আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৫১- কুরআনের তাফসীর অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৪২১০
আন্তর্জাতিক নং: ৪৫৬৬
২৩২২. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের এবং মুশরীকদের কাছ থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে (৩ঃ ১৮৬)
৪২১০। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) ......... উসামা ইবনে যায়দ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল (ﷺ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করেছিলেন, একটি ফদকী চাঁদর তাঁর পরনে ছিল। উসামা ইবনে যায়দ (রাযিঃ) কে তাঁর পেছনে বসিয়েছিলেন। তিনি বনী হারিস ইবনে খাযরাজ গোত্রে অসুস্থ সা’দ ইবনে উবাইদা (রাযিঃ) কে দেখতে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা। বর্ণনাকারী বলেন যে, যেতে যেতে নবী (ﷺ) এমন একটি মজলিসের সামনে গিয়ে পৌছলেন, যেখানে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবন সালূলও ছিল। সে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি। সে মজলিসে মুসলিম, মুশরিক, প্রতিমাপূজারী এবং ইহুদী সকল প্রকারের লোক ছিল এবং তথায় আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাযিঃ)-ও ছিলেন। জন্তুর পদধূলি যখন মজলিস ছেয়ে ফেলল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আপন চাঁদরে নাক ঢেকে ফেলল। তারপর বলল, আমাদের এখানে ধুলো উড়িয়ো না।
এরপর রাসূল (ﷺ) এদেরকে সালাম করলেন। তারপর বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিলেন এবং তাদের কাছে কুরআন মজীদ পাঠ করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বলল, এই লোকটি! তুমি যা বলছ তা যদি সত্যি হয় তাহলে এর চেয়ে উত্তম কিছুই নেই। তবে আমাদের মজলিসে আমাদেরকে জ্বালাতন করবে না। তুমি তোমার তাবুতে যাও। যে তোমার কাছে যাবে তুমি তাকে তোমার কথা বলবে। অনন্তর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদের মজলিসে এগুলো আমাদের কাছে বলবেন, কারণ আমরা তা পছন্দ করি। এতে মুসলমান, মুশরিক এবং ইহুদীরা পরস্পর গালাগালি শুরু করল। এমনকি তারা মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হল। রাসূল (ﷺ) তাদেরকে থামাচ্ছিলেন। অবশেষে তারা থামলো।
এরপর রাসূল (ﷺ) তাঁর জন্তুর পিঠে আরোহণ করে রওয়ানা দিলেন এবং সা’দ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) এর কাছে গেলেন। নবী (ﷺ) তাঁকে বললেন, হে সা’দ! আবু হুবাব অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কি বলেছে, তুমি শুনেছ কি! সে এমন বলেছে। সা’দ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন। তার দিকে ভ্রক্ষেপ করবেন না। যিনি আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তাঁর শপথ করে বলছি, আল্লাহ আপনার উপর যা নাযিল করেছেন তা সত্য। এতদঞ্চলের অধিবাসীগণ চুক্তি সম্পাদন করেছিল যে, তাকে শাহী টুপি পরাবে এবং নেতৃত্বের শিরস্ত্রানে ভুষিত করবে। যখন আল্লাহ তাআলা সত্য প্রদানের মাধ্যমে এ পরিকল্পনা অস্বীকার করলেন তখন সে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এবং আপনার সাথে সে ব্যবহার করেছে যা আপনি দেখেছেন।
এরপর রাসূল (ﷺ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন। নবী (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবীগণ (রাযিঃ) মুশরিক এবং কিতাবীদেরতে ক্ষমা করে দিতেন এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করতেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের এবং মুশরিকদের নিকট থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে (৩ঃ ১৮৬)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন, ‘‘তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কিতাবীদরে মধ্যে অনেকই তোমাদের ঈমান আনার পর ঈর্ষামূলক মনোভাববশত আবার তোমাদেরকে সত্য প্রত্যাখানকারীরূপে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে। তোমরা ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা কর, যতক্ষণ না আল্লাহ কোন নির্দেশ দেন। আল্লাহর সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’’ (২: ১০৯)
আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মোতাবেক নবী (ﷺ) ক্ষমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অনুমতি দিলেন। রাসূল (ﷺ) যখন বদরের যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন এবং তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা কাফের কুরাইশ নেতাদেরকে হত্যা করলেন তখন ইবনে উবাই ইবনে সালূল তার সঙ্গী মুশরিক ও প্রতিমা পূজারীরা বলল, এটাতো এমন একটি ব্যাপার যা বিজয় লাভ করেছে। এরপর তারা রাসূল (ﷺ) এর কাছে ইসলামের বায়আত করে জাহেরীভাবে ইসলাম গ্রহণ করল।
