আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৪২- সাক্ষ্যপ্রদানের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ২৫০৭
আন্তর্জাতিক নং: ২৬৮৬
১৬৭২. জটিল বিষয়ে কুর’আর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। মহান আল্লাহর বাণী : “... যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল মারয়ামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাদের মধ্যে কে গ্রহণ করবে?...?” (সূরা আলে-ইমরান : ৪৪) ইবনে ’আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, তারা (কলম নিক্ষেপের মাধ্যমে) কুর’আর ব্যবস্থা করল, তখন তাদের সবার কলম স্রোতের সাথে ভেসে গেল। শুধু যাকারিয়ার কলম স্রোতের মুখেও ভেসে রইল। তাই তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে রেখে দিলেন। (ইউনুস (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে) আল্লাহ তাআলার বাণী : (فَسَاهَمَ)-এর অর্থ أقْرَع কুর’আ নিক্ষেপ করল। فَكَانَ مِنَ الْمُدْحَضِينَ এরপর তিনি পরাভূত হলেন- (সূরা আস-সফফাত : ১৪১) আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। নবী (ﷺ) একদল লোককে হলফ করার নির্দেশ দিলেন। তারা কে আগে হলফ করবে তাই নিয়ে তাড়াহুড়া শুরু করল। তখন কুর’আর মাধ্যমে কে হলফ করবে তা নির্ধারণের নির্দেশ দিলেন।
২৫০৭। উমর ইবনে হাফস ইবনে গিয়াস (রাহঃ) .... নু’মান ইবনে বশীর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখার ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করা এবং তা লংঘনকারী ব্যক্তির উপমা হল সেই যাত্রীদল, যারা কুর’আর মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। ফলে কারো স্থান হল এর নীচতলায় আর কারও হল উপরতলায়। যারা নীচতলায় ছিল তারা পানি নিয়ে উপর তলা লোকদের কাছ দিয়ে আসত। এতে তারা বিরক্তি প্রকাশ করল। তখন এক লোক কুড়াল নিয়ে নৌযানের নীচের অংশে ফুটো করতে লেগে গেল। এ দেখে উপর তলার লোকজন তাকে এসে জিজ্ঞাসা করল তোমার হয়েছে কি? সে বলল, আমাদের কারণে তোমরা কষ্ট পেয়েছ। অথচ আমারও পানি প্রয়োজন আছে। এ মুহুর্তে তারা যদি এর দু’হাত চেপে ধরে তাহলে তাকে যেমন রক্ষা করা হল তেমনি নিজেদেরও রক্ষা হল। আর যদি তাকে ছেড়ে দেয় তবে তাকে ধ্বংস করা হল এবং নিজেদেরও ধ্বংস করা হল।
بَابُ الْقُرْعَةِ فِي الْمُشْكِلاَتِ وَقَوْلِهِ: {إِذْ يُلْقُونَ أَقْلاَمَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ}. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ اقْتَرَعُوا فَجَرَتِ الأَقْلاَمُ مَعَ الْجِرْيَةِ، وَعَالَى قَلَمُ زَكَرِيَّاءَ الْجِرْيَةَ، فَكَفَلَهَا زَكَرِيَّاءُ. وَقَوْلِهِ: {فَسَاهَمَ} أَقْرَعَ {فَكَانَ مِنَ الْمُدْحَضِينَ} مِنَ الْمَسْهُومِينَ. وَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ عَرَضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَوْمٍ الْيَمِينَ، فَأَسْرَعُوا، فَأَمَرَ أَنْ يُسْهِمَ بَيْنَهُمْ أَيُّهُمْ يَحْلِفُ
2686 - حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، قَالَ: حَدَّثَنِي الشَّعْبِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَثَلُ المُدْهِنِ فِي حُدُودِ اللَّهِ، وَالوَاقِعِ فِيهَا، مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا سَفِينَةً، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِي أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِي أَعْلاَهَا، فَكَانَ الَّذِي فِي أَسْفَلِهَا يَمُرُّونَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِينَ فِي أَعْلاَهَا، فَتَأَذَّوْا بِهِ، فَأَخَذَ فَأْسًا فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِينَةِ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوا: مَا لَكَ، قَالَ: تَأَذَّيْتُمْ بِي وَلاَ بُدَّ لِي مِنَ المَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ، وَإِنْ تَرَكُوهُ أَهْلَكُوهُ وَأَهْلَكُوا أَنْفُسَهُمْ "
হাদীস নং: ২৫০৮
আন্তর্জাতিক নং: ২৬৮৭
১৬৭২. জটিল বিষয়ে কুর’আর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
২৫০৮। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) .... উম্মুল আলা (রাযিঃ) একজন আনসারী মহিলা যিনি নবী (ﷺ) এর (হাতে) বায়আত হয়েছিলেন, তিনি বলেন, মুহাজিরদের বাসস্থান দানের জন্য আনসারগণ যখন কুর’আ নিক্ষেপ করলেন, তখন তাদের ভাগে উসমান ইবনে মাযউনের জন্য বাসস্থান দান নির্ধারিত হল। উম্মুল আলা (রাযিঃ) বলেন, সেই থেকে উসমান ইবনে মাযউন (রাযিঃ) আমাদের এখানে বসবাস করতে থাকেন। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তার সেবা শুশ্রুষা করলাম। পরে তিনি যখন মারা গেলেন এবং আমরা তাকে কাফন পরালাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের এখানে আসলেন। আমি (উসমান ইবনে মাযউনকে লক্ষ্য করে) বললাম, হে আবু সায়িব! তোমার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। তোমার সম্পর্কে আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ তোমাকে অবশ্য মর্যাদা দান করেছেন।
