হিসাবে) পড়লেন, ইরশাদ হলোঃ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি। অতএব তুমি লোকদের মধ্যে সুবিচার কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবে না। কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। যারা আল্লাহর পথ পরিত্যাগ করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কারণ তারা বিচার দিবস সম্পর্কে বিস্মৃত হয়ে আছে (৩৮: ২৬)।
তিনি আরো পাঠ করলেন, (আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের বাণীঃ) আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম। এতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো। নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইহুদীদের তদনুসারে বিধান দিত, আরো বিধান দিত রাব্বানীরা এবং বিজ্ঞানীরা, কারণ তাদের করা হয়েছিল আল্লাহর কিতাবের রক্ষক ........ আল্লাহ্ তাআলা যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয়না, তারাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারী (৫: ৪৪)।
এবং আরো পাঠ করলেন, (আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ) স্মরন কর দাউদ ও সুলাইমানের কথা, যখন তারা বিচার করেছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে; এতে রাতে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের মেষ; আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার এবং সুলাইমানকে এ মিমাংসা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। আমি তাদের প্রত্যেককে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান.....(২১: ৭৮-৭৯)। (আল্লাহ্ তাআলা) সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) এর প্রশংসা করেছেন, তবে দাউদ (আলাইহিস সালাম) এর তিরস্কার করেননি। যদি আল্লাহ্ তাআলা দু’জনের অবস্থাকেই উল্লেখ না করতেন, তাহলে মনে করা হত যে, বিচারকরা ধ্বংস হয়ে গেছেন। তিনি তাঁর (সুলাইমানের) ইলমের প্রশংসা করেছেন এবং (দাউদকে) তাঁর ইজতিহাদের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছেন।
মুযাহিম ইবনে যুফার (রাহঃ) বলেন, উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ) আমাদের বলেছেন যে, পাঁচটি গুণ এমন যে, কাযীর মধ্যে যদি একটিরও অভাব থাকে, তা হলে সেটা তার জন্য দোষ বলে গণ্য হবে। তাকে হতে হবে বুদ্ধিমান, ধৈর্যশীল, পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, দৃঢ়প্রত্যয়ী ও জ্ঞানী-জ্ঞানের অনুসন্ধিৎসু।
অনুচ্ছেদঃ ৩০২১. প্রশাসক ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভাতা।
বিচারপতি শুরায়হ্ (রাহঃ) বিচারকার্যের জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন।
আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, (ইয়াতীমের) তত্ত্বাবধানকারী সম্পদ থেকে তার পারিশ্রমিকের সমপরিমাণ খেতে পারবেন। আবু বকর (রাযিঃ) ও উমর (রাযিঃ) (রাষ্ট্রীয় ভাতা) ভোগ করেছেন।
৬৬৭৭। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে সা’দী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, উমর (রাযিঃ) এর খিলাফতকালে তিনি একবার তার কাছে আসলেন। তখন উমর (রাযিঃ) তাকে বললেন, আমাকে কি এ মর্মে অবগত করা হয়নি যে, তুমি জনগণের অনেক দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে থাক। অথচ যখন তোমাকে এর পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়, তখন তুমি তা গ্রহণ করাকে অপছন্দ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ। উমর (রাযিঃ) বললেন, কী উদ্দেশ্যে তুমি এরূপ কর। আমি বললাম, আমার বহু ঘোড়া ও গোলাম রয়েছে এবং আমি ভাল অবস্থায় আছি। সুতরাং আমি চাই যে, আমার পারিশ্রমিক মুসলমান জনসাধারনের জন্য সাদ্‌কা হিসাবে পরিগণিত হোক। উমর (রাযিঃ) বললেনঃ এরূপ করো না। কেননা, আমিও তোমার মত এরূপ ইচ্ছা পোষণ করতাম। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন আমাকে কিছু দিতেন, তখন আমি বলতাম, আমার চেয়ে যার প্রয়োজন বেশী তাকে প্রদান করুন। এভাবে একবার তিনি আমাকে কিছু মাল দিলেন। আমি বললাম, আমার চেয়ে এ মালের প্রয়োজন যার বেশী তাকে দিন। তখন নবী (ﷺ) বললেনঃ একে গ্রহণ করে মালদার হও এবং বৃদ্ধি করে তা থেকে সাদ্‌কা কর। আর এই মাল সম্পদের যা কিছু তোমার নিকট এভাবে আসে, তুমি যার প্রত্যাশী নও বা প্রার্থী নও তা গ্রহণ করো। অন্যথায় তার পিছনে নিজেকে ধাবিত করো না।
যুহরী (রাহঃ)......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) সূত্রে বলেন, তিনি উমর (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, নবী (ﷺ) আমাকে যখন কিছু দান করতেন, তখন আমি বলতাম আমার চেয়ে যার প্রয়োজন বেশী তাকে দিন। এভাবে একবার তিনি আমাকে কিছু মাল দিলেন। আমি বললাম, আমার চেয়ে যার প্রয়োজন বেশী তাকে প্রদান করুন। তখন নবী (ﷺ) বললেনঃ একে গ্রহণ কর এবং বৃদ্ধি করে তা থেকে সাদ্‌কা কর। আর এই প্রকার মালের যা কিছু তোমার কাছে এমতাবস্থায় আসে যে তুমি তার প্রত্যাশীও নও এবং প্রার্থীও নও তাহলে তা গ্রহণ করো, তবে যা এভাবে আসবে না তার পিছনে নিজেকে ধাবিত করো না।
