আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৪০২১
আন্তর্জাতিক নং: ৪৩৬০
২২২৯. সীফুল বাহরের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুসলমানগণ কুরাইশের একটি কাফেলার প্রতীক্ষায় ছিল এবং তাদের সেনাপতি ছিলেন আবু উবাইদা (রাযিঃ)
৪০২১। ইসমাঈল (রাহঃ) .... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমুদ্র সৈকতের দিকে একটি সৈন্যবেহিনী পাঠালেন। আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ্ (রাযিঃ)- কে তাদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন তিনশত। (তন্মধ্যে আমিও ছিলাম) আমরা যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আমরা এক রাস্তা দিয়ে পথ চলছিলাম, তখন আমাদের রসদপত্র নিঃশেষ হয়ে গেল, তাই আবু উবাইদা (রাযিঃ) আদেশ দিলেন সমগ্র সেনাদলের অবশিষ্ট পাথেয় একত্রিত করতে। অতএব সব একত্রিত করা হল। দেখা গেল মাত্র দু’থলে খেজুর রয়েছে। এরপর তিনি অল্প অল্প করে আমাদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ করতে লাগলেন।
পরিশেষে তাও শেষ হয়ে গেল এবং কেবল তখন একটি মাত্র খেজুর আমাদের মিলত। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি জাবির (রাযিঃ)- কে বললাম, একটি করে খেজুর খেয়ে আপনাদের কতটুকু ক্ষুধা নিবারন হতো? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, একটি খেজুর পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেলে আমরা একটির কদরও অনুভব করতে লাগলাম। এরপর আমরা সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। তখন আমরা পাহাড়ের মতো বড় একটি মাছ পেয়ে গেলাম। সমগ্র বাহিনী আঠারো দিন পর্যন্ত তা খেল। তারপর আবু উবাইদা (রাযিঃ) মাছটির পাঁজরের দু’টি হাড় আনতে হুকুম দিলেন। (দু’টি হাড় আনা হলে) সেগুলো দাঁড় করানো হল। এরপর তিনি একটি সওয়ারী তৈয়ার করতে বললেন। সওয়ারী তৈয়ার হল এবং হাড় দু’টির নীচে দিয়ে সওয়ারীটি অতিক্রম করান হল। কিন্তু হাড় দু’টিতে কোন স্পর্শ লাগলো না।
بَابُ غَزْوَةُ سِيفِ الْبَحْرِ وَهُمْ يَتَلَقَّوْنَ عِيرًا لِقُرَيْشٍ وَأَمِيرُهُمْ أَبُو عُبَيْدَةَ
4360 - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ: حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ وَهْبِ بْنِ كَيْسَانَ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّهُ قَالَ: «بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْثًا قِبَلَ السَّاحِلِ، وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ أَبَا عُبَيْدَةَ بْنَ الجَرَّاحِ» وَهُمْ ثَلاَثُ مِائَةٍ، فَخَرَجْنَا وَكُنَّا بِبَعْضِ الطَّرِيقِ فَنِيَ الزَّادُ، فَأَمَرَ أَبُو عُبَيْدَةَ بِأَزْوَادِ الجَيْشِ، فَجُمِعَ فَكَانَ مِزْوَدَيْ تَمْرٍ، فَكَانَ يَقُوتُنَا كُلَّ يَوْمٍ قَلِيلٌ قَلِيلٌ حَتَّى فَنِيَ فَلَمْ يَكُنْ يُصِيبُنَا إِلَّا تَمْرَةٌ تَمْرَةٌ، فَقُلْتُ: مَا تُغْنِي عَنْكُمْ تَمْرَةٌ؟ فَقَالَ: لَقَدْ وَجَدْنَا فَقْدَهَا حِينَ [ص:167] فَنِيَتْ، ثُمَّ انْتَهَيْنَا إِلَى البَحْرِ فَإِذَا حُوتٌ مِثْلُ الظَّرِبِ، فَأَكَلَ مِنْهَا القَوْمُ ثَمَانِيَ عَشْرَةَ لَيْلَةً، ثُمَّ أَمَرَ أَبُو عُبَيْدَةَ بِضِلَعَيْنِ مِنْ أَضْلاَعِهِ فَنُصِبَا، ثُمَّ أَمَرَ بِرَاحِلَةٍ فَرُحِلَتْ ثُمَّ مَرَّتْ تَحْتَهُمَا فَلَمْ تُصِبْهُمَا
