মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১২. খোরপোষের বিবরণ
হাদীস নং: ২৯৪
তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ
হাদীস নং- ২৯৪
হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন, একজন মহিলার বর্ণনার কারণে আমরা আমাদের প্রতিপালকের কিতাব (কুরআন) এবং আমাদের নবী হযরত হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সুন্নত ত্যাগ করব না। কেননা আমরা জানি না যে, এ মহিলা সত্য বলছে, না মিথ্যা বলছে। তিন তালাক প্রদত্ত মহিলার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষের ব্যবস্থা থাকবে।
হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন, একজন মহিলার বর্ণনার কারণে আমরা আমাদের প্রতিপালকের কিতাব (কুরআন) এবং আমাদের নবী হযরত হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সুন্নত ত্যাগ করব না। কেননা আমরা জানি না যে, এ মহিলা সত্য বলছে, না মিথ্যা বলছে। তিন তালাক প্রদত্ত মহিলার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষের ব্যবস্থা থাকবে।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «لَا تَدَعْ كِتَابَ رَبِّنَا وَسُنَّةَ نَبِيِّنَا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَوْلِ امْرَأَةٍ، لَا نَدْرِي صَدَقَتْ أَمْ كَذَبَتْ؟ الْمُطَلَّقَةُ ثَلَاثًا لَهَا السُّكْنَى وَالنَّفَقَةُ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীসে বর্ণিত মহিলা ছিলেন ফাতিমা বিনতে কায়েস ইব্ন খালিদ আল-ফিহরী,তিনি যাহহাক (র)-এর বোন ছিলেন এবং মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হাদীসে এ আলোচনা রয়েছে যে, তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ দিতে হবে কিনা।
ইমাম আবূ হানীফা (রা) বাসস্থান ও খোরপোষ প্রদানের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম আহমদ (র) এ মহিলার জন্য দুটিই না দেয়ার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম শাফিঈ ও মালিক (র) তিন তালাক প্রদত্ত মহিলার জন্য বাসস্থান দেয়া এবং খোরপোষ না দেয়ার পক্ষে মত পেশ করেছেন।
ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বলের দলীল হলো ফাতিমা বিনতে কায়েসের হাদীস যা সিহাহ সিত্তায় বর্ণনা করা হয়েছে এবং উক্ত হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থানও নেই, খোরপোষও নেই। কেননা উক্ত মহিলা বলেন, আমার স্বামী আমাকে তালাক দেয়ার পর আমি বিষয়টি নবী করীম (সা)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করি। তিনি আমার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ কোনটি নির্ধারণ করেননি।
ইমাম শাফিঈ ও মালিক (র) এ নারীর জন্য শুধু বাসস্থানের ব্যাপারে মত পেশ করেছেন। কেননা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছেঃ أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ “তোমরা যেখানে বাস কর সেখানে তাদেরকেও (তিন তালাক প্রদত্ত নারীকে) রাখ।" এবং ফাতিমা বিনতে কায়েস বর্ণিত হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে তার জন্য খোরপোষ না দেয়ার পক্ষে মত পোষণ করেছেন।