নবী (ﷺ) তাকে বললেন, তোমাকে কে জানাল যে, আল্লাহ তাকে মর্যাদা দান করেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি জানি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহর কসম। উসমানের কাছে তো মৃত্যু এসে গেছে, আমি তো তার জন্য কল্যাণের আশা করি। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও জানি না তার সাথে কি আচরণ করা হবে। তিনি (উম্মুল আলা) বলেন, আল্লাহর কসম, একথার পরে কখনো আমি কাউকে পূত পবিত্র বর্ণনা করি না। সে কথা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিল। তিনি বলেন, পরে আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, উসমান ইবনে মাযউন (রাযিঃ) এর জন্য একটা প্রস্রবণ প্রবহিত হচ্ছে। এরপর আমি রাসূল (ﷺ) এর কাছে এসে তাকে সে খবর জানালাম। তিনি বলেন, সেটা হচ্ছে তার নেক আমল।
بَابُ الْقُرْعَةِ فِي الْمُشْكِلاَتِ
2687 - حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: حَدَّثَنِي خَارِجَةُ بْنُ زَيْدٍ الأَنْصَارِيُّ، أَنَّ أُمَّ العَلاَءِ - امْرَأَةً مِنْ نِسَائِهِمْ - قَدْ بَايَعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَخْبَرَتْهُ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ مَظْعُونٍ طَارَ لَهُ سَهْمُهُ فِي [ص:182] السُّكْنَى، حِينَ أَقْرَعَتْ الأَنْصَارُ سُكْنَى المُهَاجِرِينَ، قَالَتْ أُمُّ العَلاَءِ: فَسَكَنَ عِنْدَنَا عُثْمَانُ بْنُ مَظْعُونٍ، فَاشْتَكَى، فَمَرَّضْنَاهُ حَتَّى إِذَا تُوُفِّيَ وَجَعَلْنَاهُ فِي ثِيَابِهِ، دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: رَحْمَةُ اللَّهِ عَلَيْكَ أَبَا السَّائِبِ، فَشَهَادَتِي عَلَيْكَ لَقَدْ أَكْرَمَكَ اللَّهُ، فَقَالَ لِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَمَا يُدْرِيكِ أَنَّ اللَّهَ أَكْرَمَهُ؟» ، فَقُلْتُ: لاَ أَدْرِي بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّا عُثْمَانُ فَقَدْ جَاءَهُ وَاللَّهِ اليَقِينُ، وَإِنِّي لَأَرْجُو لَهُ الخَيْرَ، وَاللَّهِ مَا أَدْرِي وَأَنَا رَسُولُ اللَّهِ مَا يُفْعَلُ بِهِ» ، قَالَتْ: فَوَاللَّهِ لاَ أُزَكِّي أَحَدًا بَعْدَهُ أَبَدًا، وَأَحْزَنَنِي ذَلِكَ، قَالَتْ: فَنِمْتُ، فَأُرِيتُ لِعُثْمَانَ عَيْنًا تَجْرِي، فَجِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْبَرْتُهُ، فَقَالَ: «ذَاكِ عَمَلُهُ»
tahqiq

তাহকীক:

rabi
বর্ণনাকারী:
হাদীস নং: ২৫০৯
আন্তর্জাতিক নং: ২৬৮৮
১৬৭২. জটিল বিষয়ে কুর’আর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
২৫০৯। মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল (রাহঃ) .... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সফরের ইরাদা করলে তার স্ত্রীদের মাঝে কুর’আ নিক্ষেপ করতেন, যার নাম বের হত। তাকে সাথে নিয়েই তিনি সফরে বের হতেন। আর তিনি স্ত্রীদের প্রত্যেকের জন্যই দিন রাত বন্টন করতেন। তবে সাওদা বিনতে যাম’আ (রাযিঃ) তার ভাগের দিনরাত নবী (ﷺ) এর স্ত্রী আয়িশা (রাযিঃ) কে দান করে দিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তা করেছিলেন।
بَابُ الْقُرْعَةِ فِي الْمُشْكِلاَتِ
2688 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُقَاتِلٍ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ، أَخْبَرَنَا يُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ سَفَرًا أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ، فَأَيَّتُهُنَّ خَرَجَ سَهْمُهَا خَرَجَ بِهَا مَعَهُ، وَكَانَ يَقْسِمُ لِكُلِّ امْرَأَةٍ مِنْهُنَّ يَوْمَهَا وَلَيْلَتَهَا، غَيْرَ أَنَّ سَوْدَةَ بِنْتَ زَمْعَةَ وَهَبَتْ يَوْمَهَا وَلَيْلَتَهَا لِعَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تَبْتَغِي بِذَلِكَ رِضَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»
হাদীস নং: ২৫১০
আন্তর্জাতিক নং: ২৬৮৯
১৬৭২. জটিল বিষয়ে কুর’আর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
২৫১০। ইসমাঈল (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আযান ও প্রথম কাতারের মর্যাদা মানুষ যদি জানত আর (প্রতিযোগিতার কারণে) কুর’আ (লটারী) নিক্ষেপ ছাড়া সে সুযোগ তারা না পেত, তাহলে কুর’আ (লটারী)নিক্ষেপ করত, তেমনি আগেভাগে জামাআতে শরীক হওয়ার মর্যাদা যদি তারা জানত তাহলে তারা সেদিকে ছুটে যেত। অনুরূপভাবে ঈশা ও ফজরের জামাআতে শরীক হওয়ার মর্যাদা যদি তারা জানত তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা তাতে হাযির হত।
بَابُ الْقُرْعَةِ فِي الْمُشْكِلاَتِ
2689 - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ: حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ سُمَيٍّ مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي العَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا»