প্রবন্ধ
....বৌদ্ধরা বুদ্ধকে নিয়ে যা করেছে, ইহুদিরা উযাইর ও খ্রিস্টানরা ঈসা (আ.) কে নিয়ে যা করেছে, তারাও রাসূলুল্লাহকে (সা.) নিয়ে সে পথে হেঁটেছে। খ্রিস্টানরা যেমন মানব নবী ঈসা (আ.) কে আল্লাহর পুত্র কল্পনা করেছে, তিন খোদার একজন সাব্যস্ত করেছে, হিন্দুরা যেমন রাম, কৃষ্ণসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পৃথিবীতে তাদের ঈশ্বরের অবতার কল্পনা করেছে, তারাও রাসূলকে মানুষের পর্যায়ে না রেখে সেভাবে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়েছে।
কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমা’র মাধ্যমে রাসূলুল্লাহর বাশারিয়্যাত সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তারা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতকে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে, জাল ও বানোয়াট হাদীসের দোহাই দিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রাসূলুল্লাহকে অতিমানব বানানোর চেষ্টা করেছে। তারা তাকে বাশার নয়; নূরের তৈরী বলেছে। তাঁর ছায়া নেই বলেছে। অথচ রাসূলুল্লাহর সেগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি রক্ত-মাংসের মানুষ হয়েই গোটা সৃষ্টির সর্বোত্তম। নূরের সৃষ্টি হওয়ার মাঝে আলাদা বিশেষত্ব নেই। রাসূলুল্লাহ মাটির মানুষ হয়েই নূরের ফিরিশতাদের চেয়ে উত্তম। ফলে তাকে জোর করে নূর বানাতে হবে কেন? কেবল রাসূল নন; অন্যান্য নবী ও পুণ্যবান মানুষও নূরের তৈরি অনেক ফিরিশতার চেয়ে উত্তম। হ্যাঁ নিঃসন্দেহে ফিরিশতারা আল্লাহর মর্যাদাবান সৃষ্টি। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে মানুষের সেবায় নিযুক্ত করেছেন। মানুষের সুরক্ষায় নিয়োজিত করেছেন। ফলে শ্রেষ্ঠ হওয়ার মাপকাঠি কিসের তৈরী তা নয়; ছায়া না থাকার মাঝেও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং সেগুলো প্রমাণিতও নয়। বরং তাকওয়া ও আল্লাহর আনুগত্যই শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড।
হ্যাঁ যদি কেউ রাসূলুল্লাহকে নূরের তৈরী বলে, তাঁকে ছায়াহীন বলে আমরা তাকে কাফির বলি না; কিন্তু এসব অতিরঞ্জন এখানেই শেষ হয় না। বরং অতিরঞ্জনের শুরু এখান থেকেই। এগুলোই পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহকে ‘হাজির-নাজির’ মনে করা, তাঁর গায়েব জানা, কবরে বসেও প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারার সক্ষমতা রাখা, আল্লাহকে বাদ দিয়ে রাসূলু্ল্লার ইবাদত এবং সবশেষে মানুষকে কবরপূজাসহ বিভিন্ন কুফরী আকীদা ও কুফরী কাজে নিমজ্জিত করে।
একারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) একাধিক হাদীসে উম্মতকে তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। এক হাদীসে তিনি বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমাদেরকে শয়তান যেন ধোঁকায় না ফেলে। আমি আব্দুল্লাহর ছেলে মুহাম্মাদ। আল্লাহর শপথ! আমি চাই না যে, আল্লাহ আমাকে যতোটুকু উঁচু মর্যাদা দিয়েছেন তোমরা আমাকে তার চেয়ে ওপরে উঠাবে’! অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন, ‘তোমরা আমার প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করো না যেমনটা খ্রিস্টানরা করেছে ঈসা ইবনে মারইয়ামের ক্ষেত্রে। আমি তো কেবল আল্লাহর বান্দা। তাই তোমরা (আমার ব্যাপারে) বলো, ‘আল্লাহর বান্দা ও রাসূল’!
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
সীরাতুন্নবী-মীলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
[প্রদত্ত বয়ান থেকে সংগৃহীত] দু'টি শব্দের সমন্বয়ে সীরাতুন্নবী শব্দটি গঠিত। একটি হল 'সীরাত' অপরটি 'আন...
আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৯৯৩৭৪ বার দেখা হয়েছে
সীরাতে নববীর সফল অধ্যয়ন, কীভাবে?
চলছে মহিমান্বিত রবিউল আউয়াল মাস, সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সবচেয়ে স...
'মুসলিম বাংলা' সম্পাদকীয়
৯ নভেম্বর, ২০২৪
৩৮৮২ বার দেখা হয়েছে
আমাদের নবী কি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী নন?
আমাদের নবী কি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী নন? মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা. বা. আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্ল...
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী হাফি.
৭ নভেম্বর, ২০২৪
১২৫৪ বার দেখা হয়েছে
انقلابی نظریات اور پیغمبرِ انقلاب صلی اللہ علیہ وسلم
...
শাঈখ ইলিয়াস গুম্মান
১০ নভেম্বর, ২০২৪
২৭৬০ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন