ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৭. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫৭৫
ওয়ালীমা ও দাওয়াত কবুল করতে হবে, যদি সেখানে আপত্তিকর খেলতামাশা না থাকে
(১৫৭৫) তাবিয়ি আমর ইবনুল হারিস বলেন, একব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা.কে ওয়ালীমায় দাওয়াত করে। তিনি ওয়ালীমা-স্থলে প্রবেশ করার সময় তামাশা-কৌতুক শুনতে পান। তখন তিনি সেখানে প্রবেশ করেন না। তাকে বলা হল, আপনি ফিরে আসলেন কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সংখ্যাবৃদ্ধি করবে সেও সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের কর্মে সন্তুষ্ট হবে সে সেই কর্মে লিপ্তদের সাথে অংশীদার বলে গণ্য হবে।
عن عمرو بن الحارث أن رجلا دعا عبد الله بن مسعود إلى وليمة فلما جاء ليدخل سمع لهوا فلم يدخل فقال له: لم رجعت؟ قال: إني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: من كثر سواد قوم فهو منهم ومن رضي عمل قوم كان شريك من عمل به

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. গ্রন্থকার বলেন, ইবন মাসউদ রা. সম্ভবত আয়িশা রা.র হাদীসে উল্লিখিত বৈধ বাদ্যযন্ত্র ছাড়া অন্য কোনো অবৈধ বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। নিম্নের হাদীস থেকে বিষয়টি বোঝা যায়। আল্লাহই ভালো জানেন।

২. দাওয়াত কবুল করা জরুরি কেবল তখনই, যখন তাতে আপত্তিকর কিছু না থাকে। যদি তাতে আপত্তিকর কিছু থাকে অথবা দাওয়াতটাই কোনও অবৈধ উপলক্ষ্যে হয়, তখন তা কবুল করা জরুরি নয়।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ছবিযুক্ত পর্দা দেখে নিজ ঘরেই ঢোকা হতে বিরত থেকেছিলেন। একবার মেয়ে-জামাতা হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-এর বাড়ি থেকেও ফিরে এসেছিলেন। হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. এক দাওয়াতে গিয়ে দেখতে পান দেওয়ালে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন অর্থের এ অপচয়, এ কারণে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাঁরা আমাদের আদর্শ। তাঁদের পথে চলাতেই সঠিক সমাজগঠন ও সমাজ সংস্কারে সফলতা নির্ভর করে।
ইদানীংকার অধিকাংশ দাওয়াতই এমন, যাতে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। সুন্নত দাওয়াতকেও নানারকম পাপাচারে পঙ্কিল করে ফেলা হয়েছে। ওলীমার দাওয়াত সুন্নত। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ ওলীমার অনুষ্ঠান সহীহ পন্থায় হয় না। তাতে গানবাদ্য থাকে, পর্দার পরিবর্তে থাকে পর্দাহীনতার প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একই জায়গায় বসে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, থাকে উপহারের প্রদর্শনী ও উপহার লেনদেনের সামাজিক বাধ্যবাধকতা, এছাড়াও নানারকম অনুচিত উপসর্গ। দীনদার ব্যক্তির এ জাতীয় দাওয়াতে যাওয়ার কোনও উপায় থাকে না। তাদের বরং না যাওয়াই উচিত। হাঁ, যদি সেখানে গিয়ে আপত্তিকর বিষয়গুলো অপসারণ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে ভিন্ন কথা। আগেও এরকম শর্ত দেওয়া যেতে পারে যে, অনুষ্ঠানে আপত্তিকর কিছু করা চলবে না। তারপর যাওয়ার পর যদি দেখা যায় যথাযথভাবে কথা রাখা হয়নি, তবে কোনও কিছুর পরওয়া না করে ফিরে আসবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পাপাচারে পঙ্কিল দাওয়াতে দীনদার ব্যক্তির না যাওয়াই উচিত।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
ফিকহুস সুনান - হাদীস নং ১৫৭৫ | মুসলিম বাংলা