আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৩৫৮২
আন্তর্জাতিক নং: ৩৮৬১
২১৪২. আবু যর (রাযিঃ)- এর ইসলাম গ্রহণ
৩৫৮২। আমর ইবনে আব্বাস (রাহঃ) .... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (ﷺ)- এর আবির্ভাবের সংবাদ যখন আবু যর (রাযিঃ)- এর নিকট পৌছল, তখন তিনি তাঁর ভাই (উনাইস)- কে বললেন, তুমি এই উপত্যকায় যেয়ে ঐ ব্যক্তির সম্পর্কে জেনে আস যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন ও তাঁর কাছে আসমান থেকে সংবাদ আসে। তাঁর কথাবার্তা মনোযোগ সহকারে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শুনাও। তাঁর ভাই (মক্কাভিমুখে) রওয়ানা হয়ে ঐ ব্যক্তির নিকট পৌছে তাঁর কথাবর্তা শুনলেন। এরপর তিনি আবু যরের নিকট প্রত্যাবর্তন করে বললেন, আমি তাঁকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম স্বভাব অবলম্বন করার জন্য (লোকদেরকে) নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম (পড়তে শুনলাম) যা পদ্য নয়। এতে আবু যর (রাযিঃ) বললেন, আমি যে উদ্দেশ্যে তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে না।
আবু যর (রাযিঃ) সফরের উদ্দেশ্যে যৎসামান্য পাথেয় সংগ্রহ করলেন এবং একটি ছোট্ট পানির মশকসহ মক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে নবী কারীম (ﷺ)- কে তালাশ করতে লাগলেন। তিনি তাঁকে (নবী কারীম (ﷺ)- কে) চিনতেন না। আবার কাউকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাও পছন্দ করলেন না। এমতাবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি (মসজিদে) শুয়ে পড়লেন। আলী (রাযিঃ) তাঁকে দেখে বুঝতে পারলেন যে, লোকটি বিদেশী মুসাফির। যখন আবু যর’ আলী (রাযিঃ)- কে দেখলেন, তখন তিনি তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। আবু যর (রাযিঃ) পুনরায় তাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে হারারেম দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু নবী কারীম (ﷺ) তাকে দেখতে পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি (পূর্ব দিনের) শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন।
তখন আলী (রাযিঃ) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এখন কি মুসাফির ব্যক্তির গণ্তব্য স্থানের সন্ধান লাভের সময় হয়নি? সে এখনও এ জায়গা অবস্থান করছে। তিনি তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। (পথিমধ্যে) কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। এমতাবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। আলী (রাযিঃ) পূর্বের ন্যায় তার পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তুমি কি আমাকে বলবে না, কি জিনিস এখানে আসতে তোমাকে উদ্ধুদ্ধ করেছে? আবু যর (রাযিঃ) বললেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শনের পাকা পোক্ত অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলতে পারি। আলী (রাযিঃ) অঙ্গীকার করলেন এবং আবু যর (রাযিঃ) ও তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করলেন। আলী (রাযিঃ) বললেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহর রাসূল, যখন ভোর হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করবে।
তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন কিছু আমি দেখতে পাই তবে আমি রাস্তার পাশে চলে যাব যেন আমি পেশাব করতে চাই। আর যদি আমি সোজা চলতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করতে থাকবে। এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করবে। আবু যর (রাযিঃ) তাই করলেন আলী (রাযিঃ) নবী কারীম (ﷺ)- এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং তিনিও তাঁর (আলীর) সাথে প্রবেশ করলেন। তিনি (নবী কারীম (ﷺ))- এর কথাবার্তা শুনলেন এবং ঐ স্থানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, তুমি তোমার স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করবে না।
আবু যর (রাযিঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সন্মুখে উচ্চস্বরে ঘোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মসজিদে হারামে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করলেন,أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ (ইহা শোনামাত্র মুশরিক) লোকজন (উত্তেজিত হয়ে) তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করতে করতে তাঁকে মাটিতে ফেলে দিল।
