ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার
১৮. ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য
হাদীস নং: ২০১৩
ওযন করার পূর্বে বিক্রয় করা এবং ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পরে পৃথক না হবে ততক্ষণ বিক্রয়চুক্তি বাতিল করার অধিকার থাকবে' হাদীসটির ব্যাখ্যা
(২০১৩) হাকীম ইবন হিযাম রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে পরস্পরে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখতিয়ার থাকবে (বিক্রয়চুক্তি বাতিল করার)।
عن حكيم بن حزام رضي الله عنه مرفوعا: البيعان بالخيار ما لم يتفرقا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
গ্রন্থকার বলেন, এ হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, ক্রেতা পণ্য বুঝে নেওয়ার পরেও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে স্থান ত্যাগ না করা পর্যন্ত বিক্রয় চুক্তি চূড়ান্ত হবে না, বরং উভয়ের যে কেউ ইচ্ছা করলে তা বাতিল করতে পারবে । কিন্তু পূর্ববর্তী হাদীস থেকে জানা যায় যে, ক্রেতা বিক্রীত পণ্য ওযন করে বা বুঝে নেওয়ার সাথে সাথেই বিক্রয়চুক্তি চূড়ান্ত হবে এবং এরপর আর উভয়ের কেউ সেই চুক্তি বাতিল করার অধিকার রাখে না। এজন্যই ক্রেতা মাল বুঝে নেওয়ার পরে, ক্রেতা-বিক্রেতা স্থান ত্যাগের পূর্বেই উক্ত দ্রব্য বিক্রয় করতে পারে । এজন্য অনেক ফকীহ বলেছেন যে, এই হাদীসে ‘পরস্পরে পৃথক হওয়া' বলতে 'কথার সমাপ্তি' বোঝানো হয়েছে, দৈহিক বিচ্ছিন্নতা বোঝানো হয় নি । অর্থাৎ ক্রেতা বিক্রেতা যতক্ষণ তাদের কথাবার্তার মধ্যে থাকবেন। ততক্ষণ তাদের এখতিয়ার থাকবে বিক্রয় চুক্তি বাতিল করে দেবার। যখন তারা ক্রয়-বিক্রয়ের আলোচনা চূড়ান্ত করে পরস্পরের এ বিষয়ক আলোচনা বন্ধ করবেন তখন বিক্রয় চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এরপর আর একপক্ষ তা বাতিল করতে পারবে না।
আলোচনার সমাপ্তি বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কুরআনেও ‘বিচ্ছিন্নতা' বলে অভিহিত করা হয়েছে । ইরশাদ করা হয়েছে: وإن يتفرقا يغن الله كلا من سعته 'তারা (স্বামী-স্ত্রী) যদি পরস্পরে পৃথক হয়ে যায় তবে আল্লাহ তাঁর প্রাচুর্য দ্বারা তাদের প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করবেন'।১ এখানে পরস্পরে স্থান ত্যাগ বোঝানো হয় নি। বরং পরস্পরে তালাকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বোঝানো হয়েছে ।
মদীনার অধিবাসীগণ ‘ক্রেতা-বিক্রেতার' পৃথক হওয়া বলতে চুক্তি চূড়ান্ত করাই বুঝেন । এজন্য চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরে আর কোনো এখতিয়ার তারা ক্রেতা-বিক্রেতাকে দেন না। প্রসিদ্ধ তাবিয়ি ফকীহ ইবরাহীম নাখায় এভাবেই এই হাদীসটির ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ক্রেতা বিক্রেতার এখতিয়ার থাকবে, যতক্ষণ না তারা পৃথক হবে, অর্থাৎ তারা তাদের কথাবার্তা থেকে পৃথক হয়ে যাবে। যদি কোনো বিক্রেতা ক্রেতাকে বলেন, 'আমি এটি আপনাকে বেচে দিলাম' তবে ক্রেতার সম্মতি জ্ঞাপনের পূর্ব পর্যন্ত তার অধিকার থাকবে যে, এই ‘বিক্রয় প্রস্তাব' তিনি ফেরত নেবেন। অনুরূপভাবে যদি কোনো ক্রেতা ক্রয়-প্রস্তাব পেশ করে বলেন, 'আমি এটি কিনে নিলাম', তবে বিক্রেতা ‘আমি বেচে দিলাম' বা অনুরূপ সম্মতিজ্ঞাপক কিছু না বলা পর্যন্ত তার অধিকার থাকবে যে, তিনি তার ক্রয় প্রস্তাবটি ফেরত নিবেন। মুহাম্মাদ মুআত্তা গ্রন্থে এ কথা বলেছেন ।