হানাফী মাযহাবের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআনের আয়াত দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। বাসস্থানের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ (তাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না)। (৬৫: ১) অথবা ইরশাদ হয়েছেঃ أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ (তোমরা যেখানে থাক, তাদেরকেও সেখানে রাখ)। (৬৫ঃ৬) খোরপোষের প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ (তিন তালাক প্রদত্ত নারীদেরকে উত্তমভাবে খোরপোষ প্রদান কর)। (২:২৪১) অথবা বলা হয়েছেঃ لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ (ক্ষমতাবানদের উচিত তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যয় করা)। (৬৫ঃ৭) অথবা একই প্রসঙ্গে আরো বলা হয়েছেঃ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ (যার (শিশু) সন্তান রয়েছে তার জন্য আহার ও পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করতে হবে)। (২ঃ২৩৩)
রিওয়ায়েতের ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের শক্তিশালী দলীল হলো হযরত উমর (রা) বর্ণিত হাদীস যা অন্যান্য সহীহ হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে। এ হাদীসে তিনি কঠোরভাবে ফাতিমা বর্ণিত হাদীসের খন্ডন করেছেন। তিনি বলেছেন, একজন মহিলা যার সততা বা মিথ্যার ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই, আমরা তার উক্তির দ্বারা আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ কিভাবে ত্যাগ করব? প্রকৃতপক্ষে হযরত উমর (রা)-এর সম্মান ও মর্যাদা এবং ইলমের মাহাত্ম্য লক্ষ্য করে ফাতিমার বর্ণিত হাদীস দুর্বল (ضعيف ) প্রমাণ করার জন্য হযরত উমর (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসই যথেষ্ট। হযরত উমর (রা)-এর বর্ণিত হাদীস মরফু হাদীসের সমার্থক। হয়ত তিনি এ হাদীস মরফূ রিওয়ায়েত করেছেন। কেননা হাদীসের নীতিমালায় এ সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, সাহাবী যদি বলেন যে, এটা আমাদের নবীর সুন্নাত, তা হলে এ হাদীস মরফু বলেই প্রমাণিত হয়। এছাড়া তাঁদের থেকে ইবরাহীম (রা)-এর সূত্রে এ হাদীস মরফূ রিওয়ায়েত রয়েছে। তাহাভী ও দারে কুতনীর বর্ণনার দ্বারা অতিরিক্ত এটাও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি বর্ণনা করেছেন, আমি আঁ হযরত (সা)-কে এটা বলতে শুনেছি যে, তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ উভয়ই প্রযোজ্য। এমনিভাবে হযরত ইব্ন মাসঊদ, হযরত উসামা এবং হযরত আয়েশা (রা) থেকে ফাতিমার হাদীসের বিপরীত হাদীস বর্ণিত আছে। বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, ফাতিমা আল্লাহকে ভয় করে না, তাই এরূপ বর্ণনা করেছে।
হযরত সাঈদ ইব্ন মুসায়্যিব (রা) বলেন, এ মহিলা মানুষকে ফিতনার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তিনি হলেন হযরত আয়েশা (রা)-এর সমকালীন একজন তাবিঈ। তিনি ফাতিমার হাদীসের সাহাবাদের ঐকমত্য পেয়েছেন। মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, মারওয়ান বলেছেন, আমরা এ মহিলার বর্ণনার দ্বারা জনগণের মধ্যে গৃহীত শক্তিশালী দলীলকে পরিত্যাগ করতে পারি না। সুতরাং এটা হলো সাহাবাদের ইজমা। দ্বিতীয় রিওয়ায়েত এটাই প্রমাণ করে যে, তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ প্রদান করতে হবে। তিবরানী নামক গ্রন্থে ইবরাহীম (রা)-এর সূত্রে ইবন মাসউদ (রা) হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, উভয় সাহাবা তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ উভয়ই সমর্থন করেছেন। দারে কুতনীতে হযরত জাবির (রা) থেকে এরূপ বর্ণনা রয়েছে। মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফে হাজ্জাতুল বিদা প্রসঙ্গে হযরত জাবির (রা) থেকে এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছেঃ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ نَفَقَتُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ (তাদের (তালাক প্রদত্ত নারীর) জন্য খোরপোষ ও পোশাক প্রদান করা তোমাদের উপর কর্তব্য)। কাজেই আরো সহীহ হাদীস ফাতিমার হাদীসের বিপরীতে বিদ্যমান পাওয়া যায়।
