মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১. ঈমান-আকাঈদ অধ্যায়

হাদীস নং: ১১
মুমিন অনন্তকালের জন্য জাহান্নামী হবে না
১১। হযরত আবু মুসলিম খাওলানী বলেন, যখন হযরত মু'আয (রাযিঃ) হিমস নগরে আগমণ করেন তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট হাযির হয়ে আরয করল, এরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার কি ধারণা যিনি আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায় করেন, মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল, সত্যবাদী, আমানতদার, পেট ও লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী এবং যতটুকু সম্ভব নেককাজ করেন, কিন্তু আল্লাহ ও রাসূল সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন। হযরত মু'আয (রাযিঃ) বলেন, তাওহীদ ও রিসালত সম্পর্কে সন্দেহ তার সমস্ত নেক আমল জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দিবে।

অতঃপর ঐ লোকটি হযরত মু'আয (রাযিঃ)-কে পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, ঐরূপ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার কি ধারণা যে বিভিন্ন প্রকার গুনাহর কাজ কাজ করে, অন্যায়ভাবে রক্তপাত করে, ব্যভিচার করে, লুণ্ঠিত মালকে হালাল মনে করে, কিন্তু তাওহীদ ও রিসালতকে ইখলাসের সাথে বিশ্বাস করে। হযরত মু'আয (রাযিঃ) এর উত্তরে বলেন, আমি এর মুক্তির জন্য আশাবাদী এবং তার শাস্তির ব্যাপারেও ভয় করছি। তখন ঐ যুবক লোকটি বলল, যদি তার সন্দেহ তার নেক আমলসমূহকে ধ্বংস করে দেয়, তাহলে তার বদ বা খারাপ আমল তার খাঁটি অন্তরের শাহাদত বা সাক্ষ্য প্রদানকে বিনষ্ট করতে পারবে না। এ কথা বলে যুবকটি চলে গেল। হযরত মু'আয (রাযিঃ) বলেন, আমার ধারণামতে এ লোকটির চেয়ে সুন্নত সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী অন্য কেউ নেই।
عَنِ الْحَارِثِ، عَنْ أَبِي مُسْلِمٍ الْخَوْلَانِيِّ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَ مُعَاذٌ حِمْصَ، أَتَاهُ رَجُلٌ شَابٌّ، فَقَالَ: " مَا تَرَى فِي رَجُلٍ وَصَلَ الرَّحِمَ، وَبَرَّ، وَصَدَقَ الْحَدِيثَ، وَأَدَّى الْأَمَانَةَ، وَعَفَّ بَطْنَهُ وَفَرْجَهُ، وَعَمِلَ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ خَيْرٍ، غَيْرَ أَنَّهُ شَكَّ فِي اللَّهِ وَرَسُولِهِ، قَالَ: إِنَّهَا تُحْبِطُ مَا كَانَ مَعَهَا مِنَ الْأَعْمَالِ، قَالَ: فَمَا تَرَى فِي رَجُلٍ رَكِبَ الْمَعَاصِيَ، وَسَفَكَ الدِّمَاءَ، وَاسْتَحَلَّ الْفُرُوجَ وَالْأَمْوَالَ، غَيْرَ أَنَّهُ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ مُخْلِصًا، قَالَ مُعَاذٌ: أَرْجُو، وَأَخَافُ عَلَيْهِ، قَالَ الْفَتَي: وَاللَّهِ، إِنْ كَانَتْ هِيَ الَّتِي أَحْبَطَتْ مَا مَعَهَا مِنْ عَمَلٍ، مَا تَضُرُّ هَذِهِ مَا عُمِلَ مَعَهَا، ثُمَّ انْصَرَفَ، فَقَالَ مُعَاذٌ: مَا أَزْعُمُ أَنَّ رَجُلًا أَفْقَهُ بِالسُّنَةِ مِنْ هَذَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসের মাধ্যমে পূর্ববর্তী বিষয়সহ দু'টি মাসয়ালার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রথমত তাওহীদ ও রিসালতকে গ্রহণ না করে নেক আমলের মাধ্যমে নেকী ও সওয়াবের অধিকারী হবে কিনা?

দ্বিতীয়ত হল এই যে, তাওহীদ ও রিসালতের উপর বিশ্বাস স্থাপনের পর খারাপ আমল ঈমানী আকীদার উপর কোন প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে কিনা? এ হাদীসে দু'টি বিষয়ের উপর আলোচনা ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রথমত ঈমান ব্যতীত কাফিরদের নেক আমলসমূহ ভিত্তিহীন ও নিষ্ফল হবে। যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَمَا لَهُمْ مِنْ نَاصِرِينَ (তাদের আমল বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং তাদের জন্য কোন সাহায্যকারীও নেই।) অন্য আয়াতে বলা হয়েছেঃ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا (তাদের আমল বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে, অতঃপর কিয়ামতের দিন তাদের আমল পরিমাপ করা হবে না)।

এ হাদীসে উপরোক্ত আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যে, আত্মীয়-স্বজনের অধিকার আদায়, দান-সদকা, সত্যবাদিতা, আমানতদারী ইত্যাদির মত নেক আমল ঈমান না থাকার কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ঈমান হল মূল, আমল হল শাখা। সুতরাং মূল ব্যতীত শাখার কোন মূল্য নেই।

দ্বিতীয়ত মন্দ বা খারাপ আমল ঈমানকে বিনষ্ট বা নিষ্ফল করতে পারে না। কেননা কালিমায়ে শাহাদতের প্রাথমিক ক্রিয়া হল এই যে, একজন মুমিন এর দ্বারা চিরকাল জাহান্নামবাসী হওয়া থেকে মুক্তি পেয়ে থাকে। কোন গুনাহ্ এর ক্রিয়াকে বিনষ্ট করতে পারে না। এটাই হকপন্থীদের আকীদা ও বিশ্বাস। এর দ্বারা মুরজিয়াদের মতামত প্রমাণিত হয় না। কেউ কেউ হযরত ইমাম আবূ হানীফা (র)-কে মুরজিয়াদের সাথে সম্পৃক্ত করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে চায় এবং হযরত আবদুল কাদির জিলানী (র)-এর গুনিয়াতুত তালিবীন গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। উক্ত কিতাবে এরূপ কোন উদ্ধৃতি নেই এবং ইমাম আযম (র)-ও এরূপ মন্দ আকীদা ও বিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান