আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৩৭৪২
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৩৭
২১৭৭. কা‘ব ইবনে আশরাফের হত্যা
৩৭৪২। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, (একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)) বললেন, কা‘ব ইবনে আশরাফের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত আছ কে? কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযিঃ) দাঁড়ালেন, এবং বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযিঃ) বললেন, তাহলে আমাকে কিছু (কৃত্রিম) কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ বল। এরপর মুহাম্মাদ ইবনে মাসলাম (রাযিঃ) কা‘ব ইবনে আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূলুল্লাহ (ﷺ)) আমাদের কাছে সাদকা চায়। এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই (বাধ্য হয়ে) আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি।
কা‘ব ইবনে আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ট করে তুলবে। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযিঃ) বললেন, আমরা তো তাঁকে অনুসরণ করছি। পরিণাম ফল কি দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করা ভাল মনে করছিনা। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই। বর্ণনাকারী সুফিয়ান বলেন, আমর (রাহঃ) আমার নিকট হাদীসখানা কয়েকবার বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথা উল্লেখ করেননি। আমি তাকে (স্মরণ করিয়ে) বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক ও দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। তখন তিনি বললেন, মনে হয় হাদীসে এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে।
কা‘ব ইবনে আশবাফ বলল, ধারতো পেয়ে যাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলাম (রাযিঃ) বললেন, কি জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলাম (রাযিঃ) বললেন, আপনি আরবের অন্যতম সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কি করে আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখব আমরা? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কি করে বন্ধক রাখি? (কেননা তা যদি করি তাহলে) তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটাতো আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হল অস্ত্রশস্ত্র।
অবশেষে তিনি (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা) তাকে (কা‘ব ইবনে আশরাফকে) পুনরায় যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কা‘ব ইবনে আশরাফের দুধ ভাই আবু নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কা‘ব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে (উপর তলা থেকে নীচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। এ সময় তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এইতো মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে। (তাদের কাছে যাচ্ছি) আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে কা’বের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোঁটা ঝড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কা‘ব ইবনে আশরাফ বলল, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিৎ। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযিঃ) সঙ্গে আরো দুই ব্যক্তি নিয়ে (তথায়) গেলেন। সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আমর কি তাদের দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফিয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন।
আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দু’জন মানুষ সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং তিনি বলেছিলেন, যখন সে (কা‘ব ইবনে আশরাফ) আসবে। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে, (তারা হলেন) আবু আবস ইবনে জাবর হারীস ইবনে আওস এবং আব্বাদ ইবনে বিশর। আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই ব্যক্তিকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি (কোন বাহানায়) তার চুল ধরে শুঁকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারী দিয়ে তাকে আঘাত করবে। তিনি (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুকাব। সে (কা‘ব) চাঁদর নিয়ে নীচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল।