ফাতেমা বিনতে কায়েসের হাদীসে اضطراب ( দুর্বলতা) রয়েছে। কেননা হাদীসে ইযতিরাব থাকা এতে দুর্বলতার প্রমাণ বহন করে। কেউ কেউ বলেছেন তার স্বামী তাকে অদৃশ্যভাবে তালাক দিয়েছে, আবার কেউ বলেছেন, তাকে তালাক দিয়ে স্বামী সফরে চলে গিয়েছে। একটি বর্ণনায় আছে, তিনি নিজেই আঁ হযরত (সা)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিলেন। অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে, কয়েকজন লোক গিয়েছিল। কারো মতে তার স্বামী ছিল আবু আমর ইব্ন হাফস্, আবার কারো মতে তার স্বামী ছিল আবূ হাফস্ ইব্ন মুগীরা। এছাড়া কিছুক্ষণের জন্য যদি এটা গ্রহণ করা হয়, তা হলে মেনে নিতে হবে যে, নবী করীম (সা)-এর এ আদেশ কোন বিশেষ ওজরের কারণে ছিল। কেউ কেউ বলেছেন, এ মহিলা বেশি কথা বলত। তাই তাকে বাসস্থান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কেননা তার এ দোষ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকে বের করা থেকেও অধিক কঠোর ছিল। কারো কারো মতে, তার অসচ্চরিত্রতার কারণে এটা করা হয়েছে। খোরপোষের ব্যাপারে ঘটনা হলো, তার স্বামী অনুপস্থিত ছিল। সে মহিলা তার স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের নিকট খোরপোষ দাবি করে। তারা উত্তর প্রদান করে যে, তোমাকে খোরপোষ দেয়া আমাদের দায়িত্ব নয়। রাসূলুল্লাহ (সা)-ও এ ফয়সালা প্রদান করেছেন। যেহেতু তার স্বামী কোন সম্পদ রেখে যায়নি, তাই তাকে বাসস্থান ও খোরপোষ দেয়া তার স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের উপর ওয়াজিব নয়। ফাতিমা এ বিশেষ অবস্থার উপর দৃষ্টি দেননি। সুতরাং তার স্বামীর পক্ষ থেকে বাসস্থান ও খোরপোষ না দেয়ার ব্যাপারে নবী করীম (সা) সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। মানুষ এ সামগ্রিক নিষেধের উপরই আমল করে যাচ্ছে। সুতরাং এটা মেনে নিতে হবে যে, ফাতিমা বিনতে কায়েসের হাদীস এ সমস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতীত গ্রহণযোগ্য নয়। অধিকন্তু এ হাদীস পবিত্র কুরআনের বিরোধিতা করে। শীর্ষস্থানীয় সাহাবায়ে কিরাম এ হাদীসকে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণ করেন। সহীহ রিওয়ায়েতসমূহ এর বিরোধী। এতে ইযতিরার বা দুর্বলতা বিদ্যমান। সুতরাং যারা স্বীয় মাযহাবের ভিত্তি ফাতিমার হাদীসের উপর করে থাকেন, তাদের উপলব্ধি করা উচিত তাদের মাযহাবের মর্যাদা কোথায়।
ইমাম আবূ হানীফা (রা) বাসস্থান ও খোরপোষ প্রদানের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম আহমদ (র) এ মহিলার জন্য দুটিই না দেয়ার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম শাফিঈ ও মালিক (র) তিন তালাক প্রদত্ত মহিলার জন্য বাসস্থান দেয়া এবং খোরপোষ না দেয়ার পক্ষে মত পেশ করেছেন।
ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বলের দলীল হলো ফাতিমা বিনতে কায়েসের হাদীস যা সিহাহ সিত্তায় বর্ণনা করা হয়েছে এবং উক্ত হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থানও নেই, খোরপোষও নেই। কেননা উক্ত মহিলা বলেন, আমার স্বামী আমাকে তালাক দেয়ার পর আমি বিষয়টি নবী করীম (সা)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করি। তিনি আমার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ কোনটি নির্ধারণ করেননি।
