আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

الجامع الصحيح للبخاري

১৩- বিতর নামাযের অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৯৩৭
আন্তর্জাতিক নং: ৯৯০ - ৯৯১
৬২৮. বিতর নামাযের অধ্যায়ঃ বিতরের বিবরণ।
৯৩৭। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর নিকট রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, রাতের নামায দু’ দু’(রাকআত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হওয়ার আশঙ্কা করে, সে যেন এক রাকআত মিলিয়ে নামায আদায় করে নেয়। আর সে যে নামায আদায় করল, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে।
নাফি (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) বিতর নামাযের এক ও দু’রাকআতের মাঝে সালাম ফিরাতেন। এরপর কাউকে কোন প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশ দিতেন।*

*বিতর নামায এর রাক'আত সংখ্যা, দু' রাক'আত-এর পর সালাম ফিরানো তার সঙ্গে পরে এক রাক'আত যোগ করা এবং এক রাক'আত বিতর, ৩ রাক'আত বিতর, ৫ রাক'আত, ৯ রাক'আত, ১১ রাক'আত ও ১৩ রাক'আত বিতর সংক্রান্ত সহীহ হাদীসগুলোতেই প্রচুর বিরোধ রয়েছে। এতদসংক্রান্ত সর্বাধিক সংখ্যক সহীহ হাদীস বিদ্যমান রয়েছে সুনানে নাসাঈ শরীফে। তাতে ১৭০০ নং থেকে ১৭০৮ পর্যন্ত ৯টি সহীহ হাদীস এ মর্মে বিদ্যমান যে, মহানবী (ﷺ) তিন রাক'আত বিতর পড়তেন এবং কোন রাক'আতে কোন সূরা পড়তেন তা-ও বিদ্যমান। এ ছাড়া অপরাপর গ্রন্থেও তিন রাক'আত বিতর-এর বর্ণনা রয়েছে। এমতাস্থায় একজন মুসলমান বা সাধারণ পাঠকের সামনে এসবের সমন্বয় তথা ফিকহ্ জ্ঞান-এর বিকল্প নেই। এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে, হাদীসের এসব গ্রন্থ যারা রচনা করেছেন তাঁদের জন্ম থেকে ১০০-১৫০ বছর পূর্বে ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ) এর জন্ম। যে কারণে তিনি সাহাবা ও তাবেয়ীগণের বাস্তব কর্মপন্থা ও পরস্পর চলে আসা আচরিত রীতি অনুসরণে বলেছেন "এক রাক'আত বিতর কোনো অবস্থাতেই সঠিক নয়। কেননা এক রাক'আত বলতে কোন নামাযই নেই" "আল্লামা ইবনুল হুমাম (রাহঃ) ইমাম তাহাবী সূত্রে মদীনা শরীফের তৎকালীন প্রসিদ্ধ ৭ জন ফকীহ- সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব, 'উরওয়াহ ইবনে যুবাইর, কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ, আবু বকর ইবনে 'আব্দুর রহমান, খারেজা ইবনে যায়দ, 'উবাইদুল্লাহ ইবনে 'আব্দুল্লাহ ও সুলাইমান ইবনে ইয়াসার (রাহঃ) এর বাস্তব আমলও তিন রাকআত বিতর বলে বর্ণনা করেছেন। যে বাস্তব আমল সম্পর্কে খোদ ইমাম বুখারী বর্ণিত এ অধ্যায়ের ৯৩৯ নং হাদীসও সাক্ষী। (মূল আরবী সংস্করণ বুখারী শরীফ -এর টীকা নং- ৭ ও ৮, খ-১, পৃ-১৩৫ দ্রষ্টব্য; নাসাঈ শরীফ খ-২, পৃ- ৩৭৯-৩৮২, ইফা ঢাকা)
أبواب الوتر باب مَا جَاءَ فِي الْوِتْرِ
990 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ صَلاَةِ اللَّيْلِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ: «صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، فَإِذَا خَشِيَ أَحَدُكُمُ الصُّبْحَ صَلَّى رَكْعَةً وَاحِدَةً تُوتِرُ لَهُ مَا قَدْ صَلَّى»
991 - وَعَنْ نَافِعٍ: أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ: «كَانَ يُسَلِّمُ بَيْنَ الرَّكْعَةِ وَالرَّكْعَتَيْنِ فِي الوِتْرِ حَتَّى يَأْمُرَ بِبَعْضِ حَاجَتِهِ»
হাদীস নং: ৯৩৮
আন্তর্জাতিক নং: ৯৯২
৬২৮. বিতর নামাযের অধ্যায়ঃ বিতরের বিবরণ।
৯৩৮। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসলামা (রাহঃ) ......... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তার খালা উম্মুল মু’মিনীন মাইমুনা (রাযিঃ) এর ঘরে রাত কাটান। (তিনি বলেন) আমি বালিশের প্রস্থের দিক দিয়ে শয়ন করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তার পরিবার সেটির দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে শয়ন করলেন। নবী (ﷺ) রাতের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ঘুমালেন। এরপর তিনি জাগ্রত হলেন এবং চেহারা থেকে ঘুমের আবেশ দূর করেন। পরে তিনি সূরা আলে ইমরানের (শেষ) দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তারপর নবী (ﷺ) একটি ঝুলন্ত মশকের নিকট গেলেন এবং উযু করলেন। এরপর তিনি নামাযে দাঁড়ালেন। আমিও তার মতই করলাম এবং তার পাশেই দাঁড়ালাম। তিনি তার ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার কান ধরলেন। এরপর তিনি দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। এরপর দু’রাকআত, এরপর দু’রাকআত, এরপর দু’রাকআত, এরপর দু’রাকআত, এরপর তিনি বিতর আদায় করলেন। তারপর তিনি শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়াযযিন তার কাছে এলো। তখন তিনি দাঁড়িয়ে দু’রাকআত নামায আদায় করলেন। তারপর বের হয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন।