ফকীহগণ বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে ব্যস্ত থাকেন ততক্ষণই তারা প্রকৃত ক্রেতা বিক্রেতা। বিক্রয় সমাপ্ত হওয়ার পরে আর তারা প্রকৃত ক্রেতা-বিক্রেতা থাকেন না। এজন্য ক্রয়-চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরে আর তা বাতিল করার এখতিয়ার থাকবে না। তারা দলীল হিসেবে কুরআন কারীমের নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করেন: يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ 'হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারচুক্তি পূর্ণ করবে'।২
এখানে উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত কিছু হাদীসের আলোকে এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। সে সকল হাদীসে স্পষ্টতই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্রেতা-বিক্রেতা দৈহিকভাবে স্থান পরিত্যাগের মাধ্যমে পরস্পরে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখতিয়ার থাকবে একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করার । পরবর্তীতে এ সকল হাদীস উল্লেখ করা হবে।
আলোচনার সমাপ্তি বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কুরআনেও ‘বিচ্ছিন্নতা' বলে অভিহিত করা হয়েছে । ইরশাদ করা হয়েছে: وإن يتفرقا يغن الله كلا من سعته 'তারা (স্বামী-স্ত্রী) যদি পরস্পরে পৃথক হয়ে যায় তবে আল্লাহ তাঁর প্রাচুর্য দ্বারা তাদের প্রত্যেককে অভাবমুক্ত করবেন'।১ এখানে পরস্পরে স্থান ত্যাগ বোঝানো হয় নি। বরং পরস্পরে তালাকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বোঝানো হয়েছে ।
মদীনার অধিবাসীগণ ‘ক্রেতা-বিক্রেতার' পৃথক হওয়া বলতে চুক্তি চূড়ান্ত করাই বুঝেন । এজন্য চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরে আর কোনো এখতিয়ার তারা ক্রেতা-বিক্রেতাকে দেন না। প্রসিদ্ধ তাবিয়ি ফকীহ ইবরাহীম নাখায় এভাবেই এই হাদীসটির ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ক্রেতা বিক্রেতার এখতিয়ার থাকবে, যতক্ষণ না তারা পৃথক হবে, অর্থাৎ তারা তাদের কথাবার্তা থেকে পৃথক হয়ে যাবে। যদি কোনো বিক্রেতা ক্রেতাকে বলেন, 'আমি এটি আপনাকে বেচে দিলাম' তবে ক্রেতার সম্মতি জ্ঞাপনের পূর্ব পর্যন্ত তার অধিকার থাকবে যে, এই ‘বিক্রয় প্রস্তাব' তিনি ফেরত নেবেন। অনুরূপভাবে যদি কোনো ক্রেতা ক্রয়-প্রস্তাব পেশ করে বলেন, 'আমি এটি কিনে নিলাম', তবে বিক্রেতা ‘আমি বেচে দিলাম' বা অনুরূপ সম্মতিজ্ঞাপক কিছু না বলা পর্যন্ত তার অধিকার থাকবে যে, তিনি তার ক্রয় প্রস্তাবটি ফেরত নিবেন। মুহাম্মাদ মুআত্তা গ্রন্থে এ কথা বলেছেন ।
ফকীহগণ বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে ব্যস্ত থাকেন ততক্ষণই তারা প্রকৃত ক্রেতা বিক্রেতা। বিক্রয় সমাপ্ত হওয়ার পরে আর তারা প্রকৃত ক্রেতা-বিক্রেতা থাকেন না। এজন্য ক্রয়-চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরে আর তা বাতিল করার এখতিয়ার থাকবে না। তারা দলীল হিসেবে কুরআন কারীমের নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করেন: يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَوْفُوا بِالْعُقُودِ 'হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারচুক্তি পূর্ণ করবে'।২
এখানে উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত কিছু হাদীসের আলোকে এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। সে সকল হাদীসে স্পষ্টতই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্রেতা-বিক্রেতা দৈহিকভাবে স্থান পরিত্যাগের মাধ্যমে পরস্পরে পৃথক না হওয়া পর্যন্ত তাদের এখতিয়ার থাকবে একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করার । পরবর্তীতে এ সকল হাদীস উল্লেখ করা হবে।