ইমাম শাফিঈ ও মালিক (র) এ নারীর জন্য শুধু বাসস্থানের ব্যাপারে মত পেশ করেছেন। কেননা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছেঃ أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ “তোমরা যেখানে বাস কর সেখানে তাদেরকেও (তিন তালাক প্রদত্ত নারীকে) রাখ।" এবং ফাতিমা বিনতে কায়েস বর্ণিত হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে তার জন্য খোরপোষ না দেয়ার পক্ষে মত পোষণ করেছেন।
হানাফী মাযহাবের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআনের আয়াত দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। বাসস্থানের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ (তাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না)। (৬৫: ১) অথবা ইরশাদ হয়েছেঃ أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ (তোমরা যেখানে থাক, তাদেরকেও সেখানে রাখ)। (৬৫ঃ৬) খোরপোষের প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ (তিন তালাক প্রদত্ত নারীদেরকে উত্তমভাবে খোরপোষ প্রদান কর)। (২:২৪১) অথবা বলা হয়েছেঃ لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ (ক্ষমতাবানদের উচিত তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যয় করা)। (৬৫ঃ৭) অথবা একই প্রসঙ্গে আরো বলা হয়েছেঃ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ (যার (শিশু) সন্তান রয়েছে তার জন্য আহার ও পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করতে হবে)। (২ঃ২৩৩)
রিওয়ায়েতের ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের শক্তিশালী দলীল হলো হযরত উমর (রা) বর্ণিত হাদীস যা অন্যান্য সহীহ হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে। এ হাদীসে তিনি কঠোরভাবে ফাতিমা বর্ণিত হাদীসের খন্ডন করেছেন। তিনি বলেছেন, একজন মহিলা যার সততা বা মিথ্যার ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই, আমরা তার উক্তির দ্বারা আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ কিভাবে ত্যাগ করব? প্রকৃতপক্ষে হযরত উমর (রা)-এর সম্মান ও মর্যাদা এবং ইলমের মাহাত্ম্য লক্ষ্য করে ফাতিমার বর্ণিত হাদীস দুর্বল (ضعيف ) প্রমাণ করার জন্য হযরত উমর (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসই যথেষ্ট। হযরত উমর (রা)-এর বর্ণিত হাদীস মরফু হাদীসের সমার্থক। হয়ত তিনি এ হাদীস মরফূ রিওয়ায়েত করেছেন। কেননা হাদীসের নীতিমালায় এ সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, সাহাবী যদি বলেন যে, এটা আমাদের নবীর সুন্নাত, তা হলে এ হাদীস মরফু বলেই প্রমাণিত হয়। এছাড়া তাঁদের থেকে ইবরাহীম (রা)-এর সূত্রে এ হাদীস মরফূ রিওয়ায়েত রয়েছে। তাহাভী ও দারে কুতনীর বর্ণনার দ্বারা অতিরিক্ত এটাও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তিনি বর্ণনা করেছেন, আমি আঁ হযরত (সা)-কে এটা বলতে শুনেছি যে, তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ উভয়ই প্রযোজ্য। এমনিভাবে হযরত ইব্ন মাসঊদ, হযরত উসামা এবং হযরত আয়েশা (রা) থেকে ফাতিমার হাদীসের বিপরীত হাদীস বর্ণিত আছে। বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, ফাতিমা আল্লাহকে ভয় করে না, তাই এরূপ বর্ণনা করেছে।
