মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ৯৬
নামায শুরু করার বর্ণনা
৯৬। হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাযিঃ) সম্পর্কে হযরত ইবরাহীম নখঈ (রাহঃ) সমালোচনা করে বলেছেন যে, তিনি একজন গ্রামের লোক ছিলেন। তিনি এর পূর্বে কখনো নবী (ﷺ)-এর সাথে নামায আদায় করেননি। তিনি কি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) এবং তাঁর সাথীদের থেকে অধিক জ্ঞাত ছিলেন? তিনি কি (হাত উঠানো সম্পর্কে) হিফয করে নিয়েছিলেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ)-এর সাথীগণ তা হিফয করতে পারেননি।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, হযরত ইবরাহীম নখঈ হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজরের হাদীস বর্ণনা করেন। অতঃপর বলেনঃ তিনি একজন গ্রামের লোক ছিলেন। তিনি এ নামাযের পূর্বে নবী (ﷺ)-এর সাথে আর কোন নামায আদায় করেননি। তিনি কি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে অধিক জ্ঞান রাখেন?
অন্য এক বিওয়ায়েতে আছে, হযরত ইবরাহীম নখঈ-এর সামনে হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাযিঃ)-এর হাদীস বর্ণনা করা হলো যে, তিনি নবী (ﷺ)-কে রুকূ ও সিজদার সময় হাত উঠাতে দেখেছেন। তখন তিনি (ইবরাহীম) বলেনঃ হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর একজন গ্রামের লোক। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের মত) ইসলামের ফকীহ নন। তিনি মাত্র একবার নবী (ﷺ)-এর সাথে নামায আদায় করেছেন। আমার নিকট অসংখ্য বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে রিওয়ায়েত করেছেন যে, তাঁরা শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন এবং তা নবী (ﷺ) থেকে রিওয়ায়েত করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) শরীয়ত ও ইসলামের বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। নবী (ﷺ)-এর সাথে সফরে ও বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে সাথে সাথে থাকতেন। তিনি নবী (ﷺ)-এর সাথে অসংখ্য নামায আদায় করেছেন।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، أَنَّهُ قَالَ فِي وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ: " وَأَعْرَابِيٌّ لَمْ يُصَلِّ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةً قَبْلَهَا قَطُّ، هُوَ أَعْلَمُ مِنْ عَبْدِ اللَّهِ وَأَصْحَابِهِ، حَفِظَ وَلَمْ يَحْفَظُوا، يَعْنِي: رَفْعَ الْيَدَيْنِ "، وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ ذَكَرَ حَدِيثَ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، فَقَالَ: أَعْرَابِيٌّ مَا أَدْرِي صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةً قَبْلَهَا، هُوَ أَعْلَمُ مِنْ عَبْدِ اللَّهِ.
وَفِي رِوَايَةٍ: ذُكِرَ عِنْدَهُ حَدِيثُ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ: أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «رَفَعَ يَدَيْهِ عِنْدَ الرُّكُوعِ وَعِنْدَ السُّجُودِ» ، فَقَالَ: هُوَ أَعْرَابِيٌّ لَا يَعْرِفُ شَرَائِعَ الْإِسْلَامِ، لَمْ يُصَلِّ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا صَلَاةً وَاحِدَةً.