بَابٌ: مَتَى يَسْتَوْجِبُ الرَّجُلُ القَضَاءَ
وَقَالَ الحَسَنُ: " أَخَذَ اللَّهُ عَلَى الحُكَّامِ أَنْ لاَ يَتَّبِعُوا الهَوَى، وَلاَ يَخْشَوُا النَّاسَ، وَلاَ يَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا، ثُمَّ قَرَأَ: {يَا دَاوُدُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الأَرْضِ، فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالحَقِّ، وَلاَ تَتَّبِعِ الهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ، إِنَّ الَّذِينَ يَضِلُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا نَسُوا يَوْمَ الحِسَابِ} ، وَقَرَأَ: {إِنَّا أَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا وَالرَّبَّانِيُّونَ وَالأَحْبَارُ بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ، وَكَانُوا عَلَيْهِ شُهَدَاءَ، فَلاَ تَخْشَوُا النَّاسَ وَاخْشَوْنِ، وَلاَ تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الكَافِرُونَ} [المائدة: 44] ، " {بِمَا اسْتُحْفِظُوا} [المائدة: 44] : اسْتُوْدِعُوا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ "، وَقَرَأَ: {وَدَاوُدَ، وَسُلَيْمَانَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِي الحَرْثِ إِذْ نَفَشَتْ فِيهِ غَنَمُ القَوْمِ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِينَ، فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ وَكُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا} ، «فَحَمِدَ سُلَيْمَانَ وَلَمْ يَلُمْ دَاوُدَ، وَلَوْلاَ مَا ذَكَرَ اللَّهُ مِنْ أَمْرِ هَذَيْنِ لَرَأَيْتُ أَنَّ القُضَاةَ هَلَكُوا، فَإِنَّهُ أَثْنَى عَلَى هَذَا بِعِلْمِهِ وَعَذَرَ هَذَا بِاجْتِهَادِهِ» وَقَالَ مُزَاحِمُ بْنُ زُفَرَ: قَالَ لَنَا عُمَرُ بْنُ عَبْدِ العَزِيزِ: " خَمْسٌ إِذَا أَخْطَأَ القَاضِي مِنْهُنَّ خَصْلَةً، كَانَتْ فِيهِ وَصْمَةٌ: أَنْ يَكُونَ فَهِمًا، حَلِيمًا، عَفِيفًا، صَلِيبًا، عَالِمًا، سَئُولًا عَنِ العِلْمِ "
باب رِزْقِ الْحُكَّامِ وَالْعَامِلِينِ عَلَيْهَا وَكَانَ شُرَيْحٌ الْقَاضِي يَأْخُذُ عَلَى الْقَضَاءِ أَجْرًا. وَقَالَتْ عَائِشَةُ يَأْكُلُ الْوَصِيُّ بِقَدْرِ عُمَالَتِهِ، وَأَكَلَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ
7163 - حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ [ص:68]، عَنِ الزُّهْرِيِّ، أَخْبَرَنِي السَّائِبُ بْنُ يَزِيدَ، ابْنُ أُخْتِ نَمِرٍ، أَنَّ حُوَيْطِبَ بْنَ عَبْدِ العُزَّى، أَخْبَرَهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ السَّعْدِيِّ، أَخْبَرَهُ أَنَّهُ قَدِمَ عَلَى عُمَرَ فِي خِلاَفَتِهِ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: أَلَمْ أُحَدَّثْ أَنَّكَ تَلِيَ مِنْ أَعْمَالِ النَّاسِ أَعْمَالًا، فَإِذَا أُعْطِيتَ العُمَالَةَ كَرِهْتَهَا، فَقُلْتُ: بَلَى، فَقَالَ عُمَرُ: فَمَا تُرِيدُ إِلَى ذَلِكَ، قُلْتُ: إِنَّ لِي أَفْرَاسًا وَأَعْبُدًا وَأَنَا بِخَيْرٍ، وَأُرِيدُ أَنْ تَكُونَ عُمَالَتِي صَدَقَةً عَلَى المُسْلِمِينَ، قَالَ عُمَرُ: لاَ تَفْعَلْ، فَإِنِّي كُنْتُ أَرَدْتُ الَّذِي أَرَدْتَ، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِينِي العَطَاءَ، فَأَقُولُ: أَعْطِهِ أَفْقَرَ إِلَيْهِ مِنِّي، حَتَّى أَعْطَانِي مَرَّةً مَالًا، فَقُلْتُ: أَعْطِهِ أَفْقَرَ إِلَيْهِ مِنِّي، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذْهُ، فَتَمَوَّلْهُ، وَتَصَدَّقْ بِهِ، فَمَا جَاءَكَ مِنْ هَذَا المَالِ وَأَنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلاَ سَائِلٍ فَخُذْهُ، وَإِلَّا فَلاَ تُتْبِعْهُ نَفْسَكَ»
7164 - وَعَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: حَدَّثَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ: سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ يَقُولُ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِينِي العَطَاءَ، فَأَقُولُ أَعْطِهِ أَفْقَرَ إِلَيْهِ مِنِّي، حَتَّى أَعْطَانِي مَرَّةً مَالًا، فَقُلْتُ: أَعْطِهِ مَنْ هُوَ أَفْقَرُ إِلَيْهِ مِنِّي، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذْهُ، فَتَمَوَّلْهُ، وَتَصَدَّقْ بِهِ، فَمَا جَاءَكَ مِنْ هَذَا المَالِ وَأَنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلاَ سَائِلٍ فَخُذْهُ، وَمَالاَ فَلاَ تُتْبِعْهُ نَفْسَكَ»