আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

২৯- জামিন হওয়া সম্পর্কিত অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ২১৪৫
আন্তর্জাতিক নং: ২২৯০ - ২২৯২
১৪২৫. ঋণ ও দেনার ব্যাপারে দেহ এবং অন্য কিছুর যামিন হওয়া। আবু যিনাদ (রাহঃ) মুহাম্মাদ ইবনে হামযা ইবনে আমর আসলামী (রাহঃ) এর মাধ্যমে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর (রাযিঃ) তাকে সাদ্‌কা উশুলকারী নিযুক্ত করে পাঠান। সেখানে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সাথে ব্যভিচার করে বসল। তখন হামযা (রাহঃ) কিছু লোককে তার পক্ষ হতে যামিন স্থির করলেন। পরে তিনি উমর (রাযিঃ) এর নিকট ফিরে আসলেন। উমর (রাযিঃ) উক্ত লোকটিকে একশ’ বেত্রাঘাত করলেন এবং লোকদের বিবরণকে সত্য বলে গ্রহণ করেন। তারপর লোকটিকে তার অজ্ঞতার জন্য (স্ত্রী দাসীর সাথে যৌন সম্ভোগ করা যে অবৈধ তা সে জানত না) অব্যাহতি দেন। জারীর ও আশআশ (রাহঃ) মুরতাদ-ধর্মচ্যুত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আব্দুল্লাহ (ইবনে মাসউদ রাযিঃ)-কে বলেন, তাদেরকে তাওবা করতে বলুন এবং তাদের পক্ষ হতে কাউকে যামিন গ্রহণ করুন। ধর্মচ্যুতরা তাওবা করল এবং তাদের গোত্রের লোকেরা তাদের যামিন হয়ে গেল। হাম্মাদ (রাহঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি যামিন হওয়ার পর মৃত্যুবরণ করে তবে সে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। হাকাম (রাহঃ) বলেন, তার উপর দায়িত্ব থেকে যাবে (অর্থাৎ ওয়ারিশদের উপর সে দায়িত্ব বর্তাবে)। লাঈস (রাহঃ) আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের কোন এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের অপর এক ব্যক্তির নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইল। তখন সে (ঋণ দাতা) বলল, কয়েকজন সাক্ষী আন, আমি তাদেরকে সাক্ষী রাখব। সে বলল, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তারপর (ঋণ দাতা) বলল, তাহলে একজন যামিনদার উপস্থিত কর। সে বলল, যামিনদার হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলল, তুমি সত্যই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে পরিশোধের শর্তে তাকে এক হাজার দীনার দিয়ে দিল। তারপর ঋণ গ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করল এবং তার প্রয়োজন সমাধা করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের ভেতর ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু সে কোন যানবাহন পেল না। তখন সে এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাজার দীনার তার মধ্যে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্র তীরে এসে বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জান আমি অমুকের নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইলে সে আমার কাছে যামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আল্লাহই যামিন হিসাবে যথেষ্ট। এতে সে রাযী হয়। তারপর সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট, তাতেও সে রাযী হয়ে যায়। আমি তার ঋণ (যথাসময়য়ে) পরিশোধের উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম, এই বলে সে কাষ্ঠখণ্ডটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। আর কাষ্ঠখণ্ডটি সমুদ্রে প্রবেশ করল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল। এবং নিজের শহরে যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজতে লাগল। ওদিকে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে, হয়তবা ঋণগ্রহীতা কোন নৌযানে করে তার মাল নিয়ে এসেছে। তার দৃষ্টি কাষ্ঠখণ্ডটির উপর পড়ল, যার ভিতরে মাল ছিল। সে কাষ্ঠখণ্ডটি তার পরিবারের জ্বালানির জন্য বাড়ী নিয়ে গেল। যখন সে তা চিরল, তখন সে মাল ও পত্রটি পেয়ে গেল। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার দীনার নিয়ে এসে হাযির হল। এবং বলল, আল্লাহর কসম আমি আপনার মাল যথাসময়ে পৌঁছিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সব সময় যানবাহনের খোঁজে ছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন আসলাম, তার আগে আর কোন নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলল, তুমি কি আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলল, আমি তো তোমাকে বললামই যে এর আগে আর কোন নৌযান আমি পাইনি। সে বলল, তুমি কাঠের টুকরোর ভিতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তোমার পক্ষ হতে আমাকে আদায় করে দিয়েছেন। তখন সে আনন্দচিত্তে এক হাজার দীনার নিয়ে ফিরে চলে এল।

পরিচ্ছেদঃ ১৪২৬. আল্লাহ তাআলার বাণীঃ যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ তাদের অংশ দিয়ে দিবে (৪:৩৩)।
২১৪৫। সালত ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ আয়াতে مَوَالِيَ শব্দের অর্থ উত্তরাধিকারী। আর وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি (ইবনে আব্বাস রাযিঃ) বলেন, মদীনায় মুহাজিরদের নবী (ﷺ)- এর কাছে আগমনের পর নবী (ﷺ) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে ভাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন, তার ভিত্তিতে মুহাজিররা আনসারদের উত্তরাধিকারী হত, কিন্তু আনসারদের আত্মীয়-স্বজনরা ওয়ারিস হত না। যখন وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ এ আয়াত নাযিল হল, তখন الَّذِينَ عَقَدَتْ আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেল। তারপর তিনি আরো বলেন উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে মুহাজির ও আনসারদের পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ও আদেশ-উপদেশের হুকুম বাকী রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য মীরাস বা উত্তরাধিকার স্বত্ব রহিত হয়ে গেছে। অবশ্য তাদের জন্য ওসীয়্যাত করা যেতে পারে।
بَابُ الكَفَالَةِ فِي القَرْضِ وَالدُّيُونِ بِالأَبْدَانِ وَغَيْرِهَا وَقَالَ أَبُو الزِّنَادِ: عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ حَمْزَةَ بْنِ عَمْرٍو الأَسْلَمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، بَعَثَهُ مُصَدِّقًا، فَوَقَعَ رَجُلٌ عَلَى جَارِيَةِ امْرَأَتِهِ، فَأَخَذَ حَمْزَةُ مِنَ الرَّجُلِ كَفِيلًا حَتَّى قَدِمَ عَلَى عُمَرَ، وَكَانَ عُمَرُ قَدْ جَلَدَهُ مِائَةَ جَلْدَةٍ، فَصَدَّقَهُمْ وَعَذَرَهُ بِالْجَهَالَةِ وَقَالَ جَرِيرٌ، وَالأَشْعَثُ، لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ: «فِي المُرْتَدِّينَ اسْتَتِبْهُمْ وَكَفِّلْهُمْ، فَتَابُوا، وَكَفَلَهُمْ عَشَائِرُهُمْ» وَقَالَ حَمَّادٌ: «إِذَا تَكَفَّلَ بِنَفْسٍ فَمَاتَ فَلاَ شَيْءَ عَلَيْهِ»، وَقَالَ الحَكَمُ: «يَضْمَنُ» قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: وَقَالَ اللَّيْثُ: حَدَّثَنِي جَعْفَرُ بْنُ رَبِيعَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ هُرْمُزَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَنَّهُ ذَكَرَ رَجُلًا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ، سَأَلَ بَعْضَ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنْ يُسْلِفَهُ أَلْفَ دِينَارٍ، فَقَالَ: ائْتِنِي بِالشُّهَدَاءِ أُشْهِدُهُمْ، فَقَالَ: كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا، قَالَ: فَأْتِنِي بِالكَفِيلِ، قَالَ: كَفَى بِاللَّهِ كَفِيلًا، قَالَ: صَدَقْتَ، فَدَفَعَهَا إِلَيْهِ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى، فَخَرَجَ فِي البَحْرِ فَقَضَى حَاجَتَهُ، ثُمَّ التَمَسَ مَرْكَبًا يَرْكَبُهَا يَقْدَمُ عَلَيْهِ لِلْأَجَلِ الَّذِي أَجَّلَهُ، فَلَمْ يَجِدْ مَرْكَبًا، فَأَخَذَ خَشَبَةً فَنَقَرَهَا، فَأَدْخَلَ فِيهَا أَلْفَ دِينَارٍ وَصَحِيفَةً مِنْهُ إِلَى صَاحِبِهِ، ثُمَّ زَجَّجَ مَوْضِعَهَا، ثُمَّ أَتَى بِهَا إِلَى البَحْرِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّكَ تَعْلَمُ أَنِّي كُنْتُ تَسَلَّفْتُ فُلاَنًا أَلْفَ دِينَارٍ، فَسَأَلَنِي كَفِيلاَ، فَقُلْتُ: كَفَى بِاللَّهِ كَفِيلًا، فَرَضِيَ بِكَ، وَسَأَلَنِي شَهِيدًا، فَقُلْتُ: كَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا، فَرَضِيَ بِكَ، وَأَنِّي جَهَدْتُ أَنْ أَجِدَ مَرْكَبًا أَبْعَثُ إِلَيْهِ الَّذِي لَهُ فَلَمْ أَقْدِرْ، وَإِنِّي أَسْتَوْدِعُكَهَا، فَرَمَى بِهَا فِي البَحْرِ حَتَّى وَلَجَتْ فِيهِ، ثُمَّ انْصَرَفَ وَهُوَ فِي ذَلِكَ يَلْتَمِسُ مَرْكَبًا يَخْرُجُ إِلَى بَلَدِهِ، فَخَرَجَ الرَّجُلُ الَّذِي كَانَ أَسْلَفَهُ، يَنْظُرُ لَعَلَّ مَرْكَبًا قَدْ جَاءَ بِمَالِهِ، فَإِذَا بِالخَشَبَةِ الَّتِي فِيهَا المَالُ، فَأَخَذَهَا لِأَهْلِهِ حَطَبًا، فَلَمَّا نَشَرَهَا وَجَدَ المَالَ وَالصَّحِيفَةَ، ثُمَّ قَدِمَ الَّذِي كَانَ أَسْلَفَهُ، فَأَتَى بِالأَلْفِ دِينَارٍ، فَقَالَ: وَاللَّهِ مَا زِلْتُ جَاهِدًا فِي طَلَبِ مَرْكَبٍ لِآتِيَكَ بِمَالِكَ، فَمَا وَجَدْتُ مَرْكَبًا قَبْلَ الَّذِي أَتَيْتُ فِيهِ، قَالَ: هَلْ كُنْتَ بَعَثْتَ إِلَيَّ بِشَيْءٍ؟ قَالَ: أُخْبِرُكَ أَنِّي لَمْ أَجِدْ مَرْكَبًا قَبْلَ الَّذِي جِئْتُ فِيهِ، قَالَ: فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ أَدَّى عَنْكَ الَّذِي بَعَثْتَ فِي الخَشَبَةِ، فَانْصَرِفْ بِالأَلْفِ الدِّينَارِ رَاشِدًا "

بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وَالَّذِينَ عَاقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ فَآتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ}
حَدَّثَنَا الصَّلْتُ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ إِدْرِيسَ، عَنْ طَلْحَةَ بْنِ مُصَرِّفٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما — (وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ) قَالَ وَرَثَةً (وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ) قَالَ كَانَ الْمُهَاجِرُونَ لَمَّا قَدِمُوا الْمَدِينَةَ يَرِثُ الْمُهَاجِرُ الأَنْصَارِيَّ دُونَ ذَوِي رَحِمِهِ لِلأُخُوَّةِ الَّتِي آخَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَهُمْ، فَلَمَّا نَزَلَتْ (وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ) نَسَخَتْ، ثُمَّ قَالَ (وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ ) إِلاَّ النَّصْرَ وَالرِّفَادَةَ وَالنَّصِيحَةَ، وَقَدْ ذَهَبَ الْمِيرَاثُ وَيُوصِي لَهُ.