হযরত সাঈদ ইব্ন মুসায়্যিব (রা) বলেন, এ মহিলা মানুষকে ফিতনার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তিনি হলেন হযরত আয়েশা (রা)-এর সমকালীন একজন তাবিঈ। তিনি ফাতিমার হাদীসের সাহাবাদের ঐকমত্য পেয়েছেন। মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, মারওয়ান বলেছেন, আমরা এ মহিলার বর্ণনার দ্বারা জনগণের মধ্যে গৃহীত শক্তিশালী দলীলকে পরিত্যাগ করতে পারি না। সুতরাং এটা হলো সাহাবাদের ইজমা। দ্বিতীয় রিওয়ায়েত এটাই প্রমাণ করে যে, তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ প্রদান করতে হবে। তিবরানী নামক গ্রন্থে ইবরাহীম (রা)-এর সূত্রে ইবন মাসউদ (রা) হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, উভয় সাহাবা তিন তালাক প্রদত্ত নারীর জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ উভয়ই সমর্থন করেছেন। দারে কুতনীতে হযরত জাবির (রা) থেকে এরূপ বর্ণনা রয়েছে। মুসলিম ও আবু দাউদ শরীফে হাজ্জাতুল বিদা প্রসঙ্গে হযরত জাবির (রা) থেকে এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছেঃ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ نَفَقَتُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ (তাদের (তালাক প্রদত্ত নারীর) জন্য খোরপোষ ও পোশাক প্রদান করা তোমাদের উপর কর্তব্য)। কাজেই আরো সহীহ হাদীস ফাতিমার হাদীসের বিপরীতে বিদ্যমান পাওয়া যায়।
ফাতেমা বিনতে কায়েসের হাদীসে اضطراب ( দুর্বলতা) রয়েছে। কেননা হাদীসে ইযতিরাব থাকা এতে দুর্বলতার প্রমাণ বহন করে। কেউ কেউ বলেছেন তার স্বামী তাকে অদৃশ্যভাবে তালাক দিয়েছে, আবার কেউ বলেছেন, তাকে তালাক দিয়ে স্বামী সফরে চলে গিয়েছে। একটি বর্ণনায় আছে, তিনি নিজেই আঁ হযরত (সা)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিলেন। অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে, কয়েকজন লোক গিয়েছিল। কারো মতে তার স্বামী ছিল আবু আমর ইব্ন হাফস্, আবার কারো মতে তার স্বামী ছিল আবূ হাফস্ ইব্ন মুগীরা। এছাড়া কিছুক্ষণের জন্য যদি এটা গ্রহণ করা হয়, তা হলে মেনে নিতে হবে যে, নবী করীম (সা)-এর এ আদেশ কোন বিশেষ ওজরের কারণে ছিল। কেউ কেউ বলেছেন, এ মহিলা বেশি কথা বলত। তাই তাকে বাসস্থান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কেননা তার এ দোষ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকে বের করা থেকেও অধিক কঠোর ছিল। কারো কারো মতে, তার অসচ্চরিত্রতার কারণে এটা করা হয়েছে। খোরপোষের ব্যাপারে ঘটনা হলো, তার স্বামী অনুপস্থিত ছিল। সে মহিলা তার স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের নিকট খোরপোষ দাবি করে। তারা উত্তর প্রদান করে যে, তোমাকে খোরপোষ দেয়া আমাদের দায়িত্ব নয়। রাসূলুল্লাহ (সা)-ও এ ফয়সালা প্রদান করেছেন। যেহেতু তার স্বামী কোন সম্পদ রেখে যায়নি, তাই তাকে বাসস্থান ও খোরপোষ দেয়া তার স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের উপর ওয়াজিব নয়। ফাতিমা এ বিশেষ অবস্থার উপর দৃষ্টি দেননি। সুতরাং তার স্বামীর পক্ষ থেকে বাসস্থান ও খোরপোষ না দেয়ার ব্যাপারে নবী করীম (সা) সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। মানুষ এ সামগ্রিক নিষেধের উপরই আমল করে যাচ্ছে। সুতরাং এটা মেনে নিতে হবে যে, ফাতিমা বিনতে কায়েসের হাদীস এ সমস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতীত গ্রহণযোগ্য নয়। অধিকন্তু এ হাদীস পবিত্র কুরআনের বিরোধিতা করে। শীর্ষস্থানীয় সাহাবায়ে কিরাম এ হাদীসকে ভিত্তিহীন বলে প্রমাণ করেন। সহীহ রিওয়ায়েতসমূহ এর বিরোধী। এতে ইযতিরার বা দুর্বলতা বিদ্যমান। সুতরাং যারা স্বীয় মাযহাবের ভিত্তি ফাতিমার হাদীসের উপর করে থাকেন, তাদের উপলব্ধি করা উচিত তাদের মাযহাবের মর্যাদা কোথায়।