أبواب الوتر باب مَا جَاءَ فِي الْوِتْرِ
992 - حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ مَخْرَمَةَ بْنِ سُلَيْمَانَ، عَنْ كُرَيْبٍ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ أَخْبَرَهُ: أَنَّهُ بَاتَ عِنْدَ مَيْمُونَةَ وَهِيَ خَالَتُهُ فَاضْطَجَعْتُ فِي عَرْضِ وِسَادَةٍ «وَاضْطَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَهْلُهُ فِي طُولِهَا، فَنَامَ حَتَّى انْتَصَفَ اللَّيْلُ - أَوْ قَرِيبًا مِنْهُ - فَاسْتَيْقَظَ يَمْسَحُ النَّوْمَ عَنْ وَجْهِهِ، ثُمَّ قَرَأَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ آلِ عِمْرَانَ، ثُمَّ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَنٍّ مُعَلَّقَةٍ، فَتَوَضَّأَ، فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ، ثُمَّ قَامَ يُصَلِّي» ، فَصَنَعْتُ مِثْلَهُ، فَقُمْتُ إِلَى جَنْبهِ، «فَوَضَعَ يَدَهُ اليُمْنَى عَلَى رَأْسِي وَأَخَذَ بِأُذُنِي يَفْتِلُهَا، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ أَوْتَرَ، ثُمَّ اضْطَجَعَ حَتَّى جَاءَهُ المُؤَذِّنُ، فَقَامَ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ خَرَجَ، فَصَلَّى الصُّبْحَ»
হাদীস নং: ৯৩৯
আন্তর্জাতিক নং: ৯৯৩
৬২৮. বিতর নামাযের অধ্যায়ঃ বিতরের বিবরণ।
৯৩৯। ইয়াহয়া ইবনে সুলাইমান (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, রাতের নামায দু’ দু’ রাক'আত করে। তারপর যখন তুমি নামায শেষ করতে চাবে, তখন এক রাকআত আদায় করে নিবে। তা তোমার পূর্ববতী নামাযকে বিতর করে দিবে।
কাসিম (রাহঃ) বলেন, আমরা সাবালক হয়ে লোকদের তিন রাকআত বিতর আদায় করতে দেখেছি। উভয় নিয়মেই অবকাশ রয়েছে। আমি আশা করি এর কোনটিই দোষনীয় নয়।
أبواب الوتر باب مَا جَاءَ فِي الْوِتْرِ
993 - حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الحَارِثِ، أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ القَاسِمِ، حَدَّثَهُ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى [ص:25] مَثْنَى، فَإِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَنْصَرِفَ، فَارْكَعْ رَكْعَةً تُوتِرُ لَكَ مَا صَلَّيْتَ» قَالَ القَاسِمُ: «وَرَأَيْنَا أُنَاسًا مُنْذُ أَدْرَكْنَا يُوتِرُونَ بِثَلاَثٍ، وَإِنَّ كُلًّا لَوَاسِعٌ أَرْجُو أَنْ لاَ يَكُونَ بِشَيْءٍ مِنْهُ بَأْسٌ»
হাদীস নং: ৯৪০
আন্তর্জাতিক নং: ৯৯৪
৬২৮. বিতর নামাযের অধ্যায়ঃ বিতরের বিবরণ।
৯৪০। আবুল ইয়ামান (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) এগার রাকআত নামায আদায় করতেন। এ ছিল তার রাত্রিকালীন নামায। এতে তিনি এমন দীর্ঘ সিজদা করতেন যে, তার মাথা উঠাবার আগে তোমাদের কেউ ৫০ আয়াত পড়তে পারে এবং ফজরের নামাযের আগে তিনি আরো দু’রাকআত পড়তেন। তারপর ডান কাত হয়ে শুয়ে বিশ্রাম করতেন, নামাযের জন্য মুয়াযযিনের আসা পর্যন্ত।
أبواب الوتر باب مَا جَاءَ فِي الْوِتْرِ
994 - حَدَّثَنَا أَبُو اليَمَانِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: حَدَّثَنِي عُرْوَةُ، أَنَّ عَائِشَةَ، أَخْبَرَتْهُ: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، كَانَتْ تِلْكَ صَلاَتَهُ - تَعْنِي بِاللَّيْلِ - فَيَسْجُدُ السَّجْدَةَ مِنْ ذَلِكَ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِينَ آيَةً قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأْسَهُ، وَيَرْكَعُ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الفَجْرِ، ثُمَّ يَضْطَجِعُ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَنِ حَتَّى يَأْتِيَهُ المُؤَذِّنُ لِلصَّلاَةِ»