এমন সময় আব্বাস (রাযিঃ) এসে তাঁকে আগলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, তোমাদের বিপদ অনিবার্য। তোমরা কি জাননা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর তোমাদের ব্যবসায়ী দলগুলিকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াত করতে হয়। একথা বলে তিনি তাদের হাত থেকে আবু যর (রাযিঃ)- কে রক্ষা করলেন। পরদিন ভোরে তিনি অনুরূপ বলতে লাগলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে বেদম প্রহার করতে লাগল। আব্বাস (রাযিঃ) এসে আজো তাঁকে রক্ষা করলেন।
بَاب إِسْلَامُ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
3861 - حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ عَبَّاسٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا المُثَنَّى، عَنْ أَبِي جَمْرَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا بَلَغَ أَبَا ذَرٍّ مَبْعَثُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ لِأَخِيهِ: ارْكَبْ إِلَى هَذَا الوَادِي فَاعْلَمْ لِي عِلْمَ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ، يَأْتِيهِ الخَبَرُ مِنَ السَّمَاءِ، وَاسْمَعْ مِنْ قَوْلِهِ ثُمَّ ائْتِنِي، فَانْطَلَقَ الأَخُ حَتَّى قَدِمَهُ، وَسَمِعَ مِنْ قَوْلِهِ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى أَبِي ذَرٍّ فَقَالَ لَهُ: رَأَيْتُهُ يَأْمُرُ بِمَكَارِمِ الأَخْلاَقِ، وَكَلاَمًا مَا هُوَ بِالشِّعْرِ، فَقَالَ: مَا شَفَيْتَنِي مِمَّا أَرَدْتُ، فَتَزَوَّدَ وَحَمَلَ شَنَّةً لَهُ فِيهَا مَاءٌ، حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ، فَأَتَى المَسْجِدَ فَالْتَمَسَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلاَ يَعْرِفُهُ، وَكَرِهَ أَنْ يَسْأَلَ عَنْهُ حَتَّى أَدْرَكَهُ بَعْضُ اللَّيْلِ، فَاضْطَجَعَ فَرَآهُ عَلِيٌّ فَعَرَفَ أَنَّهُ غَرِيبٌ، فَلَمَّا رَآهُ تَبِعَهُ فَلَمْ يَسْأَلْ وَاحِدٌ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ عَنْ شَيْءٍ حَتَّى أَصْبَحَ، ثُمَّ احْتَمَلَ قِرْبَتَهُ وَزَادَهُ إِلَى المَسْجِدِ، وَظَلَّ ذَلِكَ اليَوْمَ وَلاَ يَرَاهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَمْسَى، فَعَادَ إِلَى مَضْجَعِهِ، فَمَرَّ بِهِ عَلِيٌّ فَقَالَ: أَمَا نَالَ لِلرَّجُلِ أَنْ يَعْلَمَ مَنْزِلَهُ؟ فَأَقَامَهُ فَذَهَبَ بِهِ مَعَهُ، لاَ يَسْأَلُ وَاحِدٌ مِنْهُمَا صَاحِبَهُ عَنْ شَيْءٍ، حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمُ الثَّالِثِ، فَعَادَ عَلِيٌّ عَلَى مِثْلِ ذَلِكَ، فَأَقَامَ مَعَهُ ثُمَّ قَالَ: أَلاَ تُحَدِّثُنِي مَا الَّذِي أَقْدَمَكَ؟ قَالَ: إِنْ أَعْطَيْتَنِي عَهْدًا وَمِيثَاقًا لَتُرْشِدَنِّي فَعَلْتُ، فَفَعَلَ فَأَخْبَرَهُ، قَالَ: فَإِنَّهُ حَقٌّ، وَهُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا أَصْبَحْتَ فَاتْبَعْنِي، فَإِنِّي إِنْ رَأَيْتُ شَيْئًا أَخَافُ عَلَيْكَ قُمْتُ كَأَنِّي أُرِيقُ المَاءَ، فَإِنْ مَضَيْتُ فَاتْبَعْنِي حَتَّى تَدْخُلَ مَدْخَلِي فَفَعَلَ، فَانْطَلَقَ يَقْفُوهُ حَتَّى دَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَدَخَلَ مَعَهُ، فَسَمِعَ مِنْ قَوْلِهِ وَأَسْلَمَ مَكَانَهُ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ارْجِعْ إِلَى قَوْمِكَ فَأَخْبِرْهُمْ حَتَّى يَأْتِيَكَ أَمْرِي» قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَأَصْرُخَنَّ بِهَا بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ، فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى المَسْجِدَ، فَنَادَى بِأَعْلَى صَوْتِهِ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، ثُمَّ قَامَ القَوْمُ فَضَرَبُوهُ حَتَّى أَضْجَعُوهُ، وَأَتَى العَبَّاسُ فَأَكَبَّ عَلَيْهِ، قَالَ: وَيْلَكُمْ أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ مِنْ غِفَارٍ، وَأَنَّ طَرِيقَ تِجَارِكُمْ إِلَى الشَّأْمِ، فَأَنْقَذَهُ مِنْهُمْ، ثُمَّ عَادَ مِنَ الغَدِ لِمِثْلِهَا، فَضَرَبُوهُ وَثَارُوا إِلَيْهِ، فَأَكَبَّ العَبَّاسُ عَلَيْهِ