তখন (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযিঃ) বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, কা‘ব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধি ব্যবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রাযিঃ) বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ এরপর তিনি মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে (আরেকবার শুঁকাবার জন্য) অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নবী কারীম (ﷺ)- এর নিকট এসে এ সংবাদ জানালেন।
باب قَتْلُ كَعْبِ بْنِ الأَشْرَفِ
4037 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ عَمْرٌو: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لِكَعْبِ بْنِ الأَشْرَفِ، فَإِنَّهُ قَدْ آذَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ» ، فَقَامَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتُحِبُّ أَنْ أَقْتُلَهُ؟ قَالَ: «نَعَمْ» ، قَالَ: فَأْذَنْ لِي أَنْ أَقُولَ شَيْئًا، قَالَ: «قُلْ» ، فَأَتَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ فَقَالَ: إِنَّ هَذَا الرَّجُلَ قَدْ سَأَلَنَا صَدَقَةً، وَإِنَّهُ قَدْ عَنَّانَا وَإِنِّي قَدْ أَتَيْتُكَ أَسْتَسْلِفُكَ، قَالَ: وَأَيْضًا وَاللَّهِ لَتَمَلُّنَّهُ، قَالَ: إِنَّا قَدِ اتَّبَعْنَاهُ، فَلاَ نُحِبُّ أَنْ نَدَعَهُ حَتَّى نَنْظُرَ إِلَى أَيِّ [ص:91] شَيْءٍ يَصِيرُ شَأْنُهُ، وَقَدْ أَرَدْنَا أَنْ تُسْلِفَنَا وَسْقًا أَوْ وَسْقَيْنِ - وحَدَّثَنَا عَمْرٌو غَيْرَ مَرَّةٍ فَلَمْ يَذْكُرْ وَسْقًا أَوْ وَسْقَيْنِ أَوْ: فَقُلْتُ لَهُ: فِيهِ وَسْقًا أَوْ وَسْقَيْنِ؟ فَقَالَ: أُرَى فِيهِ وَسْقًا أَوْ وَسْقَيْنِ - فَقَالَ: نَعَمِ، ارْهَنُونِي، قَالُوا: أَيَّ شَيْءٍ تُرِيدُ؟ قَالَ: ارْهَنُونِي نِسَاءَكُمْ، قَالُوا: كَيْفَ نَرْهَنُكَ نِسَاءَنَا وَأَنْتَ أَجْمَلُ العَرَبِ، قَالَ: فَارْهَنُونِي أَبْنَاءَكُمْ، قَالُوا: كَيْفَ نَرْهَنُكَ أَبْنَاءَنَا، فَيُسَبُّ أَحَدُهُمْ، فَيُقَالُ: رُهِنَ بِوَسْقٍ أَوْ وَسْقَيْنِ، هَذَا عَارٌ عَلَيْنَا، وَلَكِنَّا نَرْهَنُكَ اللَّأْمَةَ - قَالَ سُفْيَانُ: يَعْنِي السِّلاَحَ - فَوَاعَدَهُ أَنْ يَأْتِيَهُ، فَجَاءَهُ لَيْلًا وَمَعَهُ أَبُو نَائِلَةَ، وَهُوَ أَخُو كَعْبٍ مِنَ الرَّضَاعَةِ، فَدَعَاهُمْ إِلَى الحِصْنِ، فَنَزَلَ إِلَيْهِمْ، فَقَالَتْ لَهُ امْرَأَتُهُ: أَيْنَ تَخْرُجُ هَذِهِ السَّاعَةَ؟ فَقَالَ إِنَّمَا هُوَ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ، وَأَخِي أَبُو نَائِلَةَ، وَقَالَ غَيْرُ عَمْرٍو، قَالَتْ: أَسْمَعُ صَوْتًا كَأَنَّهُ يَقْطُرُ مِنْهُ الدَّمُ، قَالَ: إِنَّمَا هُوَ أَخِي مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ وَرَضِيعِي أَبُو نَائِلَةَ إِنَّ الكَرِيمَ لَوْ دُعِيَ إِلَى طَعْنَةٍ بِلَيْلٍ لَأَجَابَ، قَالَ: وَيُدْخِلُ مُحَمَّدُ بْنُ مَسْلَمَةَ مَعَهُ رَجُلَيْنِ - قِيلَ لِسُفْيَانَ: سَمَّاهُمْ عَمْرٌو؟ قَالَ: سَمَّى بَعْضَهُمْ - قَالَ عَمْرٌو: جَاءَ مَعَهُ بِرَجُلَيْنِ، وَقَالَ: غَيْرُ عَمْرٍو: أَبُو عَبْسِ بْنُ جَبْرٍ، وَالحَارِثُ بْنُ أَوْسٍ، وَعَبَّادُ بْنُ بِشْرٍ، قَالَ عَمْرٌو: جَاءَ مَعَهُ بِرَجُلَيْنِ، فَقَالَ: إِذَا مَا جَاءَ فَإِنِّي قَائِلٌ بِشَعَرِهِ فَأَشَمُّهُ، فَإِذَا رَأَيْتُمُونِي اسْتَمْكَنْتُ مِنْ رَأْسِهِ، فَدُونَكُمْ فَاضْرِبُوهُ، وَقَالَ مَرَّةً: ثُمَّ أُشِمُّكُمْ، فَنَزَلَ إِلَيْهِمْ مُتَوَشِّحًا وَهُوَ يَنْفَحُ مِنْهُ رِيحُ الطِّيبِ، فَقَالَ: مَا رَأَيْتُ كَاليَوْمِ رِيحًا، أَيْ أَطْيَبَ، وَقَالَ غَيْرُ عَمْرٍو: قَالَ: عِنْدِي أَعْطَرُ نِسَاءِ العَرَبِ وَأَكْمَلُ العَرَبِ، قَالَ عَمْرٌو: فَقَالَ أَتَأْذَنُ لِي أَنْ أَشُمَّ رَأْسَكَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَشَمَّهُ ثُمَّ أَشَمَّ أَصْحَابَهُ، ثُمَّ قَالَ: أَتَأْذَنُ لِي؟ قَالَ: نعَمْ، فَلَمَّا اسْتَمْكَنَ مِنْهُ، قَالَ: دُونَكُمْ، فَقَتَلُوهُ، ثُمَّ أَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرُوهُ