২. আল বাকারা ( আয়াত নং - ২৭ )

bookmark
الَّذِیۡنَ یَنۡقُضُوۡنَ عَہۡدَ اللّٰہِ مِنۡۢ بَعۡدِ مِیۡثَاقِہٖ ۪ وَیَقۡطَعُوۡنَ مَاۤ اَمَرَ اللّٰہُ بِہٖۤ اَنۡ یُّوۡصَلَ وَیُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
আল্লাযীনা ইয়ানকুদূ না ‘আহদাল্লা-হি মিম বা‘দি মীছা-কিহী ওয়া ইয়াকতা‘ঊনা মা আমারাল্লাহু বিহীআইঁ ইউসালা ওয়া ইউফছিদূ না ফিল আরদিউলাইকা হুমুল খাছিরূন।

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই সকল লোক, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতিকে পরিপক্ক করার পরও ভেঙ্গে ফেলে ২৬ এবং আল্লাহ যেই সম্পর্ককে যুক্ত রাখতে আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তার করে। ২৭ বস্তুত এমন সব লোকই অতি ক্ষতিগ্রস্ত।

তাফসীরে মুফতি তাকি উসমানীঃ

২৬. অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এ প্রতিশ্রুতি দ্বারা ‘আলাস্তু’-এর প্রতিশ্রুতি বোঝানো হয়েছে, অর্থাৎ ‘আমি কি তোমাদের রব্ব নই’- যা সূরা আরাফে বর্ণিত হয়েছে (৭ : ১৭২)। সেখানেই এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এখানে এতটুকু বুঝে নেওয়াই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করার বহু আগে সমস্ত রূহকে একত্র করেন। তারপর তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তখন সকলেই আল্লাহ তাআলার প্রতিপালকত্বের কথা স্বীকার করে নিয়ে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা তাঁর আনুগত্য করবে। এ আয়াতে যে প্রতিশ্রুতিকে পরিপক্ক করার কথা বলা হয়েছে, তার অর্থ এই যে, প্রতি যুগে আল্লাহ তাআলার রাসূলগণ আসতে থাকেন এবং তারা মানুষকে সেই আদি প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলাই যে সকলের স্রষ্টা ও মালিক তার অনুকূলে দলীল-প্রমাণ প্রদর্শন করতে থাকেন। ফলে সে প্রতিশ্রুতি আরও দৃঢ় ও পরিপক্ক হয়ে ওঠে। এই প্রতিশ্রুতির আরও একটি ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তা এই যে, এর দ্বারা সেই কর্মগত ও নীরব প্রতিশ্রুতি (Lacit Covenant) বোঝানো হয়েছে, যা প্রতিটি মানুষ তার জন্ম মাত্রই নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে করে থাকে। এর উদাহরণ- যে ব্যক্তি যেই দেশে জন্মগ্রহণ করে, সে সেই দেশের নাগরিক হওয়ার সুবাদে এই নীরব প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে যে, সে সে দেশের সকল আইন মেনে চলবে। সে মুখে কিছু না বললেও কোনও দেশে তার জন্মগ্রহণ করাটাই এ প্রতিশ্রুতির স্থলাভিষিক্ত। এভাবেই যে ব্যক্তি পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে, সে আপনা আপনিই তার প্রতিপালকের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে যায় যে, সে তার হিদায়াত অনুসারে জীবন যাপন করবে। এ প্রতিশ্রুতির জন্য মুখে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। খুব সম্ভব এ কারণেই এর পরপরই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, তোমরা কি করেই বা আল্লাহ তাআলার সাথে কুফরী কর্মপন্থা অবলম্বন কর, অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ, তারপর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন’? অর্থাৎ যদি সামান্য একটু চিন্তা কর, তবে ‘কেউ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন’, এই এতটুকু বিষয়ই তোমাদের পক্ষ হতে একটা প্রতিশ্রুতির মর্যাদা রাখে এবং এর ফলে তাঁর নিয়ামতের স্বীকারোক্তি প্রদান এবং তাঁর প্রদত্ত পথ অবলম্বন তোমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে যায়। অন্যথায় এটা কেমন বুদ্ধিমত্তা ও কেমন বিচার-বিবেচনার কাজ যে, সৃষ্টি তো করলেন আল্লাহ তাআলা আর আনুগত্য করা হবে অন্য কারও? এই নীরব অঙ্গীকারকে ‘পাকাপোক্ত করা’র দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে তোমাদেরকে অবিরত এই প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে থাকেন। নবীগণ তোমাদের সামনে এমন মজবুত দলীল-প্রমাণ পেশ করেছেন, যা দ্বারা এ প্রতিশ্রুতি আরও পাকাপোক্ত হয়ে গেছে যে, সকল ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করাই মানুষের কর্তব্য।