রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং:
নেক কাজে অগ্রগামী হওয়া এবং নেক কাজের প্রতি অভিমুখী ব্যক্তিকে উৎসাহ দেওয়া, যাতে সে দোদুল্যমানতা ত্যাগ করে দৃঢ়সংকল্পের সাথে তা শুরু করে দেয়।
হযরত আবু দুজানা রাযি.-এর বীরত্ব
হাদীছ নং: ৯১
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, উহুদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা তরবারি হাতে নিয়ে বললেন, আমার কাছ থেকে এটি কে নেবে? উপস্থিত সমস্ত লোক তাদের হাত বাড়িয়ে বলছিল, আমি আমি। তিনি বললেন, কে এটি এর হক আদায় করার শর্তে গ্রহণ করবে? এ কথায় সকলেই থেমে গেল। হযরত আবূ দুজানা রাযি. বললেন, আমি এটি এর হক আদায়ের শর্তে গ্রহণ করব। সুতরাং তিনি সেটি গ্রহণ করলেন। তারপর সেটি দ্বারা মুশরিকদের মাথা দ্বিখণ্ডিত করে ফেললেন। -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৪৭০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২২৫৭; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৫০১৮)
হাদীছ নং: ৯১
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, উহুদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা তরবারি হাতে নিয়ে বললেন, আমার কাছ থেকে এটি কে নেবে? উপস্থিত সমস্ত লোক তাদের হাত বাড়িয়ে বলছিল, আমি আমি। তিনি বললেন, কে এটি এর হক আদায় করার শর্তে গ্রহণ করবে? এ কথায় সকলেই থেমে গেল। হযরত আবূ দুজানা রাযি. বললেন, আমি এটি এর হক আদায়ের শর্তে গ্রহণ করব। সুতরাং তিনি সেটি গ্রহণ করলেন। তারপর সেটি দ্বারা মুশরিকদের মাথা দ্বিখণ্ডিত করে ফেললেন। -মুসলিম।
(সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৪৭০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২২৫৭; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীছ নং ৫০১৮)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছ দ্বারা হযরত আবূ দুজানা রাযি.-এর বীরত্ব এবং দীনের খেদমতে অগ্রগামিতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এমনিতে তো সাহাবায়ে কিরামের সকলেই দীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তাদের সকলেরই ইতিহাস দীনের জন্য জানমাল কুরবানী দেওয়ার ইতিহাস। তাদের মধ্যে সর্বদা প্রতিযোগিতা চলত, কে কারচে' বেশি কুরবানী দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়ই একে অন্যকে ছাড়িয়ে যেতেন। যারা অন্যদের ছাড়িয়ে যেতেন, হযরত আবূ দুজানা রাযি. তাদের একজন। এ হাদীছে বলা হয়েছে, উহুদ যুদ্ধকালে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতে একটি তরবারি নিয়ে বলেছিলেন, কে এটি আমার কাছ থেকে গ্রহণ করবে?
জিহাদ, দীনের দা'ওয়াত এবং দীনের যে-কোনও সেবায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার একটি উত্তম পন্থা হল তাদেরকে এই প্রশ্নের মুখে ছেড়ে দেওয়া যে, কে এ কাজের জন্য প্রস্তুত। এ প্রশ্ন ব্যক্তির অন্তরে দারুণ রেখাপাত করে। তার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। একাধিক ব্যক্তি থাকলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি করে। তখন প্রত্যেকেই সে কাজের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চায় এবং কাজটি করার জন্য মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যায়।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো মনেপ্রাণে চাইতেন তাঁর উম্মত নিজেদেরকে দীনের জন্য উৎসর্গ করুক। তারা দুনিয়ার ভোগ-বিলাসিতায় না মেতে আখিরাতমুখী হোক এবং আখিরাতের সাফল্যলাভের জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হোক। তাদেরকে সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করার জন্য তিনি বিভিন্ন উৎসাহব্যাঞ্জক পন্থা অবলম্বন করতেন। প্রশ্ন করাও ছিল সেরকম একটি পন্থা।
যুদ্ধের উদ্দীপনা তো সব সাহাবীরই ছিল। তাই সেটি নেওয়ার জন্য সকলেই হাত বাড়ালেন। প্রত্যেকেই বলছিলেন, আমি নেব, আমি নেব। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বললেন কে এটি নেবে এর হক আদায়ের শর্তে, তখন অনেকেই পিছিয়ে গেলেন।
তাদের এ পিছিয়ে যাওয়াটা আগ্রহ-উদ্দীপনার কমতি বা বীরত্বের অভাবের কারণে ছিল না। জান দেওয়ার জন্য তো তারা প্রত্যেকেই সদা প্রস্তুত থাকতেন। আসল ব্যাপার ছিল হক আদায়ের গুরুত্ব। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে তরবারি নিয়ে সে তরবারির হক আদায় খুব সহজ কথা ছিল না। এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, হযরত আবু দুজানা রাযি, জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। এর হক কী? তিনি বললেন, এর দ্বারা কোনও মুসলিমকে হত্যা করবে না এবং কোনও কাফের থেকে এটি নিয়ে পালাবে না। অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, তিনি বললেন, তুমি এর দ্বারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাকে বিজয় দান করেন কিংবা তুমি নিহত হয়ে যাও। তাহলে এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, তরবারিখানির হক আদায় করা কত কঠিন ব্যাপার ছিল। দায়িত্ব-কর্তব্যের ওজন যারা বোঝে, তারা তা ভেবেচিন্তেই গ্রহণ করে। বরং সতর্ক-সচেতন ব্যক্তি তা গ্রহণ করা থেকে পিছিয়ে থাকারই চেষ্টা করে। এমনিতে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যাওয়া এক কথা, আর হক আদায়ের শর্তে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তরবারি গ্রহণ করা আরেক কথা। এর জন্য অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস, অনেক বেশি হিম্মত ও তাওয়াক্কুল এবং অনেক বেশি উদ্যম-উদ্দীপনা দরকার। বরং দরকার দুর্দমনীয় উৎসাহ। হযরত আবূ দুজানা রাযি. ছিলেন সে স্তরের লোক। সেই উৎসাহ থেকেই তিনি তরবারিখানি গ্রহণ করেছিলেন।
অতঃপর তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেওয়া শর্ত কেমন রক্ষা করেছিলেন তা জানা যায় হযরত যুবায়র ইবনুল 'আউওয়াম রাযি.-এর বর্ণনা দ্বারা। তিনি বলেন, আমি যখন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তরবারিটি চাইলাম কিন্তু আমাকে দিলেন না, দিলেন আবু দুজানাকে, তখন আমি খানিকটা কষ্টই পেয়েছিলাম। মনে মনে বললাম, আমি দেখব তরবারিটি দিয়ে সে কী করে। আমি তার পেছনে পেছনে চললাম। দেখলাম একটা লাল কাপড় দিয়ে মাথা বাঁধল আর তা দেখে আনসারগণ বলল, আবু দুজানা মৃত্যুর কাপড় মাথায় পেঁচিয়েছে। তারপর একটি ছড়া আবৃত্তি করতে করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ল (ছড়াটি উপরে বর্ণিত হয়েছে)। তারপর শত্রুপক্ষের যাকেই পেল তাকেই হত্যা করল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা দীনের সেবায় সাহাবায়ে কিরামের আগ্রহ-উদ্দীপনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের উচিত তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে জানপ্রাণ দিয়ে দীনের সেবায় নিয়োজিত থাকা।
খ. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায়, আমীরের কর্তব্য মানুষকে দীনের জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত করা। এর জন্য তাদেরকে বাধ্য না করে এমন কোনও ব্যবস্থা অবলম্বন করা উচিত, যাতে মানুষ ত্যাগস্বীকারে উৎসাহ পায়।
গ. হাদীছটি দ্বারা আরও শিক্ষা পাওয়া যায় যে, এ কাজ করতে কে প্রস্তুত'- এ জাতীয় প্রশ্নও মানুষের মধ্যে আগ্রহ-উদ্দীপনা সৃষ্টির এক উত্তম উপায়।
ঘ. আরও শিক্ষা পাওয়া যায় যে, কোনও দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তা পালন করার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুরুত্ব দেওয়া চাই।
জিহাদ, দীনের দা'ওয়াত এবং দীনের যে-কোনও সেবায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার একটি উত্তম পন্থা হল তাদেরকে এই প্রশ্নের মুখে ছেড়ে দেওয়া যে, কে এ কাজের জন্য প্রস্তুত। এ প্রশ্ন ব্যক্তির অন্তরে দারুণ রেখাপাত করে। তার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। একাধিক ব্যক্তি থাকলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি করে। তখন প্রত্যেকেই সে কাজের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চায় এবং কাজটি করার জন্য মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যায়।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো মনেপ্রাণে চাইতেন তাঁর উম্মত নিজেদেরকে দীনের জন্য উৎসর্গ করুক। তারা দুনিয়ার ভোগ-বিলাসিতায় না মেতে আখিরাতমুখী হোক এবং আখিরাতের সাফল্যলাভের জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হোক। তাদেরকে সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করার জন্য তিনি বিভিন্ন উৎসাহব্যাঞ্জক পন্থা অবলম্বন করতেন। প্রশ্ন করাও ছিল সেরকম একটি পন্থা।