হাদীস নং: ৪০২২
আন্তর্জাতিক নং: ৪৩৬১
২২২৯. সীফুল বাহরের যুদ্ধ।
৪০২২। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের তিনশত সওয়ারীর একটি সৈন্যবেহিনীকে কুরাইশের একটি কাফেলার উপর সুযোগমতো আক্রমণ চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ্ (রাযিঃ) ছিলেন আমাদের সেনাপতি। আমরা অর্ধমাস পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে অবস্থান করলাম। (ইতিমধ্যে রসদপত্র নিঃশেষ হয়ে গেল) আমরা ভীষণ ক্ষুধার শিকার হয়ে গেলাম। অবশেষে ক্ষুধার যন্ত্রণায় গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে থাকলাম। এ জন্যই এ সৈন্যবেহিনীর নাম রাখা হয়েছে জায়শুল খাবাত অর্থাৎ পাতা ওয়ালা সেনাদল। এরপর সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামক একটি প্রাণী নিক্ষেপ করল।
আমরা অর্ধমাস ধরে তা থেকে খেলাম। এর চর্বি শরীরে লাগালাম। ফলে আমাদের শরীর পূর্বের ন্যায় হৃষ্টপুষ্ট হয়ে গেল। এরপর আবু উবাইদা (রাযিঃ) আম্বরটির শরীর থেকে একটি পাঁজর ধরে খাড়া করালেন। এরপর তাঁর সাথীদের মধ্যকার সবচেয়ে লম্বা লোকটিকে আসতে বললেন। সুফিয়ান (রাযিঃ) আরেক বর্ণনায় বলেছেন, আবু উবাইদা (রাযিঃ) আম্বরটির পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে একটি হাড় ধরে খাড়া করালেন। এবং (ঐ) লোকটিকে উটের পিঠে বসিয়ে এর নীচে দিয়ে অতিক্রম করালেন।
জাবির (রাযিঃ) বলেন, সেনাদলের এক ব্যক্তি (খাদ্যের অভাব দেখে) প্রথমে তিনটি উট যবেহ্ করেছিলেন। এরপর আবু উবাইদা (রাযিঃ) তাকে (উট যবেহ্ করতে) নিষেধ করলেন। আমর ইবনে দীনার (রাযিঃ) বলতেন, আবু সালিহ (রাহঃ) আমাদের জানিয়েছেন যে, কায়স ইবনে সা‘দ (রাযিঃ) (অভিযান থেকে ফিরে এসে) তাঁর পিতার কাছে বর্ণনা করছিলেন যে, সেনাদলে আমিও ছিলাম, এক সময়ে সমগ্র সেনাদল ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ল, (কথাটি শোনামাত্র কায়সের পিতা) সা‘দ বললেন, এমতাবস্থায় তুমি উট যবেহ্ করে দিতে। কায়স বললেন, (হ্যাঁ) আমি উট যবেহ্ করেছি।
তিনি বললেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হয়ে গেল। এবারো তার পিতা বললেন, তুমি যবেহ্ করতে। তিনি বললেন, (হ্যাঁ) যবেহ্ করেছি। তিনি বললেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সা‘দ বললেন, এবারো উট যবেহ্ করতে। তিনি বললেন, (হ্যাঁ) যবেহ্ করেছি। তিনি বললেন, এরপরও আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সা‘দ (রাযিঃ) বললেন, উট যবেহ্ করতে। তখন কায়স ইবনে সা‘দ (রাযিঃ) বললেন, এবার আমাকে (যবেহ করতে) নিষেধ করা হয়েছে।
بَابُ غَزْوَةُ سِيفِ الْبَحْرِ
4361 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: الَّذِي حَفِظْنَاهُ مِنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ: «بَعَثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَ مِائَةِ رَاكِبٍ أَمِيرُنَا أَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الجَرَّاحِ نَرْصُدُ عِيرَ قُرَيْشٍ» ، فَأَقَمْنَا بِالسَّاحِلِ نِصْفَ شَهْرٍ، فَأَصَابَنَا جُوعٌ شَدِيدٌ حَتَّى أَكَلْنَا الخَبَطَ، فَسُمِّيَ ذَلِكَ الجَيْشُ جَيْشَ الخَبَطِ، فَأَلْقَى لَنَا البَحْرُ دَابَّةً يُقَالُ لَهَا