অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং (সেই সময়ের কথাও স্মরণ কর) যখন আমি তোমাদের থেকে (তাওরাতের অনুসরণ সম্পর্কে) প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম এবং তূর পাহাড়কে তোমাদের উপর উত্তোলন করে ধরেছিলাম (আর বলেছিলাম যে,) আমি তোমাদেরকে যা (যে কিতাব) দিয়েছি, তা শক্ত করে ধর ৫৪ এবং তাতে যা (লেখা) আছে তা স্মরণ রাখ, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।
তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানীঃ
৫৪. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তাওরাত নিয়ে আসলে বনী ইসরাঈল লক্ষ্য করে দেখল তার কোনও কোনও বিধান বেশ কঠিন। তাই তারা তা থেকে বাঁচার অজুহাত খুঁজতে শুরু করল। প্রথমে তারা বলল, আল্লাহ তাআলা স্বয়ং আমাদের বলে দিন যে, তাওরাত মানা আমাদের জন্য অপরিহার্য। তাদের এ দাবী যদিও অযৌক্তিক ছিল, তথাপি প্রমাণ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে এটা মেনে নেওয়া হল। সুতরাং তাদের মধ্য থেকে সত্তর জন লোককে বাছাই করে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাথে তূর পাহাড়ে পাঠানো হল (যেমন সূরা আরাফের (৭ : ১৫৫) নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে)। আল্লাহ তাআলা সরাসরি তাদেরকে তাওরাত মেনে চলার হুকুম দিলেন। অতঃপর তারা যখন ফিরে আসল, তখন নিজ সম্প্রদায়ের সামনে আল্লাহ তাআলার সে হুকুমের কথা তো স্বীকার করল, কিন্তু নিজেদের পক্ষ থেকে একটা কথা যোগ করে দিল। তারা বলল, আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, তোমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকু মেনে চলবে; যা পারবে না আমি তা ক্ষমা করে দেব। সুতরাং তাওরাতের যে নির্দেশই তাদের দৃষ্টিতে কিছুটা কঠিন মনে হত, তারা বাহানা তৈরি করে বলত, এটাও সেই ছাড় দেওয়া নির্দেশসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা তূর পাহাড়কে তাদের মাথার উপর তুলে ধরে বললেন, তাওরাতের সমুদয় বিধান মেনে নাও। তাদের যখন আশংকা হল, পাহাড়টিকে তাদের উপর ছেড়ে দেওয়া হতে পারে, তখন তারা তাওরাত মানার ও সে অনুযায়ী আমল করার প্রতিশ্রুতি দিল। এ আয়াতে সে ঘটনার প্রতিই ইশারা করা হয়েছে।
তূর পাহাড়কে তাদের মাথার উপর তুলে ধরাটা প্রকৃত ও বাচ্যার্থেও সম্ভব। অর্থাৎ পাহাড়টিকে তার স্থান থেকে উৎপাটিত করে তাদের মাথার উপরে ঝুলিয়ে ধরা হয়েছিল। হাফেজ ইবনে জারীর (রহ.) বহু তাবিঈ হতে এরূপ বর্ণনা করেছেন। বলাবাহুল্য, আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতা হিসেবে এটা কিছু কঠিন কাজ নয়। আবার এমনও হতে পারে যে, এমন কোনও পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, যদ্দরুণ তাদের মনে হয়েছিল পাহাড়টি বুঝি তাদের উপর পতিত হবে, যেমন হয়ত তখন প্রচণ্ড ভূমিকম্প দেখা দিয়েছিল। ফলে তাদের ধারণা হয়েছিল পাহাড়টি উৎপাটিত হয়ে তাদের উপর পড়বে। সুতরাং এ ঘটনা সম্পর্কে সূরা আরাফে বর্ণিত হয়েছে,
وَإِذْ نَتَقْنَا الْجَبَلَ فَوْقَهُمْ كَأَنَّهُ ظُلَّةٌ وَظَنُّوْا أَنَّهُ وَاقِعٌ بِهِمْ
আরাফ (৭ : ১৭১)। এতে نتق শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যার এক অর্থ সজোরে নাড়ানো (দেখুন আল-কামূস ও মুফরাদাতুল কুরআন)। সুতরাং আয়াতটির এরূপ অর্থও করা যেতে পারে যে, ‘যখন আমি পাহাড়কে তাদের উপর সজোরে এমনভাবে নাড়াতে থাকি যে, তাদের মনে হচ্ছিল সেটি তাদের উপর পতিত হবে।
প্রকাশ থাকে যে, কাউকে চাপ সৃষ্টি করে ঈমান আনতে বাধ্য করা যায় না বটে, কিন্তু কেউ যদি ঈমান আনার পর নাফরমানী করে, তবে সেজন্য তাকে শাস্তি দেওয়া এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে হুকুম মানতে প্রস্তুত করা মোটেই অসঙ্গত নয়। বনী ইসরাঈল যেহেতু আগেই ঈমান এনেছিল, তাই আল্লাহর আযাবের ভয় দেখিয়ে তাদেরকে আনুগত্য করতে বাধ্য করা হয়েছিল।