আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৩৭৭৯
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৭৮
২১৯০. যে সব মুসলমান উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব,(হুযাইফার পিতা), ইয়ামান আনাস ইবনে নযর এবং মুস‘আব ইবনে উমায়র (রাযিঃ)।
৩৭৭৯। আমর ইবনে আলী (রাহঃ) .... কাতাদা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন আরবের কোন জনগোষ্ঠীই আনসারদের তুলনায় অধিক সংখ্যক শহীদ এবং অধিক মর্যাদার হকদার হবে বলে আমরা জানি না। কাতাদা (রাহঃ) বলেন, আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) আমাকে বলেছেন, উহুদ যুদ্ধের দিন আনসারদের সত্তর জন শহীদ হয়েছেন, বিরে মাউনার ঘটনায় তাদের সত্তর জন শহীদ হয়েছেন এবং ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন সত্তর জন। বর্ণনাকারী বলেন যে, বিরে মাউনার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর জীবদ্দশায় এবং ইয়ামামার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল (মিথ্যা নবী) মুসাইলামাতুল কাযযাবের বিরুদ্ধে আবু বকর (রাযিঃ)-এর খিলাফত কালে।
باب مَنْ قُتِلَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَوْمَ أُحُدٍ مِنْهُمْ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَالْيَمَانُ وَأَنَسُ بْنُ النَّضْرِ وَمُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ
4078 - حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ: مَا نَعْلَمُ حَيًّا مِنْ أَحْيَاءِ العَرَبِ أَكْثَرَ شَهِيدًا أَعَزَّ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنَ الأَنْصَارِ قَالَ قَتَادَةُ: وَحَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّهُ " قُتِلَ مِنْهُمْ يَوْمَ أُحُدٍ سَبْعُونَ، وَيَوْمَ بِئْرِ مَعُونَةَ سَبْعُونَ، وَيَوْمَ اليَمَامَةِ سَبْعُونَ، قَالَ: «وَكَانَ بِئْرُ مَعُونَةَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَيَوْمُ اليَمَامَةِ عَلَى عَهْدِ أَبِي بَكْرٍ، يَوْمَ مُسَيْلِمَةَ الكَذَّابِ»
হাদীস নং: ৩৭৮০
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৭৯ - ৪০৮০
২১৯০. যে সব মুসলমান উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব,(হুযাইফার পিতা), ইয়ামান আনাস ইবনে নযর এবং মুস‘আব ইবনে উমায়র (রাযিঃ)।
৩৭৮০। কুতায়বা ইবনে সাঈদ (রাহঃ) .... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের দু’জনকে একই কাপড়ে (একই কবরে) দাফন করেছিলেন। কাফনে জড়ানোর পর তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, এদের মধ্যে কে কুরআন শরীফ সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত? যখন কোনো একজনের প্রতি ইঙ্গিত করা হত তখন তিনি তাকেই কবরে আগে নামাতেন এবং বলতেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষ্য হব। সেদিন তিনি তাদেরকে তাদের রক্তসহ দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাদের জানাযার নামায ও আদায় করা হয়নি-১ এবং তাদেরকে গোসলও দেওয়া হয়নি।-২
(অন্য এক সনদে) আবুল ওয়ালী (রাহঃ) .... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমার পিতা শাহাদাত বরণ করার পর (তাঁর শোকে) আমি কাঁদতে লাগলাম এবং বারবার তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন নবী কারীম (ﷺ)- এর সাহাবীগণ আমাকে এ থেকে বারণ করছিলেন। তবে নবী কারীম (ﷺ) (এ ব্যাপারে) আমাকে নিষেধ করেননি। অধিকন্তু নবী কারীম (ﷺ) (আব্দুল্লাহর ফুফুকে বলেছেন) তোমরা তার জন্য কাঁদছ! অথচ জানাযা না উঠানো পর্যন্ত ফিরিশতারা নিজেদের ডানা দিয়ে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করছিলেন।
