আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৭৭- স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা সংক্রান্ত অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৬৫১১
আন্তর্জাতিক নং: ৬৯৮২
২৯২৯. স্বপ্নের ব্যাখ্যা অধ্যায়ঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ওহীর সূচনা হয় ভালো স্বপ্নের মাধ্যমে।
৬৫১১। ইয়াহয়া ইবনে বুকায়র ও আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ওহীর সূচনা হয় ঘুমের ঘোরে ভালো স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন তা ভোরের আলোর ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে প্রতিফলিত হতো। তিনি হেরা গুহায় গমন করে সেখানে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে কাটিয়ে দিতেন এবং এজন্য খাদ্য সামগ্রীও সাথে নিয়ে যেতেন। এরপর খাদীজা (রাযিঃ) এর কাছে ফিরে আসতেন এবং তিনি তাকে অনুরূপ খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুত করে দিতেন। অবশেষে তাঁর কাছে সত্যের বাণী (ওহী) আসল। আর এ সময় তিনি হেরা গুহায় ছিলেন। সেখানে ফিরিশতা এসে তাঁকে বলল, আপনি পড়ুন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমি বললামঃ আমি তো পাঠক নই। তখন তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে চাপ দিলেন। এমনকি এতে আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন, আপনি পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পাঠক নই। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে শক্ত করে চাপ দিলেন। এবারেও এতে আমার খুব কষ্ট হল। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, আপনি পড়ুন। আমি বললাম, আমি তো পাঠক নই। এরপর তিনি তৃতীয়বার আমাকে শক্ত করে এমন চাপ দিলেন যে, এবারেও এতে আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পাঠ করুন, আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ......... যা সে জানত না (৯৪ঃ ১-৫) এ আয়াত পর্যন্ত।
এরপর তিনি তা নিয়ে খাদীজা (রাযিঃ) এর কাছে কম্পিত হৃদয়ে ফিরে এলেন। আর বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। ফলে তাঁরা তাঁকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর থেকে ভীতি দূর হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, হে খাদীজা! আমার কি হল? এবং তাকে সমূহ ঘটনা জানালেন। আর বললেনঃ আমি আমার জীবন সম্পর্কে শংকাবোধ করছি। খাদীজা (রাযিঃ) তাকে বললেন, কখনোই না। আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ্ আপনাকে কখনোই লাঞ্চিত করবেন না। কেননা, আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখেন, সত্য কথা বলেন, অনাথ অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদের মেহমানদারী করেন এবং হকের পথে আগত যাবতীয় বিপদে সাহায্য করেন। অতঃপর খাদীজা (রাযিঃ) তাঁকে নিয়ে ওরাকা ইবনে নাওফাল ইবনে আসাদ ইবনে আব্দুল উযযা ইবনে কুসাই এর কাছে এলেন। আর তিনি খাদীজা (রাযিঃ) এর চাচার পুত্র (চাচাত ভাই) ছিলেন। তিনি জাহিলী যুগে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবী কিতাব লিখতেন। তিনি ইঞ্জিল কিতাব আরবীতে ভাষান্তর করেছেন যতখানি লেখা আল্লাহর মনযুর হত। তিনি ছিলেন অতি বৃদ্ধ, দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তি। খাদীজা (রাযিঃ) তাকে বললেন, হে আমার চাচাত ভাই! তোমার ভাতিজার কথা শুন। তখন ওরাকা বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা কিছু দেখেছিলেন তা তাকে অবহিত করলেন। তখন ওরাকা বললেন, এই তো আল্লাহর সেই নামুস (দূত), যাকে মুসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। হায় আফসোস! যদি সেদিন আমি জীবিত থাকতে পারতাম যেদিন তোমার কওম তোমাকে বের করে দেবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তারা কি আমাকে বের করে দেবে? ওরাকা বললেন, হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে এসেছ, এমন বস্তু নিয়ে কোন দিনই কেউ আসেনি যার সাথে শত্রুতা করা হয়নি। যদি তোমার জীবনকাল আমাকে পায়, তাহলে আমি পরিপূর্ণরূপে তোমাকে সাহায্য করব।
এরপর কিছুদিনের মধ্যেই ওরাকার মৃত্যু হয়। আর কিছু দিনের জন্য ওহীও বন্ধ থাকে। এমনকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ অবস্থার প্রেক্ষিতে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি আমরা এ সম্পর্কে তার থেকে জানতে পেরেছি যে, তিনি পাহাড়ের চূড়া থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একাধিকবার দ্রুত সেখানে চলে গেছেন। যখন নিজেকে নিক্ষেপ করার জন্য তিনি পাহাড়ের চূড়া পৌঁছতেন, তখনই জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলতেন, হে মুহাম্মাদ! নিঃসন্দেহে আপনি তো আল্লাহর রাসূল! এতে তাঁর অস্থিরতা প্রশমিত হত এবং নিজে মনে শান্তিবোধ করতেন। তাই সেখান থেকে ফিরে আসতেন। ওহীর বন্ধ অবস্থা যখন তাঁর উপর দীর্ঘায়িত হল, তখনই তিনি অনুরূপ উদ্দেশ্যে দ্রুত চলে যেতেন। যখনই তিনি পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে পূর্বের ন্যায় বলতেন। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, فَالِقُ الإِصْبَاحِ দিনের বেলায় সূর্যের আলো ও রাতের বেলায় চাঁদের আলো।
