আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৪০- মুকাতাব তথা চুক্তিবদ্ধ দাসের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ২৩৯১
আন্তর্জাতিক নং: ২৫৬১
১৬০২. মুকাতাব ও দেয় অর্থের কিস্তি প্রসঙ্গে। প্রতি বছর এক কিস্তি করে আদায় করা। আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমাদের এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য চুক্তিপত্র লিখতে চাইলে তাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হও, যদি তোমরা ওদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও এবং আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন, তা থেকে তোমরা ওদের দান করবে। (১৪ঃ ৩৩)
রাওয়াহ (রাহঃ) বলেন, ইবনে জুরায়জ (রাহঃ) বর্ণনা করেন, আমি আতা (রাহঃ)- কে জিজ্ঞাসা করলাম যদি আমি জানতে পারি যে, তার (গোলামের) অর্থ-সম্পদ রয়েছে, তবে কি তার সাথে কিতাবতের চুক্তি করা আমার জন্য ওয়াজিব হবে? তিনি বললেন, আমি তো ওয়াজিব ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। আমর ইবনে দীনার (রাহঃ) বলেন, আমি আতা (রাহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ মতামত কি আপনি (পূর্ববর্তী) কারো কাছ থেকে বর্ণনা করছেন? তিনি বললেন, না। তারপর আতা (রাহঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, মুসা ইবনে আনাস (রাহঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, আনাস (রাযিঃ)-এর কাছে তার গোলাম সীরীন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ) হওয়ার আবেদন জানালো। সে বিত্তশালী ছিলো। কিন্তু আনাস (রাযিঃ) তাতে অস্বীকৃতি জানালেন। সিরীন তখন উমর (রাযিঃ)-এর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করল। উমর (রাযিঃ) আনাস (রাযিঃ)-কে বললেন, তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হও। তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। উমর (রাযিঃ) তখন তাকে বেত্রাঘাত করলেন এবং নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন, فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرًا “তোমরা তাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যতি তোমরা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও। (২৪ : ৩৩)।
এরপর আনাস (রাযিঃ) তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেন।
লাঈস (রাহঃ) ... উরওয়া (রাহঃ) সূত্রে আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, বারীরা (রাযিঃ) একবার মুকাতাবাতের সাহায্য চাইতে তাঁর কাছে আসলেন। প্রতিবছর এক উকিয়া’ করে পাঁচ বছরে পাঁচ উকিয়া’ তাকে পরিশোধ করতে হবে। তার প্রতি আয়িশা (রাযিঃ) আগ্রাহান্বিত হলেন। তাই তিনি বললেন, যদি আমি এককালীন মূল্য পরিশোধ করে দেই তবে কি তোমার মালিক তোমাকে বিক্রি করবে? তখন আমি তোমাকে আযাদ করে দিব এবং তোমার ওয়ালার অধিকার আমার হবে। বারীরা (রাযিঃ) তার মালিকের কাছে গিয়ে উক্ত প্রস্তাব পেশ করলেন। কিন্তু তারা বলল, না; তবে যদি ওয়ালার অধিকার আমাদের হয়। আয়িশা (রাযিঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খিদমতে গেলাম এবং বিষয়টি তাঁকে বললাম। (রাবী বলেন) তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন, তাকে খরিদ করে আযাদ করে দাও। কেননা, ওয়ালা তারই হবে, যে আযাদ করবে। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, মানুষের কি হল, তারা এমন সব শর্ত আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই! আল্লাহর কিতাবে নেই এমন শর্ত কেউ আরোপ করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। আল্লাহর দেয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য।

পরিচ্ছেদ : ১৬০৩. মুকাতাবের উপরে যে সব শর্ত আরোপ করা জায়িজ এবং আল্লাহর কিতাবে নেই এমন শর্ত আরোপ করা। এ বিষয়ে ইবনে উমর (রা.) থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে
২৩৯১। কুতায়বা (রাহঃ) .... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, বারীরা (রাযিঃ) একবার তার মুকাতাবাতের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে আসলেন। তখন পর্যন্ত তিনি মুকাতাবাতের অর্থ থেকে কিছুই আদায় করেন নি। আয়িশা (রাযিঃ) তাকে বললেন, তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও। তারা সম্মত হলে আমি তোমার মুকাতাবাতের প্রাপ্য পরিশোধ করে দিব। আর তোমার ওয়ালার অধিকার আমার হবে। বারীরা (রাযিঃ) কথাটি তার মালিকের কাছে পেশ করলেন। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করল এবং বলল, তিনি যদি তোমাকে আযাদ করে সাওয়াব পেতে চান, তবে করতে পারেন। ওয়ালা আমাদেরই থাকবে।
আয়িশা (রাযিঃ) বিষয়টি রাসূলুল্লাহ -এর কাছে পেশ করলে তিনি বলেলেন, তুমি খরিদ করে আযাব করে দাও। কেননা যে আযাদ করবে, সেই ওয়ালার অধিকারী হবে। (রাবী) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (সাহাবীগণের সমাবেশে) দাঁড়িয়ে বললেন, মানুষের কি হল, এমন সব শর্ত তারা আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে এমন কোন শর্ত আরোপ করবে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা তার জন্য প্রযোজ্য হবে না; যদিও সে শতবার শর্তারোপ করে। কেননা আল্লাহর দেওয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য।
كتاب المكاتب بَابُ المُكَاتِبِ، وَنُجُومِهِ فِي كُلِّ سَنَةٍ نَجْمٌ وَقَوْلِهِ: {وَالَّذِينَ يَبْتَغُونَ الكِتَابَ مِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ، فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرًا، وَآتُوهُمْ مِنْ مَالِ اللَّهِ الَّذِي آتَاكُمْ} [النور: 33] وَقَالَ رَوْحٌ: عَنْ ابْنِ جُرَيْجٍ، قُلْتُ لِعَطَاءٍ: أَوَاجِبٌ عَلَيَّ إِذَا عَلِمْتُ لَهُ مَالًا، أَنْ أُكَاتِبَهُ؟ قَالَ: «مَا أُرَاهُ إِلَّا وَاجِبًا» وَقَالَهُ عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ قُلْتُ لِعَطَاءٍ: تَأْثُرُهُ عَنْ أَحَدٍ، قَالَ: «لاَ» ثُمَّ أَخْبَرَنِي أَنَّ مُوسَى بْنَ أَنَسٍ أَخْبَرَهُ، أَنَّ سِيرِينَ، سَأَلَ أَنَسًا، المُكَاتَبَةَ - وَكَانَ كَثِيرَ المَالِ - فَأَبَى، فَانْطَلَقَ إِلَى عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ: كَاتِبْهُ فَأَبَى، فَضَرَبَهُ بِالدِّرَّةِ، " وَيَتْلُو عُمَرُ: {فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرًا} [النور: 33] فَكَاتَبَهُ "
وَقَالَ اللَّيْثُ: حَدَّثَنِي يُونُسُ، عَنْ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ عُرْوَةُ: قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: إِنَّ بَرِيرَةَ دَخَلَتْ عَلَيْهَا تَسْتَعِينُهَا فِي كِتَابَتِهَا، وَعَلَيْهَا خَمْسَةُ أَوَاقٍ نُجِّمَتْ عَلَيْهَا فِي خَمْسِ سِنِينَ، فَقَالَتْ لَهَا عَائِشَةُ وَنَفِسَتْ فِيهَا: أَرَأَيْتِ إِنْ عَدَدْتُ لَهُمْ عَدَّةً وَاحِدَةً أَيَبِيعُكِ أَهْلُكِ، فَأُعْتِقَكِ، فَيَكُونَ وَلاَؤُكِ لِي، فَذَهَبَتْ بَرِيرَةُ إِلَى أَهْلِهَا، فَعَرَضَتْ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ، فَقَالُوا: لاَ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ لَنَا الوَلاَءُ، قَالَتْ عَائِشَةُ: فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اشْتَرِيهَا، فَأَعْتِقِيهَا، فَإِنَّمَا الوَلاَءُ لِمَنْ أَعْتَقَ»، ثُمَّ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «مَا بَالُ رِجَالٍ يَشْتَرِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ، مَنِ اشْتَرَطَ شَرْطًا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ، فَهُوَ بَاطِلٌ شَرْطُ اللَّهِ أَحَقُّ وَأَوْثَقُ»
بَابُ مَا يَجُوزُ مِنْ شُرُوطِ المُكَاتَبِ، وَمَنِ اشْتَرَطَ شَرْطًا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فِيهِ عَنْ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
2561 - حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ، أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَخْبَرَتْهُ: أَنَّ بَرِيرَةَ جَاءَتْ تَسْتَعِينُهَا فِي كِتَابَتِهَا، وَلَمْ تَكُنْ قَضَتْ مِنْ كِتَابَتِهَا شَيْئًا، قَالَتْ لَهَا عَائِشَةُ: ارْجِعِي إِلَى أَهْلِكِ، فَإِنْ أَحَبُّوا أَنْ أَقْضِيَ عَنْكِ كِتَابَتَكِ وَيَكُونَ وَلاَؤُكِ لِي، فَعَلْتُ، فَذَكَرَتْ ذَلِكَ بَرِيرَةُ لِأَهْلِهَا، فَأَبَوْا، وَقَالُوا: إِنْ شَاءَتْ أَنْ تَحْتَسِبَ عَلَيْكِ، فَلْتَفْعَلْ وَيَكُونَ وَلاَؤُكِ لَنَا، فَذَكَرَتْ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ابْتَاعِي، فَأَعْتِقِي فَإِنَّمَا الوَلاَءُ لِمَنْ أَعْتَقَ» قَالَ: ثُمَّ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «مَا بَالُ أُنَاسٍ يَشْتَرِطُونَ شُرُوطًا لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ، مَنِ اشْتَرَطَ شَرْطًا لَيْسَ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَلَيْسَ لَهُ، وَإِنْ شَرَطَ مِائَةَ مَرَّةٍ شَرْطُ اللَّهِ أَحَقُّ وَأَوْثَقُ»