যুদ্ধের উদ্দীপনা তো সব সাহাবীরই ছিল। তাই সেটি নেওয়ার জন্য সকলেই হাত বাড়ালেন। প্রত্যেকেই বলছিলেন, আমি নেব, আমি নেব। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বললেন কে এটি নেবে এর হক আদায়ের শর্তে, তখন অনেকেই পিছিয়ে গেলেন।
তাদের এ পিছিয়ে যাওয়াটা আগ্রহ-উদ্দীপনার কমতি বা বীরত্বের অভাবের কারণে ছিল না। জান দেওয়ার জন্য তো তারা প্রত্যেকেই সদা প্রস্তুত থাকতেন। আসল ব্যাপার ছিল হক আদায়ের গুরুত্ব। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে তরবারি নিয়ে সে তরবারির হক আদায় খুব সহজ কথা ছিল না। এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, হযরত আবু দুজানা রাযি, জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। এর হক কী? তিনি বললেন, এর দ্বারা কোনও মুসলিমকে হত্যা করবে না এবং কোনও কাফের থেকে এটি নিয়ে পালাবে না। অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, তিনি বললেন, তুমি এর দ্বারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাকে বিজয় দান করেন কিংবা তুমি নিহত হয়ে যাও। তাহলে এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, তরবারিখানির হক আদায় করা কত কঠিন ব্যাপার ছিল। দায়িত্ব-কর্তব্যের ওজন যারা বোঝে, তারা তা ভেবেচিন্তেই গ্রহণ করে। বরং সতর্ক-সচেতন ব্যক্তি তা গ্রহণ করা থেকে পিছিয়ে থাকারই চেষ্টা করে। এমনিতে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যাওয়া এক কথা, আর হক আদায়ের শর্তে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তরবারি গ্রহণ করা আরেক কথা। এর জন্য অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস, অনেক বেশি হিম্মত ও তাওয়াক্কুল এবং অনেক বেশি উদ্যম-উদ্দীপনা দরকার। বরং দরকার দুর্দমনীয় উৎসাহ। হযরত আবূ দুজানা রাযি. ছিলেন সে স্তরের লোক। সেই উৎসাহ থেকেই তিনি তরবারিখানি গ্রহণ করেছিলেন।
অতঃপর তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেওয়া শর্ত কেমন রক্ষা করেছিলেন তা জানা যায় হযরত যুবায়র ইবনুল 'আউওয়াম রাযি.-এর বর্ণনা দ্বারা। তিনি বলেন, আমি যখন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তরবারিটি চাইলাম কিন্তু আমাকে দিলেন না, দিলেন আবু দুজানাকে, তখন আমি খানিকটা কষ্টই পেয়েছিলাম। মনে মনে বললাম, আমি দেখব তরবারিটি দিয়ে সে কী করে। আমি তার পেছনে পেছনে চললাম। দেখলাম একটা লাল কাপড় দিয়ে মাথা বাঁধল আর তা দেখে আনসারগণ বলল, আবু দুজানা মৃত্যুর কাপড় মাথায় পেঁচিয়েছে। তারপর একটি ছড়া আবৃত্তি করতে করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ল (ছড়াটি উপরে বর্ণিত হয়েছে)। তারপর শত্রুপক্ষের যাকেই পেল তাকেই হত্যা করল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা দীনের সেবায় সাহাবায়ে কিরামের আগ্রহ-উদ্দীপনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের উচিত তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে জানপ্রাণ দিয়ে দীনের সেবায় নিয়োজিত থাকা।
খ. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায়, আমীরের কর্তব্য মানুষকে দীনের জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত করা। এর জন্য তাদেরকে বাধ্য না করে এমন কোনও ব্যবস্থা অবলম্বন করা উচিত, যাতে মানুষ ত্যাগস্বীকারে উৎসাহ পায়।
গ. হাদীছটি দ্বারা আরও শিক্ষা পাওয়া যায় যে, এ কাজ করতে কে প্রস্তুত'- এ জাতীয় প্রশ্নও মানুষের মধ্যে আগ্রহ-উদ্দীপনা সৃষ্টির এক উত্তম উপায়।
ঘ. আরও শিক্ষা পাওয়া যায় যে, কোনও দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তা পালন করার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুরুত্ব দেওয়া চাই।