وَقَدْ حَدَّثَنِي مَنْ لَا أُحْصِي، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّهُ رَفَعَ يَدَيْهِ فِي بَدْءِ الصَّلَاةِ فَقَطْ، وَحَكَاهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
وَعَبْدُ اللَّهِ عَالِمٌ بِشَرَائِعِ الْإِسْلَامِ وَحُدُودِهِ، مُتَفَقِّدٌ لِأَحْوَالِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مُلَازِمٌ لَهُ فِي إِقَامَتِهِ وَفِي أَسْفَارِهِ، وَقَدْ صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَالَا يُحْصَى

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রুকূ ও সিজদার সময় হাত উঠান একটি বিতর্কিত মাসয়ালা। এতে উলামায়ে কিরাম বিভিন্ন মতামত পেশ করেছেন। প্রত্যেক দল স্বীয় মতের স্বপক্ষে শক্তিশালী দলীল পেশ করে অপর দলের দুর্বলতা প্রমাণ করেছেন। এ গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালার এটাই প্রথম হাদীস। মাসয়ালার বিশ্লেষণ ও বিতর্ক পরবর্তী হাদীসে বর্ণনা করা হবে। এখানে হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (র)-এর হাদীসে হযরত ইবরাহীম নখঈ (র) ন্যায়-নীতি ও যুক্তিতর্কের সাথে যে মীমাংসা দিয়েছেন, তা বর্ণনা করা হয়েছে। উভয় প্রকার হাদীসের মধ্যে যাচাই ও পরীক্ষা করা হয়েছে। কেননা বক্তার অবস্থা ও তার জ্ঞানের পরিধির উপর বক্তৃতা বা কথার গুরুত্ব নির্ভর করে। কিন্তু দ্বিতীয় দল ইবরাহীম-এর মতামতের বিরোধিতা করেছিলেন যা এ আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত নয়। উভয় দলের সমালোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-এর হাদীস হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজরের বর্ণনা অপেক্ষা অধিক গ্রহগীয় ও নির্ভরযোগ্য। কেননা হুযুর (সা)-এর পবিত্র দরবারে যদিও হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা)-এর মর্যাদা ছিল, কিন্তু হযরত (সা) সাথে অধিকাংশ সময় অবস্থান ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে যে মর্যাদা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) অর্জন করেছিলেন, এর সাথে তাঁর তুলনা হয় না। যদি এরূপ দু'ব্যক্তির মধ্যে কোন বিষয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়, তাহলে কার কথা বেশি গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য হবে এটা যে কোন নীতিবান ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারেন।
ইমাম বায়হাকী বলেন হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা)-এর হাদীস গ্রহণ করতে হবে। কেননা তাঁর থেকে কম মর্যাদার লোকের কথার দ্বারা তাঁর হাদীস বাতিল বা খণ্ডন করা যায় না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হযরত ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) এর হাদীসের উপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-এর হাদীসকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ইমাম বুখারী (র) বলেনঃ এটা ইবরাহীম নখঈর ব্যক্তিগত ধারণা যে, হযরত ওয়ায়েল (রা) অন্যান্য সাহাবাদেরকে হাত উঠাতে দেখেছেন। এখানে মূল বিষয় হলো এ মাসয়ালার জ্ঞানের ব্যাপারে হযরত ওয়ায়েল (রা) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের সমপর্যায়ের মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে হাত না উঠানো সম্পর্কে ইবরাহীম নখঈ পর্যন্ত মুতাওয়াতির হাদীস পৌঁছেছে। সুতরাং এখানে কিভাবে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে। কেউ কেউ হযরত ইবরাহীম নখঈকে বাদ দিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা)-এর সমালোচনা করে বলেন যে, তিনি অনেক কথা ভুলে যেতেন। যেমন, পবিত্র কুরআনে মুওয়ায়েযাতাইন ভুলে যাওয়া, নামায একত্রে আদায়ের পদ্ধতি ভুলে যাওয়া ইত্যাদি। সুতরাং এখানে তিনি ভুল করতে পারেন। কিন্তু এর দ্বারা তাঁর উক্তি বা বর্ণনা রহিত হবে না। কেননা এখানে উপস্থাপিত বিষয়সমূহ নামাযের মুকাবিলায় খুব কমই সংঘটিত হয়ে থাকে। এতে ভুল-ত্রুটির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দিবারাত্র যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া হয় এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) যেখানে হুযূর (সা)-এর খেদমতে অবস্থান করতেন, সেখানেও কি ভুলের সম্ভাবনা আছে? এরূপ ভুল অনেকের হতে পারে। হযরত (সা)-এর একবার ভুল হয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, فنسي و لم نجد له عزما অথবা লাইলাতুল কদর সম্পর্কে ভুলে যাওয়া অথবা যুল-ইয়াদায়ান-এর ঘটনা।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৯৬ | মুসলিম বাংলা