১- শহীদের জানাযার নামায আদায় করা সম্পর্কে কোনো কোনো ইমামের মত হল, তাদের জন্য জানাযার নামাযের কোনো দরকার নেই। তারা আলোচা হাদীসকে প্রমাণ স্বরূপ পেশ করে থাকেন। ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ)-এর মতে শহীদদের জানাযার নামায আদায় করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উহুদের শহীদদের উপর জানাযার নামায আদায় করেছিলেন বলেও কতিপয় হাদীসে বর্ণিত আছে। অবশ্য সংক্ষেপ করণার্থে তিনি সাত সাত জনের জানাযা একত্রে আদায় করেছিলেন। পৃথক পৃথকভাবে আদায় করেননি। এ বিষয়টিকেই আলোচ্য হাদীসে জানাযার নামায আদায় করেননি বলে প্রকাশ করা হয়েছে।
২- এ বিষয়ে সকল ইমাম একমত যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে শাহাদাত বরণকারী ব্যক্তিকে তার রক্ত রঞ্জিত দেহে রক্তাক্ত কাপড় চোপড়ে দাফন করতে হবে। তাকে গোসল দেয়া যাবে না। এ অবস্থায়ই তাকে কবরে রাখা হবে এবং এই অবস্থায়ই কিয়ামতে তার উত্থান হবে।
باب مَنْ قُتِلَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَوْمَ أُحُدٍ مِنْهُمْ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَالْيَمَانُ وَأَنَسُ بْنُ النَّضْرِ وَمُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ ـ رضى الله عنهما ـ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ مِنْ قَتْلَى أُحُدٍ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ ثُمَّ يَقُولُ " أَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِلْقُرْآنِ ". فَإِذَا أُشِيرَ لَهُ إِلَى أَحَدٍ، قَدَّمَهُ فِي اللَّحْدِ، وَقَالَ " أَنَا شَهِيدٌ عَلَى هَؤُلاَءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ". وَأَمَرَ بِدَفْنِهِمْ بِدِمَائِهِمْ، وَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يُغَسَّلُوا. وَقَالَ أَبُو الْوَلِيدِ عَنْ شُعْبَةَ، عَنِ ابْنِ الْمُنْكَدِرِ، قَالَ سَمِعْتُ جَابِرًا، قَالَ لَمَّا قُتِلَ أَبِي جَعَلْتُ أَبْكِي وَأَكْشِفُ الثَّوْبَ عَنْ وَجْهِهِ،، فَجَعَلَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَنْهَوْنِي وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَمْ يَنْهَ، وَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَبْكِيهِ أَوْ مَا تَبْكِيهِ، مَا زَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ تُظِلُّهُ بِأَجْنِحَتِهَا حَتَّى رُفِعَ ".
হাদীস নং: ৩৭৮১
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৮১
২১৯০. যে সব মুসলমান উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব,(হুযাইফার পিতা), ইয়ামান আনাস ইবনে নযর এবং মুস‘আব ইবনে উমায়র (রাযিঃ)।
৩৭৮১। মুহাম্মাদ ইবনে আলা (রাহঃ) .... আবু মুসা (রাযিঃ) সূত্রে নবী কারীম (ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখানা তরবারি নাড়া দিলাম, অমনি এর মধ্যস্থলে ভেঙ্গে গেল। (আমি বুঝতে পারলাম) এটা উহুদ যুদ্ধে মু’মিনদের উপর আগত বিপদেরই প্রতিচ্ছবি ছিল। এরপর আমি তরবারিটিকে পুনরায় নাড়া দিলাম। এতে তা পূর্বের থেকেও অধিক সুন্দর হয়ে গেল। এর অর্থ হল (পরবর্তীকালে) মু’মিনদের বিজয় লাভ করা এবং তাদের একতাবদ্ধ হওয়া এবং স্বপ্নে আমি একটি গরুও দেখেছিলাম। উহুদ যুদ্ধে মু’মিনদের শাহাদাত বরণ করাই হচ্ছে এর তাবীর। আল্লাহর প্রতিদান অতি উত্তম বা আল্লাহর সকল কাজ কল্যাণময়।
باب مَنْ قُتِلَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَوْمَ أُحُدٍ مِنْهُمْ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَالْيَمَانُ وَأَنَسُ بْنُ النَّضْرِ وَمُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ
4081 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ العَلاَءِ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ بُرَيْدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ جَدِّهِ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، - أُرَى - عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رَأَيْتُ فِي رُؤْيَايَ أَنِّي هَزَزْتُ سَيْفًا فَانْقَطَعَ صَدْرُهُ، فَإِذَا هُوَ [ص:103] مَا أُصِيبَ مِنَ المُؤْمِنِينَ يَوْمَ أُحُدٍ، ثُمَّ هَزَزْتُهُ أُخْرَى فَعَادَ أَحْسَنَ مَا كَانَ، فَإِذَا هُوَ مَا جَاءَ بِهِ اللَّهُ مِنَ الفَتْحِ وَاجْتِمَاعِ المُؤْمِنِينَ، وَرَأَيْتُ فِيهَا بَقَرًا، وَاللَّهُ خَيْرٌ، فَإِذَا هُمُ المُؤْمِنُونَ يَوْمَ أُحُدٍ»
হাদীস নং: ৩৭৮২
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৮২
২১৯০. যে সব মুসলমান উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব,(হুযাইফার পিতা), ইয়ামান আনাস ইবনে নযর এবং মুস‘আব ইবনে উমায়র (রাযিঃ)।
৩৭৮২। আহমদ ইবনে ইউনুস (রাহঃ) .... খাব্বাব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী কারীম (ﷺ)- এর সাথে হিজরত করেছিলাম। এতে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। অতএব আল্লাহর কাছে আমাদের প্রতিদান নির্ধারিত হয়ে আছে। আমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছেন অথবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) কেউ চলে গিয়েছেন। অথচ পার্থিব প্রতিদান থেকে তিনি কিছুই ভোগ করতে পারেননি। মুস‘আব ইবনে উমায়র (রাযিঃ) হলেন তাদের মধ্যে একজন। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। একখানা মোটা চাঁদর ব্যতীত তিনি আর কিছুই রেখে যাননি। এ দ্বারা আমরা তাঁর মাথা ঢাকলে পা দু’খানা বেরিয়ে যেতো এবং পা দু’খানা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে যেত। (এ দেখে) নবী কারীম (ﷺ) আমাদের কে বললেন, এ কাপড় দ্বারা তার মাথা ঢেকে দাও এবং উভয় পা ইযখির (এক প্রকার ঘাস) দ্বারা আবৃত করে দাও। অথবা বললেন (বর্ণনাকারীর সন্দেহ), তাঁর উভয় পায়ের উপর ইযখির দিয়ে দাও। আর আমাদের কেউ কেউ এমনও আছেন, যার ফল উত্তমরূপে পেকেছে, এখন তিনি তা সংগ্রহ করেছেন।
باب مَنْ قُتِلَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَوْمَ أُحُدٍ مِنْهُمْ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَالْيَمَانُ وَأَنَسُ بْنُ النَّضْرِ وَمُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ
4082 - حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ خَبَّابٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: هَاجَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَبْتَغِي وَجْهَ اللَّهِ، فَوَجَبَ أَجْرُنَا عَلَى اللَّهِ، فَمِنَّا مَنْ مَضَى، أَوْ ذَهَبَ، لَمْ يَأْكُلْ مِنْ أَجْرِهِ شَيْئًا، كَانَ مِنْهُمْ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ، قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ، فَلَمْ يَتْرُكْ إِلَّا نَمِرَةً، كُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ خَرَجَتْ رِجْلاَهُ، وَإِذَا غُطِّيَ بِهَا رِجْلاَهُ خَرَجَ رَأْسُهُ، فَقَالَ لَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غَطُّوا بِهَا رَأْسَهُ، وَاجْعَلُوا عَلَى رِجْلَيْهِ الإِذْخِرَ» أَوْ قَالَ: «أَلْقُوا عَلَى رِجْلَيْهِ مِنَ الإِذْخِرِ» وَمِنَّا مَنْ أَيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ فَهُوَ يَهْدِبُهَا