باب ولتسمعن من الذين أوتوا الكتاب من قبلكم ومن الذين أشركوا أذى كثيرا
4566 - حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَخْبَرَهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكِبَ عَلَى حِمَارٍ عَلَى قَطِيفَةٍ فَدَكِيَّةٍ، وَأَرْدَفَ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ وَرَاءَهُ يَعُودُ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ فِي بَنِي الحَارِثِ بْنِ الخَزْرَجِ قَبْلَ وَقْعَةِ بَدْرٍ، قَالَ: حَتَّى مَرَّ بِمَجْلِسٍ فِيهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ ابْنُ سَلُولَ وَذَلِكَ قَبْلَ أَنْ يُسْلِمَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ، فَإِذَا فِي المَجْلِسِ أَخْلاَطٌ مِنَ المُسْلِمِينَ وَالمُشْرِكِينَ عَبَدَةِ الأَوْثَانِ وَاليَهُودِ وَالمُسْلِمِينَ، وَفِي المَجْلِسِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَوَاحَةَ فَلَمَّا غَشِيَتِ المَجْلِسَ عَجَاجَةُ الدَّابَّةِ، خَمَّرَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ أَنْفَهُ بِرِدَائِهِ، ثُمَّ قَالَ: لاَ تُغَبِّرُوا عَلَيْنَا، فَسَلَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ، ثُمَّ وَقَفَ فَنَزَلَ فَدَعَاهُمْ إِلَى اللَّهِ، وَقَرَأَ عَلَيْهِمُ القُرْآنَ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَيٍّ ابْنُ سَلُولَ: أَيُّهَا المَرْءُ إِنَّهُ لاَ أَحْسَنَ مِمَّا تَقُولُ، إِنْ كَانَ حَقًّا فَلاَ تُؤْذِنَا بِهِ فِي مَجْلِسِنَا، ارْجِعْ إِلَى رَحْلِكَ فَمَنْ جَاءَكَ فَاقْصُصْ عَلَيْهِ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَوَاحَةَ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ فَاغْشَنَا بِهِ فِي مَجَالِسِنَا، فَإِنَّا نُحِبُّ [ص:40] ذَلِكَ، فَاسْتَبَّ المُسْلِمُونَ وَالمُشْرِكُونَ وَاليَهُودُ، حَتَّى كَادُوا يَتَثَاوَرُونَ، فَلَمْ يَزَلِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُخَفِّضُهُمْ حَتَّى سَكَنُوا، ثُمَّ رَكِبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَابَّتَهُ فَسَارَ حَتَّى دَخَلَ عَلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَا سَعْدُ أَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالَ أَبُو حُبَابٍ؟ - يُرِيدُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أُبَيٍّ - قَالَ: كَذَا وَكَذَا "، قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، اعْفُ عَنْهُ وَاصْفَحْ عَنْهُ، فَوَالَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الكِتَابَ لَقَدْ جَاءَ اللَّهُ بِالحَقِّ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ، لَقَدِ اصْطَلَحَ أَهْلُ هَذِهِ البُحَيْرَةِ عَلَى أَنْ يُتَوِّجُوهُ فَيُعَصِّبُوهُ بِالعِصَابَةِ، فَلَمَّا أَبَى اللَّهُ ذَلِكَ بِالحَقِّ الَّذِي أَعْطَاكَ اللَّهُ شَرِقَ بِذَلِكَ، فَذَلِكَ فَعَلَ بِهِ مَا رَأَيْتَ، فَعَفَا عَنْهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ يَعْفُونَ عَنِ المُشْرِكِينَ، وَأَهْلِ الكِتَابِ، كَمَا أَمَرَهُمُ اللَّهُ، وَيَصْبِرُونَ عَلَى الأَذَى، قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: {وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا أَذًى كَثِيرًا} [آل عمران: 186] الآيَةَ، وَقَالَ اللَّهُ: {وَدَّ كَثِيرٌ مِنْ أَهْلِ الكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُمْ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِهِمْ} [البقرة: 109] إِلَى آخِرِ الآيَةِ، وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَأَوَّلُ العَفْوَ مَا أَمَرَهُ اللَّهُ بِهِ، حَتَّى أَذِنَ اللَّهُ فِيهِمْ، فَلَمَّا غَزَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَدْرًا، فَقَتَلَ اللَّهُ بِهِ صَنَادِيدَ كُفَّارِ قُرَيْشٍ، قَالَ ابْنُ أُبَيٍّ ابْنُ سَلُولَ وَمَنْ مَعَهُ مِنَ المُشْرِكِينَ وَعَبَدَةِ الأَوْثَانِ: هَذَا أَمْرٌ قَدْ تَوَجَّهَ، فَبَايَعُوا الرَّسُولَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الإِسْلاَمِ فَأَسْلَمُوا