العَنْبَرُ، فَأَكَلْنَا مِنْهُ نِصْفَ شَهْرٍ، وَادَّهَنَّا مِنْ وَدَكِهِ حَتَّى ثَابَتْ إِلَيْنَا أَجْسَامُنَا، فَأَخَذَ أَبُو عُبَيْدَةَ ضِلَعًا مِنْ أَضْلاَعِهِ، فَنَصَبَهُ فَعَمَدَ إِلَى أَطْوَلِ رَجُلٍ مَعَهُ، قَالَ سُفْيَانُ: «مَرَّةً ضِلَعًا مِنْ أَضْلاَعِهِ فَنَصَبَهُ وَأَخَذَ رَجُلًا وَبَعِيرًا فَمَرَّ تَحْتَهُ» قَالَ جَابِرٌ: وَكَانَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ نَحَرَ ثَلاَثَ جَزَائِرَ، ثُمَّ نَحَرَ ثَلاَثَ جَزَائِرَ ثُمَّ نَحَرَ ثَلاَثَ جَزَائِرَ، ثُمَّ إِنَّ أَبَا عُبَيْدَةَ نَهَاهُ وَكَانَ عَمْرٌو يَقُولُ: أَخْبَرَنَا أَبُو صَالِحٍ، أَنَّ قَيْسَ بْنَ سَعْدٍ قَالَ لِأَبِيهِ: كُنْتُ فِي الجَيْشِ فَجَاعُوا، قَالَ انْحَرْ، قَالَ: نَحَرْتُ، قَالَ: ثُمَّ جَاعُوا، قَالَ: انْحَرْ، قَالَ: نَحَرْتُ، قَالَ: ثُمَّ جَاعُوا، قَالَ انْحَرْ قَالَ: نَحَرْتُ، ثُمَّ جَاعُوا، قَالَ: انْحَرْ، قَالَ: نُهِيتُ
হাদীস নং: ৪০২৩
আন্তর্জাতিক নং: ৪৩৬২
২২২৯. সীফুল বাহরের যুদ্ধ।
৪০২৩। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জায়শুল খাবাতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, আর আবু উবাইদা (রাযিঃ)- কে আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল। পথে আমরা ভীষণ ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। তখন সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামের একটি মরা মাছ তীরে নিক্ষেপ করে দিল। এতো বড় মাছ আমরা আর কখনো দেখিনি। এরপর মাছটি থেকে আমরা অর্ধ মাস আহার করলাম। একবার আবু উবাইদা (রাযিঃ) মাছটির একটি হাড় তুলে ধরলেন আর সওয়ারীর পিঠে চড়ে একজন হাড়টির নিচ দিয়ে অতিক্রম করল (হাড়ে স্পর্শ লাগেনি)। (ইবনে জুরায়জ বলেন) আবু যুবাইর (রাহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি জাবির (রাযিঃ) থেকে শুনেছেন, জাবির (রাযিঃ) বলেনঃ ঐ সময় আবু উবাইদা (রাযিঃ) বললেন, ‘তোমরা মাছটি আহার কর। এরপর আমরা মদীনা ফিরে আসলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে বিষয়টি অবগত করলাম। তিনি বললেন, খাও। এটি তোমাদের জন্য রিযক, আল্লাহ্ পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরকেও স্বাদ গ্রহণ করতে দাও। একজন মাছটির কিছু অংশ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে এনে দিলে তিনি তা খেলেন।
بَابُ غَزْوَةُ سِيفِ الْبَحْرِ
4362 - حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عَمْرٌو، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: غَزَوْنَا جَيْشَ الخَبَطِ، وَأُمِّرَ أَبُو عُبَيْدَةَ فَجُعْنَا جُوعًا شَدِيدًا، فَأَلْقَى البَحْرُ حُوتًا مَيِّتًا لَمْ نَرَ مِثْلَهُ، يُقَالُ لَهُ العَنْبَرُ، فَأَكَلْنَا مِنْهُ نِصْفَ شَهْرٍ، فَأَخَذَ أَبُو عُبَيْدَةَ عَظْمًا مِنْ عِظَامِهِ، فَمَرَّ الرَّاكِبُ تَحْتَهُ فَأَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا، يَقُولُ: قَالَ أَبُو عُبَيْدَةَ: كُلُوا فَلَمَّا قَدِمْنَا المَدِينَةَ ذَكَرْنَا ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «كُلُوا، رِزْقًا أَخْرَجَهُ اللَّهُ، أَطْعِمُونَا إِنْ كَانَ مَعَكُمْ» فَأَتَاهُ بَعْضُهُمْ فَأَكَلَهُ