আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৪৩২০
আন্তর্জাতিক নং: ৪৬৭৭
২৪০৯. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ এবং তিনি সে তিনজনকে ক্ষমা করলেন যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত মুলতবী রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য অতি সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিল এবং তারা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই, পরে তিনি তাদের প্রতি মেহেরবান হলেন, যাতে তারা তাওবা করে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৯ঃ ১১৮)
৪৩২০ মুহাম্মাদ (রাহঃ) ..... আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে শুনেছি, যে তিনজনের তওবা কবুল হয়েছিল, তার মধ্যে তিনি একজন। তিনি বদরের যুদ্ধ ও তাবুকের যুদ্ধ এ দুটি ছাড়া অন্য কোন যুদ্ধে রাসূল (ﷺ) থেকে পশ্চাতে থাকেন নি। কা’ব ইবনে মালিক (রাযিঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) তাবুক যুদ্ধ হতে সূর্যোদয়ের সময় মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলে আমি (মিথ্যা অজুহাতের পরিবর্তে) সত্যপ্রকাশের দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করলাম।
তিনি [রাসূল (ﷺ)] যে কোন সফর হতে সাধারণত সূর্যোদয়ের সময়ই ফিরে আসতেন। এবং সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে দু’রাক'আত নফল নামায আদায় করতেন। (তাবুকের যুদ্ধ থেকে এসে) রাসূল (ﷺ) আমার সাথে এবং আমার সঙ্গীদের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন, অথচ আমাদের ছাড়া অন্য যারা যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত ছিল, তাদের সাথে কথা বলায় কোন প্রকার বাধা প্রদান করলেন না। সুতরাং লোকেরা আমাদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে লাগলেন।
এভাবে চিন্তার বিষয় এ ছিল যে যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু এসে যায়, আর নবী (ﷺ) আমার জানাযার নামায আদায় না করেন, অথবা রাসূল (ﷺ) এর ওফাত হলে আমি মানুষের কাছে এই অবস্থায় থেকে যাব তারা কেউ আমার সাথে কথাও বলবে না, আর আমার জানাযার নামাযও আদায় করবে না। এরপর (পঞ্চাঁশ দিন পর) আল্লাহ তাআলা আমার তওবা কবুল করে তাঁর [নবী (ﷺ) এর] প্রতি আয়াত অবতীর্ণ করেন। তখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী ছিল। সে রাতে রাসূল (ﷺ) উম্মে সালামা (রাযিঃ) এর কাছে ছিলেন, উম্মে সালামা (রাযিঃ) আমার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল ছিলেন।
রাসূল (ﷺ) বললেন, হে উম্মে সালামা! কা’বের তওবা কবুল করা হয়েছে। উমম সালামা (রাযিঃ) বললেন, তাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য কাউকে তাঁর কাছে পাঠাব? নবী (ﷺ) বললেন, এখন খবর পেলে সব লোক এসে সমবেত হবে। তারা তোমাদের ঘুম নষ্ট করে দিবে। রাসূল (ﷺ) ফজরের নামায আদায়ের পর (সকলের মধ্যে) আমাদের তওবা কবুল হওয়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন। এ (ঘোষণার) সময় (রাসূল (ﷺ) এর চেহারা মুবারক খুশীতে চাঁদের ন্যায় চমকাচ্ছিল। যেসব মুনাফিক মিথ্যা আযুহাত দেখিয়ে [রাসূল (ﷺ) এর অসন্তুষ্টি থেকে] রেহাই পেয়েছিল, তাদের চেয়ে তওবা কবুলের ব্যপারে আমরা তিনজন পিছনে পড়ে গিয়েছিলাম, এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদের তওবা কবুল করে আয়াত অবতীর্ণ করেন।
(তাবুকের যুদ্ধে) অনুপস্থিতিদের মধ্যে যারা রাসূল (ﷺ) এর কাছে মিথ্যা কথা বলেছে এবং যারা মিথ্যা আযুহাত দেখিয়েছে তাদের অত্যন্ত জঘন্যভাবে নিন্দাবাদ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তোমাদের কাছে আযুহাত পেশ করবে, বল, মিথ্যা অজুহাত পেশ করো না, আমরা তোমাদেরকে কখনোই বিশ্বাস করবো না। আল্লাহ আমাদেরকে তোমাদের খবর জানিয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন। (৯ঃ ৯৪)