كِتَابُ التَّعْبِيرِ بَابُ أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ
6982 - حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، ح وحَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ: قَالَ الزُّهْرِيُّ: فَأَخْبَرَنِي عُرْوَةُ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا قَالَتْ: أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ فِي النَّوْمِ، فَكَانَ لاَ يَرَى رُؤْيَا إِلَّا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، فَكَانَ يَأْتِي حِرَاءً فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ، وَهُوَ التَّعَبُّدُ، اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ العَدَدِ، وَيَتَزَوَّدُ لِذَلِكَ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَتُزَوِّدُهُ لِمِثْلِهَا، حَتَّى فَجِئَهُ الحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ، فَجَاءَهُ المَلَكُ فِيهِ، فَقَالَ: اقْرَأْ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدُ، ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ: اقْرَأْ، فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدُ، ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ: اقْرَأْ، فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الجَهْدُ، ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ: {اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ} [العلق: 1]- حَتَّى بَلَغَ - {عَلَّمَ الإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ} [العلق: 5] " فَرَجَعَ بِهَا تَرْجُفُ بَوَادِرُهُ، حَتَّى دَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ، فَقَالَ: «زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي» فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ، فَقَالَ: «يَا خَدِيجَةُ، مَا لِي» وَأَخْبَرَهَا الخَبَرَ، وَقَالَ: «قَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي» فَقَالَتْ لَهُ: كَلَّا، أَبْشِرْ، فَوَاللَّهِ لاَ يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَصْدُقُ الحَدِيثَ، وَتَحْمِلُ الكَلَّ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ، ثُمَّ انْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ حَتَّى أَتَتْ بِهِ وَرَقَةَ بْنَ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ العُزَّى بْنِ قُصَيٍّ وَهُوَ ابْنُ عَمِّ خَدِيجَةَ أَخُو أَبِيهَا، وَكَانَ امْرَأً تَنَصَّرَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ يَكْتُبُ الكِتَابَ العَرَبِيَّ، فَيَكْتُبُ بِالعَرَبِيَّةِ مِنَ الإِنْجِيلِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكْتُبَ، وَكَانَ شَيْخًا كَبِيرًا قَدْ عَمِيَ، فَقَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ: أَيِ ابْنَ عَمِّ، اسْمَعْ مِنَ ابْنِ أَخِيكَ، فَقَالَ وَرَقَةُ: ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى؟ فَأَخْبَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا رَأَى، فَقَالَ وَرَقَةُ: هَذَا النَّامُوسُ الَّذِي أُنْزِلَ عَلَى مُوسَى، يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا، أَكُونُ حَيًّا حِينَ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَمُخْرِجِيَّ هُمْ» فَقَالَ وَرَقَةُ: نَعَمْ، لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إِلَّا عُودِيَ، وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا، ثُمَّ لَمْ يَنْشَبْ وَرَقَةُ أَنْ تُوُفِّيَ، وَفَتَرَ الوَحْيُ فَتْرَةً حَتَّى حَزِنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:30]، فِيمَا بَلَغَنَا، حُزْنًا غَدَا مِنْهُ مِرَارًا كَيْ يَتَرَدَّى مِنْ رُءُوسِ شَوَاهِقِ الجِبَالِ، فَكُلَّمَا أَوْفَى بِذِرْوَةِ جَبَلٍ لِكَيْ يُلْقِيَ مِنْهُ نَفْسَهُ تَبَدَّى لَهُ جِبْرِيلُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ حَقًّا، فَيَسْكُنُ لِذَلِكَ جَأْشُهُ، وَتَقِرُّ نَفْسُهُ، فَيَرْجِعُ، فَإِذَا طَالَتْ عَلَيْهِ فَتْرَةُ الوَحْيِ غَدَا لِمِثْلِ ذَلِكَ، فَإِذَا أَوْفَى بِذِرْوَةِ جَبَلٍ تَبَدَّى لَهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: {فَالِقُ الإِصْبَاحِ} [الأنعام: 96] : «ضَوْءُ الشَّمْسِ بِالنَّهَارِ، وَضَوْءُ القَمَرِ بِاللَّيْلِ»