بَاب قَوْلِهِ تعالى {وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمْ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنْ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ}
4677 - حَدَّثَنِي مُحَمَّدٌ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ ابْنُ أَبِي شُعَيْبٍ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ أَعْيَنَ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ رَاشِدٍ، أَنَّ الزُّهْرِيَّ حَدَّثَهُ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ - وَهُوَ أَحَدُ الثَّلاَثَةِ الَّذِينَ تِيبَ عَلَيْهِمْ، أَنَّهُ لَمْ يَتَخَلَّفْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا قَطُّ، غَيْرَ غَزْوَتَيْنِ غَزْوَةِ العُسْرَةِ، وَغَزْوَةِ بَدْرٍ - قَالَ: فَأَجْمَعْتُ صِدْقِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضُحًى، وَكَانَ قَلَّمَا يَقْدَمُ مِنْ سَفَرٍ سَافَرَهُ إِلَّا ضُحًى، وَكَانَ يَبْدَأُ بِالْمَسْجِدِ فَيَرْكَعُ رَكْعَتَيْنِ، وَنَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ كَلاَمِي، وَكَلاَمِ صَاحِبَيَّ، وَلَمْ يَنْهَ عَنْ كَلاَمِ أَحَدٍ مِنَ المُتَخَلِّفِينَ غَيْرِنَا، فَاجْتَنَبَ النَّاسُ كَلاَمَنَا، فَلَبِثْتُ كَذَلِكَ حَتَّى طَالَ عَلَيَّ الأَمْرُ، وَمَا مِنْ شَيْءٍ أَهَمُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَمُوتَ فَلاَ يُصَلِّي عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَوْ يَمُوتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَكُونَ مِنَ النَّاسِ بِتِلْكَ المَنْزِلَةِ فَلاَ يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ مِنْهُمْ، وَلاَ يُصَلِّي وَلاَ يُسَلِّمُ عَلَيَّ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَوْبَتَنَا عَلَى نَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حِينَ بَقِيَ الثُّلُثُ الآخِرُ مِنَ اللَّيْلِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ أُمِّ سَلَمَةَ، وَكَانَتْ أُمُّ سَلَمَةَ مُحْسِنَةً فِي شَأْنِي مَعْنِيَّةً فِي أَمْرِي، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أُمَّ سَلَمَةَ تِيبَ عَلَى كَعْبٍ» قَالَتْ: أَفَلاَ أُرْسِلُ إِلَيْهِ فَأُبَشِّرَهُ؟ قَالَ: «إِذًا يَحْطِمَكُمُ النَّاسُ فَيَمْنَعُونَكُمُ النَّوْمَ سَائِرَ اللَّيْلَةِ» حَتَّى إِذَا صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاَةَ الفَجْرِ آذَنَ بِتَوْبَةِ اللَّهِ عَلَيْنَا، وَكَانَ إِذَا اسْتَبْشَرَ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ، حَتَّى كَأَنَّهُ قِطْعَةٌ مِنَ القَمَرِ، وَكُنَّا أَيُّهَا الثَّلاَثَةُ الَّذِينَ خُلِّفُوا عَنِ الأَمْرِ الَّذِي قُبِلَ مِنْ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ اعْتَذَرُوا، حِينَ أَنْزَلَ اللَّهُ لَنَا التَّوْبَةَ، فَلَمَّا ذُكِرَ الَّذِينَ كَذَبُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ المُتَخَلِّفِينَ وَاعْتَذَرُوا بِالْبَاطِلِ، ذُكِرُوا بِشَرِّ مَا ذُكِرَ بِهِ أَحَدٌ، قَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ: {يَعْتَذِرُونَ إِلَيْكُمْ إِذَا رَجَعْتُمْ إِلَيْهِمْ، قُلْ: لاَ تَعْتَذِرُوا لَنْ نُؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّأَنَا اللَّهُ مِنْ أَخْبَارِكُمْ، وَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ} [التوبة: 94] الآيَةَ